ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

বছরের ব্যবধানে গ্যাসের দাম বৃদ্ধির প্রক্রিয়া শুরু

প্রকাশিত: ০৫:৩২, ৮ আগস্ট ২০১৬

বছরের ব্যবধানে গ্যাসের দাম বৃদ্ধির প্রক্রিয়া শুরু

স্টাফ রিপোর্টার ॥ সঞ্চালন মাসুল বৃদ্ধির শুনানির মাধ্যমে এক বছরের ব্যবধানে আবারও গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধির প্রক্রিয়া শুরু করেছে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি)। রবিবার বেলা সাড়ে ১১টায় বিইআরসি রাজধানীর টিসিবি অডিটরিয়ামে নিয়ম রক্ষার এই গণশুনানি শুরু করেছে। গত বছর ১ সেপ্টেম্বর গ্যাসের বর্ধিত দর নির্ধারণ করে কমিশন। সরকারী পে স্কেল ঘোষণার পর বিদ্যুত ও জ্বালানিখাতের কোম্পানিগুলোর ৭৫ শতাংশ বেতন বৃদ্ধি করেছে মন্ত্রণালয়। আগেই মন্ত্রণালয়ের অধীনে থাকা কোম্পানিগুলোর কর্মকর্তা-কর্মচারীরা সরকারী কর্মকর্তা কর্মচারীদের চেয়ে ৭৫ শতাংশ বেশি বেতন পেত। এর উপর প্রফিট বোনাস হিসেবে বাড়তি অর্থ আয় করেন তারা। এখন বেতন বৃদ্ধির ফলে প্রতিষ্ঠানগুলোর পরিচালনা ব্যয় বাড়ছে। বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন ঐ বর্ধিত ব্যয় ভোক্তার পকেট থেকে তুলে দেয়ার ব্যবস্থা করছে। মাত্র এক বছরের ব্যবধানে গ্যাসের দাম বৃদ্ধির নজির নেই। এর আগে ২০০৯ সালে গ্যাসের দাম বৃদ্ধির পর ২০১৫ সালে ৬ বছরের ব্যবধানে এসে গ্যাসের দাম বৃদ্ধি করা হয়। কিন্তু লাভজনক একটি খাতে মাত্র বছরের ব্যবধানে দরবৃদ্ধি মূল্য স্ফিতির সঙ্গে জনদুর্ভোগকে উস্কে দেবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। প্রতি ঘনমিটার গ্যাসের সঞ্চালন ট্যারিফ দশমিক ১৫৬৫ টাকা থেকে বাড়িয়ে ন্যূনতম দশমিক ৩৬৬৫ টাকা নির্ধারণের প্রস্তাব করে গ্যাস ট্রান্সমিশন কোম্পানি লিমিটেড (জিটিসিএল)। জিটিসিএল এর প্রস্তাব বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের প্রস্তাব মূল্যায়ন কমিটি পর্যালোচনা করে দশমিক ২৯৫৬ টাকা নির্ধারণের সুপারিশ করেছে। যা বিদ্যমান সঞ্চালন ট্যারিফের তুলনায় প্রায় ৮৮ দশমিক ৮৮ শতাংশ বেশি। শুনানিতে এফবিসিসিআই সভাপতি মাতলুব আহমাদ বলেন, প্রতিবছরই শুনি গণশুনাানি হয়। কিন্তু শেষ পর্যন্ত দেখি গ্যাসের দাম বাড়ে। তিনি বলেন, জনগণ বছর বছর গ্যাসের দাম বৃদ্ধি সহ্য করতে পারছে না। এফবিসিসিআই সভাপতি বলেন, আমাদের গ্যাস নাই বলা হচ্ছে অথচ বিশাল খরচ করে গ্যাস ট্রান্সমিশন লাইন নির্মাণ করা হচ্ছে। তিনি কমিশনকে বলেন, গ্যাসের দাম আর বাড়াবেন না। আগস্টে গুলশান ট্রাজিডির পর এমনিতেই দেশ নানা ঝড় পার করছে। এ অবস্থায় গ্যাসের দাম বাড়ালে বিনিয়োগে মারাত্মক প্রভাব পড়বে। বিভিন্ন গ্যাস বিতরণ এবং সঞ্চালন কোম্পানির আবেদনের প্রেক্ষিতে রবিবার প্রথম দিন জিটিসিএলের আবেদনের উপর গণশুনানি করা হয়। গণশুনানিতে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের কাছে জিটিসিএল ও ভোক্তাদের প্রতিনিধি ও ব্যবসায়ী প্রতিনিধিরা তাদের যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করেন। এ সময় উপস্থিত থেকে উভয় পক্ষের প্রস্তাব ও যুক্তির্তক শোনেন বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের চেয়ারম্যান এ আর খান, সদস্য মাকসুদুল হক, সদস্য রহমান মুর্শেদ। ভোক্তাদের সংগঠন কনজুমার এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) এর প্রতিনিধি জ্বালানি বিশেষজ্ঞ ড. এম শামসুল আলম, ব্যবসায়ীদের প্রতিনিধি এফবিসিসিআই’র সভাপতি মাতলুব আহমাদ, অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী বাংলাদেশী নাগরিক সালেক সুফি, রাজনীতিবিদ রুহিন হোসেন প্রিন্সসহ বিভিন্ন পেশা ও সংগঠনের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন। জিটিসিএল ২০১৫-১৬ অর্থবছরকে যাচাই বর্ষ ধরে ২০১৬-১৭ অর্থবছরের রাজস্ব আদায়ের উপর ভিত্তি করে ওই দর বৃদ্ধির কথা বলে। জিটিএল-এর আবেদন মূল্যায়ন করে কমিশনের পর্যালোচনা কমিটি ৮৮ দশমিক ৮৮ শতাংশ নির্ধারণের সুপারিশ করেছে। ড. এম শামসুল আলম শুনানিতে বলেন, গত ১ সেপ্টেম্বর গ্যাসের সঞ্চাল মূল্যহার বৃদ্ধি করা হয়েছে। এক বছরের ব্যবধানে আবারও সঞ্চালন মূল্যহার বৃদ্ধির এই প্রস্তাব অযৌক্তিক। তিনি বলেন, এক বছরের মধ্যে মূল্যহার পুননির্ধারণের আইনী সুযোগ নেই। এ আবেদন অগ্রহণযোগ্য। জিটিসিএল প্রতিনিধিরা তাদের নেয়া বিভিন্ন পাইপলাইন প্রকল্পের খরচ এবং দাতা সংস্থার কাছ থেকে নেয়া ঋণ পরিশোধ ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন-ভাতাদি পরিশোধের বিভিন্ন যুক্তি তুলে ধরে সঞ্চালন মাসুল বৃদ্ধির আবেদন করেন। তবে শামসুল আলম যুক্তি তুলে ধরে বলেন, জিটিসিএল-এর পুঞ্জিভূত অবচয় বাবদ অর্থের পরিমাণ দুই হাজার ৭৩ কোটি ৬৬ লাখ টাকা হলেও তার বিপরীতে কোন তহবিল নেই। এমন ভয়াবহ আর্থিক বিশৃঙ্খলা ও অনিয়ম রয়েছে জিটিসিএলে।
×