ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

বাঙালী মেয়ে দীপার ইতিহাস

প্রকাশিত: ০৬:৩৯, ৯ আগস্ট ২০১৬

বাঙালী মেয়ে দীপার ইতিহাস

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ অসাধারণ একটি কাজই করে ফেলেছেন। অভূতপূর্ব নৈপুণ্য দেখিয়ে প্রথম ভারতীয় হিসেবে জিমন্যাস্টিকসের কোন ইভেন্টের ফাইনালে উঠে গেছেন দিপা কর্মকার। তিনি ভল্ট ইভেন্টের কোয়ালিফিকেশন রাউন্ড পার হয়ে সেরা আটের শেষ প্রতিযোগী হিসেবে ঠাঁই পেয়েছেন ফাইনালে। এ কারণে পদক জয়ের সমান সুযোগ থাকছে তারও। ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের ২২ বছর বয়সী বাঙালী মেয়ে দিপা এখন ইতিহাস, এবার নতুন ও বিস্ময়কর ইতিহাস গড়ার সুযোগ পদক জিতে। সেজন্য সবাই অপেক্ষায় থাকবেন ১৪ আগস্ট পর্যন্ত। কারণ সেদিনই অনুষ্ঠিত হবে ভল্ট ইভেন্টের ফাইনাল। এর আগে কোন বাঙালী মেয়ে দূরে থাক, ভারতীয় কেউ শৈল্পিক জিমন্যাস্টিকসের ফাইনালে উঠতে পারেননি অলিম্পিকে। বরাবরই জিমন্যাস্টিকসে যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া, চীন, কানাডা, ব্রিটেনের দাপট দেখা গেছে। সে কারণে নিশ্চিতভাবেই এবার রিও অলিম্পিকে দিপার জন্যও ছিল কঠিন চ্যালেঞ্জ। কোয়ালিফিকেশন রাউন্ডে ছিলেন মোট ৯৮ প্রতিযোগী। তাদের মধ্যে ধাপে ধাপে প্রতিযোগিতার মধ্যে শেষ পর্যন্ত ফাইনালে জায়গা করে নেন ৮ প্রতিযোগী। এবার ভল্টের সেই ফাইনালে ১৬.০৫০ পয়েন্ট নিয়ে শীর্ষে আছেন অন্যতম ফেবারিট যুক্তরাষ্ট্রের ১৯ বছর বয়সী তরুণী সিমোন বিলেস। দুই নম্বরে ছিলেন কোরিয়ার হোং উন জং, তিনে সুইজারল্যান্ডের জিউলিয়া স্টিউমগ্রুবার, চারে রাশিয়ার মারিয়া পাসেকা, পাঁচে উজবেকিস্তানের ওকসানা চুসোভিতিনা, ছয়ে কানাডার শ্যালন ওলসেন, সাতে চীনের ওয়াং ইয়ান এবং সর্বশেষ ফাইনালিস্ট হিসেবে আটে দিপা। তিনি ১৪.৮৫০ পয়েন্ট স্কোর করে ফাইনাল নিশ্চিত করেন। শীর্ষ আট প্রতিযোগী ফাইনালে যাওয়ার সুযোগ পায়। সেক্ষেত্রে তিনটি উপ-বিভাগে প্রতিযোগিতা হয়েছে। দিপা তার বিভাগে ছিলেন ৬ নম্বরে। এ কারণে শেষ পর্যন্ত অপেক্ষায় থাকতে হয়েছে ফাইনালে যেতে পারবেন কিনা জানার জন্য। কারণ অন্য প্রতিযোগীদের ইভেন্ট শেষ না হওয়া পর্যন্ত জানার উপায় ছিল না সার্বিকভাবে ফাইনালে অংশ নেবেন কারা। যুক্তরাষ্ট্র, জাপান, রাশিয়া ও কানাডার ইভেন্ট শেষ হওয়ার পর শেষ পর্যন্ত সার্বিকভাবে অষ্টম প্রতিযোগী হিসেবে দিপা উঠে যান ফাইনালে। বাঙালী হিসেবেও দাঁড়িয়ে গেলেন বিশাল গৌরবের দ্বারপ্রান্তে। সবার চোখ এখন ১৪ আগস্টের দিকে। সেদিনই দীপা নামবেন চূড়ান্ত লড়াইয়ে। সেদিনই নিষ্পত্তি হবে পদকের। দীপার জন্য গোটা ভারতই এখন নামবে প্রার্থনায়। ভারতের অলিম্পিক ইতিহাসেই এ এক অনন্য নজির। ভল্টে দুর্দান্ত নৈপুণ্য দেখালেও অন্যান্য ইভেন্টে তেমন সুবিধা করতে পারেননি দিপা। আনইভেন বারসে ১১.৬৬৬ পয়েন্ট নিয়ে ৭৭তম, ফ্লোর এক্সারসাইজে ১২.০৩৩ পয়েন্ট নিয়ে ৭৫তম, ব্যালান্স বিমে ১২.৮৬৬ পয়েন্ট নিয়ে ৬৫তম এবং ব্যক্তিগত অল-এরাউন্ড ইভেন্টে ৫১.৬৬৫ পয়েন্ট নিয়ে ৫১তম হয়ে কোয়ালিফিকেশন রাউন্ড থেকেই ছিটকে গেছেন এ বাঙালী মেয়ে। কিন্তু ভারতের জন্য গর্ব বয়ে এনেনে ভল্ট ইভেন্টে দুর্দান্ত সাফল্য দিয়ে। এজন্য দেশের অনেক সেলিব্রিটি এবং ক্রীড়া সংশ্লিষ্ট বড় কমকর্তারা দিপার এ সাফল্যে সন্তোষ প্রকাশ করে সাফল্য কামনা করেছেন। দিপার কোচ বিশ্বের নন্দী জানালেন ফাইনালের আগে তিনি আর ঘুমাতেই পারবেন না। তিনি প্রতিক্রিয়ায় বলেন, ‘আমি অনুভব করছি যে আমরা কোটি কোটি ভারতীয় মানুষের স্বপ্ন বহন করছি। তারা হয়তো বুঝতেই পারছেন না এখানে পদক জেতাটা কত কঠিন দিপার জন্য।’ ২০১৪ কমনওয়েলথ গেমসে ব্রোঞ্জ জয়ের পর গত বছর বিশ্ব আসরে প্রথম ভারতীয় হিসেবে ফাইনালে উঠেছিলেন। মাত্র ০.০৪ পয়েন্টে এগিয়ে থেকে প্রথম ভারতীয় হিসেবে এবার অলিম্পিক জিমন্যাস্টিকসে অংশ নেয়ার সুযোগ পান দিপা।
×