ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

পাহাড়ী ঝর্ণা

খৈয়াছড়া- প্রকৃতির অপরূপ সৃষ্টি, মুগ্ধ পর্যটক

প্রকাশিত: ০৫:৩১, ৮ আগস্ট ২০১৬

খৈয়াছড়া- প্রকৃতির অপরূপ  সৃষ্টি, মুগ্ধ পর্যটক

জনকণ্ঠ ফিচার ॥ টলমলে স্বচ্ছ পানির ধারা। গড়িয়ে পড়ছে শক্ত পাথরের মতো পাহাড়ের শরীর লেপ্টে। নির্জন, শান্ত পাহাড়ের প্রায় আটটা ধাপ পেরিয়ে আছড়েপড়া স্রোতধারা কলকল শব্দে বয়ে যাচ্ছে সমতলে। নাম না জানা লতাপাতা-গুল্ম, বাঁশবন, বুনোফুল ও ফলের গাছ পরম মমতায় আগলে রেখেছে সৃষ্টির বিস্ময় এ ঝর্ণাকে। বুনো ঝর্ণার এ অপরূপ দৃশ্য দেখলে চোখ ফেরানো যায় না। প্রকৃতি এখানে খেলা করে আপন মনে, গহীন বনে ছলাত-ছলাত শব্দে বয়ে চলা ঝর্ণাধারা ছুটে চলছে অবিরত। এখানে গা ভিজিয়ে মানুষ যান্ত্রিক জীবনের অবসাদ ধুয়ে যেন সজীব করে নেয় নিজেদের। পাহাড়ী এ ঝর্ণা ভ্রমণপিপাসু পর্যটকদের হাতছানি দিয়ে ডাকছে প্রতিদিন। সৃষ্টির অপার সৌন্দর্য আর প্রকৃতির মাধুর্যÑ দুইয়ে মিলে যখন সৃষ্টি হয় অদ্ভুত ভাললাগা, তখন এ নশ্বর পৃথিবীতে বেঁচে থাকার প্রবল ইচ্ছে জাগে। অপরূপ সবুজ-শ্যামল মিলনক্ষেত্র যেন প্রকৃতির এক বিশাল ক্যানভাস। উঁচু-নিচু অসংখ্য পাহাড় আর পাহাড়ের গায়ে নাম না জানা নানারকম গাছ-গাছালিকে মনে হয় যেন সবুজ পাহাড়। আর এরই বুক চিড়ে কলকল রবে নেমে এসেছে বুনো ঝর্ণা খৈয়াছড়া। আর পাহাড়ী ঝর্ণা দেখার উত্তম সময় এখনই। তাই এখানে দর্শনার্থীদের স্রোতও লক্ষণীয়। প্রকৃতির অপূর্ব সৃষ্টি খৈয়াছড়া, মহামায়া ও নাপিত্তাছড়া ঝর্ণা। চট্টগ্রামের মীরসরাইয়ের ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের পাশে বড়তাকিয়া এলাকার খৈয়াছড়া উচ্চ বিদ্যালয়ের উল্টো দিকের মূল রাস্তা থেকে পিচঢালা পথ চলে গেছে রেললাইন পর্যন্ত। সেখান থেকে মেঠোপথ আর ক্ষেতের আইলের শুরু। চলতে চলতে হঠাৎ করেই যেন মাটি সরে গিয়ে উদয় হবে একটা ঝিরিপথের। টলটলে শান্ত পানির চুপচাপ বয়ে চলার ধরনই বলে দেবে এর উৎস অবশ্যই বিশাল কিছু থেকে। স্থানীয় লোকদের ক্ষেতের আইলের পাশে বেড়ে উঠেছে আম, নারকেল আর পেঁপের বাগান। এরপর শুধু ঝিরিপথ ধরে এগিয়ে যাওয়া। কিছুক্ষণের মধ্যেই পর্যটকরা নিজেদের আবিষ্কার করবেন লাল আর নীল রঙের ফড়িংয়ের মিছিলে। যতদূর পর্যন্ত ঝিরিপথ চলে গেছে ততদূর পর্যন্ত তাদের মনমাতানো গুঞ্জন শোনা যায়। হাঁটতে হাঁটতেই শুনতে পাওয়া যায় পানি পড়ার শব্দ। চারপাশে মন ভাল করে দেয়া সবুজ দোল খাচ্ছে ফড়িংয়ের পাখায়। মাঝে মধ্যে এখানে হরিণের ডাকও শোনা যায়। কিছুদূর হেঁটে একটা মোড় ঘুরলেই চোখের সামনে নিজের বিশালতা নিয়ে হাজির হবে খৈয়াছড়া ঝর্ণা। অনেক উপর থেকে একটানা পানি পড়ছে। সৌন্দর্যের শুরু এখান থেকেই, পর্যটকরা এখান পর্যন্ত এসেই চলে যায়, উপরের দিকে আর যায় না। এ ঝর্ণার উপরে আছে আরও আটটা ধাপ। এখানকার ৯ ধাপের প্রতিটিতেই রয়েছে প্রশস্ত জায়গা, যেখানে তাঁবু টাঙ্গিয়ে আরাম করে পূর্ণিমা রাত পার করে দেয়া যায়। একটু চুপচাপ থাকলেই বানর আর হরিণের দেখা পাওয়া যায়। অদ্ভুত সুন্দর এ সবুজের বনে একজনই সারাক্ষণ কথা বলে বেড়ায়, বয়ে যাওয়া পানির রিমঝিম ঝর্ণার সেই কথা শুনতে শুনতে ঘুমিয়ে পড়া যায় নিশ্চিন্তে। পাহাড়ের সবুজ রং আর ঝর্ণার স্বচ্ছ জল মিলেমিশে একাকার হয়েছে মীরসরাইয়ের প্রাকৃতিক জলপ্রপাত খৈয়াছড়া ঝর্ণায়। প্রকৃতির নান্দনিক তুলিতে আঁকা এ ছবি দেখে মুগ্ধ হচ্ছে দেশের ভ্রমণপিয়াসী মানুষ। যারা একবার খৈয়াছড়া ঝর্ণা দেখেছেন তাদের মনে যে প্রশ্নটি বারবার উঁকি দেয় তা হলোÑ ‘দেশে এমন সৌন্দর্যের ঝর্ণা দ্বিতীয়টি আর আছে কিনা।’ এমনই এক নান্দনিক ঝর্ণা পর্যটকদের আকর্ষণ করছে, যা খৈয়াছড়া ঝর্ণা নামেই পরিচিত। মীরসরাইয়ের খৈয়াছড়া এলাকার পাহাড়ে অবস্থান বলে এর নামকরণ করা হয়েছে খৈয়াছড়া ঝর্ণা। আর এ ঝর্ণা দেখতে এসে বিমুগ্ধ হচ্ছেন দেশ-বিদেশের পর্যটকরা, এখন আর কেউ এসব দৃশ্য দেখে চমকে উঠেন না, বরং ঝর্ণার পাশে গিয়ে অবাক হন এজন্য যে, এখানকার পাহাড়ী অরণ্যে এতকাল লুকিয়ে ছিল এমন নান্দনিক একটি ঝর্ণা। এখানে ঘুরতে আসা কোন পর্যটকের মতে, ‘দেশের মাধবকু- ও শুভলং ঝর্ণার চেয়েও বেশি রূপ-সৌন্দর্য এ ঝর্ণাধারাটির।’ তাদের কথায়, ‘সরকারের অবহেলায় এটি আজও অপ্রকাশিত রয়ে গেছে।’ চট্টগ্রাম জেলার মীরসরাই উপজেলার খৈয়াছড়া ইউনিয়নের বড়তাকিয়া বাজারের উত্তর পার্শ্বে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের ৪ দশমিক ২ কিলোমিটার পূর্বে ঝর্ণার অবস্থান। এর মধ্যে ১ কিলোমিটার পথ গাড়িতে যাওয়ার পর বাকি পথ যেতে হবে হেঁটে। বাঁশের সাঁকো, আঁকা-বাঁকা পাহাড়ি পথ, ছরা এবং ৪টি পাহাড় পেরিয়ে যেতে হবে প্রকৃতির সান্নিধ্যে।
×