ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

ভ্যাট নিয়ে আবারও আন্দোলনের ডাক ব্যবসায়ীদের

প্রকাশিত: ০৫:৫৯, ৮ আগস্ট ২০১৬

ভ্যাট নিয়ে আবারও আন্দোলনের ডাক ব্যবসায়ীদের

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ বাজেটের পর কিছুদিন ধামাচাপা পড়ে থাকলেও ভ্যাট (মূল্য সংযোজন কর) ইস্যুতে আবারও আন্দোলনের ডাক দিয়েছেন ক্ষুদ্র মাঝারি খাতের ব্যবসায়ীরা। ব্যবসায়ীরা বলছেন, তারা ১৪ হাজার টাকার স্থলে ২৮ হাজার টাকা প্যাকেজ ভ্যাট দেবেন না। অন্যদিকে রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) কর্মকর্তারাও ব্যবসায়ীদের হয়রানি করছেন বলে তাদের অভিযোগ। এ ছাড়া নতুন ভ্যাট আইনের সাতটি বিষয় সংশোধনসহ এ সব ইস্যুতে শিগগিরই তারা মতিঝিলে ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের সামনে প্রতিবাদ সমাবেশ করবেন। দাবি আদায়ে প্রয়োজনে এফবিসিসিআই এবং জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) কার্যালয় ঘেরাও করা হবে। রবিবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির (ডিআরইউ) মিলনায়তনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে ব্যবসায়ী ঐক্য ফোরামের নেতারা এই হুমকি দেন। ব্যবসায়ী ঐক্য ফোরামের সাধারণ সম্পাদক আবু মোতালেব বলেন, নতুন আইনে ৮০ লাখ টাকা টার্নওভারের বিপরীতে মূল্য সংযোজনের ওপর ১৫ শতাংশ হারে সর্বনিম্ন ২৮ হাজার টাকা প্রদান করতে হয়। একজন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীর পক্ষে এই পরিমাণ অর্থ দেয়া সম্ভব নয়। তাই এ সমস্যা সমাধানে প্যাকেজ ভ্যাট পুনবর্হাল করতে হবে। তিনি আরও বলেন, ক্ষুদ্র, মাঝারি ও সেবা খাতে ৩৬ লাখ টাকা থেকে ৫ কোটি টাকা টার্নওভার পর্যন্ত নির্ধারতি শূন্য দশমিক শূন্য ৫ শতাংশ ভ্যাটও প্রত্যাহার করতে হবে। আবু মোতালেব বলেন, ভাল ব্যবসার জন্য প্রতি বছর আমরা রমজান মাসের জন্য অপেক্ষা করি। কিন্তু, এ বছর রমজানের আগে বাংলাদেশের ১ লাখ মানুষকে ভিসা দিয়েছে ভারত। ফলে অনেকেই ভারত থেকে পণ্য কিনেছে। আর এতে আমাদের বাণিজ্যে ৬০০ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। তিনি বলেন, স্বল্প দামের পাদুকা, লুঙ্গি-গামছাসহ সাধারণ ভোক্তার ব্যবহার্য কিছু জিনিসেও ভ্যাট আরোপ করা হয়েছে। আন্দোলন ছাড়া আমাদের সামনে আর কোন বিকল্প পথ খোলা নেই। সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, কৃষকের ব্যবহৃত পিভিসি পাইপ, কৃষি যন্ত্রাংশ ও উপকরণের ওপর খুচরা মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট) আদায় করা হলে কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হবে। তাই কৃষি যন্ত্রাংশে খুচরা পর্যায়ে ভ্যাট সম্পূর্ণরূপে প্রত্যাহারের দাবি জানানো হয়। এজন্য আগামী ১ সেপ্টেম্বর পার্টনারশিপ সংলাপের দাবি জানান ঐক্য ফোরামের সভাপতি। তিনি জানান, ব্যবসায়ীদের দাবি মানা না হলে শীঘ্রই মতিঝিলে ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের সামনে প্রতিবাদ সমাবেশ করবে। এ সময় তিনি বলেন, এফবিসিসিআইয়ের নেতৃত্ব দুর্বল হওয়ায় তারা ব্যবসায়ীদের দাবি নিয়ে কোথাও বলার সুযোগও পান না। দাবি আদায়ে প্রয়োজনে এফবিসিসিআই এবং জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) কার্যালয় ঘেরাও করা হবে বলে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন তিনি। ব্যবসায়ী নেতা আবদুর রাজ্জাক বলেন, দেশের বড় বড় শিল্পগুলোকে স্বল্পসুদে ঋণ দিচ্ছে বিশ্বব্যাংক। আর বিশ্বব্যাংকের এই কার্যক্রমের ফলে ক্ষুদ্র উদ্যোক্তারা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। সরকার এদিকে নজর দিচ্ছে না। ব্যবসায়ী নেতারা বলেন, ব্যবসা চালানো কঠিন হচ্ছে। ভ্যাট কর্মকর্তারা হয়রানি করে। এটি মেনে নেয়া যায় না। এ সময় ব্যবসায়ীরা এফবিসিসিআইয়ের বর্তমান নেতৃত্বেরও কড়া সমালোচনা করেন। তারা বলেন, ভ্যাট আইন ও প্যাকেজ ভ্যাট নিয়ে সরকার ব্যবসা বিরোধী সিদ্ধান্ত নিলেও এফবিসিসিআইয়ের সভাপতিসহ সিনিয়র নেতারা কার্যকর উদ্যোগ নিতে ব্যর্থ হয়েছেন। সংবাদ সম্মেলনে ব্যবসায়ী নেতারা বেশকিছু প্রস্তাবনা তুলে ধরেন। খুচরা ব্যবসায়ী বা দোকান পর্যায়ে টার্নওভারের পরিমাণ নির্বিশেষে মূসক আইনে নিবন্ধন গ্রহণ করে বার্ষিক ভিত্তিতে সুনির্দিষ্ট পরিমাণে বিধি ধারা নির্ধারিত অর্থ টার্নওভার কর (প্যাকেজ ভ্যাট) হিসাবে পরিশোধনের বিধান করা। ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্পের ক্ষেত্রে কেবল উৎপাদন পর্যায়ে ৩৬ লাখ টাকার উর্ধে দেড় কোটি টাকা পর্যন্ত টার্নওভারের ওপর ৩ শতাংশ হারে টার্নওভার কর পরিশোধের বিধান করা। এফবিসিসিআইয়ের উপদেষ্টা মনজুর আহমেদসহ ব্যবসায়ী ঐক্য ফোরামের নেতারা সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন।
×