ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিবের ৮৬তম জন্মবার্ষিকী আজ

প্রকাশিত: ০৫:২৮, ৮ আগস্ট ২০১৬

বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিবের ৮৬তম জন্মবার্ষিকী আজ

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ স্বাধীন বাংলাদেশের মহান স্থপতি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সহধর্মিণী বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিবের আজ ৮৬তম জন্মবার্ষিকী। ১৯৩০ সালের এই দিনে গোপালগঞ্জ জেলার টুঙ্গিপাড়া গ্রামে তিনি জন্মগ্রহণ করেন। বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব মাত্র তিন বছর বয়সে পিতা ও পাঁচ বছর বয়সে মাতাকে হারান। তাঁর ডাক নাম ছিল ‘রেনু’। পিতার নাম শেখ জহুরুল হক ও মাতার নাম হোসনে আরা বেগম। দাদা শেখ কাসেম চাচাত ভাই শেখ লুৎফর রহমানের পুত্র শেখ মুজিবুর রহমানের সঙ্গে বেগম ফজিলাতুন্নেছার বিবাহ দেন। তখন থেকে বেগম ফজিলাতুন্নেছাকে শাশুড়ি বঙ্গবন্ধুর মাতা সাহেরা খাতুন নিজের সন্তানদের সঙ্গে মাতৃস্নেহে লালন-পালন করেন। বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিবের স্মৃতিশক্তি অত্যন্ত প্রখর ছিল। মনেপ্রাণে একজন আদর্শ বাঙালী নারী ছিলেন। অত্যন্ত বুদ্ধিমত্তা, শান্ত, অসীম ধৈর্য ও সাহস নিয়ে জীবনে যে কোন পরিস্থিতি দৃঢ়তার সঙ্গে মোকাবেলা করতেন। তাঁর কোন বৈষয়িক চাহিদা ও মোহ ছিল না। স্বামীর রাজনৈতিক জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে সর্বান্তকরণে সহযোগিতা করেছেন। তিনি ছিলেন অত্যন্ত দানশীল। আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের রোগে চিকিৎসার ব্যবস্থা করা, কারাগারে আটক নেতাকর্মীদের খোঁজ-খবরাদি নেয়া ও পরিবার-পরিজনদের যে কোন সঙ্কটে পাশে দাঁড়াতেন। তাঁর অপত্য স্নেহ, মমতা, দরদ, আপ্যায়নের কথা আজও মুক্তিযুদ্ধের সংগঠকরা যে যে অবস্থানেই থাকুন না কেন, অকৃত্রিম শ্রদ্ধার সঙ্গে তা স্মরণ করেন। ইতিহাসে তাই বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব কেবল একজন প্রাক্তন রাষ্ট্রনায়কের সহধর্মিণীই নন; বাঙালীর মুক্তি সংগ্রামে অন্যতম এক স্মরণীয় অনুপ্রেরণাদাত্রী। বাঙালী জাতির সুদীর্ঘ স্বাধিকার আন্দোলনের প্রতিটি পদক্ষেপে সক্রিয় সহযোগিতা করেছেন বঙ্গমাতা বেগম মুজিব। ছায়ার মতো অনুসরণ করেছেন স্বামী বঙ্গবন্ধুর আদর্শকে, জীবনে অনেক ঝুঁকিপূর্ণ কাজ করেছেন, অনেক কষ্ট, দুর্ভোগ তাঁকে পোহাতে হয়েছে। বঙ্গবন্ধু জীবনের সর্বশ্রেষ্ঠ সময় কারান্তরালে কাটিয়েছেন বছরের পর বছর। তাঁর অবর্তমানে মামলা পরিচালনার ব্যবস্থা করা, দলকে সংগঠিত করতে সহায়তা করা, আন্দোলন পরিচালনায় পরামর্শ দেয়াসহ প্রতিটি কাজে তিনি অত্যন্ত দক্ষতার পরিচয় দিয়েছেন। আন্দোলন চলাকালে প্রতিটি ঘটনা জেলখানায় সাক্ষাতকারের সময় বঙ্গবন্ধুকে জানাতেন এবং প্রয়োজনীয় পরামর্শ ও নির্দেশ নিয়ে আসতেন, আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগকে সে নির্দেশ জানাতেন। নেপথ্যে থেকে তিনি ’৬৯-এর গণঅভ্যুত্থানে বলিষ্ঠ ভূমিকা রেখেছিলেন। তিনি পুলিশ ও গোয়েন্দা সংস্থার চোখ বাঁচিয়ে সংগঠনের নেতাকর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করতেন এবং প্রয়োজনীয় নির্দেশ দিতেন। এই সংগঠনের জন্য তিনি অক্লান্ত পরিশ্রম করেছেন। তিনি অনুপ্রেরণা, শক্তি, সাহস, মনোবল ও প্রেরণা যুগিয়েছেন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে। এই মহীয়সী নারী জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত বঙ্গবন্ধুর পাশে থেকে দেশ ও জাতির সেবা করে গেছেন। জনগণের জন্য সমগ্র জীবন তিনি অকাতরে দুঃখবরণ করেছেন এবং সর্বোচ্চ আত্মত্যাগ করেছেন। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যা করার সময় পরিবারের অপরাপর সদস্যদের সঙ্গে বেগম মুজিবকেও মানবতার শত্রু, ঘৃণ্য ঘাতক দুশমনের দল নিষ্ঠুরভাবে হত্যা করে। বঙ্গবন্ধুর আজীবন সুখ-দুঃখের সঙ্গী মৃত্যুকালেও তাঁর সঙ্গী হয়েছিলেন ফজিলাতুন্নেছা মুজিব। তাঁর অবদান বাংলাদেশের ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে। রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাঁর জš§বার্ষিকী উপলক্ষে পৃথক পৃথক বাণী দিয়েছেন। রাষ্ট্রপতি তাঁর বাণীতে বলেন, মহীয়সী নারী বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব আমাদের অহংকার। তিনি ছিলেন সহজ-সরল ও নিরহঙ্কারী। তিনি ছোটবেলা থেকেই অত্যন্ত ধীরস্থির ও ধৈর্যশীল ছিলেন। যে কোন পরিস্থিতি বুদ্ধিমত্তা, ধৈর্য ও সাহস নিয়ে দৃঢ়তার সঙ্গে মোকাবেলা করতেন। রাজনৈতিক কারণে বঙ্গবন্ধুকে বারবার কারাবরণ করতে হয়েছে। বঙ্গবন্ধুর অনুপস্থিতিতে তিনি দলকে মূল্যবান পরামর্শ দিতেন ও সহযোগিতা করতেন। প্রধানমন্ত্রী তাঁর বাণীতে বলেন, বঙ্গমাতা ফজিলাতুন্নেছা মুজিব যে আদর্শ ও দৃষ্টান্ত রেখে গেছেন তা যুগে যুগে বাঙালী নারীদের জন্য অনুপ্রেরণার উৎস হয়ে থাকবে। আমার প্রত্যাশা, এই মহান নারীর জীবনী চর্চার মাধ্যমে নতুন প্রজš§ দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হবে। বঙ্গবন্ধুর সংগ্রামী জীবন, বাঙালীর স্বাধিকার আন্দোলন, মহান মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতা সংগ্রামের অনেক অজানা অধ্যায় সম্পর্কে তারা ধারণা পাবে। বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিবের জন্মবার্ষিকী যথাযোগ্য মর্যাদায় পালনে আওয়ামী লীগসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন নিয়েছে বিস্তারিত কর্মসূচী। আওয়ামী লীগের কর্মসূচীর মধ্যে রয়েছেÑ সকাল সাড়ে ৮টায় বনানী কবরস্থানে বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিবের কবরে শ্রদ্ধার্ঘ্য অর্পণ, কোরানখানি, মিলাদ ও দোয়া মাহফিল। এছাড়া ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে আজ সকাল ১০টায় বেগম মুজিবের জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে রাখবেন তাঁরই কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সকাল ১১টায় বঙ্গবন্ধু ভবন প্রাঙ্গণে স্বেচ্ছাসেবক লীগ এবং বিকেলে আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ আওয়ামী লীগ যৌথভাবে আলোচনা সভার আয়োজন করেছে। যুব মহিলা লীগ বঙ্গমাতার জন্মদিন উপলক্ষে পথশিশুদের মধ্যে বস্ত্র ও খাদ্য বিতরণ করবে। বিএনপির ঐক্যের আহ্বান ‘ভাঁওতাবাজি’- গৃহায়নমন্ত্রী ॥ জঙ্গী ও সন্ত্রাসের মদদদাতা বিএনপির সঙ্গে কোন ঐক্য হতে পারে না বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য এবং গৃহায়ণ ও গণপূর্তমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন। রবিবার শিল্পকলা একাডেমিতে বঙ্গমাতা ফজিলাতুন্নেছা মুজিবের জš§দিন উপলক্ষে যুবলীগ আয়োজিত আলোচনা সভায় তিনি আরও বলেন, বিএনপির নেতৃত্বাধীন জোটেই জঙ্গী-সন্ত্রাস লালনকারী দল রয়েছে অথচ তারাই জঙ্গী-সন্ত্রাস দমনে জাতীয় ঐক্যের আহ্বান জানিয়ে আসছে। আসলে এটা ভাওতাবাজি ছাড়া আর কিছুই নয়। মন্ত্রী বলেন, সন্ত্রাস ও জঙ্গীবাদ ইস্যুতে জনগণ ইতোমধ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ঐক্যবদ্ধ হয়ে গেছে। ফলে একই ইস্যুতে জঙ্গী-সন্ত্রাসের মদদদাতা বিএনপির সঙ্গে কোন আলোচনা বা ঐক্যের প্রয়োজন নেই। এ সময় বিএনপিকে জামায়াতসহ জঙ্গী লালনকারী দলগুলোকে জোট থেকে বের করে দেয়ার আহ্বান জানান মোশারফ হোসেন। যুবলীগের প্রকাশনা সম্পাদক ইকবাল মাহমুদ বাবলুর সঞ্চালনায় আলোচনাসভায় বক্তব্য রাখেন সংগঠনের চেয়ারম্যান ওমর ফারুক চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক হারুনুর রশীদ, সভাপতিম-লীর সদস্য শহীদ সেরনিয়াবাত, ফারুক হোসেন, যুগ্ম সম্পাদক মঞ্জুরুল আলম শাহীন, সাংগঠনিক সম্পাদক বদিউল আলম বদি, ফজলুল হক আতিক প্রমুখ। পরে বঙ্গমাতার ওপর যুবলীগের সংবাদচিত্র প্রদর্শনী ঘুরে দেখেন গণপূর্তমন্ত্রী।
×