ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

প্রেসিডেন্টের ক্ষমতার ওপর কোন বাধা নেই, তবে প্রয়োগ গতি মন্থর করা যায়

পরমাণু অস্ত্র নিয়ে উদ্বেগ ॥ ট্রাম্পের হাতে

প্রকাশিত: ০৩:৫১, ৭ আগস্ট ২০১৬

পরমাণু অস্ত্র নিয়ে উদ্বেগ ॥ ট্রাম্পের  হাতে

ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট হলে পরমাণু অস্ত্র কি ব্যবহার করেই বসতে পারেন। এই প্রশ্নটি এখন মার্কিন নির্বাচক পর্যবেক্ষক মহলে। ট্রাম্প এবারের মর্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে রিপাবলিকান পার্টি থেকে দাঁড়িয়েছেন। আশঙ্কা রয়েছে তিনি প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হলে পরমাণু অস্ত্র ব্যবহার করে বসতে পারেন। কমান্ডার ইন চীফ হিসেবে মার্কিন প্রেসিডেন্ট এক্ষেত্রে প্রভূত ক্ষমতার অধিকারী। তাকে নিয়ন্ত্রণে রাখার আপাত কোন রক্ষাকবচও নেই। ইন্টারন্যাশনাল নিউইয়র্ক টাইমস। ডেমোক্র্যাটিক ন্যাশনাল কনভেনশন গত সপ্তাহে ফিলাডেলফিয়ায় অনুষ্ঠিত হয়। দলটির মনোনীত প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী হিলারি ক্লিনটন কনভেনশনে বলেছিলেন যাকে টুইটারে টোপ গেলানো যায় তার হাতে দেশের পরমাণু অস্ত্র ভান্ডারের চাবি তুলে দেয়া যায় না। প্রায় একই ধরনের শঙ্কার কথা শোনা গেছে বিদায়ী প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার কণ্ঠেও। বৃহস্পতিবার এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট হলে তিনি পরমাণু ব্যবহার করে ভয়াবহ ধ্বংসাত্মক পরিস্থিতির জন্ম দিতে পারেন। এ থেকে ধারণা করা যায় ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট হলে পরমাণু অস্ত্রের অপব্যবহার হতে পারে কি না এ নিয়ে উদ্বিগ্ন ওবামাও। প্রশ্ন হলো একজন মার্কিন প্রেসিডেন্টের পরমাণু অস্ত্র ব্যবহারের যে ক্ষমতা রয়েছে তা নিয়ন্ত্রণের কোন কার্যকর উপায় রয়েছে কি না। এই প্রশ্লের সংক্ষিপ্ত উত্তর হলো না। পদাধিকার বলে দেশটির প্রেসিডেন্ট এ বিষয়ে অগাধ ক্ষমতার অধিকারী। যদিও পরমাণু হামলার হুমকি না থাকা সত্ত্বেও যুক্তরাষ্ট্র এই অস্ত্র দুইবার ব্যবহার করেছিল কিন্তু নিয়ম হলো বাস্তবে পরমাণু হামলার ঝুঁকি দেখা দিলেই তখন মার্কিন প্রেসিডেন্ট বিষয়টি বিবেচনা করবেন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর এ ধরনের পরিস্থিতির আর উদ্ভব হয়নি বললেই চলে। যুক্তরাষ্ট্র পরমাণু হামলার ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে এ রকম খবর পাওয়ার পর প্রেসিডেন্ট খুব দ্রুত বিষয়টি চিন্তাভাবনা করে সিদ্ধান্ত নেবেন। প্রেসিডেন্টকে দেখতে হবে এই ঝুঁকি বাস্তবসম্মত কি না। এ ক্ষেত্রে সিদ্ধান্ত নেয়ার জন্য প্রেসিডেন্ট কয়েক মিনিট সময় পাবেন। প্রেসিডেন্ট একবার সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেললে তাতে ভেটো দেয়ার কোন সুযোগ থাকে না। তবে কোন রকম হুমকি ছাড়াও প্রেসিডেন্ট এই নির্দেশ দিতে পারেন এক্ষেত্রে তার সামনে কোন আইনগত প্রতিবন্ধকতা নেই। যুক্তরাষ্ট্রের হাতে এখন ৯২৫টি পরমাণু অস্ত্র রয়েছে। এগুলোর সম্মিলিত ধ্বংসাত্মক ক্ষমতা হিরোশিমায় নিক্ষিপ্ত বোমার ১৭ হাজার গুণ বেশি। সম্প্রতি ট্রাম্পের দেয়া বিভিন্ন সাক্ষাতকার থেকে এ ধারণা পাওয়া যায় যে কোন পরিস্থিতি ট্রাম্প পরমাণু অস্ত্র ব্যবহার করতে পিছপা হবে না। এ নিয়ে এখন দেখা দিয়েছে উদ্বেগ। এ বছর মার্চে এক সাক্ষাতকারে তিনি বলেছিলেন যে, তিনি প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হলে প্রথমে আক্রান্ত না হলেও তিনি পরমাণু অস্ত্র ব্যবহার করতে পারেন। তবে তিনি এটিও বলেন যে, কাজটি তিনি করবেন সর্বশেষ পদক্ষেপ হিসেবে। একেবারে ১৯৮৪ সালে যখন ট্রাম্প ছিলেন ৪৮ বছরের এক ডেভেলপার তখন তিনি ওয়াশিংটন পোস্টের রিপোর্টার লোইস রোমানোকে এক সাক্ষাতকার দেন। এতে তিনি বলেন, তিনি সোভিয়েতদের সঙ্গে পরমাণু অস্ত্র নিয়ে আলোচকের ভূমিকা পালন করতে পছন্দ করবেন। তিনি বলেন, কোন কোন ব্যক্তির আলোচনা করার সামর্থ্য রয়েছে। এটি এমন এক কলাকৌশল যা আপনি জন্মসূত্রেই লাভ করেন। তিনি রিপোর্টারকে আশ্বাস দেন যে, ট্রাম্প দ্রুত ক্ষেপণাস্ত্র সম্পর্কে জানতে পারবেন। ট্রাম্প বলেন, ক্ষেপণাস্ত্র সম্পর্কে সব কিছু জানতে দেড় ঘণ্টা সময় লাগবে। ট্রাম্প বলেন, ‘আমি মনে করি, আমি এর অধিকাংশই জানি।’ কোন কোন প-িত (উইকিপেডিয়া) ও জোর দিয়ে বলেন যে, বাধা ও ভারসাম্য ব্যবস্থা প্রতিরক্ষামন্ত্রীকে সিদ্ধান্ত গ্রহণের মূল ভূমিকা প্রদান করে। কিন্তু প্রিস্টন বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক ব্রুস জি. ব্লেয়ার বলেন, এ নিয়ম ভূগর্ভস্থ পরমাণু অস্ত্রের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হয়, কিন্তু কমান্ড চেইনের শীর্ষ পর্যায়ে নয়া প্রেসিডেন্টের কাছ থেকে নির্দেশ এলে বিমানবাহিনীর একজন অফিসার হিসেবে ব্লেয়ারই কোন পরমাণু ক্ষেপণাস্ত্র ছুঁড়তেন। ড. ব্লেয়ার এক সাক্ষাতকারে বলেন, প্রতিরক্ষামন্ত্রী কিছুই করতে পারেন না। ঐ নির্দেশ পালনে অস্বীকার করা বা অমান্য করার কোন কর্তৃত্বই মন্ত্রীর নেই। ব্লেয়ার পরমাণু অস্ত্রের কমান্ড ও কন্ট্রোল নিয়ে একটি বই লিখেছেন। স্ট্যানফোর্ড বিশেষজ্ঞ স্কট ডি. স্যাগান ঐ বিষয়ে একমত হন, কিন্তু তিনি ঘটনাপ্রবাহ মন্থর করে দেয়ার উপায় প্রতিরক্ষামন্ত্রীর হাতে রয়েছে বলে উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, যদি প্রেসিডেন্ট পরমাণু অস্ত্র ব্যবহারের নির্দেশ দেন এবং প্রতিরক্ষামন্ত্রী এতে সম্মতি দিতে অস্বীকার করেন, তবে আমরা এক অভূতপূর্ব পরিস্থিতির মুখে পড়ব। তিনি বলেন, কখনও এটি ঘটেনি। যদি দেশের সর্বোচ্চ প্রতিরক্ষা কর্মকর্তা একথা ঘোষণার চেষ্টা করেন যে, প্রেসিডেন্টের এরূপ কোন নির্দেশ জারির ক্ষমতা নেই, তবে কি ঘটবে কেউ বলতে পারেন না। স্যাগান আরও বলেন, কোন কোন ক্ষেত্রে শান্তির সময়ে বিনা উস্কানিতে প্রেসিডেন্টের পরমাণু হামলার ফলে কমান্ড কর্তৃত্ব সংক্রান্ত নিয়মকানুন দ্রুত মান্য হওয়ার চেয়ে বরং এক সাংবিধানিক সঙ্কট দেখা দেয়ারই বেশি সম্ভাবনা।
×