ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

গণরোষে শিবির

প্রকাশিত: ০৪:০৯, ৯ আগস্ট ২০১৬

গণরোষে শিবির

স্বাধীন বাংলাদেশের শিক্ষাঙ্গনে পঁচাত্তর-পরবর্তী একটি দুষ্ট ক্ষত, কালো শক্তির নাম ইসলামী ছাত্র শিবির। মুক্তিযুদ্ধে এই সংগঠনের ঘৃণ্য নৃশংস ভূমিকা এদেশের গণমানুষ এখনও বিস্মৃত হয়নি। এই সংগঠনটি পাকিস্তান আমলের ইসলামী ছাত্রসংঘেরই উত্তরসূরি। যে সংগঠনটির ঘৃণ্য নির্মম অবস্থান ছিল সবচেয়ে বেশি একাত্তর সালে। এরাই গঠন করেছিল সশস্ত্র সংগঠন আলবদর। বুদ্ধিজীবী, পেশাজীবীসহ নিরীহ বাঙালীকে নির্মম, নৃশংসভাবে হত্যা করেছিল। এই সংগঠনের অধিকাংশই যুদ্ধাপরাধী হিসেবে চিহ্নিত। যাদের শীর্ষ নেতারা মানবতাবিরোধী অপরাধে সাজাপ্রাপ্ত, অনেকে বিচারাধীন। অনেকে স্বাধীনতার পর পলাতক। পাকিস্তানকালে বাঙালী জাতির স্বাধিকার ও স্বাধীনতা আন্দোলন এবং সংগ্রামের বিপরীতে এরা অবস্থান নিয়েছিল। বাঙালী সংস্কৃতির বিরুদ্ধে এদের অপপ্রচার তখনও ছিল তীব্র। জামায়াতে ইসলামী নামক পাকিস্তানপন্থী প্রতিক্রিয়াশীল রাজনৈতিক দলের অঙ্গ সংগঠন হিসেবে ইসলামী ছাত্রসংঘ ধর্মান্ধতার বিকাশে ভূমিকা পালন করেছিল। একাত্তর সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীর সশস্ত্র সহযোগী হিসেবে এরা গণহত্যা, ধর্ষণ, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ চালিয়েছে। ইসলামই সংগঠনটির আদর্শ বলা হলেও মহান শান্তির ধর্ম ইসলামের উদারতা, বিশালতা ও সহনশীলতার বিন্দুমাত্র চিহ্ন এদের কার্যকলাপে পাওয়া যায়নি। প্রগতিশীল ছাত্র সমাজের বিরুদ্ধে এরা অবস্থান নিয়ে রগকাটা, গলাকাটার মতো ঘৃণ্য কাজে লিপ্ত হয়ে পড়ে। পরমতসহিষ্ণুতা এদের সাংগঠনিক ও রাজনৈতিক অভিধানে নেই। এরা ইসলামের বিকৃত ও কুৎসিত ব্যাখ্যাদানকারী মওদুদীর অনুসারী। একাত্তরে আলবদরে রূপান্তরিত ছাত্রসংঘের নেতাকর্মীরা বর্বর সন্ত্রাসবাদী নৃশংসতার চূড়ান্তে পৌঁছেছেন। আলবদরের নাম এখনও আতঙ্ক জাগায়। বুদ্ধিজীবী হত্যার কারণ হিসেবে এরা দেখিয়েছিল যে পূর্ব পাকিস্তানকে টিকিয়ে রাখা হয়ত সম্ভব হবে না। তবে একটা কাজ করতে হবে, এখানকার সব বুদ্ধিজীবী, ইঞ্জিনিয়ার, ডাক্তার, বিজ্ঞানীকে চিরতরে ‘শেষ’ করে দিতে হবে। যাতে পাকিস্তানকে হারালেও তারা দেশ চালাতে না পারে। তাদের নেতা শীর্ষ যুদ্ধাপরাধী নরঘাতক গোলাম আযম এই নির্দেশ দিয়েছিল। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর এরা গা-ঢাকা দেয়। স্বাধীনতার বিরোধিতার অভিযোগে জামায়াতও নিষিদ্ধ হয়ে যায়। পলাতক অবস্থায়ও এরা বহু নাশকতামূলক ঘটনার সঙ্গে জড়িত ছিল। পঁচাত্তরের পনেরোই আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর জান্তা শাসক জিয়াউর রহমান রাজাকার আলবদর ও পাকিস্তানপন্থীদের পুনর্বাসনের কর্মসূচী হিসেবে জামায়াতকে রাজনীতি করার সুযোগ দেয়। ১৯৭৭ সালে কৌশল বদলে ইসলামী ছাত্রসংঘ নাম বদলে ইসলামী ছাত্রশিবির হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। তবে সাংগঠনিক পতাকা, মনোগ্রাম পরিবর্তন করেনি। শুধু সংঘ এর স্থলে শিবির প্রতিস্থাপন করা হয়। এরপরই তারা স্বরূপে আবির্ভূত হয়। বিশ্ববিদ্যালয়, কলেজগুলো নিয়ন্ত্রণে আনার জন্য তারা সন্ত্রাসী তৎপরতা চালাতে থাকে। অনেক শিল্প প্রতিষ্ঠানকে তারা ‘মিনি ক্যান্টনমেন্টে’ পরিণত করে। এদের নৃশংসতার মাত্রা বাড়তে থাকে। একপর্যায়ে এরা জঙ্গীবাদে ঝুঁকে পড়ে। দেশে বিগত কয়েক বছর ধরে যে পেট্রোলবোমা মেরে জীবন্ত মানুষ হত্যা, গুপ্তহত্যা, টার্গেট কিলিং চলে আসছে, তা এই শিবিরের কর্মীদেরই কাজ। মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তি হচ্ছে এদের প্রধান শত্রু। একাত্তরের পরাজয়ের প্রতিশোধ নিতে এবং যুদ্ধাপরাধীদের রক্ষার জন্য এরা সশস্ত্র প্রশিক্ষণ নিয়ে দেশজুড়ে ভয়ভীতি আতঙ্ক ছড়ানোর পাশাপাশি বিভিন্ন জঙ্গীগোষ্ঠী গড়ে তুলে হত্যাযজ্ঞ অব্যাহত রেখেছে। গণপ্রতিরোধে এরা অনেক স্থানেই পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়। জঙ্গীবাদবিরোধী জনতা এদের বিনাশ চায়, তাই দিনাজপুরের কাহারোলে জিহাদী বই ও অস্ত্রসহ শিবির ক্যাডার গ্রেফতার হওয়ার পর বিক্ষুব্ধ জনতা তাদের আস্তানা জ্বালিয়ে দিয়েছে। শিবিরের সন্ত্রাসীরা এখানে গোপনে মিলিত হয়ে জঙ্গী ও সন্ত্রাসী কার্যকলাপের পরিকল্পনা নিত। বাংলাদেশবিরোধী ছাত্রশিবির মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দৃষ্টিতে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে চিহ্নিত। জনগণের প্রতিরোধই পারে এদের ঘৃণ্য তৎপরতা বন্ধ ও সমাজ থেকে নির্মূল করতে। অমানবিক এই সংগঠনটির সমস্ত কার্যকলাপ নিষিদ্ধ করার দাবি জনগণের বহু দিনের।
×