ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

স্বাস্থ্য উন্নয়ন সারচার্জের ৬০০ কোটি টাকা ব্যয় করা যাচ্ছে না

প্রকাশিত: ০৪:৪৮, ১০ আগস্ট ২০১৬

স্বাস্থ্য উন্নয়ন সারচার্জের ৬০০ কোটি টাকা ব্যয় করা যাচ্ছে না

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ শুধুমাত্র নীতিমালা না থাকায় তামাক খাত থেকে প্রাপ্ত স্বাস্থ্য উন্নয়ন সারচার্জ বাবদ প্রায় ৬০০ কোটি টাকা ব্যয় করতে পারছে না সরকার। যদিও টাকার অভাবে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়াধীন জাতীয় তামাক নিয়ন্ত্রণ সেল তামাকবিরোধী কার্যক্রম বাস্তবায়ন করতে পারছে না। এ সংক্রান্ত ব্যবহার নীতিমালা চূড়ান্ত না হওয়ায় অলস পড়ে আছে এই অর্থ। তাই দ্রুত নীতিমালা প্রণয়ন করে সারচার্জের অর্থ স্বাস্থ্য উন্নয়নে ব্যয় করার পথ উন্মুক্ত হওয়া প্রয়োজন বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন। জানা গেছে, গত ২০১৪-১৫ অর্থবছরের বাজেট বক্তব্যে, সারচার্জ থেকে অর্জিত অর্থ ‘তামাক ব্যবহারজনিত রোগে আক্রান্ত মানুষের চিকিৎসায় ও পুনর্বাসনে’ ব্যয় করা হবে বলে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত উল্লেখ করেছিলেন। কিন্তু পরবর্তীতে এই অর্থ ব্যবহারে সুনির্দিষ্ট কোন বিধিমালা জারি না হওয়ায় আদায়কৃত অর্থ অব্যবহৃত রয়ে গেছে। ফলে সরকার প্রশংসামূলক একটি উদ্যোগ নিলেও তার সুফল মিলছে না। তবে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় সম্প্রতি একটি কমিটি গঠনের মাধ্যমে সারচার্জের অর্থ কী কী কাজে ব্যয় করা যেতে পারে তা নিরূপণের লক্ষ্যে কাজ করছে। এদিকে, তামাকের ভয়াবহতা কমাতে পর্যাপ্ত ও নিরবচ্ছিন্ন অর্থায়নের প্রয়োজন। এক্ষেত্রে সারচার্জ আরোপের মাধ্যমে অর্থ সংগ্রহ করে তামাক নিয়ন্ত্রণ কর্মকা-ে ব্যয় করা বিশ্বব্যাপী একটি সুপরিচিত কৌশল। বাংলাদেশসহ বিশ্বের প্রায় ১১টি দেশে এ ধরনের সারচার্জ প্রথা চালু আছে। দেশগুলোর মধ্যে থাইল্যান্ডে ২ শতাংশ, নেপালে প্রতি সিগারেটে ১ পয়সা, ভারতে প্রতি ১০০০ শলাকা বিড়িতে ৫ রুপী, ভিয়েতনামে ১-২ শতাংশ, কাতারে ২ শতাংশ, আইসল্যান্ডে ০.৯ শতাংশ, এস্তনিয়ায় ৩.৫ শতাংশ, মঙ্গোলিয়ায় ২ শতাংশ এবং লাওসে প্যাকেট প্রতি ইউএসডি ০.০৩ হারে সারচার্জ আদায় করা হয়। জানা গেছে, বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও ২০১৪-১৫ অর্থবছরের বাজেটে তামাকপণ্যের ওপর ১ শতাংশ হারে সারচার্জ আরোপ করা হয়। সম্প্রতি অনুষ্ঠিত দক্ষিণ-এশীয় স্পীকার সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সারচার্জের অর্থে জাতীয় তামাক নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচীরও ঘোষণা দেন। সবশেষ সারচার্জ থেকে প্রাপ্ত অর্থ ব্যয়ের লক্ষ্যে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে একটি খসড়া নীতি প্রণয়ন করা হয়। খসড়াটির ওপর মতামত চেয়ে সংশ্লিষ্ট ৯টি মন্ত্রণালয়ে চিঠিও পাঠানো হয়। তবে এখন পর্যন্ত শুধুমাত্র ৩টি অর্থাৎ কৃষি মন্ত্রণালয়, শিল্প মন্ত্রণালয় ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের মতামত পাওয়া গেছে। বাকী মন্ত্রণালয়গুলোর মতামতের অভাবে খসড়াটি এখনো চূড়ান্ত করা সম্ভব হচ্ছে না। ফলে একদিকে অর্থ জমা হলেও তা ব্যয় করা সম্ভব হচ্ছে না। অন্যদিকে সারচার্জের অর্থ সঠিকভাবে আদায়ও হচ্ছে না। এদিকে, তামাকবিরোধীদের আন্দালনের সঙ্গে যুক্তদের মতে সারচার্জ থেকে প্রাপ্ত অর্থ দিয়ে জাতীয় তামাক নিয়ন্ত্রণ সেল (স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অধীন) একটি ‘ন্যাশনাল টোব্যাকো কন্ট্রোল প্রোগ্রাম’ পরিচালনা করতে পারে, যা দেশের স্বাস্থ্য সুরক্ষা, তামাক নিয়ন্ত্রণ সম্পর্কিত কর্মসূচী (গবেষণা ও প্রচারাভিযান) বাস্তবায়ন, নিকোটিন আসক্তদের আসক্তি মুক্ত করার কর্মসূচী বাস্তবায়ন, তামাক চাষে নিয়োজিত কৃষক এবং তামাক পণ্য উৎপাদনে নিয়োজিত শ্রমিকদের বিকল্প কর্মসংস্থানের কর্মসূচী বাস্তবায়ন কাজে ব্যবহার করা যেতে পারে।
×