ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

চ্যালেঞ্জ নিতে ভালবাসেন ‘বাংলার টাইগার’ গলফার সিদ্দিকুর

প্রকাশিত: ০৫:২৮, ১০ আগস্ট ২০১৬

চ্যালেঞ্জ নিতে ভালবাসেন ‘বাংলার টাইগার’ গলফার সিদ্দিকুর

শূটিংয়ে বিপর্যয়ের পর ‘টিম বাংলাদেশ’-এর মনেবাল চুরমার হয়ে গেছে। অনেক আশা ছিল এই ইভেন্টে। কিন্তু ১০ মিটার এয়ার রাইফেলে আবদুল্লাহ হেল বাকীর বাজে বিদায়ে হতাশ সবাই। তবে ভেঙ্গে পড়েননি ‘বাংলার টাইগার’ গলফার সিদ্দিকুর রহমান। যদিও কষ্ট পেয়েছেন বাকীর নৈপুণ্যে। বাংলাদেশ থেকে আসা সাত ক্রীড়াবিদের মধ্যে এ্যাথলেটিক্স ও সুইমিংয়ে কিছুই করা সম্ভব নয়। এটা রিও অলিম্পিক শুরুর আগে থেকেই জানা সবার। এমনকি আরচারিতেও। স্বপ্নের বেলুন উড়িয়েছিল বাংলদেশ শূটিং ও গলফকে ঘিরে। ইতোমধ্যে চুপসে গেছে শূটিংয়ের বেলুন। সঙ্গত কারণে বাংলাদেশের ঝা-া এখন কেবল সিদ্দিকুরের হাতে। উদ্বোধনীর মার্চপাস্টে দু’হাত উঁচিয়ে আলোর ঝলকানিতে যেভাবে তিনি বহন করেছিলেন জাতীয় পতাকা। আর এই পতাকার ইজ্জত রক্ষা করার দায়িত্বটাও এখন তার হাতে। গরিব ঘরের সন্তান ছিলেন। গলফের সঙ্গে যুক্ত সাধারণ বলবয় হিসেবে। অনেক কাঠখড় পুড়িয়েছেন জীবনে, এতদূর উঠে আসতে। তাই জেদটাও প্রবল। হতাশা নয়, উপহার দিতে চান দেশকে রিও গেমসে সম্মানজনক একটা অবস্থানে গিয়ে। রিওতে পরিশ্রম করছেন অনুশীলনে। মনের বাসনা পূরণে যেন ইস্পাত কঠিন সংকল্প। হ্যাঁ, মঙ্গলবার তার কথায় সে প্রমাণ পওয়া গেল। প্রবল আত্মবিশ্বাস নিয়ে ঘাম ঝরাচ্ছি। দলের সবাই পারবেন এমন কোন কথা নেই। শূটিংয়ে দিনটা হয় তো বাকীর ছিল না। যার কারণে লক্ষ্য অর্জনে ব্যর্থ হয়েছে। সঙ্গত কারণে আমাকে ভাল কিছু করতেই হবে রিও গেমসে। কোথায় গিয়ে ঠেকব সেদিকে না গিয়ে বলতে চাই, আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যমে যেন বাংলাদেশের নাম থাকে তেমন একটা পারফর্মেন্স আমাকে করতে হবেই। যদিও অলিম্পিক অনেক বড় মাপের আসর। তাবত বিশ্বের সেরা খেলোয়াড়রা গেমসে অংশ নিচ্ছেন। তাদের সঙ্গে লড়াই করে এগিয়ে যাওয়া বেশ কঠিন বিষয়। কিন্তু আমি চ্যালেঞ্জ নিতে ভালবাসি। জীবনে বড় হওয়ার স্বপ্ন ছিল। অনেক ত্যাগের পর গলফ সম্রাজ্যে একটা স্থান করে নিয়েছি। মনের জোর, আত্মবিশ্বাস আর চ্যালেঞ্জ নেয়ার ক্ষমতা সৃষ্টি কর্তা আমাকে দিয়েছেন। আশা করি রিওতে সে প্রমাণ রাখব। ভাল কিছু করে মুখ উজ্জ্বল করতে চাই জাতির। অবলীলায় বলে গেলেন, এই স্বপ্নচারী কৃতী গলফার। যিনি বাংলাদেশের ক্রীড়া ইতিহাসে এবারই প্রথম সরাসরি অলিম্পিক গেমসে অংশ নিচ্ছেন। এমন অনেকেই আগে নিয়েছে। তখন কোন নিয়ম ছিল না। অলিম্পিকের জন্য আইওসির সদস্য দেশেগুলো ক্রীড়াবিদদের নাম পাঠিয়ে দিলেই চলত। কিন্তু এখন যোগ্যতা অর্জন করতে হয়। র‌্যাঙ্কিংয়ের নির্ধারিত কোটায় নাম না থাকলে ‘ওয়াইলকার্ড’ দরকার। একমাত্র সিদ্দিকুর বাদে বাংলাদেশের অবশিষ্ট ছয় ক্রীড়াবিদ ওয়াইকার্ড নিয়ে রিও এসেছেন। এশিয়ায় সিদ্দিকুরের অবস্থান ৫৫তম। এর নিচে থাকলে তিনি সরাসরি খেলতে পারতেন না। তার মনের জোর প্রমাণ করছে, ভাঙবেন, কিন্তু মচকাবেন না। বিশ্বের বাঘা বাঘা গলফারদের সঙ্গে টক্কর দিয়ে ধাপে ধাপে এগিয়ে যাওয়ার বাসনা। মনের মধ্যে লুকিয়ে রাখা স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দিতে সিদ্দিকুরের মিশন শুরু ব্রাজিল সময় বৃহস্পতিবার সকালে। পুরুষ ব্যক্তিগত স্ট্রোক প্লে, ইভেন্ট দিয়ে এগিয়ে যাওয়ার পালা। স্বপ্ন আর বাস্তবতার মধ্যে দাঁড়িয়ে দেশের ঝা-া হাতে সিদ্দিকুর কি উপহার দেন সেটাই দেখার। মনের জোর দেখে মনে হচ্ছে চেষ্টায় শতভাগ উজাড় করে দিতে প্রস্তুত ‘বাংলার টাইগার’। সাফল্য, অভিজ্ঞতার ঝুলিটা একেবারে খারাপ না। প্রথম আন্তর্জাতিক সাফল্য ব্রুনাই ওপেনের শিরোপা। জিতেছেন অনেক ট্রফি। গলফের বড় আসরে দ্বিতীয়, তৃতীয় ও সম্মানজনক স্থানও রয়েছে রেকর্ড বুকে। তবে অলিম্পিকে খেলছেন এবারই প্রথম। এ বিষয়ে সিদ্দিকুর বললেন, নতুন অভিজ্ঞতা। বিশ্বের ২০৬ দেশ নিয়ে আয়োজিত অলিম্পিকের আবহ অন্য আসরের তুলনায় অনেক দ্যুতিময়। এখানে ভাল কিছু করতে শুধু অভিজ্ঞতাই যথেষ্ট নয়। প্রয়োজন ভাগ্যের সহায়তা, প্রবল মনের জোর। তা না হলে এমন বড় আসরে খেই হারিয়ে ফেলার সম্ভাবনা থাকে। বিশেষ করে অলিম্পিক খেলার পূর্ব অভিজ্ঞতা না থাকলে। রিও আমার প্রথম অলিম্পিক। মন থেকে এটা মুছে ফেলেছি। এখানকার কন্ডিশনের সঙ্গেও বেশ ভালভাবেই মানিয়ে নিয়েছি, টানা অনুশীলনে। প্রথম অলিম্পিক বিষয়টা মন থেকে দূর করে ফেলেছি। অন্য আন্তর্জাতিক আসরের মতো মনে করছি। সেখানে যেভাবে মন খুলে খেলেছি রিওতে তাই করতে চাই। আশা করি দেশবাসীর দোয়ায় সহজে মাঠ ছাড়ব না। আর নিজের অত্মাবিশ্বাস, চেষ্টা তো রয়েছেই।
×