ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

কুষ্টিয়ায় ক্রসফায়ারের ভয় দেখিয়ে ১০ লাখ টাকা আদায়ের অভিযোগ ওসির বিরুদ্ধে

প্রকাশিত: ০৫:৩২, ৮ আগস্ট ২০১৬

কুষ্টিয়ায় ক্রসফায়ারের ভয় দেখিয়ে ১০ লাখ টাকা আদায়ের অভিযোগ ওসির বিরুদ্ধে

নিজস্ব সংবাদদাতা, কুষ্টিয়া, ৭ আগস্ট ॥ কুমারখালীতে এক চাল ব্যবসায়ীকে থানায় ধরে নিয়ে ক্রসফায়ারের ভয় দেখিয়ে ১০ লাখ টাকা আদায়ের অভিযোগ পাওয়া গেছে। কুমারখালী থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) জিয়াউর রহমানের বিরুদ্ধে এ অভিযোগ করেছেন চাল ব্যবসায়ী আশরাফ উদ্দিন। এ ঘটনার পর ওই চাল ব্যবসায়ী কুষ্টিয়ার অতিরিক্ত পুলিশ সুপারের সঙ্গে সাক্ষাত করে ওই ওসির বিষয়ে অভিযোগ করেন। এদিকে ওসির অপকর্মের বিরুদ্ধে কর্মসূচী ঘোষণা করেছে উপজেলা আওয়ামী লীগ। অনিক টেড্রার্সের স্বত্বাধিকারী চাল ব্যবসায়ী আশরাফ উদ্দিন অভিযোগ করেন, গত ২৭ জুলাই রাত ১২টার দিকে কুমারখালী থানার ওসি জিয়াউর রহমান তার তেবাড়িয়া এলাকার বাড়ি থেকে জোরপূর্বক তুলে নিয়ে গিয়ে গোডাউনে সরকারী চাল আছে কি-না জানতে চায়। তখন তিনি জানান, কোন চোরাই ব্যবসার সঙ্গে তিনি জড়িত নন। এরপরও শহরের কলেজ মার্কেটে অবস্থিত তার চালের গোডাউন ভেঙ্গে ফেলে পুলিশ। এ সময় গোডাউনে কয়েক বস্তা সরকারী চাল থাকার অভিযোগে তাকে থানায় নিয়ে যাওয়া হয়। আশরাফ উদ্দিন জানান, রাতে আমাকে মারধর করে ক্রসফায়ারের ভয় দেখানো হয়। এরপর আমার কাছে ৪০ লাখ টাকা দাবি করে ওসি। আমি এত টাকা দিতে পারব না জানালে তিনি গুলি করার হুমকি দেন। এরপর ওই রাতেই আমি ১০ লাখ টাকা ব্যবস্থা করে ওসিকে দিয়ে আসি। পরে আরও ২০ লাখ টাকার একটি চেক দিয়েছি ওসিকে। আশরাফ জানান, বিষয়টি আমি তাৎক্ষণিক স্থানীয় সাংসদ, উপজেলা চেয়ারম্যান ও পৌর মেয়রকে অবহিত করি। পরে ২৯ জুলাই কুষ্টিয়া পুলিশ সুপার প্রলয় চিসিম ও অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জয়নুল আবেদিনের সঙ্গে দেখা করে বিষয়টি অবগত করি। তারা ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন বলে আমাকে আশ্বাস দিয়েছেন। তবে এক সপ্তাহ পেরিয়ে গেলেও ওসি আমার টাকা ফেরত দিচ্ছে না। এ বিষয়ে কুমারখালী থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) জিয়াউর রহমানের কাছে মোবাইল ফোনে জানতে চাইলে তিনি বলেন, কিছুদিন আগে একটি সয়াবিন তেলের ট্রাকে ডাকাতি হয়। সেই ডাকাতির মাল কুষ্টিয়ার কুমারখালী ও মিরপুরে একটি গোডাউনে আনলোড করা হয়েছে বলে আমাদের কাছে খবর আসে। পরে মিরপুর থেকে বেশ কিছু সয়াবিন তেল উদ্ধার করা হয়। আর কুমারখালীতে আশরাফ নামের একজনের গোডাউনে তেল আছে খবর পেয়ে ২৭ জুলাই রাতে অভিযান পরিচালনা করি। তবে সেখানে কোন তেল পাওয়া না গেলেও সেখানে প্রায় ৩০০ টন সরকারী চাল পাওয়া যায়। এ ব্যাপারে আশরাফকে জিজ্ঞাসা করলে সে জানায়, টিআর, কাবিখার প্রকল্পের মাধ্যমে সে সোলার প্যানালের কাজ করেছে। এসব চাল টিআর কাবিখার। তবে কাগজপত্র দেখাতে পারেনি। ওসি আরও জানান, ২৮ তারিখে আমার ছেলের অসুস্থতার খবর শুনে আমি বাড়ি চলে যাই। এসে শুনি আমার বিরুদ্ধে টাকা নেয়ার অভিযোগ করা হয়েছে। যেহেতু চালের বিষয়টি তদন্ত চলছে আর এতে করে অনেক রাঘব বোয়ালরা ফেঁসে যেতে পারে তাই এসব কাল্পনিক অভিযোগ আনা হয়েছে আমার নামে। গত ইউপি নির্বাচনের সময় উপজেলা চেয়ারম্যান ও পৌর মেয়র অরুণের কথামতো কাজ না করায় তারা আমার বিরুদ্ধে ক্ষিপ্ত হয়ে মিথ্যা অভিযোগ করছে। এদিকে কুমারখালী উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুল মান্নান খান বলেন, ওসি দীর্ঘদিন সাধারণ মানুষকে জিম্মি করে ক্রসফায়ারের ভয় দেখিয়ে অর্থ আদায় করে আসছে। তিনি সন্ত্রাসী ধরেন না। ধরেন ভাল মানুষদের। চাল ব্যবসায়ী আশরাফকে ক্রসফায়ারের ভয় দেখিয়ে তিনি অর্থ হাতিয়ে নিয়েছেন। উপজেলা আওয়ামী লীগ সভা করে মঙ্গলবার ওসির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ সমাবেশ করবে। কুষ্টিয়ার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জয়নুল আবেদিন বলেন, এরকম একটি অভিযোগ পেয়েছি। তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।
×