ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

ঢাউস কমিটির নেপথ্যে বিএনপির স্বজনপ্রীতি, পদবাণিজ্য

প্রকাশিত: ০৪:০০, ৮ আগস্ট ২০১৬

ঢাউস কমিটির নেপথ্যে বিএনপির স্বজনপ্রীতি, পদবাণিজ্য

মোয়াজ্জেমুল হক/হাসান নাসির ॥ মা ও ছেলের আধিপত্যের দল হিসেবে পরিচিত সাবেক রাষ্ট্রপতি মরহুম জিয়ার প্রতিষ্ঠিত বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বা বিএনপিতে পদবাণিজ্যের বড় ধরনের কেলেঙ্কারির ঘটনা ঘটেছে। অভিযোগ উঠেছে, দলের ইতিহাসে গত শনিবার সবচেয়ে বৃহৎ কমিটি ঘোষণা করার পর থেকেই সাধারণ নেতাকর্মী ও সমর্থকদের মাঝে ক্ষোভের সঞ্চার হয়েছে। নব ঘোষিত এ কমিটিতে মাঠপর্যায়ের ত্যাগী কর্মীদের চেয়ে সুবিধাভোগী নেতাদের রাজনৈতিকভাবে অপরিপক্ব পুত্রকন্যা, ভাই, জামাতাসহ বিভিন্ন পর্যায়ের আত্মীয়স্বজনদের স্থান করে দেয়া হয়েছে। যার পেছনের কারণ স্বজনপ্রীতি ও পদবাণিজ্য হিসেবেই অভিহিত করা হচ্ছে। আর এ কারণেই দলটিতে ইতোপূর্বেকার চেয়ে আরও অধিকহারে আত্মীয়স্বজনের আধিপত্যের বাস্তব রূপ আনা হয়েছে। ফলে এক্ষেত্রে সাধারণ নেতাকর্মী, সমর্থক ও জনগণের আকাক্সক্ষার প্রতিফলনের কোন সুযোগ থাকবে না ভবিষ্যতেÑ এ দাবি দল অভ্যন্তরে অনেকের। যারা অবস্থা পর্যবেক্ষণে রেখে এ মুহূর্তে সরাসরি মুখ খোলার পক্ষে নয়। হাতেগোনা কয়েক পদত্যাগীও মুখ খুলেছেন, তাদের অবস্থা পর্যবেক্ষণ করে আগামীতে এ ব্যাপারটি ব্যাপকভাবে পর্যালোচনায় আসবে বলে ধারণা দেয়া হয়েছে। বিএনপি নেতাকর্মী, সমর্থক মহলের বহুল প্রতীক্ষার অবসান ঘটিয়ে গত শনিবার বিএনপি ৫০২ সদস্যের যে কমিটি গঠনের ঘোষণা দিয়েছে তা শুধু বিএনপি নয়, দেশের সব রাজনৈতিক দল ও সচেতন মহলকে বিস্মিত করেছে। কারণ, অতীতের বিভিন্ন ঘটনায় প্রমাণ হয়েছে এদেশে যত নেতা তত তিক্ততা, তত গ্রুপিং। বিএনপির নীতি-নির্ধারক মহলের সঙ্গে জড়িতরা কী কারণে এ ধরনের ঢাউস একটি কমিটি দলকে উপহার দিয়েছে তা এখনও অজ্ঞাত। তবে ভুক্তভোগীদের জোরাল অভিযোগ এটা নিশ্চিত যে বিষয়টি পদবাণিজ্যের ফসল। যারা পদোন্নতি পেয়েছেন তারা খুশি। আর যাদের পদোন্নতি হয়নি, পদাবনতি হয়েছে এমনকি পদ থেকে বঞ্চিত হয়েছে তারা চরমভাবে ক্ষুব্ধ। তাদের অনুসারী বা সমর্থকরা সাংঘাতিকভাবে বিক্ষুব্ধ। কমিটি ঘোষিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে কারও কারও মনে তীব্র, কারও কারও মনে মৃদু ও কারও কারও মনে মিশ্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে। কমিটি ঘোষণার চারঘণ্টার মধ্যে পদত্যাগ করে বসেন বিএনপি চেয়ারপার্সনের সবচেয়ে একান্ত আপনজন হিসেবে প্রচারিত মোসাদ্দেক আলী ফালু ও সহ-প্রচার সম্পাদক শামীমুর রহমান শামীম। বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে সরাসরি যুক্ত এমন অনেকে জানিয়েছেন, নব ঘোষিত কমিটিতে বিতর্কিত থেকে শুরু করে নব্যদের আধিক্য ঘটেছে। ফলে এ ধরনের ঢাউস কমিটি নিয়ে ফুঁসছে অনেকে। সড়ক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এ ঘটনাকে একটি তামাশা বলে ইতোমধ্যে অভিহিত করেছেন। যুদ্ধাপরাধী জামায়াতের সঙ্গ ত্যাগ না করে বিএনপি এমনিতেই জনমনে বিতর্কিত। এরপরে ক্ষমতা হারিয়ে দেশজুড়ে জ্বালাও পোড়াও এবং ধ্বংসাত্মক কার্যক্রম ও হত্যাকা- চালিয়ে ব্যাপকভাবে সমালোচিত। এরপরে জঙ্গীপনার সঙ্গে বিএনপির শরিক দল জামায়াতের সম্পৃক্ততা উঠে আসার পর জামায়াতের পাশাপাশি বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের আর কারও মুখ রক্ষা হচ্ছে না। দীর্ঘ সময়জুড়ে ধোঁয়াশাচ্ছন্ন থাকা সম্প্রতি জঙ্গীপনার বিষয়টির নেপথ্যে কে বা কারা রয়েছে এবং কেন সহিংস ঘটনাবলী ঘটানো হচ্ছে তা এখন পরিষ্কার হয়ে গেছে। এ অবস্থায় বিএনপি রাজনীতি যে মুখী হোক না কেন দলের ইতিহাসের সর্বকালের রেকর্ড ভঙ্গ করে বৃহত্তম যে কমিটি গঠন করা হয়েছে এবং এ নিয়ে যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া ও ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে তা কী ফল বয়ে আনবে তা নীতি নির্ধারক মহলেরই জানা থাকতে পারে। তবে বিএনপি ঘরানার বড় অংশের জানা নেই দলটির রাজনীতি কোন্পথে যাচ্ছে এবং কারা এ পথ দেখাচ্ছে। দলে বিএনপি চেয়ারপার্সনের পরে সবচেয়ে ক্ষমতাধর ব্যক্তি তারই পুত্র তারেক জিয়া। সম্প্রতি আদালতের বিচারের রায়ে জেল ও অর্থদ-ে দ-িত হয়েছেন। এ মুহূর্তে দেশে তার প্রত্যাবর্তনের সুযোগ থাকলে আসার যে সম্ভাবনা যে নেই তা হলফ করে বলা যায়। সঙ্গত কারণে দলের অন্য নেতাদের আত্মীয়স্বজনদের আধিক্যে নবঘোষিত বিএনপি আগামীতে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোটের রাজনীতির বিরুদ্ধে লড়তে গিয়ে কোন্ পথ বেছে নেবেন তা কেবল দলটির নীতি নির্ধারক মহলেরই জানা। তবে এ কথা সত্য যে, টানা দু’দফায় ক্ষমতায় আসার পর আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোটের রাজনীতির কাছে বড় ধরনের মার খেয়েছে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটÑএ কথা অস্বীকার করার কোন জো নেই।
×