ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

অন্যায্য সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার

প্রকাশিত: ০৪:৩৬, ১০ আগস্ট ২০১৬

অন্যায্য সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার

গত মাসের শেষ সপ্তাহে আকস্মিকভাবেই দেশে ব্রিটিশ কাউন্সিলের সব কার্যালয় বন্ধ করে দেয়া হয়। গুলশান ও শোলাকিয়ায় সাম্প্রতিক জঙ্গী হামলা এবং কল্যাণপুরে জঙ্গী আস্তানায় রক্তক্ষয়ী অভিযানের পর নিরাপত্তা ব্যবস্থা পর্যালোচনার জন্য বাংলাদেশে ব্রিটিশ কাউন্সিলের অফিস সাময়িকভাবে বন্ধ ঘোষিত হয়। যুক্তরাজ্যের ইন্টারন্যাশনাল অর্গানাইজেশন এর কালচারাল অ্যান্ড এডুকেশনাল অপরচুনিটিসের এক বিবৃতিতে সে সময় বলা হয়, নতুন নিরাপত্তা ব্যবস্থাপনা তৈরি হয়ে গেলেই ঢাকায় ব্রিটিশ কাউন্সিলের অফিস চালু করে নিয়মিত কার্যক্রম শুরু করা যাবে বলে আশা করছেন তারা। একই সঙ্গে বাংলাদেশে ব্রিটিশ কাউন্সিলের পরিচালক এক বিবৃতিতে বলেন, ‘আমরা দেখতে পাচ্ছি, বাংলাদেশে জনসমাগমস্থলে নিজেদের নিরাপত্তা নিয়ে সাধারণ মানুষের উদ্বেগ দিন দিন বাড়ছে। ব্রিটিশ কাউন্সিলের কর্মী ও সেবাগ্রহীতাদের নিরাপত্তার বিষয়টি আমাদের কাছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। তাই আমরা নিরাপত্তা ব্যবস্থা পর্যালোচনা করে দেখতে আমাদের অফিস সাময়িকভাবে বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’ বিশ্বের বহু দেশে দফায় দফায় জঙ্গী হামলার পরও যেখানে কার্যক্রম অব্যাহত রাখা হয়েছে, সেখানে বাংলাদেশে একটি জঙ্গী হামলার পরই ব্রিটিশ কাউন্সিলের এমন ঘোষণায় সুধী সমাজে ব্যাপক আপত্তি ওঠে। প্রশ্ন দেখা দেয় জঙ্গীকবলিত পাকিস্তান, আফগানিস্তান, ইরাক, লেবাননসহ অন্যান্য দেশে যদি কার্যক্রম চলতে পারে তাহলে বাংলাদেশের বিষয়ে কেন এমন ভিন্ন অবস্থান? এতে যে দেশের ভাবমূর্তির ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারেÑ সেটিও আলোচনায় উঠে আসে। ব্রিটিশ কাউন্সিলের অবস্থানকে ‘অন্যায়, আপত্তিকর ও রাজনৈতিক’ অভিহিত করে দেশের বিশিষ্ট শিক্ষাবিদসহ বিশেষজ্ঞরা সে সময় প্রশ্ন তুলেছিলেন। বলাবাহুল্য জঙ্গী হামলার ক্ষত উপশম এবং সম্ভাব্য হামলার প্রস্তুতি ও মোকাবেলার জন্য বাংলাদেশ যখন দৃঢ়প্রতিজ্ঞ, সে সময়ে প্রতিষ্ঠানটির ওই সিদ্ধান্ত অন্যায্য হিসেবেই দেখে পর্যবেক্ষক মহল। বাংলাদেশে ইংরেজী মাধ্যমের শিক্ষার্থীদের ‘ও’ এবং ‘এ’ লেভেল পরীক্ষা ব্রিটিশ কাউন্সিলের ব্যবস্থাপনাতেই হয়। যদিও তখন সেসব পরীক্ষার সময় না হওয়ায় অফিস বন্ধের কোন প্রভাব শিক্ষার্থীদের ওপর পড়বে না বলে ব্রিটিশ কাউন্সিলের একজন কর্মকর্তা জানিয়েছিলেন, কিন্তু বাস্তব পরিস্থিতি ভিন্ন। ব্রিটিশ কাউন্সিল সাময়িকভাবে বন্ধের সিদ্ধান্ত শিক্ষার্থীদের ওপরে পরোক্ষ নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। তাদের ভেতর এক ধরনের অনিশ্চয়তার বোধ তৈরি হয়। এই মানসিক ক্ষতির দিকটি খতিয়ে দেখা হয়নি। ব্রিটিশ কাউন্সিল শুধু একটি সাংস্কৃতিক কেন্দ্র নয়; ইংরেজী শিক্ষা ও চর্চার প্রসারে বিভিন্ন কার্যক্রম ছাড়াও সামাজিক সাংস্কৃতিক নানান অঙ্গনে রয়েছে প্রতিষ্ঠানটির অংশগ্রহণ। ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলের ‘ও’ লেভেল, ‘এ’ লেভেল পরীক্ষা গ্রহণই শুধু নয়, আইইএলটিএস পরীক্ষা গ্রহণ, লাইব্রেরি সেবা হিসেবে ব্রিটিশ কাউন্সিল অধিক পরিচিত হলেও এর কার্যক্রম অনেক বিস্তৃত। যুক্তরাজ্যে পড়তে ইচ্ছুকদের সার্বিক সহযোগিতা প্রদান, স্কলারশিপ প্রাপ্তি, সব বয়সী এবং পেশার লোকজনের জন্য নানান ধরনের ইংরেজী শিক্ষা কোর্স পরিচালনাসহ শিল্প, সামাজিক, সাংস্কৃতিক কর্মকা-ের মাধ্যমে বাংলাদেশের সঙ্গে বহুমুখী সম্পর্ক স্থাপনে ব্রিটিশ কাউন্সিলের কাজ করার অভিজ্ঞতা সেই ১৯৫১ সাল থেকেই। তাই দেশের বাস্তবতা ও সন্ত্রাস দমনে সার্বিক সক্ষমতার বিষয়টি যথাযথভাবে বিবেচনা না করে প্রতিষ্ঠান বন্ধের মতো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দেয়া দেশের সচেতন মানুষকে বিস্মিত করে। রবিবার সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাত শেষে ঢাকায় নিযুক্ত ব্রিটিশ হাইকমিশনার এ্যালিসন ব্লেইক অচিরেই ব্রিটিশ কাউন্সিল খুলে দেয়ার কথা সাংবাদিকদের জানান। অবশেষে অন্যায্য, অপেশাদার এবং অমানবিক সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করে নিল ব্রিটিশ কর্তৃপক্ষ। এই বিলম্বিত বোধোদয়ের জন্য তাদের ধন্যবাদ।
×