ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

অনুসারীদের ক্ষোভ বিএনপির স্থায়ী কমিটিতে এবারও স্থান হলো না নোমানের

প্রকাশিত: ০৫:৩৩, ৮ আগস্ট ২০১৬

অনুসারীদের ক্ষোভ বিএনপির স্থায়ী কমিটিতে এবারও স্থান হলো না নোমানের

স্টাফ রিপোর্টার, চট্টগ্রাম অফিস ॥ বিএনপির স্থায়ী কমিটিতে এবারও স্থান হলো না প্রবীণ নেতা ও চট্টগ্রামের কা-ারী হিসেবে পরিচিত আবদুল্লাহ আল নোমানের। সে তুলনায় অনেক পরে রাজনীতিতে আসা চট্টগ্রামের আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী ও চকরিয়ার সালাহউদ্দিন আহমেদ স্থান করে নিয়েছেন দলের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরামে। এ নিয়ে চরম ক্ষোভের সঞ্চার হয়েছে নোমান অনুসারীদের মধ্যে। এছাড়া যুদ্ধাপরাধী সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর পুত্র হুম্মাম কাদের চৌধুরী কেন্দ্রীয় কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত হওয়ায় দেখা দিয়েছে নানামুখী আলোচনা-সমালোচনা। এদিকে পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনের পর বড়ধরনের ওলটপালট হয়ে গেছে চট্টগ্রাম নগর বিএনপিতে। ওয়ানম্যান ওয়ান পোস্ট সিদ্ধান্ত কার্যকরের ফলে পাল্টে গেছে বিএনপির মহানগর কমিটির নেতৃত্ব। বিএনপির ৫০২ সদস্যের কেন্দ্রীয় কমিটিতে স্থান পেয়েছেন চট্টগ্রামের ২৫ নেতা। এর মধ্যে বেশি আলোচনা প্রবীণ রাজনীতিক ও মুক্তিযোদ্ধা আবদুল্লাহ আল নোমানের স্থায়ী কমিটিতে স্থান না হওয়া। কেননা, আগের কাউন্সিলেও তার স্থায়ী কমিটির সদস্য হওয়া নিয়ে জল্পনা-কল্পনা ছিল। কিন্তু শেষপর্যন্ত চট্টগ্রামকে সন্তুষ্ট করার চেষ্টা চলে যুদ্ধাপরাধী সাকা চৌধুরীকে স্থায়ী কমিটির সদস্য বানিয়ে। ইতোমধ্যেই আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের রায় অনুযায়ী সাকা চৌধুরীর মৃত্যুদ- কার্যকর হয়েছে। চট্টগ্রামের কোটার এ পদটিতে কে আসছেনÑ এ আলোচনায় ঘুরেফিরে আসে আবদুল্লাহ আল নোমান ও আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীর নাম। নানান কারণে খসরু দলের চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার বেশ ঘনিষ্ঠ বলে ধারণা করা হয়ে থাকে। তবে মাঠের রাজনীতিতে আবদুল্লাহ আল নোমান দীর্ঘদিন ধরে যে ভূমিকা রেখে আসছিলেন এবং সিনিয়র হিসেবে তিনিই স্থায়ী কমিটির সদস্য হবেনÑ তা অনেকেই ধারণা করেছিলেন। কিন্তু শেষপর্যন্ত জায়গা হয়নি নোমানের, স্থান করে নেন খসরু। অনেক জুনিয়র নেতা দলের যুগ্মমহাসচিব কক্সবাজারের সালাহউদ্দিন আহমেদও স্থায়ী কমিটির সদস্য হয়েছেন। কিন্তু নোমানকে সন্তুষ্ট থাকতে হচ্ছে আগের সেই ভাইস চেয়ারম্যান পদ নিয়েই। এ বঞ্চনা একেবারেই মানতে পারছেন না তার অনুসারীরা। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক নেতারা ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে বলেছেন, এমন সিদ্ধান্তের মাধ্যমে শুধু আবদুল্লাহ আল নোমান নয়, চট্টগ্রামকেও অবমূল্যায়ন করা হয়েছে। কারণ প্রায় চার দশক ধরে রাজনীতি করছেন নোমান। চট্টগ্রামে বিএনপির মূল নেতা বলতে তাকেই বুঝায়, যার গ্রহণযোগ্যতা দলের বাইরে সাধারণ মানুষ পর্যন্ত রয়েছে। নোমানকে স্থায়ী কমিটিতে না এনে অপেক্ষাকৃত জুনিয়র দুই নেতাকে সর্বোচ্চ ফোরামে স্থান দেয়ার বিষয়টিকে নানানভাবে দেখছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। কেননা, ঘোষিত কেন্দ্রীয় কমিটিতে ভাইস চেয়ারম্যান পদে সাকা চৌধুরীর ছোটভাই গিয়াস উদ্দিন কাদের চৌধুরী ও নির্বাহী সদস্য পদে সাকাপুত্র হুম্মাম কাদের চৌধুরীকে স্থান দেয়া হয়েছে। আবদুল্লাহ আল নোমানের অবমূল্যায়ন এবং একই সঙ্গে সাকা চৌধুরীর ছোটভাই ও পুত্রকে গুরুত্বপূর্ণ পদে অন্তর্ভুক্তির বিষয়টি বিএনপির অনেক সমর্থকই মানতে পারছেন না। কারণ এর মাধ্যমে যুদ্ধাপরাধী সাকা চৌধুরীর প্রতি বিএনপি নেত্রীর এক ধরনের দুর্বলতা প্রমাণিত হয়। আরেক যুদ্ধাপরাধী আবদুল আলীমের পুত্রও স্থান পেয়েছেন বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটিতে। দুই যুদ্ধাপরাধী পরিবারকে স্থান দেয়ার নীতিগত সিদ্ধান্ত যদি কার্যকর হয় সেক্ষেত্রে আবদুল্লাহ আল নোমানের মতো একজন মুক্তিযোদ্ধার স্থান দলের সর্বোচ্চ ফোরামে না হওয়াটাকে তারা অনেকটা স্বাভাবিক হিসেবেই দেখছেন। নোমান স্থায়ী কমিটির সদস্য না হওয়ায় দারুণ হতাশ তার অনুসারী তৃণমূলের নেতাকর্মী ও সমর্থকরা। তবে স্থায়ী কমিটিতে আরও দুটি পদ শূন্য থাকায় কিছুটা আশাবাদী থাকার চেষ্টা করছেন কেউ কেউ। বিএনপির ৫০২ সদস্যের কেন্দ্রীয় কমিটিতে রয়েছেন চট্টগ্রামের ২৫ নেতা। এর মধ্যে স্থায়ী কমিটির সদস্য হয়েছেন আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী। ভাইস চেয়ারম্যান চারজনÑ এম মোরশেদ খান, আবদুল্লাহ আল নোমান, মীর মোহাম্মদ নাছির উদ্দিন ও গিয়াস উদ্দিন কাদের চৌধুরী। বাকিদের স্থান হয়েছে সম্পাদকম-লী ও নির্বাহী সদস্য পদে। বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা হয়েছেন চট্টগ্রামের চারজন। তারা হলেনÑ সাবেক হুইপ সৈয়দ ওয়াহিদুল আলম, গোলাম আকবর খন্দকার, সাবেক সংসদ সদস্য বেগম রোজী কবির ও এসএম ফজলুল হক। ওয়ানম্যান ওয়ান পোস্ট নীতি কার্যকর হওয়ায় পাল্টে গেছে চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির নেতৃত্ব। আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী স্থায়ী কমিটিতে চলে যাওয়ায় মহানগর কমিটির সভাপতি পদটি ছাড়তে হয়েছে। সাধারণ সম্পাদক ডাঃ শাহাদাত হোসেনকে করা হয়েছিল কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক। কিন্তু তিনি কেন্দ্রে যেতে আপত্তি জানিয়ে মহানগর কমিটির দায়িত্ব নেয়ার ইচ্ছা ব্যক্ত করলে তাকে করা হয় মহানগর বিএনপির সভাপতি। সাধারণ সম্পাদক হয়েছেন আবুল হাশেম বক্কর। প্রথমে ঘোষিত কমিটিতে তাকেও কেন্দ্রীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক করা হয়েছিল। তিনিও কেন্দ্রে না গিয়ে চট্টগ্রামের রাজনীতিতে থাকার ইচ্ছা ব্যক্ত করেন। এক নেতার দুই পদ না রাখার সিদ্ধান্তের ফলে মহানগর বিএনপির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদে পরিবর্তন ঘটেছে। মহানগর কমিটির সিনিয়র সহসভাপতি আবু সুফিয়ান সভাপতি হতে পারেনÑ এমন আলোচনা থাকলেও শেষপর্যন্ত তাকে ডিঙ্গিয়ে শীর্ষ পদে উঠে আসেন ডাঃ শাহাদাত। মহানগর কমিটির ওলটপালট নিয়েও নগর বিএনপির কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া রয়েছে। এ বহিঃপ্রকাশ মাঠে কেমন হয়, তা এখন দেখার বিষয়।
×