ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

কক্সবাজার থেকে চট্টগ্রাম নতুন গ্রিড লাইন নির্মাণ অনুমোদন

প্রকাশিত: ০৪:১৭, ৭ আগস্ট ২০১৬

কক্সবাজার থেকে চট্টগ্রাম নতুন গ্রিড লাইন নির্মাণ অনুমোদন

রশিদ মামুন ॥ মাতারবাড়ি কেন্দ্রের বিদ্যুত সঞ্চালনের জন্য কক্সবাজার থেকে চট্টগ্রাম পর্যন্ত নতুন একটি গ্রিড লাইন নির্মাণের অনুমোদন দিয়েছে সরকার। জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সির-জাইকা অর্থায়নে কোল পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি বিদ্যুত কেন্দ্রটি নির্মাণ করছে। দেশের একক মালিকানায় থাকা এক হাজার ২০০ মেগাওয়াটের কেন্দ্রটি আমদানি করা কয়লায় চলবে। আগামী ২৪ আগস্ট বিদ্যুত কেন্দ্রটির দরপত্র জমা দেয়ার শেষ সময় নির্ধারণ করা হয়েছে। সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত একনেক বৈঠকে গ্রিড লাইনটি নির্মাণের অনুমোদন দেয়া হয়। বিদ্যুত বিভাগ প্রকল্পটি বৈঠকে উত্থাপন করে। পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি পিজিসিবি গ্রিড লাইনটি নির্মাণ করবে। সম্প্রতি জাপানের একটি পত্রিকায় মাতারবাড়ি প্রকল্প নিয়ে বিভ্রান্তিকর খবর ছাপা হয়। ওই খবরে বলা হয়, বাংলাদেশ সরকার প্রকল্পটি স্থগিত করেছে। যদিও বিদ্যুত বিভাগ এবং কোল পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে জাইকা আমাদের প্রকল্পটি স্থগিত করতে বলেনি। বরং দরপত্র ক্রয় করা জাপানের দুটি কোম্পানির পক্ষ থেকে দরপত্র জমা দেয়ার সময় বৃদ্ধির জন্য আবেদন করলে এক মাস বৃদ্ধি করা হয়েছে। ঈদের আগে গুলশান ট্র্যাজেডির পর এক সংবাদ বিবৃতিতে জাইকা জানায়, তারা বাংলাদেশ সরকারের পাশেই থাকবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে বৈঠকে জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবে সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে বাংলাদেশের পাশে থাকার আশ্বাস দেন। বৈঠকে বাংলাদেশ-জাপানের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক অটুট থাকবে বলেও তিনি শেখ হাসিনাকে জানান। সম্প্রতি আবারও প্রধানমন্ত্রী আবে তার মনোভাবের কথা পুনর্ব্যক্ত করেছেন। কক্সবাজারের মাতারবাড়ি থেকে চট্টগ্রামের মদুনাঘাট পর্যন্ত ৯২ কিলোমিটার বা ১৮৪ সার্কিট কিলোমিটার লাইন নির্মাণ করা হবে। গ্রিড লাইন নির্মাণে মোট ব্যয় নির্ধারণ করা হয়েছে এক হাজার ৯০ কোটি ৮০ লাখ টাকা। সরকার, পিজিসিবি এবং জাইকা প্রকল্পে বিনিয়োগ করবে। এখানে জাইকা ৭৮৭ কোটি টাকা, সরকার ২২৩ কোটি ৬০ লাখ টাকা এবং পিজিসিবি নিজস্ব তহবিল থেকে ৮০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করবে। আগামী বছর জুলাই থেকে প্রকল্পের কাজ শুরু হবে। শেষ হবে ২০২০ সালের ডিসেম্বরে। ওই সময়ে মাতারবাড়ি বিদ্যুত কেন্দ্র উৎপাদনে আসার কথা রয়েছে। বৈঠক সূত্র বলছে, প্রকল্পটি অনুমোদনের সময় নির্ধারিত সময়ের মধ্যে শেষ করার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ইতোমধ্যে বিদ্যুত প্রকল্পের ভূমি উন্নয়নের কাজ শেষ পর্যায়ে। বিদ্যুত কেন্দ্রটির সমীক্ষা প্রতিবেদনও তৈরি করা হয়েছে। মাতারবাড়ি-মহেশখালিকে ঘিরে সরকার যে ১০ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুত উৎপাদনের লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে তার প্রথম গ্রিড লাইন হচ্ছে এটি; যা সরাসরি দেশের জাতীয় গ্রিডে সংযুক্ত হবে। গ্রিড লাইনটি বিদ্যুত সঞ্চালন ছাড়াও চট্টগ্রাম অঞ্চলের ক্রমবর্ধমান বিদ্যুতের সঙ্কট দূর করবে বলে আশা করা হচ্ছে। বিদ্যুত কেন্দ্রটি নির্মাণের দরপ্রস্তাবে জাপানের তোশিবা কর্পোরেশন ও মিতসুবিসি হিতাচি পাওয়ার সিস্টেম লিমিটেড নামে দুটি প্রতিষ্ঠান অংশ নেবে বলে আশা করা হচ্ছে। দুটি কোম্পানিই দরপত্র ডকুমেন্ট কিনেছে। সরকার মাতারবাড়ি-মহেশখালিকে ঘিরে বিশাল উন্নয়ন পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। এখানে ১০ হাজার মেগাওয়াটের কয়লাভিত্তিক বিদ্যুত কেন্দ্র নির্মাণের হাব গড়ে তোলা হবে। একই সঙ্গে নির্মাণ করা হবে একটি কোল টার্মিনাল। এই কয়লা খালাস বন্দরে গভীর সমুদ্র বন্দরের সুবিধা থাকবে। মহেশখালিতে একটি ভাসমান এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণের জন্য সম্প্রতি চুক্তিও করা হয়েছে। এখানে আরও দুটি স্থায়ী এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণের পরিকল্পনা রয়েছে। এছাড়া মহেশখালিকে একটি আধুনিক নগরী হিসেবে গড়ে তোলা হবে। এজন্য জাইকা শহর নির্মাণের সমীক্ষা করছে। এজন্য জাইকাই ঋণ দেবে সরকারকে।
×