ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

পুনঃঅর্থায়ন স্কিম ২ হাজার কোটি টাকা করার দাবি

পাট শিল্পে গ্রীন ফান্ডিং চায় উদ্যোক্তারা

প্রকাশিত: ০৩:৪৭, ৭ আগস্ট ২০১৬

পাট শিল্পে গ্রীন ফান্ডিং চায় উদ্যোক্তারা

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ গার্মেন্টস, প্লাস্টিক এবং চামড়া শিল্পের ন্যায় পাটশিল্পেও গ্রীন ফান্ডিং (সবুজ অর্থায়ন) চায় বেসরকারী খাতের পাটকল মালিকরা। তাদের মতে, পাটশিল্প খাতকে বাংলাদেশ ব্যাংকের গ্রীন ফান্ডিংয়ের আওতায় এনে স্বল্প সুদে ঋণ প্রদান করা হলে এ শিল্পখাত ব্যাপকভাবে প্রসার লাভ করে দেশের কর্মসংস্থান ও রফতানি আয় বাড়াবে। পাটশিল্পকে গ্রীন ফান্ডিংয়ের আওতায় আনার দাবি জানিয়ে সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংক ও অর্থ মন্ত্রণালয়ে একটি চিঠি দিয়েছে বেসরকারী পাটকল মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ জুট মিলস এ্যাসোসিয়েশন (বিজেএমএ) এবং বাংলাদেশ জুট স্পিনার্স এ্যাসোসিয়েশন (বিজেএসএ)। চিঠিতে বিজেএমএ জানায়, পরিবেশ রক্ষার্থে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ সিনথেটিক পণ্যের ব্যবহার কমিয়ে দিয়ে প্রাকৃতিক তন্তুজাত পণ্যের ব্যবহারে গুরুত্ব দিচ্ছে। বছরের চারমাস পাটগাছ ১২ মেট্রিক টন কার্বনডাই-অক্সাইড শোষণ ও ১১ মেট্রিক টন অক্সিজেন সরবরাহ করে থাকে। পাট পচে জমির উর্বরতা শক্তি বৃদ্ধি পায়। প্রতি একর জমিতে ঝরে পড়া পাটের পাতা থেকে প্রায় ২ দশমিক ৫ টন জৈব সার পাওয়া যায়। চিঠিতে আরও উল্লেখ করা হয়, দেশে বছরে প্রায় ৭ থেকে ৮ লাখ হেক্টর জমিতে পাটের চাষ হয়ে থাকে। পাটশিল্প খাতের সঙ্গে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে প্রায় ৪ কোটি লোক জড়িত। বর্তমানে সনাতন ও বহুমুখী পাটপণ্যের ব্যবহার দেশে ও বিদেশে ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি পাচ্ছে। এই শিল্পকে গ্রীন ফান্ডিংয়ের আওতায় আনলে এ শিল্পখাত ব্যাপকভাবে প্রসার লাভ করবে। এ বিষয়ে বিজেএমএ সচিব এ বারিক খান বলেন, আমাদের পাটশিল্প কাঁচামালনির্ভর। পাটপণ্য রফতানি করে প্রতিবছর এই শিল্পখাত থেকে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা হয়। দেশীয় কাঁচামালনির্ভর এই শিল্পটিকে এখনও গ্রীন ফান্ডিংয়ের আওতায় আনা হয়নি। গার্মেন্টস, প্লাস্টিক এবং চামড়া শিল্পের ন্যায় পাটশিল্প খাতকে গ্রীন ফান্ডিংয়ের আওতায় আনলে সোনালী আঁশ খ্যাত এই শিল্প তার পুরনো ঐতিহ্য ফিরে পাবে। পাটশিল্পকে গ্রীন ফান্ডিংয়ের আওতায় আনা ছাড়াও এই শিল্পে বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক গঠিত ২০০ কোটি টাকার পুনঃঅর্থায়ন স্কিম বৃদ্ধি করে ২ হাজার কোটি টাকায় উন্নীত ও সুদের হার ২ শতাংশ করার দাবি জানিয়ে আরেকটি চিঠি দিয়েছে পাটকল মালিকরা। চিঠিতে তারা জানায়, রফতানি শিল্পকে সহযোগিতা করার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক ১৯৮৮ সালে রফতানি উন্নয়ন তহবিল (ইডিএফ) গঠন করেছে। এই তহবিল থেকে স্বল্পসুদে ঋণ নিয়ে রফতানি শিল্প বিদেশ থেকে কাঁচামাল আমদানি করতে পারে। এ তহবিলে সুদের হার লাইবর (লন্ডন আন্তঃব্যাংক ঋণের সুদহার) প্লাস ২ দশমিক ৫ শতাংশ (সুদের হার পূর্বে আরও কম ছিল) এবং তহবিলের আকার বর্তমানে ২০০ কোটি ডলার যা প্রায় ১৬ হাজার কোটি টাকা। টেক্সটাইল, গার্মেন্টস, চামড়া, সিরামিক ও পাদুকা শিল্পে এই তহবিল ব্যবহার করে সমৃদ্ধশালী হচ্ছে। কিন্তু পাটশিল্প দেশীয় কৃষকদের উৎপাদিত কাঁচাপাট ক্রয় করে বলে ইডিএফ তহবিল ব্যবহার করতে পারছে না। অন্যদিকে বর্তমান সরকার পাটশিল্পকে সহযোগিতা করতে কাঁচামাল সংগ্রহের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক ২০১৪ সালে ২০০ কোটি টাকার একটি পুনঃঅর্থায়ন স্কিম চালু করে যা ৯ শতাংশ হারে ঋণ প্রদান করছে, যা পর্যাপ্ত নয়। তাই এই তহবিল আরও বড় করতে হবে। বাংলাদেশ জুট স্পিনার্স এ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি আহমেদ হোসেন বাদল বলেন, পাট শিল্পের পুনরুজ্জীবন, আধুনিকায়নের ধারা বেগবান করতে, উন্নতমানের পাটজাত দ্রব্য তৈরি এবং রফতানি বাড়াতে পুনঃঅর্থায়ন তহবিল বাড়ানো প্রয়োজন। এ বিষয়ে আমরা সরকারী সহযোগিতা কামনা করছি। প্রসঙ্গত পাটশিল্পকে পুনরুজ্জীবিত ও আধুনিকায়নের উদ্যোগ নিয়েছে বর্তমান সরকার। পণ্যে পাটজাত মোড়কের বাধ্যতামূলক ব্যবহার আইন-২০১০ এর বাস্তবায়নও করা হয়েছে। পাটকে কৃষিপণ্য হিসেবে ঘোষণা করায় এখন থেকে অন্যান্য কৃষিপণ্যে যে ধরনের সরকারী ভর্তুকির সুযোগ রয়েছে তা পাটকেও দেয়া হবে বলে জানিয়েছে সরকার।
×