ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

রিওতে জামাই আদরে কেবল বোল্ট ও ফেলপস

প্রকাশিত: ০৬:৪০, ৬ আগস্ট ২০১৬

রিওতে জামাই আদরে কেবল বোল্ট ও ফেলপস

বিশ্বের ২০৬ দেশের ক্রীড়াবিদরা রিও পৌঁছে ইতোমধ্যে থিতু হয়ে গেছেন অনুশীলনে। এমনকি ১৭তলা বিশিষ্ট অলিম্পিক ভিলেজেও। ভিলেজে এ্যাথলেটদের নিজস্ব ঘর বলতে কিছু নেই। বিশাল সুসসজ্জিত একেক রুমে তিন চারজন করে থাকছেন। কিন্তু তারপরও এখানে জামাই আদরে কেবল দু’জন। একজন বিশ্বের দ্রুততম মানব। আর অন্যজন জলের রাজপুত্র। যারা খেলাধুলার ন্যূনতম খোঁজ খবর রাখেন তারা হয় তো জানেন কে এই দুই ক্রীড়াবিদ। হ্যাঁ, একজন জ্যামাইকার উসাইন বোল্ট, অন্যজন যুক্তরাষ্ট্রের মাইকেল ফেলপস। তাদের জন্যই কেবল রাখা হয়েছে আলাদা রুম। বাকি সবাই গাদাগাদি, তবে বিশাল ভিলেজের প্রতিটি কক্ষ বেশ বড়। এখানে দশ জন থাকলেও সবার বেডগুলোর মধ্যে অনেক দূরত্ব থাকে। সেখানে তিন-চারজনের একত্রে থাকা কোন সমস্যা নয়। ওয়াশরুমসহ সবকিছুই পরিকল্পিতভাবে সাজানো গোছানো। সঙ্গত কারণে এ নিয়ে বিশ্বের কোন ক্রীড়াবিদের অভিযোগ নেই। প্রায় ১১ হাজার এ্যাথলেটের মধ্যে বেশিরভাগই পুরনো, পেশাদার। অলিম্পিক খেলার কম বেশি অভিজ্ঞতা তাদের মধ্যে রয়েছ্।ে এটাই নিয়ম। ফলে থাকা নিয়ে কারও কোন অভিযোগ নেই। পুষ্টিকর খাবার থেকে শুরু করে অভাব নেই কোন কিছুর। বিশাল জায়গা জুড়ে নির্মিত ভিলেজে রয়েছে বিনোদন ব্যবস্থাও। বাগান আর বাড়িগুলোর আশপাশে পরিচ্ছন্ন কর্মীরা টের পাচ্ছেন খেলতে এসে ক্রীড়াবিদরা এখানে কি করছেন, তাদের আবাসনস্থলে। এটা অবশ্য ইউরোপ, আমেরিকা, আফ্রিকানদেরই কাজ। তবে গ্যারান্টি দিয়ে বলা মুশকিল ‘কে সাধু আর কে শয়তান’। ভিলেজ মানে, সেক্স ফ্রি-ভিন্ন এক জগত। যা রাতের আধারে মধুচন্দ্রিমায় রূপ নেয়। পশ্চিমাদের জন্য যদিও এটা কোন বিষয়ই নয়। কিন্তু তারপরও একটা ‘কোড অব কন্ডাক্ট’ থাকে। যেমন সময় মতো খেতে আসা, অনুশীলন, নির্ধারিত সময়ে ঘুম। কিন্তু কে শোনে কার কথা। প্রত্যেকটা দলের এখানে যিনি আইনের রক্ষক, তিনিই যদি হয়ে ওঠেন ভক্ষক তাহলে তো বলার কিছু থাকে। ‘বেসিক-৩১, নামের যে ১৭ তলা ভিলেজ ওখানেই ইউরোপ, আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়ানদের ঘাঁটি। একটু এলিট এরিয়া। আর এখানেই অপকর্মের আখড়াটা সবচেয়ে বড়। প্রতিদিন সকালে নাকি ট্রলি ভর্তি বিশেষ কিছু ওখান থেকে সরাতে হয় পরিচ্ছন্নকর্মীদের। যা হোক, মূল প্রসঙ্গে ফেরাই শ্রেয়। ভিলেজে বিশেষ সম্মান দেয়া হয়েছে উসাইন বোল্ট অর মাইকেল ফেলপসকে। সাজানো বাগানের পাশে আলাদা গোছালো পরিপাটি কক্ষ বরাদ্দ কেবল এই দুই মহাতারকার জন্য। আর হবেই বা না কেন, গেমসের মূল আকর্ষণই তো এ দু’জন। বেজিংয়ের পর লন্ডন অলিম্পিকে ঝড় তোলা বোল্ট রিওতে তার স্বপ্ন পূরণ করতে চান ট্রিপল-ট্রিপল’ জয় করে। টানা দুই অলিম্পিকে ১০০ ও ২০০ মিটার স্প্রিন্টে স্বর্ণ। পাশাপাশি ৪ী১০০ মিটার রিলেতেও ইতিহাস গড়া একই সাফল্য। রিও অলিম্পিকেও এই তিনটিতে স্বর্ণপদক জিততে কেবল মরিয়া নয়। দারুণ আত্মবিশ্বাসী জ্যামাইকান ‘গতি দানব’। যদিও রিওতে অংশগ্রহণ নিয়ে দারুণ একটা শঙ্কা দেখা দিয়েছিল। ইনজুরিতে ‘বিদ্যুত বোল্ট’ নিভে যাওয়ার উপক্রম হয়েছিল। কিন্তু ভাগ্যবান বোল্ট। দুর্দান্ত সাহস, অটুট মনোবল নিয়ে ফিরে এসেছেন ট্র্যাক এ্যান্ড ফিল্ডে। ইনজুরিমুক্ত হয়ে বোল্টের ফেরায় আকর্ষণ জিইয়ে থাকল এ্যাথলেটিক্সে। অনেক সংগ্রামের পর ইনজুরি কাটিয়ে নিজের স্বপ্ন যাত্রার পথটা কতটুকু মসৃণ তা যাচাই করে নেন কয়েক সপ্তাহ আগে অনেকটা অলিম্পিকের ট্রায়াল হিসেবে আয়োজিত লন্ডন ডায়মন্ড লীগ আসরে। সুস্থ হওয়ার পরপরই এই আসর নিজেকে যাচাই করার মোক্ষম সুযোগ হিসেবে সামনে এসে দাঁড়ায় বোল্টের। আর সেটাকে দারুণভাবে কাজে লাগান তিনি ২০০ মিটার স্প্রিন্টে সেরা প্রমাণ করে। জিতেছিলেন মাত্র ১৯.৮৯ সেকেন্ড সময় নিয়ে। এরপরই সবাই আরেকবার বিস্ময়ে অভিভূত হয়ে যান। ইনজুরি বোল্টের জন্য কোন বিষয় নয়, মনের জোর এবং জেতার বাসনায় তিনি পুরোপুরি ফিট হয়ে গেছেন। লন্ডনের সাফল্যের পর এখন তাই প্রত্যাশার পারদটা আকাশচুম্বি বোল্টের। রিও পৌঁছার পর সাংবাদিকদের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে বোল্ট বললেন, ‘ট্রিপল জয়ের লক্ষ্য পূরণে আমি পুরোপুরিই প্রস্তুত। নিজেকে ভাগ্যবান মনে করছি ইনজুরি থেকে মুক্তির পর। আর মনের জোরটা আরও বাড়িয়ে দিয়েছে গেমসের আগে লন্ডনের সাফল্য। আমি এখন ফুরফুরে মেজাজে। ট্র্যাকে নামার প্রহর গুনছি।’ যদিও একটা খটকা রেখে গেলেন বোল্ট, যদি ১০০ ও ২০০ মিটারের সঙ্গে রিলেতেও খেলতে পারি তাহলে আমাকে কেউ ঠেকাতে পারবে না। তার কথায় মনে হচ্ছে কিছুটা সাবধানতায় রয়েছেন বোল্ট। ১০০ মিটারটাই আগে। এরপর একই ইভেন্টের রিলে। প্রথম ধাপটা শতভাগ সুস্থ থেকে স্বর্ণপদক গলায় ঝুলাতে পারলেই সম্ভবত রিলেতে দৌড়াবেন। আর যদি হাল্কা-পাতলা, অর্থাৎ ন্যূনতম সমস্যায় ভোগেন তাহলে হয় তো অংশগ্রহণ নাও করতে পারেন রিলেতে। কারণ পরেরটাই ২০০ মিটার স্প্রিন্ট। রিলের চেয়ে এই অর্জনটা বেশি গুরুত্বপূর্ণ। এবার আসা যাক ফেলপসের বিষয়ে, তার অলিম্পিক ক্যারিয়ারের দিতে ফিরে তাকালে একটাই কথা বলতে হয় ‘সবচেয়ে সুসজ্জিত।’ ২২ পদক, এমন যার ক্যারিয়ার তাকে নিয়ে নতুন করে কি আর বলার থাকে। তবে তিনি এখন আরও পরিণত, অনেক পরিণত। অনুশীলন পর্ব শেষে ক্ষনিক সময়ের সাক্ষাতে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে ৩১ বছর বয়সী ফেলপস বললেন, আমি এই মুহূর্তে যা করছি, তা শতভাগই উপভোগ করছি। আসলে আমি নিজের ক্যারিয়ার যেভাবে শেষ করতে চেয়েছিলাম সেভাবেই পারব। বিশ্বাস করি ক্যারিয়ারের এই পর্যন্ত মোড়ে যেটুকু অবশিষ্ট আছে, তা কুড়িয়ে নিয়ে জড়ো করেই ছাড়ব। রিও অলিম্পিকের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের রাতে আমেরিকার পতাকা বাহক তিনি। এটা তার কাছে ক তখানি আনন্দের? ফেলপস বললেন, ভাবিনি এমন সম্মান পাব। খবর শুনেই খুব খুশি হয়েছিলাম। আবেগতাড়িত হয়ে পড়েছিলাম। এখন বলতে পারি অন্যবারের চেয়ে এবার আরও ফুরফুরে মেজাজে আছি।
×