ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

যুদ্ধাপরাধী বিচার

মুক্তাগাছায় পাঁচ রাজাকার গ্রেফতার

প্রকাশিত: ০৫:২৮, ৯ আগস্ট ২০১৬

মুক্তাগাছায় পাঁচ রাজাকার  গ্রেফতার

স্টাফ রিপোর্টার ॥ একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের সময় হত্যা, গণহত্যা, নির্যাতনসহ মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ময়মনসিংহের মুক্তাগাছা উপজেলার আব্দুস সালামসহ ছয় রাজাকারের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছে ট্রাইব্যুনাল। এর মধ্যে ৫জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। অন্যদিকে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে অভিযুক্ত কিশোরগঞ্জ ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ার দুই রাজাকার সৈয়দ মোঃ হোসাইন ও মোঃ মোসলেম প্রধানের বিরুদ্ধে প্রসিকিউশনের দশম সাক্ষী জবানবন্দীতে বলেছেন, আসামিদের নির্দেশে মুক্তিয্দ্ধোা আব্দুল মালেককে হত্যা করা হয়। জবানবন্দী শেষে আসামি পক্ষের আইনজীবী সাক্ষীকে জেরা করেন। পরবর্তী সাক্ষীর জন্য সোমবার দিন নির্ধারণ করা হয়েছে। চেয়ারম্যান বিচারপতি আনোয়ারুল হকের নেতৃত্বে তিন সদস্য বিশিষ্ট আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ সোমবার এ আদেশ প্রদান করেছেন। সোমবার মুক্তাগাছার ৬ রাজাকারের বিরুদ্ধে গ্রেফতারী পরোয়ানা জারি করা হয়েছে। যাদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারী পরোয়ানা জারি করা হয়েছে তারা হলো, আব্দুস সালাম, শমসের কবির, সুরুজ আলী কবির, জয়নুল উদ্দিন, আব্দুল রহিম ও জালাল উদ্দিন। এর মধ্যে ৫ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। মামলার প্রসিকিউটর আবুল কালাম বলেন, এরা একাত্তরের মুক্তাগাছায় হত্যাসহ বিভিন্ন ধরনের মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করে। আবুল কালাম আরও জানান, মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) এএসপি রুহুল আমীন আসামিদের বিরুদ্ধে চলতি বছরের ১৭ মে থেকে তদন্ত শুরু করেন। কিশোরগঞ্জের দুই রাজাকার একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে অভিযুক্ত কিশোরগঞ্জ ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ার দুই রাজাকার সৈয়দ মোঃ হোসাইন ও মোঃ মোসলেম প্রধানের বিরুদ্ধে প্রসিকিউশনের দশম সাক্ষী জবানবন্দীতে বলেছেন, আসামিদের নির্দেশে মুক্তিয্দ্ধোা আব্দুল মালেককে হত্যা করা হয়। জবানবন্দী শেষে আসামি পক্ষের আইনজীবী সাক্ষীকে জেরা করেন। পরবর্তী সাক্ষীর জন্য সোমবার দিন নির্ধারণ করা হয়েছে। চেয়ারম্যান বিচারপতি আনোয়ারুল হকের নেতৃত্বে তিন সদস্যবিশিষ্ট আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ সোমবার এ আদেশ প্রদান করেছে। এ সময় প্রসিকিউশন পক্ষে প্রসিকিউটর ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজ প্রসিকিউটর রেজিয়া সুলতানা চমন উপস্থিত ছিলেন। আসামি পক্ষে ছিলেন এ্যাডভোকেট আব্দুস সোবহান তরফদার। সাক্ষী তার জবানবন্দীতে বলেন , আমার নাম আব্দুল হেকিম। আমার বর্তমান বয়স আনুমানিক ৭১ বছর। আমার ঠিকানা গ্রাম- গুরুই, থানা- নিকলী, জেলা- কিশোরগঞ্জ। আমি লেখাপড়া করি নাই। বর্তমানে আমি কৃষি কাজ করি। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় আমাদের এলাকার আব্দুল মোতালেব ওরফে বসু বাহিনীর (মুক্তিযোদ্ধাদের বাহিনী) সহযোগী হিসেবে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করি। ১৯৭১সালের ২০ ভাদ্র সকাল আনুমানিক ৭টার সময় একটি লঞ্চ ও দুইটি নৌকাযোগে পাকিস্তান আর্মি, আসামি মোঃ মোসলেম প্রধান ও সৈয়দ মোঃ হোসাইনসহ রাজাকাররা ইচব আলীর বাড়ির ঘাটে এসে নামে। ঐ সময় আমরা গুরুই গ্রামের পৃর্বপাড়ার দক্ষিণে বটতলীতে অবস্থান করছিলাম। তখন পাকিস্তান আর্মি ও রাজাকাররা ঐ ঘাটে নেমে গুলিবর্ষণ করলে আমরাও তখন পাল্টা তাদের লক্ষ্য করে গুলি করতে থাকি। ১০/১৫ মিনিট পরে আমাদের গোলাগুলি ফুরিয়ে গেলে রেহমত আলীর বাড়ির পশ্চিম পাশে দিঘির পানিতে দলের (কচুরিপানা) মধ্যে আত্মগোপন করি। সাক্ষী বলেন, আত্মগোপন অবস্থায় দেখতে পাই পাকিস্তান আর্মিরা ও আসামি সৈয়দ মোঃ হোসাইন ও মোসলেম প্রধানসহ রাাজাকাররা কয়েকজন লোককে ধরে এনে রেহমত আলীর বাড়ির দক্ষিণ পাশে বটতলায় জড়ো করছে। এর কিছুক্ষণ পর সেখানে গুলির আওয়াজ শুনতে পাই। একই সঙ্গে জড়ো করা লোকদের মধ্যে এক এক জনকে মাটিতে পড়ে যেতে দেখি। এর পর সেখানে গিয়ে ১৬টি লাশ পড়ে থাকতে দেখি। ১৯৭১ সালের ১ কার্তিক আসরের নামাজের কিছু পর আমাদের কমান্ডার বসু আমাদের জানায়, নিকলী থানা সদরে মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল মালেককে আসামি মোঃ মোসলেম প্রধানসহ কয়েকজন রাজাকার আসামি সৈয়দ মোঃ হোসাইনের নির্দেশে হত্যা করে।
×