ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

মমতাজ লতিফ

মানবিকতারই হবে জয়

প্রকাশিত: ০৪:০০, ৯ আগস্ট ২০১৬

মানবিকতারই হবে জয়

উচ্চশিক্ষিত, ইংরেজী ও তথ্যপ্রযুক্তিতে দক্ষ সন্তানেরা পুরো জাতিকে স্তব্ধ, বিমূঢ় করে দিয়ে দু’জন পুলিশ, বিশ জন বিদেশী, দেশী নারী-পুরুষকে হত্যা করেছে গুলশানের আর্টিজান রেস্টুরেন্টে। এখনও আমরা যারা মুক্তিযুদ্ধের প্রজন্ম, তারা ক্ষোভে বিক্ষোভ করছি এবং কিছুতেই ভুলতে পারছি না রক্তাক্ত সেই রাতের ঘটনাবলী। শোলাকিয়ায় দু’জন পুলিশ প্রাণের বিনিময়ে ঈদ জামাতের লাখো মানুষের প্রাণ রক্ষা করেছেন এবং কল্যাণপুরে পুলিশ অভিযানে নয় জঙ্গীকে হত্যা করে সাফল্যের পরিচয় দিয়েছে। আমার মনে হয় বর্তমানে জঙ্গীরা মরণ কামড় দিচ্ছে। এ কারণে সাধারণ পুলিশদের কোন সমাবেশে পাহারা দিতে দায়িত্ব দেয়া হলে তাদের মাথায় অবশ্যই হেলমেট ও বুকে বুলেটপ্রুফ জ্যাকেট পরার ব্যবস্থা থাকতে হবে। আমরা আমাদের পুলিশের প্রাণকে জঙ্গী বা সন্ত্রাসীর গুলি-চাপাতি-বোমায় নিরাপত্তাহীন করে রাখতে পারি না। জাতিকে নিরাপত্তা দিতে গিয়ে তাদের নিজস্ব নিরাপত্তার কথা যেন সরকার ও বাহিনী স্মরণে রাখে। এবার আসি বন্যার দুর্গতির বিষয়ে। এ বিষয়ে কোন সন্দেহ নেই যে, পুরো জাতি, সরকার, এনজিও সবাই বর্তমানে পাহাড়ী ঢল ও বৃষ্টির ফলে সৃষ্ট দেশের উত্তরাঞ্চলে রোজার সময় থেকে শুরু হয়ে ঈদ পার হয়ে এখনও বন্যার পানিতে, নদীর স্রোতে ঘর-বাড়ি, ক্ষেত, খামার, ধান, পাট, সবজি- সব হারিয়ে সীমাহীন দুর্গতিতে পড়া মানুষগুলোর কাছে উল্লেখযোগ্য সাহায্য নিয়ে কাউকে পৌঁছতে না দেখে বিস্মিত হচ্ছি। সামান্য ত্রাণ সাহায্য, শুকনো খাবার বিতরণ হচ্ছে- এমন দৃশ্য আমরা কোন টিভি চ্যানেলে দেখছি না। প্রতিদিন প্রতিটি টিভি চ্যানেলের ২ বা ৩ নম্বরে থাকছে বন্যায় ঘরবাড়ি, বসতভিটা, জমি অর্থাৎ সর্বস্ব হারানো পরিবারের খবর। তাদের অসহায়ত্ব দেখে লজ্জিত হচ্ছি। প্রধানমন্ত্রী জঙ্গী উচ্ছেদের সঙ্গে সঙ্গে এই দরিদ্র, সর্বস্ব হারানো মানুষের পাশে দাঁড়ানোর জন্য উত্তরাঞ্চলের মন্ত্রী, সংসদ সদস্যকে তো নির্দেশ দেবেনই, উপরন্তু অন্য মন্ত্রী, সংসদ সদস্যদেরও বন্যায় ত্রাণ বিতরণে অংশ নিতে বলবেন, এমন আশা করছি। এর আগে দেশের ছাত্রসমাজ, মন্ত্রী, সংসদ সদস্যরা বন্যার শুরুতে ত্রাণ সংগ্রহ করেছে, পৌঁছে দিয়েছে। এবার ছাত্রছাত্রী, শিক্ষকদের দেখতে পাইনি। তা ছাড়া এতদিন বিভিন্ন এনজিও ত্রাণ সহায়তা নিয়ে সরকারের প্রতিনিধিরা পৌঁছার আগেই ত্রাণ বিতরণে নেমে যেত। আমরা নিজেরা কতবার চিড়া, গুড়, কাপড় পাঠিয়েছি, অনেক সময় অর্থ দিয়েছি, কাছাকাছি শহর থেকে কলা, বনরুটি কিনে রান্না করতে অসমর্থদের খাবার পৌঁছে দিতে চেষ্টা করেছি। বন্যায় পানি বিশুদ্ধকরণ বড়ি কিনেও পাঠানো হতো। এই কাজে ছাত্র ইউনিয়নসহ অন্য ছাত্র সংগঠনগুলোও আগে ত্রাণ কাজে এগিয়ে আসত। এবার অনেককেই দেখছি না। এমনকি টিএসসিতে বন্যার সময় শেখ হাসিনা পটু হাতে রুটি বেলেছেন, পাশে আমাদের তরুণ ছাত্রছাত্রীরাও রুটি বেলছে, আমরা আটা, ময়দা আর গুড়ের বস্তা দিয়ে আসছি- এ দৃশ্য মনে পড়ছে। কর্মচাঞ্চল্য আর সেবায় উদ্বুদ্ধ তরুণ, প্রৌঢ় সেবা দেবার জন্য তৈরি হচ্ছে- এ দৃশ্য তো খুব বেশিদিন আগের নয়। এখন সেরকম হচ্ছে না। এটি বাঙালীর চেনা চেহারা নয়। এটা ঠিক, আমরা চেষ্টা করেও গুলশানের রক্তাক্ত, বর্বর হত্যাকা-ের অমানুষিকতা ভুলতে পারছি না। বন্যার কাছে পর্যুদস্ত অসহায় পরিবারগুলো মাথার উপরে চালা বা ছাদ নেই, আশ্রয় ও খাদ্যহীন, পানীয় জলহীন, নারী-পুরুষ, বৃদ্ধ-প্রৌঢ়া, শিশুর দুরবস্থা সহ্য করা কঠিন হয়ে উঠেছে। একবার আমি লিখেছিলাম, সংসদ সদস্যদের আলাদা জমি কেন দিতে হবে? এতে অনেকে আমার ওপর গোস্বা হয়েছেন। এখন তথ্যমন্ত্রী স্পষ্ট ভাষায় বলেছেন- কাবিখা, কাবিটা ইত্যাদি সরকারী প্রকল্প যেগুলো সমাজের একেবারে নিচুতলার সহায়সম্বলহীন নারী-পুরুষের জন্য গ্রহণ করা হয়েছে, তার বরাদ্দকৃত অর্থের অর্ধেক যায় সংসদ সদস্যের বাকি অর্ধেকের একাংশ যায় ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান, মেম্বারের কাছে। যাদের জন্য এই সরকারী সাহায্য নির্দিষ্ট করা তাদের ভাগ্যে সামান্য অংশই জোটে। আমাদের বক্তব্য হলো- দেশে কিছু ক্ষেত্রে এমন ঘটনা ‘ওপেন সিক্রেট’। নানা স্তরের মানুষের হাত দিয়ে এ সেবা যাবার সময় এর কিছু কিছু থেকে যাবে। এ প্রক্রিয়ায় নেহরুর দেয়া নাম- ট্রিকলিং পদ্ধতি। একেবারে নিচ পর্যায়ের সেবাগ্রহীতার হাতে যখন পৌঁছবে তখন সেটি অর্ধেকেরও কম হবে। তবে নেহরুর মত ছিল, এ প্রক্রিয়া তো রাতারাতি বন্ধ করা সম্ভব হবে না, এতেও যেটুকু সেবা তৃণমূল পর্যায়ে পৌঁছবে, সেটা দিয়েই তাদের জীবনমানে ধীরে ধীরে পরিবর্তন ঘটবে। নেহরুর এ কথা বলেছিলেন ’৪৭-এর পর পর, সদ্য স্বাধীন ও দ্বিখ-িত হওয়া উপমহাদেশের একাংশ ভারতে। তারপর গঙ্গা, ব্রহ্মপুত্র দিয়ে দীর্ঘ সত্তর বছর যাবত অনেক জল গড়িয়ে গেছে। প্রশ্ন হচ্ছে- এত বছর পর এই ট্রিকলিং পদ্ধতিতে কি কোন আমূল পরিবর্তন এসেছে? এই প্রেক্ষিতে বলতে চাই, আমাদের ঘনিষ্ঠ বন্ধুদের মধ্যে একজন একবার ২০০৮-এ সংসদ সদস্য হয়েছিলেন। তাকে কথা প্রসঙ্গে এই তৃণমূলে সরকারী সেবা পৌঁছে দেয়ার বিষয়ে জানতে চেয়েছিলাম। সে ভেতরে থেকে এই বিষয়টি দেখেছে এবং তার কর্মচারীরা তাকে কিভাবে চাল, গম, টাকা তৃণমূলের মানুষকে কম দিয়ে দিয়ে একটি ভাল পরিমাণের পণ্য জমিয়ে পরে তা বিক্রি করে। আমাদের বন্ধু যেহেতু বরাদ্দের পুরো অংশ তৃণমূলে তার সংসদীয় এলাকার মানুষের কাছে পাঁচ বছর যাবত দিয়ে গেছে, সুতরাং তার ওপর নিজের সহকর্মী ও কর্মচারীরা খুব যে খুশি ছিল, তা নয়। তবে দুর্নীতিমুক্ত মানুষ হিসেবে সম্মান করেছে। তাকে আমি শুল্কমুক্ত গাড়ি সংসদ সদস্যরা কেন পাবে, সে প্রশ্ন করাতে সে বলেছিল, ‘না, গাড়িটা খুবই দরকার। কারণ প্রায়ই এলাকার জনসাধারণের নানা সমস্যা, রাস্তাঘাট, স্কুল-কলেজ, হাসপাতাল, কৃষি সেবা পৌঁছানোর কাজটি খুব কঠিন। এসব দেখার জন্য যাতায়াত করতে গাড়ি দরকার সব সংসদ সদস্যেরই। সংসদ সদস্যদের আদর্শ বা মডেল সাংসদ হওয়ার একটি প্রতিযোগিতা করার প্রস্তাব দিয়েছিলাম আগের একটি লেখায়! তাহলে অন্তত তার লোক হিন্দু বা আদিবাসীদের জমি দখল বন্ধ হতে পারত। তবে সংসদ সদস্যরা এসব বিষয়কে নিজেদের জন্য মুক্তিযুদ্ধের চেতনার সমর্থক কাজ বলে মনে করেন কিনা, সেটিও এক বড় প্রশ্ন। অধিকাংশ নতুন সংসদ সদস্য মুক্তিযুদ্ধের চেতনা কি, তা জানেন কিনা সন্দেহ হয়। সম্প্রতি জঙ্গীদের বর্বর ঘটনাবলী সংঘটনের পর বুদ্ধিজীবীদের অনেকে প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ইংরেজী মাধ্যমে পাঠরত উচ্চশিক্ষিত তরুণদের সংশ্লিষ্টতা পাওয়ার পর এসব বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররাজনীতি শূন্যতাকে একটি কারণ হিসেবে চিহ্নিত করে বক্তব্য দিয়েছেন। এর পর পরই ছাত্রলীগের নেতারা প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের শাখা গঠনের ঘোষণা দেয়। এখন প্রশ্ন উঠেছে- ছাত্রলীগের সদস্যদের মধ্যে দলাদলি, মারামারি, গোলাগুলি, টেন্ডারবাজি ইত্যাদির ঘটনা বিগত বছরগুলোতে সংঘটিত হওয়ার ফলে বর্তমানে এ দলটি ইমেজ সঙ্কটে আছে। যদিও এ দলে ভাল ও আন্তরিক ছাত্র যে নেই, তা নয়। তবে কিছুদিন আগে এক তরুণের সঙ্গে আলাপকালে সে প্রশ্ন করেছিলÑ ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটিতে যখন খুন, ধর্ষণ, মারামারি করা ক্যাডার উচ্চপদ লাভ করে তখন ভাল ছাত্ররা, আপনাদের সময়ের তোফায়েল, রাজ্জাক, শেখ মণি, রব, মাখন, এদের মতো নিবেদিতপ্রাণ নেতাকর্মী কিভাবে গড়ে উঠবে? বলেছিলাম, প্রধানমন্ত্রী তো জেনেবুঝে এমন ক্যাডারকে উচ্চপদ দেয়ার কথা নয়! তরুণটি বলল, উনি জানেন না, তা কি হতে পারে? মনটা বিষণœœ হয়ে গেল, সারা রাস্তা ওই কথাই আমাকে কুরে কুরে খাচ্ছিল। আর এটাও ঠিক, প্রধানমন্ত্রীও তো মানুষ, তারও ভুল হতে পারে, তবে তার একটা গুণ, তিনি ভুলকে পরে শুধরেও নেন। এ প্রসঙ্গে সংশ্লিষ্টদের বলতে চাইÑ ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সব সদস্যের চারিত্রিক ইতিহাস জেনে আরেকবার কমিটি প্রয়োজনে পুনর্গঠন করা হোক। শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগ এবং ভিসি তাদের ভাবমূর্তির চূড়ান্ত ক্ষতিসাধন করেছিল শিক্ষকদের দৈহিকভাবে হেনস্থা করার মাধ্যমে। আমরা ভেবেছিলাম, এখনই ভিসি ও ছাত্রলীগ নামধারী ক্যাডারদের অব্যাহতি ও শাস্তি দেয়া হবে। সেটি এখনও হয়নি, সে জন্য এটি সরকারের ভাবমূর্তি বিনষ্টের কারণ এখনও। এ ভুল সংশোধন করা দরকার। ছাত্ররাজনীতি যে আমলে সুস্থতা হারিয়ে ক্যাডার, পেশী, অস্ত্র, অর্থ, টেন্ডারবাজিতে পরিণত হয়েছে, সে সময় অভিভাবক, শিক্ষক, সুধীজন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছাত্র রাজনীতি বন্ধ করতে চেয়েছেন। আর তার কাছাকাছি সময়েই প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্ম হয়। এখন ছাত্রদের প্রথম পর্যায়ে খেলাধুলা, সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতা, বিতর্ক ইত্যাদি অনুশীলনের জন্য সময় ও সুযোগ তৈরি করতে হবে। পশ্চিমবঙ্গে আমরা দেখছি তরুণ-তরুণীদের দিয়ে একটি গ্রামে বিশুদ্ধ পানীয় জলের ব্যবস্থা, আদিবাসীদের স্কুলে সরঞ্জাম বিতরণ, গ্রামের শিশুদের খেলার সরঞ্জাম বিতরণ, কোন দরিদ্র দোকানির দোকানঘর সাজিয়ে দেয়া, রাস্তা তৈরি করে দেয়া ইত্যাদি করানো হচ্ছে; যা সহজেই দেশপ্রেম, গরিবের প্রতি সংবেদনশীল মন তৈরি করে দেয়। এমন সেবার কাজও করাতে হবে। এরপর ‘ছাত্র সংসদ’ গঠন করা যেতে পারে। নতুবা, হঠাৎ দলবাজি, মারামারি এসব যদি ছাত্র রাজনীতির নামে শুরু হয়ে যায়, তাহলে ওই সব বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীর কাছে বড় রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগের জনপ্রিয়তা হ্রাস পাবে, ভাবমূর্তি বিনষ্ট হবে যা জিহাদী শিক্ষকদের জন্য পুরস্কার হয়ে দাঁড়াতে পারে। একটা বিষয়ও লক্ষ্য করার মতো। মাদ্রাসাভিত্তিক জঙ্গী বাংলা ভাই, আবদুর রহমান, মুফতি হান্নান, তাজউদ্দীন হয়ে বর্তমানেও অনেক মাদ্রাসায় জঙ্গী জিহাদী প্রচার চালানো হয়, এ জাতীয় বই পড়ানো হয়, কিন্তু পতাকা উত্তোলন-জাতীয় সঙ্গীত গাওয়া হয় না। মুক্তিযুদ্ধের নায়ক, জাতির জনক ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ সম্পর্কে কিছুই পড়ানো হয় না। অন্যদিকে, উচ্চশিক্ষায় বিজনেস স্টাডিজের ছাত্রদের বেশি সংখ্যায় জিহাদী হতে দেখা যাচ্ছে। এদের শিক্ষাক্রম নয়, হিযবুত তাহ্রীরপন্থী শিক্ষকরা প্রভাবিত করেছে- এটি স্পষ্ট। তা না হলে বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠাগারে কেন জিহাদী হিযবুত তাহ্রীরের প্রকাশনা থাকবে? মাধ্যমিক স্তরে, নাইন, টেন, একাদশ, দ্বাদশের বিজনেস স্টাডিজ গ্রুপে আমাদের বহু চেষ্টা সত্ত্বেও বিজনেস স্টাডিজের শিক্ষাক্রম প্রণেতা- বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক, কলেজ শিক্ষকদের আমরা কি মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস অন্তর্ভুক্ত করাতে সম্মত করতে পারছি না? শিক্ষার অন্যান্য ধারা- মানবিক ও বিজ্ঞানের যেটি অন্তর্ভুক্ত আছে, সেটি ব্যবসা শিক্ষায় নেই। এর ওপর আয়োজিত কয়েকটি আলোচনা সভায় শিক্ষামন্ত্রীর উপস্থিতিতে এ ভারসাম্যহীনতার কথা আমি উল্লেখ করেও কোন পক্ষকে ব্যবস্থা গ্রহণে, উদ্যোগী হতে না দেখে হতাশ হয়েছিলাম। এর অর্থ হলো, বিজনেস স্টাডিজের ছাত্রছাত্রীরা নবম শ্রেণী থেকে শুধু বিজনেস বিষয় পাঠ করছে অথচ মানবিক ও বিজ্ঞান শাখার ছাত্রছাত্রীরা এ শ্রেণীগুলোতে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসসহ সব বিষয় পাঠ করছে। এটি একটি বড় ধরনের ভারসাম্যহীনতা যা এক শিক্ষাক্রম প্রণয়ন, সম্পাদনা, চূড়ান্তকরণ কর্মশিবিরে বিজনেস স্টাডিজের শিক্ষকদের অনমনীয় ঔদ্ধত্য দেখে মহাবিরক্ত হয়েছি। এই বিষয়টিও সরকারকে বিবেচনা করতে হবে। প্রধানমন্ত্রীকে উপলব্ধি করতে বলব, মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী বর্তমান বাংলাদেশের রক্ষক হচ্ছে তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহারকারী তরুণ। এদের বৈজ্ঞানিক যুক্তি-ব্যাখ্যার বিরোধিতা করে মন্তব্য করবেন না; কেননা এ মন্তব্য কিন্তু খুনী জঙ্গীদের সাহসী করে। বৈজ্ঞানিক গবেষণা, চিন্তা, যুক্তি, ব্যাখ্যা ছাড়া বিজ্ঞানের এ যুগে দেশ কি এগিয়ে যেতে পারে? যুক্তিবাদীদের ব্লগার নাম দিল কারা? এটি যেন একটি গালি হয়ে উঠেছে। ধর্ম নিয়ে বিভ্রান্তি ছড়ানো হচ্ছে। আমরা যার যার ধর্ম বাবা-মায়ের কাছ থেকে উত্তরাধিকারসূত্রে পেয়েছি, এ নিয়ে অপ্রয়োজনীয় অহঙ্কার করা জঙ্গীদের মতো যেমন সাজে না তেমনি অতিরিক্ত রক্ষণশীলতাও ঠিক নয়। কেননা, ইসলাম, ইহুদী, খ্রীস্টান, সনাতন, বৌদ্ধ ধর্মসহ সব ধর্মের মূল বাণীÑ জীবে প্রেম, মানবতার সেবার কথা বলা হয়েছে। এই মানবিকতার জয় হয়েছে যুগে যুগে। আগামীতেও হবে।
×