ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

ভাড়াটের পরিচয়পত্রের ডিজিটাল ডাটাবেজ তৈরি হচ্ছে

প্রকাশিত: ০৫:২৯, ৭ আগস্ট ২০১৬

ভাড়াটের পরিচয়পত্রের ডিজিটাল ডাটাবেজ তৈরি হচ্ছে

স্টাফ রিপোর্টার ॥ রাজধানীতে জঙ্গী আস্তানার সন্ধান প্রাপ্তির পর ভাড়াটিয়াদের সম্পর্কে সুনির্দিষ্ট তথ্য পেতে প্রত্যেক ভাড়াটিয়ার নামে একটি করে পৃথক পরিচয়পত্র নম্বর খোলা হচ্ছে। সেই নম্বর ভাড়াটিয়াকেও দেয়া হবে। এ সংক্রান্ত একটি ডিজিটাল ডাটাবেজে তৈরির কাজ চলছে। ডাটাবেজের সেই পরিচয়পত্র নম্বরটি রাখা হবে। এতে করে কোন ভাড়াটিয়া যেখানেই যাক না কেন, তার পরিচয়পত্র নম্বর দিয়ে ডাটাবেজে সার্চ করলেই ওই ভাড়াটিয়ার অবস্থান সম্পর্কে তথ্য পাওয়া যাবে। শনিবার নিজ কার্যালয়ে ডিএমপি কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এসব বলেন। তিনি আরও জানান, ঢাকার প্রত্যেক ভাড়াটিয়াকে পৃথক পরিচয়পত্র নম্বর দিয়ে চিহ্নিত করার কাজ চলছে। অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা শক্তিশালী করতেই এমন উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। রাজধানীতে ব্লক রেইড চলছে। ব্লক রেইডে কোন সাধারণ মানুষ যাতে হয়রানির শিকার না হয়, এজন্য পুলিশ সদস্যদের সতকর্তার সঙ্গে কাজ করার নির্দেশ দেন তিনি। গত ১ জুলাই গুলশানের হলি আর্টিজান রেস্তরাঁ ও বেকারিতে হামলার পর জঙ্গীদের বাসা ভাড়া নিয়ে জঙ্গী কার্যক্রম চালানোর বিষয়টি নতুন করে আলোচনার জন্ম দেয়। মারাত্মক সেই হামলায় ২ পুলিশ কর্মকর্তা ও ১৭ বিদেশীসহ ২২ জনকে কুপিয়ে, গলা কেটে ও গুলি চালিয়ে হত্যা করে জঙ্গীরা। যা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে দেশের ভাবমূর্তি চরম সঙ্কটে ফেলে দেয়। পরবর্তীতে সেনাবাহিনীর কমান্ডো অভিযানে নিহত জঙ্গীদের পরিচয় মিলে। নিহত জঙ্গীরা মাত্র একমাস আগে বাসা ভাড়া নিয়েছিল বলে জানা যায়। বাসা ভাড়াসহ জঙ্গী তৎপরতায় সহায়তার দায়ে গ্রেফতার হয় বাড়িওয়ালা, শিক্ষকসহ পাঁচজন। ওই বাড়িতে বসেই হলি আর্টিজানে হামলার চূড়ান্ত পরিকল্পনা হয়। এমন ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতেই কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়ায় ঈদ জামাতে হামলার ঘটনা ঘটে। দুই পুলিশ সদস্য নিহত হয়। গ্রেফতার হওয়া এক জঙ্গী শফিউর রহমান জানায়, তারা ঈদগাহ ময়দানের পাশের একটি বাড়িতে ভুয়া নাম ঠিকানা ব্যবহার করে ভাড়া নিয়েছিল। এমন দুইটি মারাত্মক হামলার পর কল্যাণপুরের জঙ্গী আস্তানায় পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয় নয় জঙ্গী। পালিয়ে যায় ইকবাল নামের এক জঙ্গী। আর আহত অবস্থায় গ্রেফতার হয় রাকিবুল হাসান রিগ্যান নামের এক জেএমবি সদস্য। রিগ্যান জানায়, তারা ভুয়া নাম ঠিকানা ব্যবহার করে ফ্ল্যাটটি ভাড়া নিয়েছিল। ভাড়া নেয়ার ক্ষেত্রে বাড়ির মালিক জামায়াত নেতা হওয়ায় তারা বিশেষ সুবিধা পেয়েছে। বাড়ির মালিক জঙ্গীদের পরিচয় সম্পর্কে কোন খোঁজখবরই নেয়নি। কল্যাণপুরের ঘটনায় গ্রেফতার হয় বাড়ির মালিক মমতাজ বেগম, তার ছেলে ব্যারিস্টার জুয়েল, মেয়ের জামাই, বাড়ির ম্যানেজার ও কেয়ারটেকার। এসব প্রসঙ্গ টেনে ডিএমপি কমিশনার বলেন, উদ্ভূত পরিস্থিতিতে ভাড়াটিয়াদের তথ্য সংগ্রহের জন্য একটি ডিজিটাল ডাটাবেজ তৈরির কাজ চলছে। সেই ডাটাবেজে থাকা ভাড়াটিয়াদের প্রত্যেকের একটি করে পরিচয়পত্র নম্বর থাকবে। নম্বরটি ভাড়াটিয়াদেরও জানানো হবে। কোন ভাড়াটিয়া তার পরিচয়পত্র নম্বরটি কোন অসৎ উদ্দেশে ফেলে দিলেও কোন অসুবিধা নেই। কারণ ওই পরিচয়পত্র নম্বরটি ওই ভাড়াটিয়ার ডিজিটাল ডাটাবেজে রাখা হচ্ছে। পরিচয়পত্রের নম্বর দিয়ে ডাটাবেজে সার্চ দেয়া মাত্রই ভাড়াটিয়ার অবস্থান সম্পর্কে সুনির্দিষ্ট তথ্য জানা যাবে। এতে করে কোন ভাড়াটিয়া বাড়ি ছেড়ে অন্য কোথাও চলে গেলেও তাকে খুঁজতে পুলিশকে আর বেগ পেতে হবে না। বাড়িওয়ালাও ভাড়াটিয়ার পরিচয়পত্র নম্বরটি সংরক্ষণ করবেন। এই ডিজিটাল সাইটে পুলিশের বিভিন্ন জোনের কর্মকর্তাদের ফোন নম্বর, বিট পুলিশিংয়ে যারা কর্মরতদের ফোন নম্বর ও পুলিশ ক্লিয়ারেন্স পেতে করণীয় বিভিন্ন ধাপসহ বিভিন্ন ধরনের তথ্য রয়েছে। নগরবাসীকে নিরাপত্তার বিষয়ে পুলিশকে সহযোগিতার আহ্বান জানিয়ে তিনি আরও বলেন, রাজধানীতে পুলিশের ব্লকরেইডসহ নানা তৎপরতা চলছে। কেউ যেন হয়রানির শিকার না হয়, সেদিকে নজর রাখতে পুলিশ কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেন তিনি। যদি কেউ কোন পুলিশ সদস্য দ্বারা নির্যাতন বা হয়রানির শিকার হন, তাহলে ওই পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে তদন্ত সাপেক্ষে বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা নেয়া হবে। ব্লকরেইডের কারণে বাড়ির মালিকরা ব্যাচেলরদের মেস ভাড়া দিতে চাইছেন না। এমন অভিযোগের বিষয়ে ডিএমপি কমিশনার বলেন, নিরাপত্তা ও নাশকতা এড়ানোর লক্ষ্যে মেস বাড়িতে অভিযান হচ্ছে। তবে এতে আতঙ্কিত হওয়ার কোন কারণ নেই। ব্যাচেলররা তাদের সঠিক পরিচয় পুলিশের কাছে তুলে ধরলেই আর কোন ঝামেলা হবে না। বাড়িওয়ালাদের ব্যাচেলরদের বাসা ভাড়া দেয়ার অনুরোধ জানানোর পাশাপাশি সতর্ক থাকার পরামর্শও দেন কমিশনার। তবে অবশ্যই ব্যাচেলরদের প্রয়োজনীয় সব পরিচয় বাড়িওয়ালার সংরক্ষণ করা আবশ্যক। কারও বিষয়ে সন্দেহ হলে নিকটস্থ থানায় অভিযোগ করার পরামর্শ দেন কমিশনার। বক্তব্যকালে ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার মনিরুল ইসলাম, যুগ্ম কমিশনার কৃষ্ণপদ রায় ও মফিজ উদ্দিন আহমেদসহ উর্ধতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
×