ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

আইএসের তকমা লাগিয়ে নিজেদের আড়াল রাখার অপচেষ্টা

যুদ্ধাপরাধ থেকে জঙ্গীবাদ সর্বত্রই নেপথ্যে জামায়াত

প্রকাশিত: ০৫:২৪, ৭ আগস্ট ২০১৬

যুদ্ধাপরাধ থেকে জঙ্গীবাদ সর্বত্রই নেপথ্যে জামায়াত

মোয়াজ্জেমুল হক, চট্টগ্রাম অফিস ॥ বাঙালীর মহান মুক্তিযুদ্ধে ভয়ানক অপরাধের বিপরীতে দুঃখ প্রকাশ বা ক্ষমা প্রার্থনা করেইনি যার বিচার এখন শুরু হয়েছে, শেষ হয়নি। এ অবস্থায় নতুন করে দেশবিরোধী আরও ভয়ঙ্কর অপরাধের সঙ্গে যুক্ত হয়ে গেল জামায়াতী নীলনক্সায় এর দুর্ধর্ষ ক্যাডার বাহিনী। সোজা কথায় বলতে হয়, যুদ্ধাপরাধ থেকে জঙ্গীবাদে সম্পৃক্ত হয়ে জামায়াত দেশজুড়ে সশস্ত্র সন্ত্রাসী তৎপরতায় দেশী-বিদেশী মানুষ হত্যা করে পুরো দেশকে অস্থিতিশীল করতে চায়। কিন্তু তাদের এ নীলনক্সা ফাঁস হয়ে গেছে। সরকার পক্ষে গোয়েন্দারা টানা অনুসন্ধান ও তদন্ত চালিয়ে নিশ্চিত হয়েছে সিরিয়াভিত্তিক আইএসের নাম ব্যবহার করে জামায়াতই এদেশে জঙ্গীবাদের শেকড় গেড়ে এর বিস্তৃতি ঘটাতে তৎপর। বিশেষজ্ঞ একাধিক সূত্রমতে, একাত্তরে দেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের বিরুদ্ধে জনগণ জামায়াতের রাজাকার, আলবদর, আলশামস বাহিনীকে চিনেছে। ২০১৬ সালে দেশবাসী জামায়াতকে আরেক রূপে অর্র্থাৎ হিংস্র জঙ্গীবাদে যুক্ত হয়ে ইসলামী নামের নানা সংগঠনের ব্যানারে কিলিং মিশনে অংশ নেয়া দেখে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, দেশের জঙ্গীদের শনাক্ত করা হয়েছেÑ এরা একাত্তরের পরাজিত শক্তি। এরা হুজি, জেএমবি ও শিবির। যাদের মূল শেকড় জামায়াত। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী প্রকাশ্যে একথা বলেছেন গোয়েন্দাদের রিপোর্টের যথার্থতা নির্ধারণ করে। অবশ্য এর আগে গুলশানে হলি আর্টিজানে ও শোলাকিয়ায় জঙ্গী হামলার পর প্রধানমন্ত্রীও ইঙ্গিত দিয়েছিলেন জঙ্গীদের ব্যানারে সহিংস তৎপরতায় যারা লিপ্ত তাদের পরিচয় উদঘাটিত হয়েছে। আগে জঙ্গীবাদে মাদ্রাসার ছাত্রদের আধিক্য ছিল, এখন ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলের শিক্ষার্থী এবং অভিজাত কিছু পরিবারের সদস্যের মাঝে ছড়িয়ে গেছে। সূত্র মতে, স্বাধীনতাবিরোধী জামায়াতকে যুদ্ধাপরাধের দায়ে দীর্ঘ সময় ধরে বিচারের আওতায় আনা যায়নি। মুক্তিযুদ্ধের সরকার ক্ষমতাসীন হওয়ার পরও ঝুঁকিপূর্ণ এ কাজে হাত দেয়নি। দ্বিতীয় দফায় স্বাধীনতা পক্ষের শক্তি তথা আওয়ামী লীগ সরকার বিশেষ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বলিষ্ঠ পদক্ষেপে যখন যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের জন্য আইন থেকে শুরু করে ট্রাইব্যুনাল গঠন, বিচার কাজে হাত দেয়া ও রায় বাস্তবায়ন শুরু হয় ততদিন সময় গড়িয়ে গেছে বহু দূরে নদীর পানির মতো। এরই মাঝে জামায়াতে ইসলামী পাকিস্তান হয়ে গেছে জামায়াতে ইসলাম বাংলাদেশ, জামায়াতের আর্মড ক্যাডার উইং ইসলামী ছাত্রসংঘ হয়ে গেছে ইসলামী ছাত্রশিবির। দেশী-বিদেশী অর্থে ও পৃষ্ঠপোষকতায় এরা ব্যাংক-বীমাসহ বড় বড় অর্থলগ্নি প্রতিষ্ঠানের মালিকও বনে গেছে। কিন্ডারগার্টেন থেকে শুরু করে স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা, বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশাপাশি টেকনিক্যাল ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠা করে বিপুলসংখ্যক শিক্ষার্থীকে আদর্শের দীক্ষা দিয়েছে। ১৯৭৫ সালে ক্ষমতার পটপরিবর্তনের পর আওয়ামী লীগবিরোধী সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়ে বছরের পর বছর ক্ষমতায় থাকে। ততদিনে জামায়াত ও তাদের পৃষ্ঠপোষক এমনকি মতবাদ ও আদর্শগত মিল রয়েছে এমন লোকেরাই চাকরিসহ সর্বক্ষেত্রে প্রাধান্য পেয়েছে। শুধু তাই নয়, পুলিশ থেকে শুরু করে সুসজ্জিত বাহিনীগুলোতেও এদের অবস্থান নিশ্চিত করা হয়েছে। যারা এখনও মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের সরকারবিরোধী ষড়যন্ত্রে লিপ্ত। এ প্রসঙ্গে উল্লেখ করা যায়, জামায়াতের শীর্ষ নেতা মরহুম গোলাম আযমের পুত্র দেশের সুসজ্জিত একটি বাহিনীর ব্রিগেডিয়ার পদে পর্যন্ত অধিষ্ঠিত হয়েছিলেন। এসব কারণ পর্যালোচনা করেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সম্প্রতি নিরাপত্তা বাহিনীতে এদের ব্যাপারে সজাগ থাকার আহ্বান জানান। সিভিল প্রশাসনসহ অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ রাষ্ট্রীয়, আধারাষ্ট্রীয় ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানেও এদের আদর্শের লোকজন গুরুত্বপূর্ণ পদে এখনও বহাল; যা এ সরকারের জন্য পরোক্ষভাবে বড় ধরনের হুমকিস্বরূপ। ইতোমধ্যে সরকার থেকে ঘোষণা এসেছে, সেনাবাহিনী থেকে বিতাড়িত মেজর জিয়া দেশে জঙ্গীবাদী তৎপরতার মাস্টারমাইন্ড। তিনিসহ দু’জনকে ধরিয়ে দিতে পারলে পুলিশ প্রত্যেকের জন্য ২০ লাখ টাকা পুরস্কার ঘোষণা করেছে। কোন কোন সূত্রমতে, এ দুজন ভারতে গা-ঢাকা দিয়ে আছেন। আবার কোন কোন সূত্রমতে এরা দেশেই আছেন। যাই হোক, এসব মাস্টারমাইন্ড থেকে শুরু করে তাদের অনুগতদের বড় অংশটি জামায়াত-শিবিরের ক্যাডার বাহিনী থেকে যোগ দেয়া। এ বিষয়টি গোয়েন্দা তদন্তে বেরিয়ে আসার পর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী প্রকাশ্যে তা জানান দিলেন। সূত্র মতে, একটি দেশের স্বাধীনতার বিরোধিতাকারী শক্তির কাতারে থেকে এদের অনেকেই টাকার কুমির বনে গেছে। এরাই এ সংগঠনের অর্থ যোগানদাতা। যে অর্থ পৌঁছে যায় তাদের ক্যাডার বাহিনীর কাছে। সে ক্যাডার বাহিনীর সদস্যরাই এখন জঙ্গী তৎপরতায় নেমেছে নানা নামে, নানা রূপে ও নানা কায়দায়। দেশ ও জনবিরোধী ঘটনা ঘটিয়ে আইএস নামে নিজেদের দেশী ও আন্তর্জাতিক প্রচার মাধ্যমে শিরোণাম হতে চায়। আবার এদের মধ্য এমন অনেকেই আছেন যারা ধর্মের অপব্যাখ্যায় মস্তিষ্ক ধোলাই হয়ে জিহাদী তৎপরতার নামে মূলত সন্ত্রাসী কর্মকা-ে লিপ্ত হয়ে নিজ জীবনের পরিসমাপ্তি ঘটাতেও দ্বিধা করছে না। অথচ, এদের মাস্টারমাইন্ডরা রয়ে যাচ্ছে বহাল তবিয়তে। তাদের অসৎ উদ্দেশ্য বাস্তবায়নে মস্তিষ্ক ধোলাই হওয়া একশ্রেণীর যুবক বিপথগামী হয়ে আইএসে যোগ দিতে সিরিয়া, মিসর, তুরস্ক থেকে শুরু করে নানা দেশে চলে যাওয়ার খবরও উদঘাটিত হয়েছে। বর্তমানে দেশে জঙ্গী তৎপরতাবিরোধী সচেতনতা ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। চোরাগোপ্তা হামলা ছাড়া প্রকাশ্যে এদের চলাফেরাও এখন তাদের জন্য বড় ধরনের বিপদ ডেকে এনেছে। জামায়াত-শিবির, হিযবুত তাহরীর কর্মীরা ইতোপূর্বে যেভাবে প্রকাশ্যে তাদের তৎপরতা চালাত, এখন তা হয়েছে তাদের জন্য বড় ধরনের হুমকি। এক সময়ের প্রধান বিরোধী দল বিএনপিকে সামনে রেখে এসব মৌলবাদী, জঙ্গীবাদী ও সন্ত্রাসবাদী সংগঠন কর্মীরা যেভাবে ফায়দা লুটেছে এখন সে বিএনপি তাদের কারণেই নিজের অস্তিত্ব নিয়ে টালমাটাল অবস্থায়। এ থেকে উত্তরণ হবে কিনা তা বলে দেবে ভবিষ্যত। তবে যে জাতীয় ঐক্যের ডাক দিয়ে বিএনপি মাঠে নেমেছে শুরুতেই তাতে হোঁচট খেয়েছে কাদের সিদ্দিকীর ঘোষণায়।
×