ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

ইন্দোনেশিয়ান কোচের বেহাল দশা

প্রকাশিত: ০৪:১৪, ৯ আগস্ট ২০১৬

ইন্দোনেশিয়ান কোচের বেহাল দশা

মাকসুদ আহমদ, চট্টগ্রাম অফিস ॥ মাত্র দেড় মাস আগে চালু হওয়া ঢাকা-চট্টগ্রাম রেল রুটে চলাচলরত ইন্দোনেশিয়ান কোচগুলোর বেহাল দশা। কারণ কোচগুলোতে বিভিন্ন ত্রুটি দেখা দিয়েছে মাত্র দেড় মাসেই। কোচ রক্ষণাবেক্ষণ ও দায়িত্বহীনতার অভাবে যাত্রীরা ভোগান্তিতে পড়েছে। অভিযোগ রয়েছে, ইন্দোনেশিয়া থেকে এসব কোচ আমদানির প্রকল্প পরিচালক ও বর্তমান অতিরিক্ত মহাপরিচালক (আরএস) এ কোচ আমদানির অন্যতম প্রধান হিসেবে দায়িত্বপূর্ণ তদারকি না করেই এসব কোচ আমদানি করেছেন বলে মহাপরিচালকের দফতর সূত্রে জানা গেছে। মুষ্টিমেয় কয়েক কর্মকর্তা সরকারকে ক্ষতির মুখে ফেলতে এ ধরনের চক্রান্ত করেছেন কিনা, তা খতিয়ে দেখা প্রয়োজন। এসব কোচের দরজা বন্ধ করা যেমন যাচ্ছে না, তেমনি টয়লেটের দরজা ত্রুটিপূর্ণ হওয়ার কারণে আটকে পড়ে থাকছে ঘণ্টার পর ঘণ্টা। আবার ঢাকা থেকে ৫ ঘণ্টার ট্রেন অনির্ধারিত যাত্রা বিরতি দিয়ে ৬ ঘণ্টায় চট্টগ্রাম পৌঁছার মতো ঘটনাও ঘটেছে। উল্লেখ্য, গত ২৫ জুন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কমলাপুর স্টেশন থেকে এ ট্রেনটির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেছেন। অভিযোগ রয়েছে, স্বল্প সময়ে ব্যবহৃত এ ট্রেনের কোচগুলোর নানা ত্রুটি দেখা দিয়েছে। শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত বার্থ কোচ ‘ঞ’ (১২০১নং) কোচে দেখা গেছে, কোচের ভেতরে করিডরের গায়ে লেখা রয়েছে ধুমপান নিষেধ। কিন্তু চলছে ধুমপান। ক্যাটারিং বা অপারেটিং বিভাগের দায়িত্বে থাকা লোকজন কিছুই বলছে না। কোচে আগমন কিংবা বহির্গমনের দরজার ছিটকানি (শূটবোল্ট) নষ্ট, পেন বা লো কমোডের টয়লেটের দরজা ঘণ্টার পর ঘণ্টা নষ্ট থাকে। ইংলিশ (হাই) ও পেন (লো) কমোডের ফ্ল্যাশ নষ্ট, সোপ কেসে সোপ নেই, টিস্যু হোল্ডারে টিস্যু নেই কিন্তু টয়লেট টিস্যু টাঙ্গানো রয়েছে কাপড়ের হ্যাঙ্গারে। ময়লা ফেলার জন্য নেই কোন ডাস্ট বক্স। সকালের ও বিকেলের নাস্তা নেয়া হচ্ছে যাত্রীপ্রতি ১৯৫ টাকা, যার বাজারমূল্য মাত্র ৬০-৭০ টাকা। ৮০ মিলি এক কাপ কফির দাম নেয়া হচ্ছে ৩০ টাকা। খাবারের উচ্ছিষ্ট ক্যাটারিং বিভাগের লোকজন জানালা বা টয়লেটের কমোডে ফেলে পানি মেরে দিচ্ছে। তবে খাবারের খালি বক্সগুলো ফেলা হচ্ছে জানালা দিয়ে। উল্লেখ্য, ইন্দোনেশিয়া থেকে মোট ১শ’টি মিটারগেজ ও ৫০টি ব্রডগেজ লাইনের কোচ আমদানি করতে রেলের মোট খরচ প্রায় সাড়ে ৪শ’ কোটি টাকা। এর মধ্যে ৫৯টি কোচ চট্টগ্রামে এসেছে। তবে সোনার বাংলা এক্সপ্রেস চালু হয়েছে মাত্র ১৬টি কোচ দিয়ে। তৎকালীন চীফ মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার (ডেভেলপমেন্ট) ও প্রজেক্ট ডিরেক্টর তথা বর্তমান আরএস (রোলিং স্টক) মোঃ শামসুজ্জামান এসব কোচ আমদানিতে তদারকি করেছেন। যাত্রীদের কাছ থেকে অভিযোগ পাওয়া গেছে, কোচে নাস্তা পরিবেশন করে পর্যটন কর্পোরেশনের নিয়ন্ত্রণাধীনে থাকা ক্যাটারিং বিভাগ। নাস্তার বক্সে ছিল ১৪ টাকা মূল্যের বোতলজাতকৃত ‘মুক্তা’ ব্রান্ডের ৫০০ মিলি মিনারেল ওয়াটার, যার প্রস্তুতকারক সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অধীনে থাকা শারীরিক প্রতিবন্ধী, মৈত্রী শিল্প। এছাড়া একটি আপেল, এক স্লাইস কেক, দুই টুকরো ক্ষুদ্রাকৃতির চিকেন ফ্রাই, প্রাণ ব্রান্ডের একটি ২০ টাকা দামের ফ্রুট ড্রিংকস ও এক টুকরো টিস্যু। প্রতি যাত্রী থেকে এই সামান্য খাবারের দাম রাখা হয়েছে ১৯৫ টাকা। এ ব্যাপারে পর্যটন কর্পোরেশন সূত্রে জানা গেছে, সোনার বাংলা এক্সপ্রেসে খাবার সরবরাহের ব্যাপারে রেল মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে চুক্তি হয়েছে। মাত্র কয়েক দিনের আলোচনায় ও রেল সচিবের সুপারিশের কারণেই মাত্র ১৯৫ টাকায় খাবার সরবরাহের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। এ খাবারের সঙ্গে খাবারের মূল্য ছাড়াও শতকরা ১০ ভাগ সার্ভিস চার্জ, ১৫ ভাগ ভ্যাট, ৫ ভাগ আয়কর, ২০ ভাগ ক্যাটারিং চার্জ ও ২০ ভাগ মুনাফা যোগ করা হয়েছে। এ ব্যাপারে পর্যটন কর্পোরেশনের ঢাকার অফিসের ব্যবস্থাপক জিয়াউল করিম জনকণ্ঠকে জানান, শেরাটন বা সোনারগাঁও হোটেলে এ খাবারের দাম ২ হাজার টাকা। রেল সচিবের অনুরোধের কারণেই ১৯৫ টাকা নেয়া হচ্ছে। খাবারের মূল্যের সঙ্গে মাত্র ক্যাটারিং, ভ্যাট, ট্যাক্স, সার্ভিস চার্জ ও প্রফিটসহ প্রায় ৭০ ভাগ যোগ করা হচ্ছে। রেল সেবা সংস্থা ও সরকারী প্রতিষ্ঠান হওয়ার কারণে খাবারের মূল্য কম রাখা হয়েছে। তবে খাবারের চেয়ে অন্যান্য খরচ বেশি কেনÑ এ প্রসঙ্গে তিনি কিছুই বলেননি। রেলের পূর্বাঞ্চলীয় মহাব্যবস্থাপক আবদুল হাই জনকণ্ঠকে জানিয়েছেন, খাবারের দাম বেশি বলে যাত্রীরাও অভিযোগ করেছেন। বিষয়টি নিয়ে উর্ধতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠকের পর সিদ্ধান্ত নেয়া যাবে। তবে ত্রুটিপূর্ণ কোচের বিষয়ে তিনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন বলে জানান।
×