ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

পদবঞ্চিতদের উদ্দেশে ফখরুল

বিক্ষোভ করে কোন লাভ হবে না, কাউন্সিল পর্যন্ত অপেক্ষা করুন

প্রকাশিত: ০৫:২৫, ৯ আগস্ট ২০১৬

বিক্ষোভ করে কোন লাভ হবে না, কাউন্সিল পর্যন্ত অপেক্ষা করুন

স্টাফ রিপোর্টার ॥ বিএনপির কমিটি নিয়ে দলের মধ্যে ক্ষোভ-হতাশা থাকলেও ঘোষিত কমিটি নিয়েই আগামী তিন বছর রাজনৈতিক কর্মসূচী পালন করে যাবে বিএনপি। দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, যারা কমিটিতে বঞ্চিত হয়েছেন, যাদের মূল্যায়ন করা হয়নি বিক্ষোভ করলে তাদের কোন লাভ হবে না। তাদের অবশ্যই অপেক্ষা করতে হবে আগামী কাউন্সিল পর্যন্ত। চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া কাউন্সিলের দেয়া ক্ষমতা বলেই কমিটি গঠন করেছেন উল্লেখ করেন তিনি। কমিটিতে সবাইকে মূল্যায়ন করা তার পক্ষে সম্ভব হয়নি। তবে বিএনপির কমিটিতে যোগ্য নেতাদের পদ না পাওয়ার বিষয়টিও স্বীকার করে নিয়েছেন তিনি। একই সঙ্গে পদবঞ্চিতদের মূল্যায়ন বিষয়ে কোন সুখবর দিতে পারেননি। তিনি বলেন, একবার কমিটি দেয়া হয়ে গেছে। এ বিষয়ে এখন কিছু করার নেই। বিএনপির পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণার পর সোমবার প্রথমবারের মতো পল্টন দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আসেন তিনি। এ সময় কমিটি নিয়ে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাবে এসব কথা বলেন। তিনি বলেন, কোন ব্যক্তি বা কেউ যদি মনে করেন আমি বঞ্চিত হয়েছি, তাহলে তার উচিত হবে অপেক্ষা করা পরবর্তী কাউন্সিলের জন্য। তবে উপকমিটিতে অনেক যোগ্য নেতাদের স্থান দেয়া হবে। যারা বঞ্চিত হয়েছেন তারা সেখানে আসবেন বলে উল্লেখ করেন তিনি। গত শনিবার দলের মহাসচিব বিএনপির পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করেন। ঘোষিত এ কমিটি নিয়ে ইতোমধ্যে দলের মধ্যে ক্ষোভ ও হতাশা জন্ম নেয়ার পাশাপাশি ব্যাপক সমালোচনারও জন্ম দিয়েছে। বিশেষ করে ৫০২ সদস্যের বিশাল জাতীয় নির্বাহী কমিটির পাশপাশি ১৯ সদস্যের স্থায়ী কমিটি ও ৭৩ সদস্যের উপদেষ্টা কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে। এত বড় কমিটিতে অনেক নেতা নিজেকে মূল্যয়ন না পাওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। ইতোমধ্যে দলের ভাইস চেয়ারম্যানের পদ থেকে খালেদা জিয়ার এক সময়ের ঘনিষ্ঠ মোসাদ্দেক আলী ফালু পদত্যাগ করেছেন। মূল্যায়ন না হওয়ায় ঘোষিত পদ থেকে নিজের নাম প্রত্যাহার চেয়েছেন সহপ্রচার সম্পাদকের পদ পাওয়া শামীমুর রহমান শামীম। দলের দীর্ঘদিনের ত্যাগী নেতা আব্দুল্লাহ আল নোমানও কমিটিতে তাকে মূল্যায়ন না করায় অসস্তোষ প্রকাশ করেছেন। একই সঙ্গে তিনি কমিটি ও বিএনপির রাজনীতিতে থাকবেন কী থাকবেন না, দুই-এক দিনের মধ্যেই তার অবস্থান পরিষ্কার করবেন বলে গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন। এছাড়া দলের স্থায়ী কমিটির পদ পাওয়া আ স ম হান্নান শাহ অভিযোগ করেছেন, দলের বাইরের লোক জাতীয় কমিটিতে স্থান পেয়েছে। এছাড়া কমিটি নিয়ে স্বজনপ্রীতির অভিযোগ রয়েছে। রাজাকারের সন্তানদের স্থান দেয়া প্রকাশ্যে এ কমিটি নিয়ে সমালোচনার ঝড় বয়ে যাচ্ছে। এ অবস্থায় কমিটি গঠনের বিষয় পরিষ্কার করতে গিয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি বলেন, বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া তার ক্ষমতা বলে কমিটি গঠন করেছেন। গত ১৯ মার্চ জাতীয় কাউন্সিলে বিএনপি খালেদা জিয়াকে কার্যনির্বাহী কমিটি গঠনের দায়িত্ব দিয়েছিল। সে অনুযায়ী তিনি পূর্ণাঙ্গ কমিটি করে দিয়েছেন। এ কমিটি নিয়েই বিএনপি আগামী তিন বছর রাজনৈতিক কর্মসূচী পালন করবে। তিনি বলেন, প্রতিটি রাজনৈতিক দলের যখন একটা কমিটি করা হয় তখন দেখা যায়, সেখানে কিছু সংখ্যক যোগ্য মানুষও পদবঞ্চিত হচ্ছেন। এটা স্বাভাবিক যে, এত যোগ্যলোকের সংখ্যা থাকে যে সবাইকে যোগ্যপদ দেয়া সম্ভব হয় না। সেদিক থেকে বিএনপিতে স্বাভাবিকভাবে অনেকেই পদবঞ্চিত হয়েছেন। আবার অনেকে যোগ্যপদ থেকে বঞ্চিত হয়েছেন। সবাইকে কমিটিতে রাখা সম্ভব হয়নি চেয়ারপার্সনের পক্ষে। সোমবার বেলা সাড়ে ১১টায় বিএনপি কার্যালয়ে আসেন মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। এ সময় তাকে স্বাগত জানান দলের সহসাংগঠনিক সম্পাদক আবদুস সালাম আজাদ, সহদফতর সম্পাদক তাইফুল ইসলাম টিপু ও মনির হোসেনসহ নতুন নেতারা। পরে নতুন নেতারা মহাসচিবের সঙ্গে তার চেম্বারে কুশলবিনিময় করেন। বেলা সাড়ে ১২টার দিকে নিজ চেম্বারে সাংবাদিকদের নানা প্রশ্নের জবাব দেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। এ সময় সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ঘোষিত কমিটিতে যারা পদবঞ্চিত হয়েছেন বা কাক্সিক্ষত পদ পাননি, তারা বিক্ষোভ করলেও কোন লাভ হবে না। তাদের ধৈর্য ধরতেই হবে। শেষ কথা বলতে তো কিছু নেই। সবসময় পরবর্তী একটা বিষয় থাকে। রাজনৈতিক দলগুলোতে পদের জন্য প্রতিযোগিতা সব সময় থাকে। সব রাজনৈতিক দলে আছে। পৃথিবীর সব দেশেই আছে। বিএনপির কমিটি নিয়ে আওয়ামী লীগ নেতাদের সমালোচনার জবাবে তিনি বলেন, রাজনৈতিক দলের কমিটি তার নিজস্ব ব্যাপার। এখানে স্বাভাবিকভাবে অন্য দলগুলোর প্রতিক্রিয়া, ব্যক্তির প্রতিক্রিয়া থাকতে পারে। কিন্তু রাজনৈতিক শিষ্টাচার ও শালীনতা বলে একটা কথা আছে। কমিটি নিয়ে বিভিন্ন পক্ষ থেকে শালীনতা বর্জিত কিছু কিছু মন্তব্য করা হচ্ছে। যেটা অনভিপ্রেত। এগুলো বিএনপিকে হেয় করার জন্য অপপ্রচার বলে উল্লেখ করেন। অতীতেও যেভাবে সঙ্কট মোকাবেলা করা হয়েছে এবারও কার্যকরী কমিটির মাধ্যমে মোকাবেলা করা হবে। এর মাধ্যমে দলের লক্ষ্য পুনরুদ্ধার করা সম্ভব হবে।
×