ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

শেষ অলিম্পিক মিশনে ফেলপসের গলায় স্বর্ণ ঝুলল

পদকের লড়াইয়ে শুরু থেকেই যথারীতি যুক্তরাষ্ট্রের দাপট

প্রকাশিত: ০৫:৪১, ৯ আগস্ট ২০১৬

পদকের লড়াইয়ে শুরু থেকেই যথারীতি যুক্তরাষ্ট্রের দাপট

রিও এ্যাকুয়াটিক সেন্টারে উৎসবের আমেজ। যুক্তরাষ্ট্র, অস্ট্রেলিয়া ও চীনা দর্শকে ঠাসা গ্যালারি। কমতি নেই ব্রিটেন, ইতালি, হাঙ্গেরি, স্বাগতিক ব্রাজিলসহ অনেক দেশের ক্রীড়াপ্রেমীরা। অলিম্পিক গেমসের অন্যতম আকর্ষণ সাঁতারে মাইকেল ফেলপস, ক্যাথলিন (কেট) লিডেকি, মিসি ফ্রাঙ্কলিনের মতো বিশ্ব খ্যাত সাঁতারুদের লড়াই মিস করে কেউ? পাশাপাশি তারকাদের স্বচক্ষে দেখতে পারা, এটাও কম আনন্দের নয়। আর এ কারণেই উৎসুক দর্শকের ভিড়টা বেশি চোখে পড়ল এ্যাকুয়াটিক সেন্টারে। মধ্যরাত পর্যন্ত নারী-পুরুষের উপস্থিতি এখানকার পরিবেশটায় ভিন্ন এক আমেজ তৈরি করে। নিজ দেশ তথা প্রিয় সাঁতারুদের উৎসাহ যোগাতে জাতীয় পতাকা হাতে নানা সেøাগান, কড়তালি মুখরিত করে তোলে সাঁতারের ভেন্যু। ব্রাজিল সময় রবিবার রাত ১২টায় স্বর্ণ পদকের শেষ লড়াইটা ছিল পুরুষ ৪ল্প১০০ মিটার রিলের। শেষটায় বাজিতাম করে পদক তালিকায় চীনকে পেছনে ফেলে শীর্ষে ওঠে যায় যুক্তরাষ্ট্র। রাতের শেষ স্বর্ণ পদকটি জিতে ফেলপস বাহিনী। যার নায়ক তো জলদানব ফেলপসই। তবে অন্য তিন সতীর্থকেও খাটো করে দেখার সুযোগ নেই। দলীয় প্রতিদ্বন্দ্বিতার সাফল্যে কৃতিত্বের দাবিদার সবাই। তবে ফিনিশিংটা ছিল ফেলপসকে দিয়ে। আর এ কারণে আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠলেন তিনি। রিলের এই স্বর্ণ পদক জয়ের মধ্যে দিয়ে মাইকেল ফেলপস শুরু করলেন তার অভীষ্ট লক্ষ্য অর্জনের মিশন। রিও হচ্ছে তার ক্যারিয়ারের শেষ অলিম্পিক। এমনিতেই ২২ পদক শোকেসে তুলে রেকর্ড বুকে নাম লিখে রেখেছেন এই আমেরিকান। সেটা আরও আলো ঝলমলে করে তুলতে জীবনের শেষ তকমাটা দেখাতেই মুখিয়ে আছেন রিওতে। যাত্রাটাও অসাধারণ। ফিনিশিং মার্ক স্পর্শ করার সঙ্গে সঙ্গে পানির মধ্যেই দু’হাতে জয়ের অনুভূতিটা তিনি প্রকাশ করলেন বেশ আবেগের মধ্যে। অন্যদিকে গ্যালারিতে মার্কিন দর্শকদের মুহুর্মুহু করতালি। উৎসবে মাতোয়ারা দর্শকদের উদ্দেশ্যে হাত নেড়ে শুভেচ্ছা বিনিময় করতেও দেখা গেল ফেলপসকে। তবে একটা বিষয় পরিষ্কার বয়স মানুষের জীবনের চাওয়া পাওয়ার বড় একটা ফ্যাক্টর। ৩১ বছর বয়সী ফেলপসকে দেখে সেটা আরও পরিষ্কার হলো। রিলের হিটে কোয়ালিফাই করার জন্য যুক্তরাষ্ট্র দলে ছিলেন না তিনি। দল অবধারিত কোয়ালিফাই করায় খেলছেন সরাসরি স্বর্ণ পদকের জন্য। খোদ মার্কিন সাংবাদিকরাই বলছিলেন, শক্তি জমিয়ে রাখতেই হিটে অংশ নেননি ফেলপস। কারণ বয়স, বিষয়টা ফেলপস নিজেও উপলব্ধি করেছিলেন। চোখের সামনে সাঁতারের এই মহাতারকা পানি থেকে ডাঙ্গায় ওঠার পর দেখা গেল শরীরের, হাতের মাংসপেশি আগের মতো নেই। অনেকটা ভাঁজ পড়েছে, সুঠামদেহী বুকের চামড়ার মধ্যেও কিছুটা খাঁজকাটা ভাঁজ, ঝুলে গেছে শক্ত-সবল পেশি। অর্থাৎ মুখম-লসহ সবকিছুতেই বার্ধক্যের ছাপ। ফেলপস নিজেও মানছেন বয়স হয়েছে। আর এ কারণেই ক্যারিয়ারের ইতি টানতে প্রস্তুত রিওতে। বর্ণিল উদ্বোধনীর পর পদক যুদ্ধের দ্বিতীয় দিনে ৩ স্বর্ণ পদক, দুই রৌপ্য ও তিন ব্রোঞ্জসহ মোট ৮ পদক জিতে সন্ধ্যা অবধি পয়েন্ট তালিকার শীর্ষে শোভা পাচ্ছিল এশিয়ার গর্ব চীনের নাম। কিন্তু ফেলপসদের কীর্তিতে সমানসংখ্যক স্বর্র্ণ জিতেও টেবিলের শীর্ষে চলে গেছে যুক্তরাষ্ট্র। মোট পদক ১২। এতে রয়েছে পাঁচ রৌপ্য ও চার ব্রোঞ্জ। তবে দাপটে খুব একটা পিছিয়ে নেই অস্ট্রেলিয়া। স্বর্ণ পদকের দিক থেকে তারাও যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের সমান, তিন। তিন স্বর্ণ পদকের সঙ্গে আছে সমান সংখ্যক ব্রোঞ্জ। দুটি করে স্বর্ণ পদক ছিনিয়ে ঘারের ওপর নিঃশ্বাস ছাড়ছে ইতালি, হাঙ্গেরি ও কোরিয়া। সব মিলিয়ে পদক লড়াইয়ে এখন যুদ্ধের দামামা। তবে কষ্টে আছে রাশিয়া, পদক যুদ্ধে অন্তত দ্বিতীয় স্থানে থাকার দাবিদার হলেও ঝুলিতে এখনও পর্যন্ত মাত্র একটি। আসলে ডোপ কেলেঙ্কারির নিষেধাজ্ঞায় দলটির অংশগ্রহণ নিয়েই সৃষ্টি হয়েছিল অনিশ্চয়তা। শেষ পর্যন্ত গেমস কূটনীতির বেড়াজাল থেকে বেরিয়ে বিপর্যস্ত এক রাশিয়াকে দেখা যাচ্ছে এবার রিও অলিম্পিকে। যদিও সামনে এখনও প্রচুর সময়। ফলে সুযোগ রয়েছে রাশান ক্রীড়াবিদদের ঘুরে দাঁড়ানোর। এখন দেখার বিষয় মানসিক যন্ত্রণামুক্ত হয়ে কতদূর এগোতে পারেন তারা। গেমসের জনপ্রিয় খেলা জিমন্যাস্টিক্সের সেমিফাইনালে গড়িয়ে বেশ কিছু বিষয়ে। এতেও দাপট যুক্তরাষ্ট্রের। তবে রাশিয়া এখানে পিছিয়ে নেই। পাশাপাশি ব্রিটেন। অপেক্ষা এখন চূড়ান্ত পর্যায়ের। অর্থাৎ স্বর্ণ পদকের এই কসরতে কার ভাগ্যে কি জুটে। যদিও যুক্তরাষ্ট্রকে হয় তো পেছতে ফেলতে পারবে না কোন দেশ। সিমোন বিলেসরাই এগিয়ে থাকবেন যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান আরও সুসংহত করতে। পদক তালিকায় অন্য দেশগুলো ওঠানামা করলেও যুক্তরাষ্ট্রকে পেছনে ফেলা বরাবরের মতো এবারও কঠিন। তবে ভঙ্গুর রাশিয়ার কারণে গত লন্ডন অলিম্পিকের চমক অব্যাহত রাখতে বাড়তি সুবিধা পাচ্ছে ব্রিটেন। গেমসের সবচেয়ে বেশি স্বর্ণ পদক এ্যাথলেটিক্সে। আকর্ষণের অন্যতম একটি এ্যাথলেটিক্সে জ্যামাইকার মহানায়ক উসাইন বোল্ট স্প্রিন্টের দুই স্বর্ণ ছিনিয়ে নিলেও অবশিষ্ট পদকগুলোর ভাগাভাগিতে এগিয়ে থাকার সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি যুক্তরাষ্ট্র ও ব্রিটেনের। পুরুষ-মহিলা দুই বিভাগেই ট্র্যাক এ্যান্ড ফিল্ডের রাজত্বটা থাকবে এই দুই দেশের। তবে পুরুষ ১০০ ও ২০০ মিটার স্প্রিন্ট বাদ দিয়ে। এ লড়ইয়ে বোল্ট কাউকে জমা খরচ দেবে বলে মন হয় না। গেমসের সবচেয়ে মূল্যবান এ দুটি স্বর্ণ পদকের নাম বিদ্যুত বোল্টই থাকবে। বেজিংয়ের পর লন্ডন, গত দুই অলিম্পিকের এ দুটি বিষয়ে টানা চমক উসাইন বোল্টের। এবার তার রেকর্ড হ্যাটট্রিক পূরণের অলিম্পিক। যার জন্য মুখিয়ে আছেন এই জ্যামাইকান। পাশাপাশি ৪ল্প১০০ মিটার রিলে। ট্র্যাক এ্যান্ড ফিল্ডের লড়াই ১১ আগস্ট থেকে শুরু হলেও মূল চমক পরেরদিন। কারণ বোল্ট থাকছেন না প্রথম দিনে। দ্বিতীয় দিন শুরু করবেন গতি-ক্ষিপ্রতার তেলেসমাতি।
×