ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

সুমন্ত গুপ্ত

রেমিটেন্স প্রবাহ ও আমাদের অর্থনীতি

প্রকাশিত: ০৬:২৯, ৭ আগস্ট ২০১৬

রেমিটেন্স প্রবাহ ও  আমাদের অর্থনীতি

বাংলাদেশের প্রবাসী আয়ের (রেমিটেন্স) ৪৫ শতাংশ আসে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো থেকে। এবার ওই আয়েই নেমেছে ধস। সরকারী হিসাবে চলতি অর্থবছরের জুলাই-ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত আট মাসে মধ্যপ্রাচ্যের সৌদি আরব, কুয়েত ও আরব আমিরাত থেকে রেমিটেন্স কমেছে আগের বছর তুলনায় ৫ দশমিক ২৪ শতাংশ। বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ পরিসংখ্যান থেকে পাওয়া তথ্য মতে সৌদি আরব থেকে ৩ হাজার ৮০ কোটি টাকা এবং আরব আমিরাত থেকে ৮৭২ কোটি টাকা মূল্যের বৈদেশিক মুদ্রা কমে গেছে। সব মিলিয়ে ছয় দেশ থেকে এক বছরে রেমিটেন্স প্রবাহ কমেছে প্রায় ৫ হাজার কোটি টাকা সমমূল্যের বৈদেশিক মুদ্রা। এ দিকে শুধু মধ্যপ্রাচ্য থেকেই রেমিটেন্স প্রবাহ কমছে না, কমে গেছে দেশের ২৮ সরকারী, বেসরকারী বাণিজ্যিক ব্যাংকের রেমিটেন্স আহরণ। ব্যাংকগুলোর সমাপ্ত অর্থবছরের রেমিটেন্স আহরণ আগের অর্থবছর (২০১৪-১৫) থেকে কমে গেছে। সরকারী ব্যাংকগুলোর মধ্যে রয়েছে সোনালী, জনতা, অগ্রণী, বেসিক ও কৃষি ব্যাংক। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যে দেখা গেছে, চলতি অর্থবছরের জানুয়ারিতে রেমিটেন্স আয় ছিল ১ হাজার ১৫০ মিলিয়ন ডলার, যা ফেব্রুয়ারিতে কমে ১ হাজার ১৩৬ মিলিয়ন ডলারে নেমে এসেছে। গত অর্থবছরের জানুয়ারিতে রেমিটেন্স আয় ছিল ১ হাজার ২৪৩ মিলিয়ন ডলার এবং ফেব্রুয়ারিতে ১ হাজার ১৮৯ মিলিয়ন ডলার। দেখা যাচ্ছে, গত অর্থবছরের জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারির তুলনায় চলতি অর্থবছরের একই সময়ে রেমিটেন্স প্রবাহ কমেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০১৪-১৫ অর্থবছরে মধ্যপ্রাচ্যের সৌদি আরব থেকে দেশে মোট ৩ হাজার ৩৪৫ মলিয়ন মার্কিন ডলার, অর্থাৎ প্রতি মাসে গড়ে প্রায় ২৭৯ মিলিয়ন মার্কিন ডলার আয় আসে। মধ্যপ্রাচ্যের আরেক দেশ সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে গত অর্থবছর মোট ২ হাজার ৮২৪ মিলিয়ন মার্কিন ডলার, অর্থাৎ মাসে গড়ে প্রায় ২৩৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার আয় আসে দেশে। সেখানে চলতি অর্থবছরের ৯ মাসে (জুলাই-মার্চ) সৌদি আরব থেকে ২ হাজার ২৩৯ মিলিয়ন মার্কিন ডলার, অর্থাৎ মাসে গড়ে ২৪৮ মিলিয়ন ডলার রেমিটেন্স এসেছে। চলতি অর্থবছরের একই সময়ে আরব আমিরাত থেকে এসেছে ১ হাজার ৯৯০ মিলিয়ন ডলার, অর্থাৎ মাসে গড়ে ২২১ মিলিয়ন ডলার। দেখা যাচ্ছে, গত অর্থবছরের তুলনায় মধ্যপ্রাচ্যের এই দুটি বৃহত্তম রেমিটেন্স আয়ের দেশ থেকেই আয় কমেছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদন অনুসারে, ২০১৫-১৬ অর্থবছরে সৌদি আরব থেকে রেমিটেন্স এসেছে ২৯৬ কোটি ১ লাখ মার্কিন ডলার। একই সময়ে সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে ২৭১ কোটি, কাতার থেকে ৪৩ কোটি, ওমান থেকে ৯১ কোটি, বাহরাইন থেকে ৪৮ কোটি, কুয়েত থেকে ১০৩ কোটি এবং লিবিয়া খেকে ১ কোটি ডলারের কিছু বেশি রেমিটেন্স দেশে এসেছে। শুধু কাতার ছাড়া বাকি সব দেশ থেকেই রেমিটেন্স কম এসেছে। অন্যদিকে ইউরোপ ও আমেরিকা মহাদেশের দেশগুলো থেকে রেমিটেন্স আহরণের পরিমাণ আগের বছরের চেয়ে কিছুটা বেড়েছে। ২০১৫-১৬ অর্থবছরে এ দুই মহাদেশ থেকে রেমিটেন্স এসেছে ৬৩৭ কোটি ৬২ লাখ ডলার। যেখানে ২০১৪-১৫ অর্থবছরে এ অঞ্চলগুলো থেকে রেমিটেন্স এসেছিল ৬২৪ কোটি ৪৫ লাখ ডলার। এ অঞ্চলের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র থেকে বেশি রেমিটেন্স এসেছে। দেশটি থেকে রেমিটেন্স এসেছে ২৪১ কোটি ৩৮ লাখ ডলার। এ ছাড়া মালয়শিয়া থেকে রেমিটেন্স এসেছে ১৩২ কোটি ৪২ লাখ ডলার। মধ্যপ্রাচ্য থেকে রেমিটেন্স প্রবাহ কমে যাওয়ার কারণ হিসেবে বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের মতে, মূলত দুটি কারণে মাধ্যপ্রাচ্য থেকে রেমিটেন্স প্রবাহ কমে যাচ্ছে। যেহেতু বাংলাদেশের বেশির ভাগ প্রবাসীই অদক্ষ, ফলে মধ্যপ্রাচ্যের উন্নয়ন ব্যয় কমে যাওয়ার সরাসরি প্রভাব পড়েছে আমাদের রেমিটেন্সের ওপর। তারা আগের মতো আর শ্রমিক নিচ্ছে না; বরং যারা আছে তাদেরকেও অনেক ক্ষেত্রে ফেরত আসতে হচ্ছে। দ্বিতীয় কারণ হলো, ডলারের দাম কমে যাওয়া। বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দার কারণে পৃথিবীর বেশিরভাগ দেশে ডলারের দাম কমেছে। কিন্তু বাংলাদেশ ব্যাংক প্রবাসী ও রফতানিকারকদের কথা ভেবে বাজার থেকে উদ্বৃত্ত ডলার কিনছে। ফলে দেশের বৈদেশিক মুদ্রাবাজার অনেক ক্ষেত্রেই স্থিতিশীল রয়েছে।
×