ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

শীঘ্রই রাজধানীতে ব্যবসায়ীদের মহাসমাবেশ

৪৩৫ বাণিজ্যিক সংগঠনে জঙ্গীবিরোধী কমিটি গঠন করা হবে

প্রকাশিত: ০৫:২৯, ৭ আগস্ট ২০১৬

৪৩৫ বাণিজ্যিক সংগঠনে জঙ্গীবিরোধী কমিটি গঠন করা হবে

এম শাহজাহান ॥ সব ধরনের সন্ত্রাসবাদ মোকাবেলায় সারাদেশের ৪৩৫টি বাণিজ্যিক সংগঠনে জঙ্গীবিরোধী কমিটি গঠন করা হবে। এই কমিটি জঙ্গী-সন্ত্রাসী কর্মকা- নিয়ন্ত্রণে স্থানীয় প্রশাসনকে সব ধরনের সহযোগিতা প্রদান করবে। এছাড়া উচ্চবিত্ত পরিবারের ছেলেমেয়েদের দেশীয় সংস্কৃতি ও শিল্প চর্চায় উৎসাহ বাড়াতে ইংলিশ মিডিয়ামের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে বাংলা সাহিত্য বাধ্যতামূলক পড়ানোর জন্য সরকারের কাছে প্রস্তাব করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। তাদের এই প্রস্তাব শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং প্রধানমন্ত্রী বরাবর দেয়া হবে। এছাড়া জঙ্গীবাদ নির্মূলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে প্রধান অতিথি করে শীঘ্রই ঢাকায় একটি ‘মহাসমাবেশ’ কর্মসূচী পালন করার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিয়েছে ব্যবসায়ী ও শিল্পপতিদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে এ তথ্য। জানা গেছে, গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারি, শোলাকিয়া এবং সর্বশেষ কল্যাণপুরে বড় ধরনের জঙ্গী তৎপরতার ঘটনায় ব্যবসা-বাণিজ্যের স্বাভাবিক প্রক্রিয়া ব্যাহত হচ্ছে। বিশেষ করে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য এবং দেশী-বিদেশী বিনিয়োগের মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো নিয়ে ভাবতে শুরু করেছেন উদ্যোক্তারা। পোশাক খাতের ক্রেতারা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণসহ ঘরোয়া বৈঠকগুলোও করছেন বাংলাদেশের বাইরে। এই বাস্তবতায় সার্বিক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নয়ন চাচ্ছেন ব্যবসায়ী সম্প্রদায়। সম্প্রতি বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদের সঙ্গে দেখা করে বিভিন্ন খাতের উদ্যোক্তারা এ বিষয়ে দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ নেয়ার দাবি জানিয়েছেন। এছাড়া বাণিজ্য সংগঠনগুলোও যাতে জঙ্গীবিরোধী কর্মকা-ে আরও বেশি সক্রিয় হয় সে বিষয়ে গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। এই বাস্তবতায় এফবিসিসিআইয়ের ‘আইনশৃঙ্খলা ও চোরাকারবারি প্রতিরোধ’ সংক্রান্ত স্টান্ডিং কমিটি শনিবার ফেডারেশন ভবনে গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকে মিলিত হন। ওই সভায় সভাপতিত্ব করেন কমিটির চেয়ারম্যান ও এফবিসিসিআইয়ের সাবেক প্রথম সহসভাপতি আবুল কাশেম আহমেদ। সারাদেশের বিভিন্ন চেম্বার ও এ্যাসোসিয়েশনের প্রায় দুই শতাধিক ব্যবসায়ী নেতা জঙ্গীবাদবিরোধী এই বৈঠকে অংশগ্রহণ করেন। সভায় উপস্থিত ছিলেন সংগঠনটির প্রথম সহসভাপতি মোঃ সফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন, সাবেক প্রথম সহসভাপতি মোহাম্মদ আলী, মোঃ জসিমউদ্দিন ও সাবেক সহসভাপতি দেওয়ান সুলতান আহমেদ প্রমুখ। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে আবুল কাশেম আহমেদ জনকণ্ঠকে বলেন, জঙ্গী-সন্ত্রাসবাদ মোকাবেলায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে নিয়ে একটি মহাসমাবেশ করার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এই মহাসমাবেশে সারাদেশের ব্যবসায়ীরা অংশগ্রহণ করবেন। শুধু তাই নয়, মহাসমাবেশের প্রস্তুতি হিসেবে জাতীয় শোক দিবস ১৫ আগস্ট পালনের পরই বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের উপস্থিতিতে জঙ্গীবিরোধী একটি সেমিনার করা হবে। ওই সেমিনারের পরই এজেন্ডা নির্ধারণ করা হবে। তিনি বলেন, এটি হবে ব্যবসায়ীদের এ যাবতকালের সবচেয়ে বড় মহাসমাবেশ। সারাদেশের সকল চেম্বার ও এ্যাসোসিয়েশনে জঙ্গীবিরোধী কমিটি গঠন করা হবে। এই কমিটি গঠনের পর জঙ্গীবিরোধী মিছিল ও মানববন্ধন কর্মসূচী পালন করবেন ব্যবসায়ীরা। বাণিজ্য, রফতানি, বিনিয়োগ এবং সর্বোপরি দেশের অর্থনীতির স্বার্থে দেশ থেকে জঙ্গী-সন্ত্রানবাদ দূর করতে হবে। একই সঙ্গে ইংলিশ মিডিয়ামের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে যাতে কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, কাজী নজরুল ইসলাম এবং পল্লী কবি জসীম উদ্দীনের কবিতা ও গান পড়ানো হয় সে বিষয়ে সরকারের কাছে একটি প্রস্তাব দেয়া হবে। জানা গেছে, জঙ্গীবিরোধী ওই বৈঠকে উচ্চবিত্ত পরিবার, রাজনীতিক এবং ব্যবসায়ীদের ছেলেরা জঙ্গী কর্মকা-ে জড়িয়ে পড়ায় উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়। এসব ছেলেদের কারা মগজ ধোলাই করছে কিংবা তাদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে কি পড়ানো হচ্ছে সে বিষয়ে নজরদারি বাড়ানোর উপরও গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। ওই সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বাংলা সাহিত্য বাধ্যতামূলত পড়ানোর পাশাপাশি নাটক, গান, ছবি আঁকাসহ দেশীয় সংস্কৃতি ও শিল্প চর্চারও তাগিদ দেয়া হয়েছে। জানতে চাইলে এ প্রসঙ্গে বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ জনকণ্ঠকে বলেন, জঙ্গী-সন্ত্রাসবাদ মোকাবেলায় সরকারের পাশাপাশি ব্যবসায়ীরাও এগিয়ে আসছেন। দেশের সবাই আজ জঙ্গী মোকাবেলায় ঐক্যবদ্ধ। এটি একটি বৈশ্বিক সমস্যা। শুধু বাংলাদেশ নয়, সারা বিশ্বই এই সঙ্কটের মধ্যে রয়েছে। হলি আর্টিজান, শোলাকিয়া ঘটনার পর সরকারের পক্ষ থেকে জঙ্গী নির্মূলে সব ধরনের উদ্যোগ নেয়া হয়। এরই ধারবাহিকতায় কল্যাণপুরে জঙ্গীদের বিরুদ্ধে বড় ধরনের অপারেশন সফল হয়েছে। তিনি বলেন, এফবিসিসিআই থেকেও জঙ্গীবিরোধী জাতীয় মহাসম্মেলন করা হবে। দেশের সব জেলা চেম্বার ও এ্যাসোসিয়েশন প্রতিনিধিরা ওই সম্মেলনের অংশগ্রহণ করবেন। মূলত জঙ্গীবিরোধী জনমত তৈরিতে এই সম্মেলন বিশেষ ভূমিকা রাখতে পারে। জঙ্গী ইস্যুতে সমস্ত জাতি আজ ঐক্যবদ্ধ। এখন মানুষে মানুষে ঐক্য হচ্ছে। ব্যবসায়ীরাও ঐক্যবদ্ধ হচ্ছেন। এটি একটি ভাল উদ্যোগ।
×