ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

শোকের মাস

প্রকাশিত: ০৫:৪৫, ৯ আগস্ট ২০১৬

শোকের মাস

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ বাঙালী জাতির বেদনাবিধুর শোকের মাস আগস্টের আজ নবম দিন। এই মাসেই বাঙালী জাতিকে শোকের সাগরে ভাসিয়ে দিয়েছিল একাত্তরের পরাজিত শত্রুর এদেশী এজেন্টরা। তাই এই শোকের মাস এলেই প্রতিবছর আমাদের হৃদয় ভারাক্রান্ত হয়ে ওঠে। হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালী, বাঙালী জাতির অবিসংবাদিত নেতা ও তাঁর পরিবারের প্রায় সবাই পঁচাত্তরের পনেরো আগস্টে নিহত হয়েছিলেন কিছু বিপথগামী লোকের হাতে; যা আজও বাঙালী জাতিকে বেদনার্ত করে তোলে। যে বঙ্গবন্ধুর জন্ম না হলে বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রটির জন্ম হতো না। যে বঙ্গবন্ধুর জন্ম না হলে আমরা একটি স্বাধীন মানচিত্র, ভূখ- ও পাসপোর্ট পেতাম না; সেই বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা করে স্বাধীন দেশে যে কলঙ্কতিলক পরিয়েছিল, তাদের বিরুদ্ধে জাতি আজ সোচ্চার। যিনি সারাজীবন স্বপ্ন দেখেছিলেন উপমহাদেশের এই বদ্বীপ অঞ্চলে বসবাসকারী বাঙালীর একটি স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার। ’৫২, ’৫৪, ’৬২, ’৬৬, ’৬৯, ’৭১ সব আন্দোলনে যিনি ছিলেন আমাদের কা-ারী, সেই জাতির পিতাকেই আমরা হারিয়েছি ১৫ আগস্টের এই দিনটিতে। সমাজ ও রাজনীতিতে সবাই ‘নেতার’ বা ‘নায়কের’ স্থান করে নিতে পারে না। হাতেগোনা গুটিকয়েক মানুষের পক্ষেই কেবল তা সম্ভব হয়। তাদের মধ্যে অসাধারণ গুণাবলী সম্পন্নরা বড় নেতা হওয়ার যোগ্যতা অর্জন করেন। আর বড় নেতা হলেই একজন ব্যক্তি ইতিহাসের নেতা হয়ে ওঠে না। ইতিহাসের নেতা হওয়ার মতো যোগ্যতাসম্পন্ন মানুষের উদয়ও সব কালে, সব যুগে হয় না। ইতিহাস তার আপন তাগিদেই তার নেতা বা নায়কের উদ্ভব ঘটায়। তিনি হয়ে ওঠেন ইতিহাস রচনার প্রধান কারিগর-স্থপতি। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান শুধু ‘বড় নেতা’ ছিলেন না, তিনি ছিলেন যথার্থভাবেই ‘ইতিহাসের নেতা’ ও ‘ইতিহাসের মহানায়ক’। ইতিহাসই ঐতিহাসিক ব্যক্তিত্বের জন্ম দেয়। জনগণ ও ব্যক্তির ভূমিকা এভাবে পরস্পর পরিপূর্ণ হয়ে ওঠার প্রক্রিয়াতেই ইতিহাস রচিত হয়। বাংলাদেশের ইতিহাসে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভূমিকা ছিল সেরূপ নিয়ামক। তিনি একাধারে ইতিহাস রচনা করেছিলেন আবার একই সঙ্গে ইতিহাসের প্রক্রিয়াতেই তিনি রূপান্তরিত হয়েছিলেন বাংলাদেশের স্থপতি রূপে। মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ-ধারা ও তার ভিত্তিতে অর্জিত স্বাধীন বাংলাদেশের যেসব ঐতিহাসিক অর্জন- বঙ্গবন্ধু ছিলেন তার প্রতীক ও কেন্দ্রবিন্দু। এ বিষয়ে সব সন্দেহ ও বিতর্কের অবসান ঘটে গেছে বঙ্গবন্ধুর হত্যাকা-ের ঘটনার মধ্য দিয়ে। কোন ব্যক্তিগত হত্যাকা- হিসেবে ১৯৭৫’র ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করা হয়নি। একটি সুনির্দিষ্ট রাজনৈতিক লক্ষ্য চরিতার্থ করার জন্য বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করা হয়েছিল। লক্ষ্যটি ছিল দেশকে মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ-ধারা থেকে কক্ষচ্যুত করে পরাজিত পাকিস্তানী ধারা ফিরিয়ে আনা। মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ-ধারার ভিত্তিতে অর্জিত স্বাধীনতার প্রতীকী পুরুষ ও কেন্দ্রবিন্দুকে, তথা বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করা ছাড়া এ ধরনের উল্টোমুখী রাজনৈতিক ধারা সংগঠিত করা কোনভাবেই সম্ভব ছিল না। ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করার মধ্য দিয়ে মুক্তিযুদ্ধের চার রাষ্ট্রীয় মূলনীতি বদলে ফেলে দেশকে সাম্প্রদায়িক, সামরিক-স্বৈরাচারী, হত্যা-ক্যু ও ষড়যন্ত্রের রাজনীতির পথে টেনে নামানো হয়েছিল। বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করার সঙ্গে সঙ্গেই রাষ্ট্রীয় নীতি যে বদলানো হয়েছিল, তার দ্বারাই প্রমাণ হয় যে রাষ্ট্রীয় নীতি বদলানোর উদ্দেশেই বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করা হয়েছিল। বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করা সম্ভব হলেও জনগণকে হত্যা করা যায়নি। তাই মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ-ধারা আজও জীবন্ত। বঙ্গবন্ধু নিরন্তর জাগ্রত রয়েছেন কোটি মানুষের অন্তরে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব চিরঞ্জীব হয়ে থাকবেন কোটি জনতার অন্তরে। জনতার মৃত্যু নেই, তাই মৃত্যু নেই বঙ্গবন্ধুরও। তাই শোকের মাস আগস্টে প্রতিদিন, প্রতিমুহূর্তে কৃতজ্ঞ জাতি শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করছেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে।
×