ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধির প্রস্তাবে সাড়া দেয়নি বিইআরসির কারিগরি মূল্যায়ন কমিটি

প্রকাশিত: ০৫:৪২, ৯ আগস্ট ২০১৬

গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধির প্রস্তাবে সাড়া দেয়নি বিইআরসির  কারিগরি  মূল্যায়ন কমিটি

স্টাফ রিপোর্টার ॥ বিতরণ কোম্পানি তিতাসের গ্যাসের দাম বৃদ্ধির প্রস্তাবে সাড়া দেয়নি বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের (বিইআরসি) কারিগরি মূল্যায়ন কমিটি। সোমবার দিনভর শুনানিতে উপস্থাপিত কমিশনের মূল্যায়ন প্রতিবেদনে বলা হয়Ñ গ্যাস বিক্রিতে তিতাস যে পরিমাণ লাভ করছে তাতে নতুন করে দাম বৃদ্ধির প্রয়োজন নেই। যদিও ২০১৫ তে গ্যাসের দাম বৃদ্ধির শুনানিতে কমিশনের কারিগরি কমিটি একই ধরনের মূল্যায়ন প্রতিবেদন দেয়ার পরও কমিশন গ্যাসের দাম বৃদ্ধি করেছিল। কাওরানবাজারের টিসিবি মিলনায়তনে তিতাস গ্যাস কোম্পানির দাম বৃদ্ধির প্রস্তাবের ওপর শুনানি হয়েছে। শুনানিতে কমিশনের চেয়ারম্যান এ আর খান এবং সদস্য মাকসুদুল হক ও রহমান মুর্শেদ উপস্থিত ছিলেন। কমিশনের কাছে তিতাস গ্যাস কর্তৃপক্ষ এবং ভোক্তা ও ব্যবসায়ী প্রতিনিধিরা তাদের যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করেন। ব্যবসায়ী প্রতিনিধিরা কমিশনের সঙ্গে আলোচনায় বলেন, গ্যাস স্বল্পতায় দিনের অনেক সময়ই কলকারখানার উৎপাদন বন্ধ থাকে। যখন গ্যাস আসে তখন চাপ এত কম যে কারখানা চালু করা সম্ভব হয় না। মাস শেষে বড় অঙ্কের বিল গুনতে হয়। অর্থের বিনিময়ে তিতাসের কাছ থেকে মানহীন সেবা পাওয়ার কথা তুলে ধরে বলা হয়, তিতাস সব সময় সিস্টেম লস হ্রাসের জন্য ওভারবিলিং করে। গ্যাসের বদলে বাতাস দিয়ে টাকা নিয়ে যায় তিতাস। শিল্প মালিকরা বলেন, তিতাসের ব্যবস্থাপনা পরিচালকদের সঙ্গে দফায় দফায় আলোচনা করে ইভিএম মিটার সংযোজন করার অনুরোধ করা হয়েছে। কোন কোন কারখানায় তা স্থাপন করা হলেও তিতাস ইভিএমে বিল করে না। ব্যবসায়ীরা বলেন, গ্যাস কোম্পানিগুলো লাভে রয়েছে। কিন্তু ভবিষ্যত ব্যয়ের যুক্তি দেখিয়ে এখনই দাম বাড়াতে চাইছে। এ যুক্তিতে দাম বাড়ালে দেশের অর্থনীতির পাশাপাশি ব্যক্তিজীবনেও বিরূপ প্রভাব পড়বে। জ্বালানি বিশেষজ্ঞ ও বুয়েটের সাবেক অধ্যাপক নুরুল ইসলাম, কনজুমার এ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) জ্বালানি বিশেষজ্ঞ ড. এম শামসুল আলম, বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস এ্যাসোসিয়েশনের (বিটিএমএ) সভাপতি তপন চৌধুরী, তিতাস গ্যাসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মীর মসিউর রহমান, সিএনজি ওনার্স এ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মাসুদ খান, তোয়ালে প্রস্তুতকারকদের সংগঠন বিটিটিএলএমইএর সাবেক সভাপতি খোন্দকার আব্দুল মুক্তাদির ছাড়াও শেয়ারবাজারের বিনিয়োগকারীরা শুনানিতে তাদের বক্তব্য উপস্থাপন করেন। শুনানি চলাকালে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ ব্রোকার্স এ্যাসোসিয়েশনের কর্মকর্তা মোশতাক আহমেদ সাদেক বলেন, তিতাস পাবলিক লিমিটেড কোম্পানি হিসেবে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ এক্সচেঞ্জ কমিশনের তালিকাভুক্ত। গত বছর বিইআরসি তিতাসের বিতরণ মার্জিন কমিয়ে দেয়ায় তিতাসের শেয়ার প্রতি আয় কমে গেছে। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে লাখ লাখ বিনিয়োগকারী। এ সময় শেয়ারবাজারের বিনিয়োগকারীরা তাদের বক্তব্য তুলে ধরলে বিইআরসি চেয়ারম্যান বলেন, এ বিষয়ে পরে আলোচনা হবে। শুনানির শুরুতে তিতাসের পক্ষ থেকে গ্যাসের দাম বৃদ্ধির প্রস্তাব কমিশনের সামনে তুলে ধরা হয়। এতে কোম্পানি গ্রাহকভেদে ১৪০ শতাংশ পর্যন্ত দাম বৃদ্ধির প্রস্তাব করা হয়। একই সঙ্গে বিতরণ মার্জিন প্রতি ঘনমিটার গ্যাসের জন্য ২৩ পয়সা থেকে বাড়িয়ে এক টাকা তিন পয়সা করার প্রস্তাব করে কোম্পানিটি। কর প্রদান, বেতন বৃদ্ধি, পেট্রোবাংলা কর্তৃক আন্তর্জাতিক কোম্পানির গ্যাসের দাম বৃদ্ধির প্রস্তাবসহ বিভিন্ন বিষয় বিবেচনায় রেখে এ আবেদন করা হয়েছে বলে জানায় তিতাসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক। তাদের প্রস্তাব বিবেচনা করে কমিশনের কারিগরি মূল্যায়ন জানায় ২০১৬-১৭ অর্থবছরের জন্য তিতাসের রাজস্ব চাহিদা প্রতি ঘনমিটারে ৪২ পয়সা। কোম্পানিটির বিদ্যমান আয় ঘনমিটারে ৬৩ পয়সা। অর্থাৎ এখন তিতাসের ঘনমিটারে লাভ ২১ পয়সা। ফলে নতুন করে দাম বৃদ্ধির সুপারিশ করেনি মূল্যায়ন কমিটি। শুনানিতে ক্যাবের উপদেষ্টা অধ্যাপক শামসুল আলম বলেন, তিতাসসহ গ্যাস কোম্পানিগুলো লাভেই রয়েছে। তারপরও অব্যবস্থপনার কারণে তাদের ব্যয় কিছুটা বেড়েছে। এখন জনগণের কাছ থেকে অর্থ নিয়ে এই ঘাটতি মেটাতে চায়। এটা মেনে নেয়া সম্ভব নয়। তিনি জানান, তিতাস এখনই সব ব্যয় বাদে বছরে ৪০০ কোটি টাকার মতো লাভ করছে। কর্মীরা কয়েকটি বোনাস পাচ্ছে। তাই দাম বাাড়নোর প্রস্তাব গ্রহণযোগ্য নয়। তপন চৌধুরী বলেন, বর্তমানে অধিকাংশ টেক্সটাইল মিল দক্ষ ক্যাপটিভ জেনারেটর ব্যবহার করছে। তারা কো-জেনারেশন পদ্ধতিতে জেনারেটরের বাড়তি তাপকে কাজে লাগাচ্ছেন। এতে গ্যাসের অপচয় হ্রাস পেয়েছে। তারপরও ক্যাপটিভের ক্ষেত্রে ১৩০ শতাংশ দাম বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। তিনি বলেন, অদক্ষ সার কারখানা বন্ধ করে শিল্প খাতে গ্যাস সরবরাহ বাড়ানো উচিত। এ সময় কমিশনের চেয়ারম্যান এআর খান তিতাসকে অদক্ষ শিল্প কারখানার তালিকা সরবরাহ করার নির্দেশ দেন। তিনি বলেন, প্রয়োজন হলে অদক্ষ কারখানা বন্ধ করে দেয়া হবে। সিএনজি ওনার্স এ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মাসুদ খান বলেন, সিএনজি মালিকরা মাত্র ৫ শতাংশ গ্যাস ব্যবহার করে সর্বোচ্চ ২২ শতাংশ কর দেয় সরকারকে। তারপরও আামদের প্রতি বিমাতা সুলভ আচরণ করা হচ্ছে। ডিজেলের সঙ্গে তুলনা করলে আমরা অনেক পিছিয়ে পড়েছি। এরপরও এবার ৮৩ শতাংশ দাম বাাড়নোর প্রস্তাব যৌক্তিক নয় বলে উল্লেখ করেন তিনি। ব্যবসায়ী প্রতিনিধি ও কমিশনের জেরার মুখে তিতাস কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে গ্যাসের ঘাটতির কারণে ও বিতরণ সীমাবদ্ধতার জন্য তাদের কম চাপে গ্যাস দিতে হয়। এতে কোম্পানির সিস্টেম গেইন হয়। বছরের শেষে এই লাভের পরিমাণ কয়েক শ’ কোটি টাকা। কোম্পানিটি জানিয়েছে তাদের তিন হাজার ১০০ বাণিজ্যিক সংযোগের মধ্যে ১৮৭ টিতে ইভিসি মিটার বসানো হয়েছে।
×