ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

শীঘ্রই খুলে দেয়া হচ্ছে ব্রিটিশ কাউন্সিল

প্রকাশিত: ০৫:২৬, ৮ আগস্ট ২০১৬

শীঘ্রই খুলে দেয়া হচ্ছে ব্রিটিশ কাউন্সিল

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ শীঘ্রই ব্রিটিশ কাউন্সিল খুলে দেয়া হচ্ছে। সচিবালয়ে রবিবার বিকেলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের সঙ্গে সাক্ষাতের পর ব্রিটিশ হাইকমিশনার এ্যালিসন ব্লেইক সাংবাদিকদের একথা বলেন। তিনি বলেন, ব্রিটিশ কাউন্সিলের অনলাইন কার্যক্রম চলছে এবং খুব শীঘ্রই এটি খুলে দেয়া হবে। বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল সাংবাদিকদের বলেন, সবার নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করে তারা ব্রিটিশ কাউন্সিলের কার্যক্রম সাময়িক বন্ধ করেছিল। ব্রিটিশ কাউন্সিলের কোন পরীক্ষা বন্ধ হবে না। শীঘ্রই খুলে দেয়া হবে। এর আগে গত ৩১ জুলাই ব্রিটিশ কাউন্সিলের কার্যক্রম বন্ধের সিদ্ধান্ত নিয়ে জনকণ্ঠ পত্রিকায় প্রতিবেদন প্রকাশ হওয়ার পর ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়ে প্রতিষ্ঠানটি। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রতিবেদনের নানা তথ্য বেরিয়ে পড়ায় সমালোচনায় পড়ে ব্রিটিশ হাইকমিশনও। এমন প্রেক্ষাপটে রবিবার ব্রিটিশ হাইকমিশনার বলেন, ব্রিটিশ হাইকমিশনার এ্যালিসন ব্লেইক গোয়েন্দা কর্মকর্তাসহ ৫ সদস্যের প্রতিনিধি দল নিয়ে এসেছিলেন। জঙ্গী-সন্ত্রাস দমনে আমরা কী করছি, তা জানতে চেয়েছেন। আমি তাদের বলেছি, আমাদের নিরাপত্তাবাহিনী চৌকস ও দক্ষ। তারা জীবনবাজি রেখে জঙ্গী-সন্ত্রাস প্রতিহত করছে। তাছাড়া শুধু বাংলাদেশেই নয় পৃথিবীর অনেক দেশেই ঘটছে, আপনাদের দেশেও ঘটছে। বৈঠকে ব্রিটিশ হাইকমিশনার বলেন, এখন একযোগে কাজ করার সময় এসেছে। জবাবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আপনাদের অভিজ্ঞতা, দক্ষতা শেয়ার করেন, তাহলে আরও তাড়াতাড়ি জঙ্গী-সন্ত্রাস দমন করতে পারব। মন্ত্রী ব্রিটিশ হাইকমিশনারকে আরও বলেন, আমাদের দেশের জনগণ এসব জঙ্গী-সন্ত্রাস পছন্দ করে না। প্রধানমন্ত্রী সারাদেশের মানুষকে এক করার আহ্বান জানিয়েছন। দেশের মানুষ ঘুরে দাঁড়িয়েছে এবং এক ও অভিন্ন হয়ে জঙ্গী দমনে কাজ করছে, কোন ধরনের টেরোরিজমকে দেশে স্থান দেবে না। বৈঠকে এ্যালিসন ব্লেইক বলেছেন, বাংলাদেশে বসবাসরত ব্রিটিশ নাগরিকদের স্থানীয় প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে কাজ করতে বলা হয়েছে। তিনি বলেন, ব্রিটিশদের জন্য নয় বরং বাংলাদেশে বসবাসরত সব বিদেশী নাগরিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কাজ চলছে। বিগত ২৭ জুলাই নিরাপত্তার কারণ দেখিয়ে বাংলাদেশে কার্যক্রম সাময়িকভাবে বন্ধ ঘোষণা করে ব্রিটিশ কাউন্সিল। তাদের পক্ষ থেকে বলা হয়, নিরাপত্তাজনিত কারণে বাংলাদেশে সাময়িকভাবে ব্রিটিশ কাউন্সিলের সব অফিস বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। নিরাপত্তা ব্যবস্থা অনুকূলে থাকা সাপেক্ষে শীঘ্রই আবার সব কার্যক্রম চালু করা হবে। ব্রিটিশ কাউন্সিল রয়্যাল চার্টার দ্বারা পরিচালিত যুক্তরাজ্যভিত্তিক সংস্থা। আন্তর্জাতিক এ সংস্থা শিক্ষার সুযোগ বৃদ্ধি ও সাংস্কৃতিক সম্পর্ক তৈরিতে ভূমিকা রাখে। পৃথিবীর ১০০টিরও বেশি দেশে ব্রিটিশ কাউন্সিলের কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। এসব দেশে সংস্থাটির আট হাজার কর্মী ও কর্মকর্তা রয়েছেন। এর মধ্যে দুই হাজার শিক্ষক ইংরেজী শিক্ষা, বিভিন্ন সংস্কৃতির মধ্যে যোগাযোগ এবং শিক্ষা ও সামাজিক যোগাযোগ নিয়ে সারা বিশ্বের হাজার হাজার পেশাদার মানুষ, নীতিনির্ধারক ও তরুণদের সঙ্গে কাজ করছেন। এর আগে গত ৩১ জুলাই ব্রিটিশ কাউন্সিলের কার্যক্রম বন্ধের সিদ্ধান্ত নিয়ে জনকণ্ঠ পত্রিকায় প্রতিবেদন প্রকাশ হওয়ার পর ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়ে প্রতিষ্ঠানটি। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রতিবেদনের নানা তথ্য বেরিয়ে পড়ায় সমালোচনায় পড়ে ব্রিটিশ হাইকমিশনও। ‘ব্রিটিশ কাউন্সিল সামায়িক বন্ধের ঘোষণা/অন্যায় সিদ্ধান্ত’ শিরোনামে প্রকাশিত ওই প্রতিবেদনে উঠে আসে বিশ্বের বহু দেশে দফায় দফায় জঙ্গী হামলার পরও যেখানে কার্যক্রমে অব্যাহত রাখা হয়েছে কার্যক্রম। অথচ বাংলাদেশে একটি জঙ্গী হামলার পরই ব্রিটিশ কাউন্সিল কার্যক্রম স্থগিত করে। দেখা গেছে, জঙ্গী কবলিত পাকিস্তান, আফগানিস্তান, ইরাক, লেবাননসহ অন্যান্য দেশে কার্যক্রম সাভাবিকভাবেই চালু আছে। বাংলাদেশসহ বিশ্বের ১১০টি দেশে প্রায় একই কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে ব্রিটিশ কাউন্সিল। যেখানে প্রতিষ্ঠানটির অফিস আছে ১৯১টি। জঙ্গী হামলার প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশে সকল অফিস বন্ধ করে কার্যক্রম স্থগিত করার ঘোষণা দেয়া হলেও প্রতিষ্ঠানটির ওয়েবসাইটেই দেখা গেছে, বিশ্বের জঙ্গী ও কবলিত দেশগুলোতে ঠিকই তারা চালিয়ে যাচ্ছে কার্যক্রম। বিশ্বের যেসব দেশে প্রায় প্রতিদিন জঙ্গী হামলা অসংখ্য মানুষ মারা যাচ্ছে, যেসব দেশ আন্তর্জাতিক জঙ্গীদের রীতিমতো আস্তানায় পরিণত হয়েছে সেখানেও কার্যক্রম অব্যাহত রাখা হয়েছে। সিরিায়া ছাড়া সকল দেশেই কার্যক্রম চলছে প্রতিষ্ঠানটির। জঙ্গী কবলিত পাকিস্তান, আফগানিস্তান, ইরাক, লেবাননসহ অন্যান্য দেশে চলছে কাজ। আফগানিস্তানে কাবুলে অফিস ব্রিটিশ কাউন্সিলের। পাকিস্তানে ৫টি প্রদেশে অফিস আছে প্রতিষ্ঠানটির। ইসলামাবাদ, করাচী, লাহোর, মুলতান, ফয়সালাবাদে অফিস খুলে কাজ চালিয়ে যাচ্ছে ব্রিটিশ কাউন্সিল। কার্যক্রম চলছে জঙ্গী হামলা ও যুদ্ধ কবলিত ইরাক, লেবানন, মিসর, জর্ডান, তুরস্কসহ অন্যান্য দেশে। এ অবস্থায় প্রশ্ন উঠেছে, জঙ্গীবাদীদের কারণে যেখানে প্রতিদিন মানুষ মরছে, যেখানে বোমা হামলা, গ্রেনেড হামলা নিয়মে পরিণত হয়েছে সেখানে যদি কার্যক্রম চলতে পারে তাহলে বাংলাদেশের বিষয়ে কেন এমন নেতিবাচক অবস্থান?
×