ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

পুনর্বাসন সহযোগিতা নিয়ে ‘নয়ছয়’ না করার তাগিদ

পানি নামার সঙ্গে সঙ্গেই ক্ষতি পুষিয়ে নিতে মাঠে নেমেছে বগুড়ার কৃষক

প্রকাশিত: ০৫:২৮, ৭ আগস্ট ২০১৬

পানি নামার সঙ্গে সঙ্গেই ক্ষতি পুষিয়ে নিতে মাঠে নেমেছে বগুড়ার কৃষক

সমুদ্র হক ॥ বন্যার পানি নেমে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই বগুড়ার কৃষক ফসলের ক্ষতি পুনরুদ্ধারে কোমরবেঁধে মাঠে নেমেছে। বন্যা দ্বিতীয় দফায় আঘাত না করলে কৃষক দ্রুত এই সময়ের রোপা আমন, আউশ, গাইঞ্জা ধান, পাট, শাকসবজির আবাদ শুরু করে মৌসুমী ফসল ঘরে তুলতে পারে। যে এলাকায বন্যার পানি নেমেছে সেখানে কৃষক নতুন করে চারা রোপণ শুরু করেছে। চলতি বর্ষার বন্যায় বগুড়ার যমুনা ও বাঙালী তীরের তিন উপজেলা সারিয়াকান্দি সোনাতলা ও ধুনটের ১৬ ইউনিয়নের ফসলের ক্ষতি হয়েছে ৫৩ কোটি টাকারও বেশি। অন্তত ৩৩ হাজার কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে পাটের। রোপা আমন আউশ গাইঞ্জা ধান ও শাকসবজির আবাদ করে ক্ষতি পুষিয়ে নেয়া যাবে। কঠিন হবে পাট আবাদের। তবে কৃষি বিভাগ বলেছে, সরকার কৃষি পুনর্বাসনে সকল সহায়তা প্রদান করবে। বন্যা মোকাবেলায় পাটের নতুন যে জাত উদ্ভাবিত হয়েছে সেই বীজ ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের দেয়া হবে। ইতোমধ্যে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের মহাপরিচালকের নেতৃত্বে ৫ সদস্যের কৃষি পুনর্বাসন বিষয়ক কমিটি বগুড়ার বন্যাক্রান্ত এলাকা ও চরগ্রাম পরিদর্শন করেছে। মহাপরিচালক হামিদুর রহমান জানান, বন্যার পানি নামতে শুরু করেছে। কৃষকরা নতুন করে চাষাবাদের প্রস্তুতি নিয়েছে। তাদের সকল সহযোগিতা করা হবে। উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ী ঢল এবারের বন্যার অন্যতম কারণ। এর সঙ্গে বর্ষার বৃষ্টি যোগ হয়েছে। এই বন্যায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে যমুনা তীরের সারিয়াকান্দি উপজেলায়। উপজেলা প্রশাসন ও কৃষি বিভাগ সূত্রের মতে, ক্ষতির পরিমাণ অন্তত ৩৮ কোটি টাকা। স্থানীয় প্রশাসন উপজেলার ১২ ইউনিয়নের মধ্যে ৯ ইউনিয়নই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এমন রিপোর্ট দিয়েছে। মাঠ পর্যায়ের চিত্র বলে যমুনার পূর্বে বন্যাকবলিত হয়েছে। যমুনার পশ্চিমে কোন বন্যা হয়নি। এই অবস্থায় উপজেলা প্রশাসন ও কৃষি বিভাগের হিসাব কতটা ঠিক তা নিরীক্ষা করা হয়নি। এলাকার প্রবীণরা তাদের অভিজ্ঞতায় বলেন, সাধারণত দেখা যায় বন্যার পর ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ বেশি দেখিয়ে পুনর্বাসনের অর্থ ও উপকরণ সহযোগিতা ‘নয়ছয়’ করা হয়। এবার যেন তা না হয় সেদিকে দৃষ্টি দেয়ার দাবি জানিয়েছেন তারা। প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্তরাই যেন সহযোগিতা পায়। সরকারীভাবে খাতওয়ারি যে হিসাব দেয়া হয়েছে তাতে দেখা যায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে সারিয়াকান্দিতে ৩৮ কোটি টাকার। এরপর সোনাতলায় ১৫ কোটি টাকারও বেশি। ধুনটে সবচেয়ে কম ক্ষতি প্রায় ৬৪ লাখ টাকার। সারিয়াকান্দির ৯টি ইউনিয়নে আবাদকৃত ফসল তলিয়ে গেছে ৪ হাজার ৫শ’ হেক্টর জমির। সোনাতলায় তলিয়েছে ৬ ইউনিয়নের ১ হাজার ৮শ’ ৫ হেক্টর জমি। ধুনটের মাত্র একটি ইউনিয়নের ফসল তলিয়েছে যার পরিমাণ মাত্র ৯০ হেক্টর। সারিয়াকান্দির কৃষি বিভাগের খবর : ১ হাজার ৫শ’ ২০ হেক্টর জমিতে কেবলই আবাদ করা আউশ ধানের বিস্তর ক্ষতি হয়েছে। টাকার অঙ্কে যার পরিমাণ প্রায় ১১ কোটি টাকা। উর্বর ভূমির এই এলাকায় হারানো আউশের আবাদ ফিরে এসেছে। তাছাড়া এই এলাকার সুনাম অর্জন করা সুস্বাদু গাইঞ্জা ধান বীজ ছিটানোর পরই বন্যা আঘাত করেছে। পাট উৎপাদনের এই এলাকার ১ হাজার ৪শ’ হেক্টর জমির পাট বিনষ্ট হয়েছে। টাকার অঙ্কে ক্ষতি ১৬ কোটি টাকারও বেশি। প্রায় ১৩শ’ হেক্টর জমির রোপা আমনের ক্ষতি হয়েছে। ক্ষতির অঙ্ক প্রায় ১০ কোটি টাকা। ১শ’৭ হেক্টর জমির আমনের বীজতলা এবং ২৫ হেক্টর জমির শাকসবজির ক্ষতি হয়েছে। ক্ষতির অঙ্ক প্রায় দেড় কোটি টাকা। সারিয়াকান্দির পরই পাটের ক্ষতি বেশি হয়েছে সোনাতলা উপজেলায়। যেখানে চাষ করা ১ হাজার ৮শ’ হেক্টর জমির মধ্যে প্রায় ৮শ’ হেক্টরের পাটের ক্ষতি হয়েছে। টাকার অঙ্কে যার পরিমাণ প্রায় সাড়ে ৬ কোটি টাকা। বগুড়া কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের ভারপ্রাপ্ত উপ পরিচালক কামাল উদ্দিন জানান, বন্যার পানি নেমে যেতে শুরু করেছে। মৌসুমী ফসল ফলানোর সময় এখনও আছে। আগামী ২৫ সেপ্টেম্বরের মধ্যে বন্যাকবলিত এলাকার জমি শুকিয়ে গেলে কৃষক পূর্ণোদ্যমে আবাদ শুরু করতে পারবে। ইতোমধ্যে যে এলাকায় পানি নেমে গেছে সেখানে কৃষক পুনরায় চারা রোপণ করতে শুরু করেছে। যমুনার পশ্চিমে বন্যা না হওয়ায় এই এলাকার কৃষক বীজতলা তৈরি করেছে। বগুড়ার অনেক কৃষক এখন চারা ব্যবসা করে। তারা বীজতলা তৈরি করে চারা বানিয়ে বিক্রির প্রস্তুতি নিয়েছে। পুনরায় বন্যাক্রান্ত হলে পানি নেমে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই কৃষক ভুট্টা, মাসকলাই, মরিচ, শাকসবজির আবাদসহ শীতকালীন আবাদে নেমে পড়বে। বন্যাপরবর্তী কৃষি পুনর্বাসনে কৃষকদের সর্বাত্মক সহযোগিতা দেয়া হবে। পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সূত্রের খবর, উজানী ঢলে এই এলাকায় যমুনার পানি গত ২১ জুলাই বিপদসীমার ওপরে উঠে বাড়তে থাকে। প্রায় এক সপ্তাহে বিপদসীমার ৬৩ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ার পর তা নামতে শুরু করে। শনিবার বিপদসীমার ৯ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। পাউবো বলেছে এখন প্রতিঘণ্টায় পানি নামছে। এই এলাকায় দ্বিতীয় দফার বন্যার শঙ্কা কম। ঢলের পানি এখন গড়িয়ে মধ্য অঞ্চলের দিকে যাচ্ছে।
×