ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

বানভাসি

প্রকাশিত: ০৪:৩৬, ১০ আগস্ট ২০১৬

বানভাসি

একদিকে কমছে বন্যার পানি। অপরদিকে বাড়ছে। বন্যাক্রান্ত নতুন এলাকা এখন দক্ষিণ ও মধ্যাঞ্চল। উত্তরাঞ্চলের পানি নেমে গিয়ে নদীর পানির জোয়ারে ডুবছে দক্ষিণাঞ্চল। তবে পানি কমলেও উত্তরাঞ্চলের বড় দুর্ভোগ তীব্র নদীভাঙ্গন। এ ভাঙ্গনে ঘরবাড়ি বিলীন হচ্ছে নদীগর্ভে আর হাজার হাজার মানুষ হচ্ছে বাস্তুহারা। বন্যা বাংলাদেশের সবচেয়ে পরিচিত দুর্যোগ, যা দুর্ভোগ বাড়ায়। বিপর্যস্ত করে আক্রান্তদের। প্রতিবছরের মতো এবারও উজানের ঢল ও ভারি বর্ষণে দেশের বিভিন্ন স্থানে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে কোথাও কোথাও। উত্তরের জেলাগুলোতে বন্যার পানি কমতে শুরু করেছে। কোথাও পানি কমলেও জলাবদ্ধতার কারণে এখনও হাজার হাজার মানুষ পানিবন্দী রয়েছেন। যেসব স্থানে পানি কমেছে, সেসব এলাকার মানুষ আশ্রয়কেন্দ্র হতে ঘর-বাড়িতে ফিরতে শুরু করেছেন। সবচেয়ে বড় অভাব এখন খাদ্যসামগ্রীর। চাল, ডাল, তেল, নুনের যোগান নেই। জমিজমা, সবজি বাগান পানিতে বিনষ্ট প্রায়। বন্যার কারণে কাজকর্ম না থাকায় আর্থিক দুরবস্থা বেড়েছে। শুকনো খাদ্যেরও তীব্র সঙ্কট। তদুপরি রয়েছে স্বাস্থ্যঝুঁকি। বন্যাকবলিত এলাকার রাস্তাঘাট ডুবে ও ভেঙ্গে যাওয়ায় ত্রাণ পাঠানো কিংবা স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করা জটিল হয়ে পড়েছে সংশ্লিষ্টদের জন্য। বেশিরভাগ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্যায় প্লাবিত হওয়ায় শিক্ষার্থীদের স্কুলে যাওয়া বন্ধ রয়েছে। গবাদিপশুর অবস্থাও করুণ। বিভিন্ন এলাকায় ফসলের জমি কয়েক সপ্তাহ ধরে পানিতে তলিয়ে থাকায় সেখানকার পানিতে পচা দুর্গন্ধ বের হচ্ছে। এসব দূষিত পানি স্বাস্থ্য সমস্যার কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে। স্বাস্থ্যকেন্দ্র কোথাও জলমগ্ন। পর্যাপ্ত ওষুধপত্রও নেই। দেশের উত্তর, মধ্য ও দক্ষিণাঞ্চলের উনিশটি জেলা বিশেষভাবে বন্যার দুর্ভোগে পড়েছে। মধ্য জুলাই থেকে পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। অনেক অঞ্চলে পানি বাড়ছে, তাতে আশঙ্কা করা হচ্ছে, বন্যার ছোবল আরও বিস্তীর্ণ এলাকায় ছড়িয়ে পড়তে পারে। নদীমাতৃক বাংলাদেশে ভারত থেকে আসা অভিন্ন নদী রয়েছে ৫৪টি। বর্ষাকালে এসব নদ-নদীর মোট পানি প্রবাহের অর্ধেকেই আসে ব্রহ্মপুত্র নদ হয়ে। উজানে ভারি বর্ষণ হলেই সেই পানি নেমে আসে বাংলাদেশে। দেশের নদ-নদীর গভীরতা কমে যাওয়ায় পানি নির্দিষ্ট সময়ে নেমে যেতে পারে না। দেখা দেয় বন্যা। এমনিতেই বন্যা মোকাবেলার জন্য যে সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা ও প্রস্তুতি থাকা দরকার, তার কোন পূর্ব উদ্যোগ মেলে না। কেবল বন্যা হলেই সামান্য ত্রাণ দিয়ে দায় সারা হয়। অথচ বন্যার কারণে বহু সচ্ছল পরিবার দারিদ্র্যসীমার নিচে নেমে যায়। বহু জীবনের বিনাশ ঘটে। সম্পদহানি তো আছেই। কার্যত বর্ষা মৌসুমের শুরু থেকে বন্যা পরিস্থিতি মোকাবেলায় কার্যকর কোন ব্যবস্থা দৃশ্যমান হয় না। বন্যার কবল থেকে রক্ষা পেতে স্থায়ী উদ্যোগ গ্রহণের কাজটি হয় না। অথচ এ নিয়ে প্রচুর সভা সেমিনার হয়। নদনদী ড্রেজিং হয় না দীর্ঘদিন ধরে। তাই মাঝারি ধরনের বৃষ্টিতেই নদ-নদীর পানির ধারণক্ষমতা হ্রাস পায়। আর তখনই ভেসে যায় নদীর উপচেপড়া পানিতে মাঠ ঘাট, প্রান্তর, ঘরবাড়িসহ সবকিছুই। নদ-নদীতে নাব্য না থাকার বিপদ ফি বছর বাড়ছেই। আর বন্যার পানি হ্রাস হওয়ার পর দুর্ভোগ আরও বাড়ে। বন্যাকবলিত মানুষের পাশে দাঁড়ানোর কাজটি সবসময় যে হয়, তা নয়, এখন পর্যন্ত যে সহায়তা দেয়া হয়েছে তা অপ্রতুল। তাই দুর্গত এলাকায় ত্রাণ শিবির, চিকিৎসাকেন্দ্র চালু করা জরুরী। সেইসঙ্গে দুর্গত দরিদ্র মানুষের জীবিকার পথও খুলে দিতে হবে। বন্যা পরবর্তী পুনর্বাসনের জন্য পরিকল্পনা গ্রহণ ও জরুরী দুর্গত কৃষকদের সার্বিক সহায়তা প্রদান না করলে পরবর্তী মৌসুমের কৃষি কাজ বিঘিœত হবে। বন্যার ক্ষয়ক্ষতি পুষিয়ে নিতে শুধু ত্রাণ দিয়ে নয়, বরং নিতে হবে দীর্ঘমেয়াদী পুনর্বাসনের পরিকল্পনা। কৃষক ও ব্যবসায়ীদের পর্যাপ্ত পরিমাণ ঋণ সহায়তা জরুরী। বন্যাক্রান্ত দেশে বন্যা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সমন্বিত পরিকল্পনা সর্বাগ্রে প্রয়োজন। বন্যার অভিশাপ থেকে দেশবাসীকে মুক্ত করার জন্য পদক্ষেপ নেয়া হবেÑ এমন আশাবাদ দীর্ঘদিনের।
×