ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

সার্কের গন্তব্য কোথায়

প্রকাশিত: ০৬:২৭, ৮ আগস্ট ২০১৬

সার্কের গন্তব্য কোথায়

সম্প্রতি পাকিস্তানের ইসলামাবাদে সার্ক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীদের এক বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। দেশটির প্রধানমন্ত্রী বৈঠকের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন। বৈঠকে আন্তঃরাষ্ট্রীয় অপরাধ দমন এবং এ সংক্রান্ত আইন প্রয়োগ বিষয়ে আলাপ-আলোচনা হয়। তবে শুরুতেই এবারের সম্মেলন ধাক্কা খেয়েছে নানাদিক থেকে। প্রথমত, বাংলাদেশের পক্ষ থেকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী যোগ দেননি। বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করেন ইসলামাবাদে নিযুক্ত হাইকমিশনার ও সংশ্লিষ্টরা। প্রশ্ন উঠতে পারে, এরকম একটি গুরুত্বপূর্ণ সম্মেলনে বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী গেলেন না কেন? কেউ কেউ হয়ত বলবেন, ঢাকার গুলশান, কল্যাণপুর এবং কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়ায় জঙ্গী ও সন্ত্রাসী হামলার পরিপ্রেক্ষিতে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর পক্ষে সে দেশে যাওয়া সম্ভব হয়নি। আপাতদৃষ্টিতে এর মধ্যে কিছু সত্য নিহিত থাকলেও বাস্তবে বাংলাদেশে ক্রমবর্ধমান জঙ্গী ও ধর্মীয় সন্ত্রাসী তৎপরতার পেছনে পাকিস্তান, বিশেষ করে দেশটির গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআইয়ের নাম উচ্চারিত হয়ে থাকে। বাংলাদেশের রাজনীতিতে ঢাকার পাকিস্তান হাইকমিশনের কতিপয় পদস্থ কর্মকর্তার প্রায়ই নাক গলানো তথা হস্তক্ষেপের সুনির্দিষ্ট অভিযোগ উঠেছে। এ নিয়ে দু’দেশের মধ্যে কূটনৈতিক পর্যায়ে বহিষ্কার-পাল্টা বহিষ্কারের ঘটনাও ঘটেছে। এর বাইরেও একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতাকারী মানবতাবিরোধী-যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ও দ-াদেশ কার্যকরের পর পাকিস্তান সুস্পষ্টভাবে তাদের পক্ষ নেয়ায় দু’দেশের সম্পর্কের চরম অবনতি ঘটে। এক পর্যায়ে বাংলাদেশের সর্বস্তরের জনগণের পক্ষ থেকে দাবি ওঠে দু’দেশের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করাসহ ঢাকার পাকিস্তানী দূতাবাস বন্ধ করে দেয়ার। সার্ক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীদের বৈঠকে প্রতিবেশী দেশ ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর অংশগ্রহণের বিষয়টিও চরম নাটকীয়তায় পরিপূর্ণ। ভারতের কাশ্মীর অংশে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে স্বায়ত্তশাসনের দাবিতে আন্দোলনরত বেশ কয়েকজন কাশ্মীরী নিহত হলে এর বিরুদ্ধে তীব্র বাদ-প্রতিবাদ ও বিক্ষোভ শুরু হয় আজাদ কাশ্মীরসহ সমস্ত পাকিস্তানে। সে অবস্থায় ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর ইসলামাবাদে যাওয়াটাই ছিল চরম ঝুঁকিপূর্ণ। তবুও সেই চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করে সেখানে যান এবং তড়িঘড়ি করে ভাষণ সমাপ্ত করে আনুষ্ঠানিক রাষ্ট্রীয় ভোজে অংশগ্রহণ না করেই ফিরে যান স্বদেশে। আঞ্চলিক সহযোগিতার মাধ্যমে সন্ত্রাস, সহিংসতা ও আন্তঃরাষ্ট্রীয় অপরাধসমূহ মোকাবেলার উপায় নির্ধারণের কথা বলা হলেও এবারের বৈঠক অনেকটাই নিষ্ফল বলা চলে। এর জন্য প্রধানত দায়ী পাকিস্তান সরকার, সে দেশের সেনাবাহিনী, বিশেষ করে আইএসআই। দুঃখজনক হলো, প্রতিষ্ঠার পর থেকে সার্কের আওতায় কমপক্ষে ২৫টি চুক্তি এবং শতাধিক ঘোষণা হলেও এসবের অধিকাংশই বাস্তবায়িত হয়নি। যেমন, বাণিজ্য বাড়াতে সাপটা ও সাফটার মতো চুক্তি করা হলেও দক্ষিণ এশিয়ায় আন্তঃবাণিজ্য বেড়েছে মাত্র ৫ দশমিক ৮ শতাংশ। অথচ আসিয়ানের ক্ষেত্রে এই হার ২৫ শতাংশ এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের ক্ষেত্রে ৬০ শতাংশের বেশি। ২০০৪ সালে ইসলামাবাদ শীর্ষ সম্মেলনে দক্ষিণ এশীয় ফুড ব্যাংক গঠনের প্রস্তাব করা হলেও সব দেশ আজ পর্যন্ত তা অনুমোদন করেনি। ২০০২ সালের মধ্যে দক্ষিণ এশিয়াকে দারিদ্র্যমুক্ত করার ঘোষণা থাকলেও তা থেকে গেছে অধরাই। সার্বিক দিক বিবেচনায় এখন সময় এসেছে সার্ক সম্পর্কে নতুন করে চিন্তা-ভাবনা করার। এর জন্য সুনির্দিষ্ট কোন দেশ বা পক্ষকে দায়ী না করে বলা যায়, কাশ্মীর নিয়ে পাকিস্তান-ভারত দ্বন্দ্ব-সংঘাত, বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে সংঘটিত যুদ্ধাপরাধ-মানবতাবিরোধীদের বিচার নিয়ে অযাচিত হস্তক্ষেপ, তদুপরি পাকিস্তান কর্তৃক অন্য দেশে জঙ্গী তৎপরতা ও সন্ত্রাসী পাচার বন্ধ করা না হলে সার্ক কখনই তার কাক্সিক্ষত লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য পূরণে সক্ষম হবে না।
×