ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

অস্থির হবার কোন কারণ নেই, বিচার এগিয়ে যাচ্ছে ॥ এ্যাটর্নি জেনারেল

মীর কাশেমের রিভিউয়ের তারিখের দিকে এখন দেশবাসীর চোখ

প্রকাশিত: ০৫:৩১, ৮ আগস্ট ২০১৬

মীর কাশেমের রিভিউয়ের তারিখের দিকে এখন দেশবাসীর চোখ

বিকাশ দত্ত ॥ একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে মৃত্যুদ-প্রাপ্ত বদর বাহিনীর তৃতীয় শীর্ষ নেতা জামায়াতে ইসলামীর নির্বাহী পরিষদের সদস্য মীর কাশেম আলী সব ধরনের সুযোগ সুবিধা ভোগ করার পরও আসামি পক্ষের বার বার সময়ের আবেদনের কারণে মামলাটির কালক্ষেপণ করা হচ্ছে। আসামি পক্ষের আবেদনের প্রেক্ষিতে ন্যায় বিচারের স্বার্থে প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নেতৃত্বাধীন ৫ সদস্যবিশিষ্ট আপীল বেঞ্চ রিভিউ শুনানির জন্য ২৪ আগস্ট দিন নির্ধারণ করেছেন। আইনজীবী ও সুশীল সমাজের নেতৃবৃন্দ বলেছেন, এটা আদালতের এখতিয়ার। আদালতের বিরুদ্ধে আমরা কিছু বলতে চাইনি। তবে আসামি পক্ষের সময়ের আবেদনের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের শক্তভাবে বিরোধিতা করা উচিত ছিল, এ্যাটর্নি জেনারেলের আরও শক্ত অবস্থান নিতে হতো। নেতৃবৃন্দ মনে করেন শহীদ পরিবার ও বিচারপ্রার্থীরা আর কোনভাবেই প্রহর গুনতে চান না। যত দ্রুত মামলা নিষ্পত্তি হবে তত জাতির জন্য মঙ্গল। এদিকে এ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলমের তীব্র বিরোধিতা করে বলেছেন, আমি কোর্টে কি করেছি তা কি উনারা দেখেছেন? আমি আসামি পক্ষের আবেদনের জোর বিরোধিতা করেছি। অস্থির হওয়ার কোন কারণ নেই বিচার এগিয়ে যাচ্ছে। অন্যদিকে আসামি পক্ষের প্রধান আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেনকে ফোন করলে তিনি ফোন ধরেননি। মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে অপরাধীদের বিচারের জন্য ২০১০ সালের ২৪ মার্চ স্থাপন করা হয় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। ট্রাইব্যুনালের দ- দেয়ার পর আপীল বিভাগে ৬টি মামলার চূড়ান্ত নিষ্পত্তি হয়েছে। এর মধ্যে ৫ জনের মৃত্যুদ- কার্যকর করা হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধের সময় যারা মানবতাবিরোধী অপরাধ করেছিল তাদের যে বিচার হচ্ছে তা সারাবিশ্বে মডেল হিসেবে দেখা দিয়েছে। বিশ্বে অন্যান্য ট্রাইব্যুনালে যে সুযোগ সুবিধা নেই তা আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে রয়েছে। এখানে আসামি ও সরকার পক্ষকে সমান সুযোগ দেয়া হয়েছে। বিচার প্রক্রিয়ায় সব পক্ষ সমান আইনী সুবিধা ভোগ করছেন। এছাড়াও রয়েছে অভিযুক্ত ব্যক্তির অধিকার ও অধিকারের উৎস, অভিযোগ সম্পর্কে জানার অধিকার, আইনজীবী নিয়োগের অধিকার, দ্রুত বিচার এবং উন্মুক্ত শুনানি, প্রাক বিচারে পর্বে অভিযুক্ত ব্যক্তির অধিকার, জামিনে মুক্তি, ডিসক্লোজার অব ডকুমেন্টস এবং ডিফেন্স প্রস্তুতির জন্য সময়, অভিযুক্ত ব্যক্তির অধিকার সর্বশেষ আপীল। বিশ্বের অনেক দেশেই মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার হচ্ছে। যার মধ্যে রয়েছে রুয়ান্ডা, সাবেক যুগোশ্লাভিয়া, কম্বোডিয়া, সিয়েরালিয়ন, বসনিয়া, জার্মানি, ইসরাইল, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ভেনিজুয়েলা, আর্জেন্টিনা, পেরু, উরুগুয়ে, চিলি, প্যারাগুয়ে, মেক্সিকো, কানাডা, লিবিয়া, ফ্রান্স, ইথিওপিয়া, সোমালিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকা। এ সমস্ত ট্রাইব্যুনাল বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের মতো কোনভাবেই স্বাধীন নয়। এমনকি ন্যুরেমবার্গ ট্রাইব্যুনালেও আসামি পক্ষের কোন আপীল করার সুযোগ ছিল না। সেদিকে থেকে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে রাষ্ট্র ও আসামি পক্ষ আপীলের সমান সুযোগ পাচ্ছেন। এ প্রসঙ্গে সাবেক আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহম্মেদ জনকণ্ঠকে বলেছেন, মীর কাশেম আলী জামায়াতের অর্থ যোগানদাতা। প্রথম দফায় তিনি ২৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার দিয়ে লবিস্ট নিয়োগ করেন। সর্বোচ্চ আদালত ২৪ আগস্ট রিভিউয়ের দিন নির্ধারণ করেছেন সেখানে আমার কোন মতামত নেই। আমি শুধু বলতে চাই, এটা নরমাল কেস নয়। রিভিউয়ে বেশি শোনার কিছু নেই। নরমাল কেসে এত সময় দেয়া হয়। গুরুত্বপূর্ণ এ সমস্ত কেসে এত বেশি সময়ের প্রয়োজন নেই। তবু আদালত দিয়েছে আমাদের তা মানতেই হবে। তারা আগে পর্যাপ্ত সময় পেয়েছেন। ন্যায় বিচারে স্বার্থে যা যা করার দরকার তা করা হয়েছে। সময় ক্ষেপণের কারণে জঙ্গীগোষ্ঠী মাথা চাড়া দিয়ে উঠেছে। একাত্তরের ঘাতাক দালাল নির্মূল কমিটির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি শাহরিয়ার কবির বলেছেন, মীর কাশেমের মামলায় আসামি পক্ষের সময়ের আবেদনে এ্যাটর্নি জেনারেল শক্তভাবে বিরোধিতা করেননি। দেশে যে সমস্ত সন্ত্রাসী কর্মকা- ঘটছে তা মীর কাশেমের টাকায়। লবিস্ট নিয়োগে মীর কাশেম ২৫ মিলিয়ন মাকিন ডলার দিয়েছে। বিলম্বের কারণে গুলশানে হলি আর্টিজান বেকারি ও শোলাকিয়ার মতো ঘটনা ঘটত না। মীর কাশেমের টাকায় জঙ্গীরা আরও উৎসাহিত হবে। যত দ্রুত সম্ভব মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলাগুলো নিষ্পত্তি করা প্রয়োজন। গোটা জাতি তাকিয়ে আছে। এ্যাটর্নি জেনারেলকে আরও বেশি ভূমিকা নিতে হবে। এ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম এ প্রসঙ্গে জনকণ্ঠকে বলেছেন, শাহরিয়ার কবির সাহেব তো আদালতে ছিলেন না। আমি কিভাবে সময়ের আবেদনের বিরোধিতা করেছি উনি কি দেখেছেন। উনি তো সাক্ষী দিয়েছেন, কি সাক্ষী দিলেন? অন্যের উপর দোষ চাপানোটা খুবই সহজ। প্রধান বিচারপতি বেঞ্চে বসে সময় দিয়েছেন। তার বিরুদ্ধে কিছু বলা যাবে? অস্থির হবার কোন কারণ নেই। বিচার তো এগিয়ে যাচ্ছে। দায়িত্বশীল লোক এমন কথা বললে দুঃখ লাগে। মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলা নিয়ে রাত ১২টা ১টা পর্যন্ত কাজ করতে হয়। কেউ কি এ বিষয়ে খোঁজ নিতে এসেছেন। জঙ্গী তৎপরতা বিষয়ে তিনি বলেন, জঙ্গীরা তো ধরা পড়ছে। ধরে তাদেরও বিচারের আওতায় আনা হবে। ট্রাইব্যুনালে মামলা পরিচালনাকারী প্রসিকিউটর জিয়াদ আল মালুম জনণ্ঠকে বলেছেন, আমি রিভিউয়ে সময়ে নিয়ে কিছু বলব না। শুধু বলব, আমি জনগণের অনুভূতির সঙ্গে একমত। সমস্ত শহীদ পরিবার ও বিচারপ্রার্থীরা উচ্চ আদালতের দিকে তাকিয়ে আছে। তারা আর প্রতীক্ষার প্রহর গুনতে চায় না।
×