ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

আটলান্টিক পারে সাঁতারু সাগর-সোনিয়ার অলিম্পিক ভাবনা

প্রকাশিত: ০৭:১১, ৮ আগস্ট ২০১৬

আটলান্টিক পারে সাঁতারু সাগর-সোনিয়ার অলিম্পিক ভাবনা

রিও এ্যাকুয়াটিক সেন্টারে সাঁতারের হিট, টিকে থাকার লড়াই। তবু কমতি নেই দর্শকের। এদিন সাঁতারের আট ক্যাটাগরির হিট অনুষ্ঠিত হয়। আর একটি পদকের। বাংলাদেশের দুই সাঁতারুর পালা ব্রাজিল সময় ১১ ও ১২ আগস্ট। বাংলাদেশ সময় পরেরদিন সকালে। দুই প্রতিযোগী অংশ নেবেন একমাত্র ৫০ মিটার ফ্রি স্টাইলে। এর মধ্যে প্রথমে মাহফিজুর রহমান সাগর। আর পরের দিন সোনিয়া আক্তার। দু’জনেরই চাওয়া-পাওয়ার কিছু নেই। জীবনের প্রথম অলিম্পিক, এটাই তাদের জন্য বিরাট কিছু। অন্যরকম এক অনুভূতি। প্রতিযোগিতা শুরু হলেও হিট দেখতে যাননি দু’জনের কেউ। তবে অনুশীলন করেছেন। ভাগ্যে যাই থাকুক লড়াইয়ে জন্য যে প্রস্তুতি দরকার সেটা চালিয়ে যচ্ছেন রিওতে। এ্যাকুয়াটিক সেন্টার থেকে খুব একটা দূরে নয় বিশ্বের ২০৬ দেশের ক্রীড়া দলের জন্য নির্মিত গেমস ভিলেজ। আর সেখানেই দেখা দু’জনের সঙ্গে। সাগর-সোনিয়া দু’জনেরই অনুভূতি অভিন্ন। পদকের ধারে কাছে যাওয়া যে অসম্ভব সেটা উপলব্ধি করতে পারছেন তারা। তবে ভাল একটা টাইমিংয়ের জন্য মুখিয়ে। বিশেষ করে দেশ ত্যাগের আগে যে টাইমিং নিয়ে রিও এসেছেন অন্তত এর চেয়ে একটু বেশি ভাল করার প্রত্যশা তাদের। রিওতে সময় স্বল্পতায় অনুশীলনের সমস্যা নিয়ে কারও কোন অভিযোগ নেই। কারণ এখানে ছয় মাস আর ছয়দিন তাদের জন্য একই কথা। অর্থাৎ অলিম্পিকে পদক জেতার মতো অবস্থা, ক্ষমতা যে তাদের নেই স্বীকার করলেন অকপটে। অলিম্পিক পদকের জন্য প্রয়োজন দীর্ঘ সময়ের প্রশিক্ষণ। বিদেশে টানা দেড় দুই বছর উন্নত প্রশিক্ষণ নিতে পারলেই কেবল পদকের তাগাদটা আসবে। ‘হিটে আউট’-অন্তত এই অপবাদ থেকে রক্ষা পাওয়া যাবে। পাশাপাশি পদক জয়ের বিষয়টাও জোরালো হবে। চেষ্টার বড় একটা রসদ পাওয়া যাবে প্রত্যাশিত ট্রেনিং পেলে। কিন্তু এটা যে হবে না, নজির নেই ভাল রেজাল্টের জন্য দীর্ঘ মেয়াদী প্রশিক্ষণের জন্য সাঁতারুদের বিদেশে পাঠানের। কাজেই অংশগ্রহণই বড় কথা-এটাই তাদের জন্য প্রযোজ্য। যা দেশের ক্রীড়াপ্রেমী মানুষ শুনে অভ্যস্ত স্বাধীনতার ৪২ বছর পরও। তবে ভিলেজে বেশ হাসি-খুশির মধ্যে আছেন বাংলাদেশের সাত ক্রীড়াবিদ। ব্যতিক্রম নন সাগর-সোনিয়াও। তবে শূটার আবদুল্লাহ হেল বাকী ও বাংলার টাইগার খ্যাত গলফার সিদ্দিকুর রহমানের প্রেক্ষাপট একটু ভিন্ন। শুধু অংশগ্রহণ নয়। একটা লক্ষ্য নিয়ে রিও এসেছেন তারা অলিম্পিকে খেলতে। অবশিষ্ট তিনজের মধ্যে স্প্রিন্টার মেসবাহ আহমেদ ও শিরিন আক্তারের চাওয়া-পাওয়া সাঁতারু সাগর-সোনিয়ার মতোই। তাদের কাছে অলিম্পিকে অংশগ্রহণই জীবনের সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি। আর আরচার শ্যামলী রায় র‌্যাঙ্কিং পর্ব শেষ করেছেন। হয়েছেন ৬৪ জনের মধ্যে ৫৩তম। এখন কতদূর এগোতে পারেন সেটাই দেখার। সোনিয়ার অভিব্যক্তি, হিটে বাদ পড়লেও দুঃখ থাকবে না যদি টাইমিংটা প্রত্যাশিত হয়। উন্নত বিশ্বের সেরা সাঁতারুদের সঙ্গে জলকেটে ভাল একটা টাইমিং করতে পারলে ভাল লাগবে। অন্তত সাউথ এশিয়ায় আরও ভাল করার একটা রসদ, অনুপ্রেরণা পাওয়া যাবে। আমি হাল ছাড়ছি না। সাউথ এশিয়ান গেমসে পদক জয়ের নিশ্চয়তা দিতে পারব অলিম্পিকে ভাল করলে। ভাল টাইমিংয়ের প্রত্যাশা সাগরেরও। তবে চমক লাগানোর মতো কিছু যে করা সম্ভব নয়, জানিয়ে দিলেন নিজেই। তার কথায় দেশে সীমিত সুযোগ-সুবিধার মধ্যে খেলাধুলা করে এত বড় মাপের আসরে পদক জয়ের কল্পনা মানে পাগলের প্রলাম। ভারতের ক্রীড়াবিদরা যে ধরনের ট্রেনিং বা সুযোগ-সুবিধা পায় আমরা তা পাই না। উন্নত প্রশিক্ষণ নিয়েও ভারতীয় সাঁতারুরা আমাদের মতোই। তাদের সাঁতারুরাও মনে করেন অংশগ্রহণটাই বড়। সেখানে আমরা তো আরও অনেক কম সুবিধার মধ্যে থেকে অংশগ্রহণটাই বড়, এর চেয়ে বেশি কিছু বলতে পারি না। সাগর পরিষ্কারভাবেই জানিয়ে দিলেন পদক দূরের কথা। পদকের ধারে-কাছে যাওয়ার চিন্তা অলীক স্বপ্ন ছাড়া আর কিছু নয়। আর সেটা আমরা করছিও না। দেশের প্রতিনিধিত্ব করতে এসে ভাল একটা টাইমিং করতে পারলেই যথেষ্ট। সাগর যোগ করলেন, রিও অলিম্পিকে ২০৬ দেশ অংশ নিচ্ছে। কিন্তু পদক তালিকায় নাম লেখাতে পারবে না অর্ধেক দেশ। আমারও সেই কাতারে আছি। তবে বিগত সময়ের তুলনায় এবার একটা আশার প্রদীপ জ্বলছে। সেটা গলফার সিদ্দিকুর রহমানের বদৌলতে। শূটার বাকীকে নিয়েও একটা সম্ভাবনা দেখছেন সবাই। এখন এ দু’জনের যে কেউ কিছু একটা করতে পারলে বাংলাদেশের ক্রীড়া ইতিহাসে নতুন এক অধ্যায়ের সূচনা হবে। গোটা দলের অলিম্পিক সফর সফল হয়ে উঠতে বাধ্য। যদি আমরা কিছু একটা নিয়ে যেতে পারি জাতির জন্য। সত্যি কথা বলতে কি, সাফ গেমসের মত মহাদেশীয় আসরে আমরা যেখানে খাবি খাই সেখানে অলিম্পিক তো অটল হিমালয় জয় করার মতো। আর তাই কল্পনার রাজ্যে নয়। বাস্তবতার মধ্যেই থাকতে চাই।
×