ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

সিরিয়ায় সামরিক সাফল্য

প্রক্সি যুদ্ধে রাশিয়া জয়ী

প্রকাশিত: ০৩:৪৭, ৮ আগস্ট ২০১৬

প্রক্সি যুদ্ধে রাশিয়া জয়ী

সিরিয়ার সেনাবাহিনী গত বছর প্রায় হারতে বসেছিল। দেশটিতে চলমান গৃহযুদ্ধে বিদ্রোহী পক্ষগুলো তখন বেশ সুবিধাজনক অবস্থানে ছিল। কিন্তু রুশ সরকার বাশার আল আসাদের পক্ষে সরাসরি সামরিক হস্তক্ষেপ করলে পরিস্থিতি পাল্টে যায়। অবস্থা আসাদের অনুগত সেনাবাহিনীর পক্ষে চলে আসে। রুশ বাহিনী মার্কিন মদদপুষ্ট বিদ্রোহীদের কাবু করে ফেলে। ১৯৮০ এর দশকের পর এই প্রথম রুশ সামরিক বাহিনী মার্কিন সহায়তাপ্রাপ্ত মিলিশিয়াদের বিরুদ্ধে প্রথম জয়ের মুখ দেখে। সিরিয়া যুদ্ধ পরিস্থিতি নিয়ে ওয়াশিংটনে সদ্য আয়োজিত আলোচনা সভায় জানানো হয় যে, আসাদ গত বছর প্রায় হেরেই গিয়েছিলেন। রুশ সামরিক হস্তক্ষেপ ছাড়া তার পক্ষে ক্ষমতায় টিকে থাকার কোন সম্ভাবনাই ছিল না। মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএ ও সৌদি আরবের সহায়তায় সিরীয় বিদ্রোহী গ্রুপগুলো সরকারী বাহিনীকে প্রায় কোণঠাসা করে ফেলেছিল। ইদলিব, হামা ও লাতাকিয়া প্রদেশসহ সিরিয়ার উত্তরাঞ্চলের বহু এলাকার নিয়ন্ত্রণ বিদ্রোহীদের হাতে চলে এসেছিল। জায়গাগুলো এক সময় সরকারী বাহিনীর ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত ছিল। ওয়াশিংটনের জন্য একটি সমস্যা ছিল বিদ্রোহীদের মধ্যে, যা নুসরা ফ্রন্ট। ফ্রন্টটি আগে আল কায়েদার মাথা হিসেবে কাজ করেছে। এমনই এক পরিস্থিতি গত বছর সেপ্টেম্বরে রাশিয়া সিরিয়ায় সামরিক অভিযান শুরু করে যুদ্ধের মোড় ঘুরিয়ে দেয়। ওয়াশিংটনভিত্তিক গবেষণা সংস্থা উইড্রো উইলসন সেন্টারের ফেলো মাইকেল কফম্যান বলছে, ‘রাশিয়া অন্তত এই একবারের জন্য হলেও জয়ের স্বাদ পেল।’ এর আগে ১৯৮০ এর দশকে আফগান যুদ্ধে রাশিয়া ও আমেরিকা প্রক্সি যুদ্ধে নেমেছিল। এখন যদিও সিরিয়ায় পক্ষ দুটি অনুরূপ এক যুদ্ধে জড়িয়ে পড়েছে, তবে এবারের প্রেক্ষাপট ভিন্ন। দুই পরাশক্তির মধ্যে তখন শীতল যুদ্ধ চলছিল। জঙ্গী গ্রুপ আইএস এবার দুই পক্ষেরই অভিন্ন টার্গেট। আইএস ও তাদের ঘনিষ্ঠ অন্য গ্রুপগুলোর বিরুদ্ধে কিভাবে আরও সমম্বিত উপায়ে বিমান হামলা চালানো যায়, সে ব্যাপারে গোয়েন্দা তথ্যবিনিময় করার জন্য মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার প্রশাসন এখন রুশ প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিনের সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ করছে। এই যুদ্ধে পুতিন এরই মধ্যে বড় কোন সমস্যা ছাড়াই নিজের লক্ষ্য অর্জন করে ফেলেছেন। যুক্তরাষ্ট্রও মোটামুটি লক্ষ্য অর্জন করেছে। যদিও ওবামা শুরু থেকেই এ বিষয়ে একটি দূরত্ব বজায় রেখে এসেছেন। গত বছর অক্টোবরে ওবামা বলেছিলেন, শীতল যুদ্ধ যুগের মতো আরেকটি যুদ্ধে জড়ানোর কোন ইচ্ছা তার নেই। পুতিনকে পুরোপুরি আস্থায় নেয়া যায় কি নাÑ সেটি নিয়েও ওবামার সংশয় রয়েছে। ক্রিমিয়া দখল এবং ইউক্রেনে অভিযান পরিচালনার জন্য রাশিয়া পশ্চিমা দেশগুলোর কাছে অনেকটা একঘরে হয়ে পড়েছিল। সিরিয়ায় অর্জিত জয় মধ্যপ্রাচ্যের ভবিষ্যত প্রশ্লে সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে রাশিয়ার অবস্থান শক্তিশালী হয়েছে। সিরিয়ায় বিদ্রোহীদের সহায়তার ব্যাপারে সিআইএ অবশ্য এখনও পর্যন্ত আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু বলেনি। সিআইএ বেশ কয়েক বছর ধরে জর্দান ও কাতারে বিদ্রোহীদের প্রশিক্ষণ শিবির চালিয়ে আসছে। বিদ্রোহীদের আর্থিকভাবে সহায়তা করছে সৌদি আরব। এ যুদ্ধে রাশিয়া যদিও বাহ্যিকভাবে সুবিধাজনক অবস্থানে আছে। কিন্তু তাদের এ জয় কতদূর টেকসই হবে, তা নিয়ে রয়েছে সংশয়। অনেকে মনে করেন, বিদ্রোহীদের পুরোপুরি নির্মূল করা সম্ভব নয়। যুদ্ধে রাশিয়া নুসরা ফ্রন্টকে কোণঠাসা করেছে। এর মধ্য মস্কোর জন্য এ কথা বলার সুযোগ তৈরি হয়েছে যে, তাদের যুদ্ধ সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে। কিন্তু ওয়াশিংটন মনে করে মূলত আসাদকে রক্ষা করাই রুশ সামরিক অভিযানের প্রধান উদ্দেশ্য। Ñনিউইয়র্ক টাইমস
×