ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

পর্যটক বাড়ছে মহাস্থানগড়ে

চেনা পথে লুকানো ইতিহাস, নতুন রূপে প্রাচীন নগরী

প্রকাশিত: ০৫:২৫, ৯ আগস্ট ২০১৬

চেনা পথে লুকানো ইতিহাস, নতুন রূপে প্রাচীন নগরী

সমুদ্র হক ॥ নতুন সাজে সাজছে বগুড়ার মহাস্থানগড়। বাড়ছে পর্যটকের সংখ্যা। ইতোমধ্যে মহাস্থানগড়সহ দেশের চারটি প্রত্মতাত্ত্বিক স্থানে পর্যটন ও অবকাশ কেন্দ্র গড়ে তোলার কাজ শুরু হয়েছে। মহাস্থানের কাজ এখন শেষের দিকে। ধ্বংস হয়ে যাওয়া দেশের সবচেয়ে প্রাচীন এই নগরীর ধ্বংসাবশেষ মাটির ওপরে দাঁড়িয়ে ইতিহাসের সাক্ষ্য দিচ্ছে। চেনা পথের ধারে লুকিয়ে আছে কত অজানা ইতিহাস। কাঠামো ঠিক রেখে তারই সৌন্দর্যবর্ধকের কাজ চলছে। মৌর্য, সুঙ্গ, গুপ্ত, পাল, সেন, শশাঙ্ক, মুসলিম-মুঘল ও ব্রিটিশ সভ্যতার বহু চিহ্ন উঁকি দিয়ে আছে মহাস্থানগড়ে। এই মহাস্থানগড়কে নতুন রূপে সাজানো হচ্ছে। এদিকে দেশের উত্তরাঞ্চলের প্রবেশদ্বার বগুড়াকে এক বছরের জন্য সার্কের কালচারাল ক্যাপিটাল (সাংস্কৃতিক রাজধানী) ঘোষণার আয়োজন প্রায় শেষ পর্যায়ে। রাজধানী ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গেই এক বছরের জন্য মহাস্থানগড় ও বগুড়া নগরী মুখরিত হয়ে থাকবে সংস্কৃতির সকল কর্মকা-ের কার্যক্রমে। সূত্র জানায়, প্রস্তাবটি অনুমোদন এখন সময়ের ব্যাপার মাত্র। আগামী অক্টোবরে সার্ক কালচারাল ক্যাপিট্যাল ঘোষণার সম্ভাবনা রয়েছে। সেই আলোকেও মহাস্থানগড়কে পর্যটকদের সামনে নতুন আঙ্গিকে তুলে ধরার কাজ চলছে। চলতি বছর বাংলাদেশকে পর্যটন বছর হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। পর্যটক আকর্ষণের বিষয়টিও সাজগোজের কাজে প্রাধান্য পেয়েছে। প্রতœতাত্ত্বিক স্থানগুলোতে পর্যটন কেন্দ্র নির্মাণের প্রাথমিক উদ্যোগ নেয়া হয় দক্ষিণ এশীয় অঞ্চলের এক বৈঠকে। সেখানে ভারতের উত্তর পূর্বাঞ্চল, বাংলাদেশ ও নেপালের প্রাচীন স্থাপত্য শিল্প, প্রতœতাত্ত্বিক স্থানগুলোকে কেন্দ্র করে পর্যটন শিল্প বিকাশে হেরিটেজ হাইওয়ে গড়ে তোলার প্রস্তাবনা করে পরে তা সিদ্ধান্তে রূপান্তর হয়। সেই আলোকে কার্যক্রমটি বাস্তবায়নে সার্কভুক্ত দেশগুলো এগিয়ে আসে। মানুষে মানুষে মিলন বন্ধনে পর্যটন শিল্পের অগ্রযাত্রায় শরিক হয় প্রতœতত্ত্ব অধিদফতর। প্রকল্প বাস্তবায়নে এগিয়ে আসে সাউথ এশিয়া ট্যুরিজম ইনফ্রাস্ট্রাকচার ডেভলপমেন্ট প্রজেক্ট। সূত্র জানায়, সরকার এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের আর্থিক সহায়তা নিয়ে প্রকল্পটি বাস্তবায়িত করছে। ব্যয় ধরা হয়েছে ১৫ মিলিয়ন ডলার। এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক ১২ মিলিয়ন ডলার ঋণ দিয়েছে। বাকি ৩ মিলিয়ন ডলার সরকারের। প্রকল্পটি পর্যটন শিল্পের উন্নয়নের সঙ্গে এলাকার উন্নয়ন হয়ে নবযুগের সূচনা করবে। সূত্র জানায়, সার্কের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান সার্ক কালচারাল সেন্টার বাংলাদেশের একটি নগরীকে এক বছরের জন্য সার্ক কালচারাল ক্যাপিটাল (সার্ক সংস্কৃতি রাজধানী) ঘোষণা করবে। এই কার্যক্রম গত বছর থেকেই শুরু হয়েছে। গত বছর এই মর্যাদা পেয়েছে ৮ম সার্কভুক্ত দেশ আফগানিস্তানের ইতিহাস খ্যাত নগরী বামিয়ান। সাংস্কৃতিক রাজধানী ঘোষণার সঙ্গেই এক বছরের জন্য পুন্ড্রনগর খ্যাত বগুড়ার মহাস্থানগড় সার্ক কালচারাল ক্যাপিটাল হয়ে ভর বছর মুখরিত হয়ে থাকবে সার্কের আট দেশের মিলন মেলায়। মহাস্থানগড়ে রয়েছে প্রতœতাত্ত্বিক বড় স্থাপনা ও নিদর্শন- যা সকল ধর্মের সকল বর্ণের মানুষের কাছে পবিত্র। একই সঙ্গে রাজধানী ঢাকা থেকে যাতায়াতের সুব্যবস্থা, উন্নত পথঘাট, আধুনিক আবাসন ও মিলনায়তন সবই রয়েছে। এসব দিক বিবেচনায় এনে কয়েক হাজার বছরের প্রাচীন নগরী বগুড়ার মহাস্থানগড়কেই বেছে নেয়া হয়েছে। বঙ্গীয় ব দ্বীপের বাংলাদেশের কোন নগরীকে সার্ক কালচারাল ক্যাপিটাল ঘোষণায় দেশে দেশে মানুষে মানুষে অপার মেলবন্ধনের অপূর্ব সূযোগ এসেছে। আমাদের শিল্প সাহিত্য সংস্কৃতি কত সমৃদ্ধ ইতিহাসের কত গভীরে গ্রোথিত তা দেখে যাবে সার্কভুক্ত দেশের মানুষের সঙ্গে বিশ্বের মানুষ। এই কার্যক্রমে পর্যটনেরও বিকাশ ঘটবে। বগুড়ার মহাস্থানগড় এলাকায় পর্যটকদের জন্য অবকাশ কেন্দ্র হোটেল বাংলো কটেজ রেস্তরাঁ রাস্তাঘাটসহ প্রতœসম্পদ প্রদর্শনের নানা ব্যবস্থা থাকছে। প্রতœতত্ত্ব অধিদফতরের রাজশাহী ও রংপুর বিভাগীয় আঞ্চলিক পরিচালক নাহিদ সুলতানা জানিয়েছেন, মহাস্থানগড়সহ দেশের ৭টি স্থানকে ইউনেস্কোর ওযার্ল্ড হেরিটেজে অন্তর্ভুক্তির জন্য প্রস্তাব করা হয়েছে। বাংলাদেশের সুন্দরবন ইউনেস্কোর নেচারাল হেরিটেজ এবং পাহাড়পুরের বৌদ্ধবিহার ও বাগেররহাটের ষাটগম্বুজ মসজিদ কালচারাল হেরিটেজের স্বীকৃতি পেয়েছে। ইতোমধ্যে বগুড়ার মহাস্থানগড়ে বাংলাদেশ-ফ্রান্স যৌথ প্রতœতাত্ত্বিক খননে নতুন ইতিহাস উদ্ঘাটিত হয়েছে। এর মধ্যে একটি হলো কিছুদিন আগে প্রায় হাজার বছর ধরে মাটির নিচে লুকিয়ে থাকা পরশুরাম প্যালেসের অস্তিত্ব মিলেছে। এই প্যালেসটি কোথায় ছিল এতকাল তা খোঁজা হয়েছে। খননের আগে জায়গাটি ছিল ঝোঁপ জঙ্গলে। প্রতœতত্ত্ব অধিদফতর সূত্রের মতে, ইতিহাসখ্যাত স্থানগুলো ভ্রমণে পর্যটকদের আকর্ষণ বাড়বে। প্রাচীন পুন্ড্রবর্ধন ভুক্তির রাজধানী পুন্ড্রনগর খ্যাত মহাস্থানগড়ে এর আগে ব্রাহ্মি হরফ ও এ্যাঙ্কর মিলেছে, যা বানারসী বিলের সাক্ষ্য দেয়।
×