ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

জীবন-জীবিকার জন্য গাছ

প্রকাশিত: ০৪:০৯, ৯ আগস্ট ২০১৬

জীবন-জীবিকার জন্য গাছ

উদ্যোগটি অভিনব নিঃসন্দেহে। রাজধানীর নামী-দামী স্কুল-কলেজের একদল শিক্ষার্থী একত্রিত হয়ে গড়ে তুলেছে অনির্বাণ নামের একটি সংগঠন। মহানগরীর দশটি স্থানে বিভক্ত হয়ে তারা পথচারী নির্বিশেষে বিতরণ করে থাকে রকমারি গাছের চারা। পথিক প্রথমে ইতস্তত করলেও পরে বিনামূল্যে শিশুদের চারা বিতরণের কথা জেনে চারা নিয়ে যান আগ্রহভরে। সঙ্গে চারা গাছটির সংক্ষিপ্ত পরিচিতি ও প্রযতœ সম্পর্কিত লিফলেট। এ থেকে বৃক্ষপ্রেমী তো বটেই, এমনকি অনাগ্রহী ব্যক্তির মধ্যেও সহজেই বৃক্ষরোপণ ও পরিচর্যা সম্পর্কিত আগ্রহ তৈরি হয়ে যায়। কচিকাঁচা শিক্ষার্থীরা নিজেদের প্রতিদিনের টিফিনের পয়সা জমিয়ে কিনে থাকে পলিথিনে মোড়ানো এসব চারাগাছ। তরুণ শিক্ষার্থীদের এই উদ্যোগ নিঃসন্দেহে ব্যতিক্রমী এবং আশা জাগানিয়া। এ থেকে বোঝা যায় যে প্রকৃতি ও পরিবেশের উপযোগিতা এবং তা সংরক্ষণের বিষয়ে একেবারে নবীন প্রজন্মের মধ্যেও বেশ সচেতনতা সৃষ্টি হয়েছে। এটি যদি পর্যায়ক্রমে রাজধানীর অন্যান্য স্কুল-কলেজ এবং দেশের অন্যান্য জেলা-উপজেলার শহর-নগর-বন্দরেও ছড়িয়ে পড়ে, তা হলে তা আরও সার্থক ও ফলপ্রসূ হতে পারে। এদিকে রাজধানীর আগারগাঁওয়ে শেরে বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলার মাঠে চলছে মাসব্যাপী বৃক্ষমেলা। সেখানে এবারের সেøাগান ‘জীবিকার জন্য গাছ, জীবনের জন্য গাছ।’ সেøাগানটি যে আকর্ষণীয়, সে বিষয়ে দ্বিমতের অবকাশ নেই। এ ক্ষেত্রেও যেটি আশা জাগানিয়া তা হলো, প্রায় প্রতিদিন নারী-পুরুষ-আবালবৃদ্ধবনিতা এবং দলে দলে শিক্ষার্থীরা ভিড় জমাচ্ছে বৃক্ষমেলায়। সেখানে এমনকি প্রতিদিন অনুষ্ঠিত হচ্ছে কৃষি শিক্ষার ক্লাস, বৃক্ষ পরিচিতি ইত্যাদি। পাওয়া যাচ্ছে প্রায় সবরকমের সহজপ্রাপ্ত ও দুর্লভ ফলদ, বনজ, জলজ ও ভেষজ বৃক্ষের চারা গাছ। নানাবিধ ক্যাকটাসও বাদ যাচ্ছে না। মহানগরীর মানুষজন গভীর আগ্রহভরে সেসব কিনছেনও- তুলসী থেকে শুরু করে বটবৃক্ষ বনসাই পর্যন্ত। এখানে উল্লেখ করা আবশ্যক যে, শুধু ঢাকা শহরেই নয় বরং বৃক্ষমেলা ছড়িয়ে পড়েছে প্রতিটি জেলা, উপজেলা শহরসহ গ্রামগঞ্জ পর্যন্ত। বর্তমান বিশ্বের অন্যতম প্রধান সমস্যা বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধির কারণে আবহাওয়া ও জলবায়ুর পরিবর্তনজনিত উদ্ভূত বিরূপ পরিস্থিতি মোকাবেলা। নানা কারণের অন্যতম প্রধান কারণ নির্বিচারে বনভূমি ধ্বংসসহ বৃক্ষনিধন। মানুষ তার জীবন জীবিকার অনিবার্য তাগিদেই প্রায় অবাধে বন কেটে বসত, চাষাবাদ ও শিল্পায়ন করে চলেছে। তবে সেই অনুপাতে করেনি বৃক্ষের পরিচর্যা তথা বৃক্ষরোপণ। যখন সে গাছ গাছালির সবিশেষ উপযোগিতা বুঝতে পেরেছে, ততদিনে অনেক দেরি হয়ে গেছে। বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধি তথা কার্বন নিঃসরণ পৌঁছেছে চূড়ান্ত পর্যায়ে। অবশ্য গত কয়েক বছর ধরে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে প্রকৃতি ও পরিবেশ বিষয়ে সচেতনতা বেড়েছে। সর্বস্তরের মানুষ জীবন জীবিকাসহ বৃক্ষরোপণ এবং পরিচর্যার গুরুত্ব ও অপরিহার্যতার বিষয়টি সম্যক উপলব্ধি করতে পারছে। বাংলাদেশও এ ক্ষেত্রে পিছিয়ে নেই। দেশে এমনিতেই চাহিদার তুলনায় বনভূমির পরিমাণ কম। বিশ্ব হেরিটেজ হিসেবে খ্যাত সুন্দরবন রয়েছে রীতিমতো হুমকিতে। এমতাবস্থায় শিক্ষার্থী ও তরুণদের বিনামূল্যে গাছের চারা বিতরণ কর্মসূচী সর্বস্তরে সচেতনতা সৃষ্টিতে অতীব সহায়ক হতে পারে। গাছ বাঁচিয়ে রাখলে মানুষও বাঁচবে, এই বার্তাটি সর্বত্র পৌঁছে দেয়া এই মুহূর্তের জরুরী কর্তব্য।
×