ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

নামে নামে টানে?

ইমিগ্রেশনে তামিম নামের যাত্রীরা বিপাকে

প্রকাশিত: ০৫:৪৪, ৯ আগস্ট ২০১৬

ইমিগ্রেশনে তামিম নামের যাত্রীরা  বিপাকে

আজাদ সুলায়মান ॥ গুলশান ও শোলাকিয়া হামলার নেপথ্য নায়ক তামিম চৌধুরীকে মোস্ট ওয়ান্টেড ঘোষণা করার পর দেশের বিভিন্ন ইমিগ্রেশন কাউন্টারে তামিম নামের যাত্রীরা বিপাকে পড়ছেন। পাসপোর্টে তামিম নাম থাকলেই দীর্ঘ সময় নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে। তামিম নামের নিরীহ সব যাত্রীকেই বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের ইমিগ্রেশনে এমন তিক্ত অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হচ্ছেন তামিম নামধারী সব যাত্রীই। এদিকে ইমিগ্রেশন সূত্র জানিয়েছে, তামিম চৌধুরী ২০১৩ সালের ৫ অক্টোবর কানাডা থেকে দুবাই হয়ে ঢাকায় আসে। সেদিন হযরত শাহজালাল বিমানবন্দরের ইমিগ্রেশন কাউন্টারে কর্তবরত কর্মকর্তাদের কাছে সন্দেহভাজন মনে হওয়ার পরও তাকে আটক করা হয়নি। এখন তাকে ধরার জন্য ২০ লাখ টাকার পুরস্কারসহ মোস্ট ওয়ান্টেড ঘোষণা করে খোঁজা হচ্ছে। এদিকে দেশের বাঘা বাঘা গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর তদন্তে তামিম চৌধুরীর সম্পর্কে ভয়ঙ্কর ও চাঞ্চল্যকর তথ্য উঠে আসছে। এ সম্পর্কে একটি সূত্র জানায়, গুলশানের হলি আর্টিজানে হামলার কদিন আগে তামিম চৌধুরী বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার ই-ব্লকের ৬নং রোডের একটি বাসায় আত্মগোপনে থেকে জঙ্গীদের নিয়ে একাধিকবার বৈঠক করে। ওই বাসাতে বসেই হামলার ছক চূড়ান্ত করা হয়। এমনকি ১ জুলাই সন্ধ্যায় হলি আর্টিজানে হামলা চালানোর উদ্দেশ্যে ওই বাসা থেকে তারা সবাই এক সঙ্গে বের হয়ে গুলশানের ৭৯ রোডের মাথায় পর্যন্ত আসে। এখান থেকে অস্ত্রধারী জঙ্গীদের গুডবাই জানিয়ে বিদায় নেয় তামিম চৌধুরী। জানা যায়, তামিম চৌধুরী পরিকল্পনটা এমন ছিল যে, পুলিশ যদি তাদের বাধা দেয়, তাহলে দুজন জঙ্গী পুলিশের ওপর বোমা ও গুলি হামলা চালিয়ে প্রয়োজনে জীবন দেবে। বাকিরা তখন হলি আর্টিজানে গিয়ে হামলা চালাবে। কিন্তুুুুুু তাদের গুলশানের এতগুলো নিরাপত্তা চৌকির কোনটাতেই চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হয়নি। গোয়েন্দা সংস্থাগুলো তদন্তে আরও স্পষ্ট হয়ে উঠেছেÑ গুলশান হামলার পরও তামিম চৌধুরী বনশ্রীতেই ছিল। সেখান থেকে সে বিভিন্ন মাধ্যমে গোয়েন্দাদের কাছে শোলাকিয়া হামলার বিষয়ে হুমকি দিতে থাকে। হুমকির মুখে গোয়েন্দারা শোলাকিয়ায় ব্যাপক নিরাপত্তা কর্মী মোতায়েন করে। এটা নিশ্চিত হয়েও তামিম চৌধুরী ৭-৮ জন জঙ্গী ক্যাডারসহ একটি সিএনজি অটো রিক্সাযোগে সেখানে হাজির হয়। শোলাকিয়া মাঠের নিকটবর্তী একটি পুলিশ চেক পোস্টের কাছে ওদের নামিয়ে হামলার সর্বশেষ ব্রিফিং দিয়ে চলে আসেন এবং সেদিনই ঢাকায় ফিরে আসে। একটি গোয়েন্দা সংস্থার দেয়া তথ্যে জানা যায়, বর্তমানে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা দফতরে ৮ দিনের রিমান্ডে থাকা হাসনাত করিম ও কানাডা প্রবাসী তাহমিদ হাসিব খানকে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদেও তামিম চৌধুরী বিষয়ে জানতে চাওয়া হচ্ছে। বিশেষ করে তাহমিদ ও তামিম চৌধুরী দু’জনই কানাডা প্রবাসী হওয়ায় তাদের মধ্যে কোন যোগসাজশ ছিল কিনা সেটাই নিশ্চিত হওয়া গেলে তদন্তে নতুন মোড় নেবে। যদিও এখন পর্যন্ত তামিম চৌধুরীকে চেনে না বলেই দাবি করছে তাহমিদ। গোয়েন্দারা কানাডার মন্ট্রিল বিশ্ববিদ্যালয়েও খোঁজ লাগিয়েও এ বিষয়ে নিশ্চিত হতে পারেনি। জানা যায়, গুলশান হামলার দিন সকালে কানাডা থেকে ঢাকায় আসে তাহমিদ। দুপুরে বাসায় ঘুমায়। সন্ধ্যার সময় পাঞ্জাবি কিনতে বাসা থেকে বের হয়ে যায় গুলশান। হলি আর্টিজানের বাসার সামনে একটি বাসায় তার বান্ধবী তানাহা ও ফাইরুজ তাকে ফোন করে বাসায় চা খেতে ডাকে। তাহমিদ সেখানে গিয়ে ইফতার শেষে যখন চলে আসছিল- তখন ফাইরুজ ও তানাহা তাকে হলি আর্টিজানে গিয়ে আইসক্রিম খেতে বলে। সেখানে গিয়ে আইসক্রিম খাবার সময়েই জঙ্গীরা সেখানে চড়াও হয়। তারপর সবাই জিম্মি। পরদিন অপারেশন থান্ডার বোল্ডের মাধ্যমে যাদের জীবিত উদ্ধার করে ডিবিতে নিয়ে যাওয়া হয়, তাদের মাঝে তারা তিনজনও ছিলেন। পরে ফাইরুজ ও তাহানাকে ছেড়ে দিলেও তাহমিদ আটকা পড়ে। ফাইরুজের ঘনিষ্ঠ সূত্র জানায়, তাহমিদ কানাডা থেকে সরাসরি নেপালে ইউনিসিফের একটি ইন্টারনশিপ করতে রওনা হওয়ার কথা ছিল ৯ জুলাই। কিন্তু মা তাকে নেপাল যাবার আগে ঢাকায় এসে ঈদটা করে যাওয়ার জন্য বলেন। মায়ের পীড়াপীড়িতেই ঢাকায় আসে। গোয়েন্দা সংস্থার জিজ্ঞাসাবাদেও বরাবরই তাহমিদ এ ধরনের বক্তব্য দিচ্ছেন বলে জানা যায়।
×