ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

উদ্বোধনীর আলোর ছন্দে শুরু হয়ে গেল রিও অলিম্পিক

প্রকাশিত: ০৫:২৩, ৭ আগস্ট ২০১৬

উদ্বোধনীর আলোর ছন্দে শুরু হয়ে গেল রিও অলিম্পিক

আতশবাজি আর লেজার শোয়ের ছন্দে শুরু হলো রিও অলিম্পিক গেমস। হাতে বাংলাদেশের পতাকা উঁচু করে ধরা মাথার ওপর। পেছনে কোট-প্যান্ট পরা বাংলাদেশের ক্রীড়াবিদরা এক এক করে পা রাখলেন উদ্বোধনীর মঞ্চে। মাত্র সাত এ্যাথলেট, সঙ্গে ৯ কর্মকর্তা। পতাকা বাহক গলফার সিদ্দিকুর রহমানের পেছনে অনেকটা ফাঁকা ফাঁকাই লাগলো। আসলে অস্ট্রেলিয়া, ইংল্যান্ড, কানাডা, যুক্তরাষ্ট্র, এমনকি আয়োজক ব্রাজিলের দুই-আড়াই শ’ দলের পেছনে অনেকটা ফাঁকা লাগারই কথা। ভাগ্যবান সিদ্দিকুরের মুখে উজ্জ্বল হাসি। দু’হাতে দেশের পতাকা নাড়ছেন। আর পেছনে অন্যরা। মারাকানা স্টেডিয়ামের দর্শক প্রমাণ করে দিল অলিম্পিক ঘিরেও সমান উত্তেজনা ব্রাজিলে, তথা সারাবিশ্বের মানুষের মধ্যে। ঠিক ফুটবলের মতো। ১৯৫০ সালে ব্রাজিল বনাম উরুগুয়ের বিশ্বকাপ ফাইনালকে ছুঁয়ে ফেললো ২০১৬ অলিম্পিক। গ্যালারি রাঙিয়ে দিল প্রায় দেড় লাখ দর্শক। ২০০৯ সালে ঘোষণা হয়েছিল ২০১৬ অলিম্পিক হতে চলেছে ব্রাজিলের রিও ডি জেনিরোতে। সাত বছর পর সেই ‘গ্রেটেস্ট শো অন আর্থ’-এর আলোয় ঝকমক করে উঠলো গোটা রিও। জানা ছিল ফুটবলের সম্রাট পেলে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে মশাল প্রজ্বলন করবেন। কিন্তু শারীরিক অসুস্থতায় সরে দাঁড়ান তিনি। তাহলে কে? এই প্রশ্নটা ভাবিয়ে তুলেছিল আয়োজকদের। মারাকানায় আলো ঝলমলে উদ্বোধনের রাতে দেখা গেল মশাল হাতে সিঁড়ি বেয়ে উঠে যাচ্ছেন একজন। তিনি কে? ক্যামেরা ঝুম করতেই জায়ান্ট স্ক্রিনে ফুটে উঠল মুখ। না- চিনতে ভুল করেনি ব্রাজিল। তথা গোটা দুনিয়া। ভানদেরলেই করদেইলি ডি লিমা। ব্রাজিলের অলিম্পিক ম্যারাথনার। এই দূরপাল্লার দৌড়বিদের নাম বললেই মনে পড়ে যায় ২০০৪ এ্যাথেন্স অলিম্পিকের কথা। সেবার ডি লিমার পদক জেতার তেমন সম্ভাবনা ছিল না। কিন্তু তারপরও পদকের দাবিদার হয়ে গিয়েছিলেন লিমা। জিতে ছিলেন ব্রোঞ্জ। সেই ডি লিমার হাতেই মশাল প্রজ্বলন হলো রিও অলিম্পিক গেমসের। এই সম্মান তাকে দেখিয়ে যেন কৃতজ্ঞ গোটা ব্রাজিল জাতি। রং, বর্ণময় উচ্ছ্বাস আর পাগলপারা অবেগ। শুরু থেকেই রিও’র সমুদ্র দূষণ নিয়ে উত্তেজিত হয়ে উঠেছিল ব্রাজিল। অলিম্পিকের উদ্বোধনের শুরুতে আসল থিমই ছিল সেই দূষণ প্রতিরোধের বর্ণিল লেজার শো। এছাড়া আসরের পরতে পরতে মূর্ত হয়ে উঠলো কত যে মুহূর্ত। অসামান্য সব অনুভূতি। গোটা বিশ্ব রাঙিয়ে দেয়া উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তুলে ধরা হয় ব্রাজিলীয় সংস্কৃতি আর পরম্পরার অপরূপ নিদর্শন। লেজার শো’র বারবার রং বদল চোখ ধাঁধিয়ে দেয় দর্শকের। আটলান্টিক মহাসাগরের উত্তাল ঢেউ যেন গর্জন দিয়ে আছড়ে পড়ছে মারাকানার মাঠে। আর উত্তাল ঢেউয়ের সঙ্গে লড়াই করে পাড়ি দিচ্ছে জাহাজ, মাছ ধরার নৌকা, সৈকতে হাজারও মানুষের বিনোদনÑ সবই তুলে ধরা হয় অত্যাধুনিক লেজারের মাধ্যমে। সব মিলিয়ে বলা যায় এক অনুপম নিদর্শন তুলে ধরা হয় আবেগ-উচ্ছ্বাসের উদ্বোধনীতে। আলোয় আলোয় মারাকানায় জন্ম নিল অসাধারণ, অপরূপ দৃশ্য। মনে রাখার মতো এক মুহূর্ত। এ যেন সর্বত্রই এক মহামিলনের রাত। আলোর ঝলকানির মাঝেই মার্চপাস্টে একে একে নেমে এলেন ২০৬টি দেশের ক্রীড়াবিদরা। গেমসের আসল যোদ্ধাদের সঙ্গে কোচ-কর্মকর্তারা। পদকের মহাযুদ্ধে নামার আগে এদিনের রাত যেন হয়ে রইল আগাম সৌজন্য বিনিময়ের। এ রাতে মোহনীয় রূপে ধরা দিলেন ব্রাজিলের সুপার মডেল জিসেলা বুন্দচেল। অলিম্পিকের মার্চপাস্ট বরাবরই জন্ম দেয় নজরকাড়া এক আবেগের। সেই আবেগই প্রাণভরে উপভোগ করলেন গ্যালারি ভর্তি দর্শক। আর টিভির পর্দায় বিশ্বের কোটি কোটি ক্রীড়াপ্রেমী। দক্ষিণ আমেরিকায় এটিই প্রথম অলিম্পিক। আন্তর্জাতিক অলিম্পিক কমিটির সভাপতি টমাস বেচ মনে করিয়ে দিলেন অলিম্পিকই গোটা দুনিয়ায় বিশ্বশান্তির বার্তা ছড়িয়ে দেয়ার উপযুক্ত এক মঞ্চ। সবচেয়ে আলোচিত বিষয় হচ্ছে রিওতে উদ্বোধনী অনুষ্ঠান মাতিয়ে দেয় শরণার্থী দল। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের শরণার্থী নিয়ে গড়া দল এই প্রথম অংশ নিল অলিম্পিকের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের মার্চপাস্টে। জিম্বাবুইয়ের পর সবার শেষে যখন মারাকানার মার্চপাস্টে প্রবেশ করলো শরণার্থী দল তখন গোটা স্টেডিয়াম উঠে দাঁড়িয়ে তাদের সম্মান, ভালবাসা জানায়। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের শরণার্থীদের প্রতি সমর্থন জানাতেই দশজন শরণার্থী এ্যাথলেট নিয়ে গড়া হয়েছে এই স্বতন্ত্র দল। দলটিতে রয়েছে ১৮ বছর বয়সী সিরিয়ার সাঁতারু উরসা মারদিনি। যিনি শরণার্থী হয়ে গিয়েছিলেন জার্মানিতে। ২০০ মিটার ফ্রি স্টাইল সাঁতারে অংশ নেবেন তিনি। কঙ্গো ছাড়াও রিও অলিম্পিকে অংশ নিচ্ছেন সুদান, সিরিয়া ও ইথিওপিয়ার শরণার্থী ক্রীড়াবিদরা। উদ্বোধনীর আগে গোটা রিওজুড়ে চলছিল বিক্ষোভ-আন্দোলন। কিন্তু বর্ণিল উদ্বোধনীর পর যেন থিতিয়ে পড়েছে সব। সবার নজর, মনোযোগ চলে গেছে খেলার মাঠের দিকে। বাহারি রঙের আতশবাজির রোশনাইয়ে বিলীন হয়ে গেছে সব আন্দোলন, আয়োজকদের সামনে চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়ানো সমস্ত বাধা-বিপত্তি। সঙ্গে মারাকানা স্টেডিয়ামের নাম জায়গা করে নিল ব্রাজিলের ইতিহাসে।
×