ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

৩৭ নম্বর পিলারের রিভিউ ডিজাইন চূড়ান্ত

পদ্মা সেতুর ভায়াডাক্টের মূল পাইল স্থাপন সোমবার শুরু

প্রকাশিত: ০৫:৪৯, ৬ আগস্ট ২০১৬

পদ্মা সেতুর ভায়াডাক্টের মূল পাইল স্থাপন সোমবার শুরু

মীর নাসিরউদ্দিন উজ্জ্বল, মাওয়া থেকে ফিরে ॥ পদ্মা সেতুর ভায়াডাক্টের মূল পাইল স্থাপন শুরু হচ্ছে আর মাত্র একদিন বাদেই। সোমবার এই কাজ শুরুর মধ্য দিয়ে সেতুটির কর্মযজ্ঞ আরেক ধাপ এগিয়ে যাচ্ছে। জাজিরা প্রান্তের ২২ নম্বর ভায়াডাক্ট পিলারের ১০টি পাইলই স্থাপন শুরু হচ্ছে। এদিকে ৩৭ নম্বর পিলারের রিভিউ ডিজাইন চূড়ান্ত করা হয়েছে। পরামর্শক প্রতিষ্ঠান এই ডিজাইন গত ৩১ জুলাই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের কাছে জমা দিয়েছে। রিভিউ ডিজাইনে পাইলের গভীরতা বৃদ্ধি করা হয়েছে। এই পাইলের দৈর্ঘ্য এখন ১২৮ দশমিক ৫ মিটার। এই পিলারের ৭০ মিটার গভীরতায় তিনটি করে বটমপাইল স্থাপন করা রয়েছে। টপ পাইল স্থাপনের সময়ও বাকি অংশ পূরণ করা হবে। একই সঙ্গে বাকি তিনটি পাইলও স্থাপন করা হবে। বটম এবং টপ মিলেই পাইলের গভীরতা হবে ১২৮ দশমিক ৫ মিটার। প্রাথমিক ডিজাইনে এর গভীরতা ছিল ১২০ মিটার। একইভাবে টেস্ট পাইলের রিপোর্ট পর্যালোচনা করে বিশেষজ্ঞ টিমের নিদের্শনা অনুযায়ী অন্যান্য পিলারেরও গভীরতা বেড়েছে ২/১টি ক্ষেত্রে কমছে। বাকি পিলারগুলোর রিভিউ ডিজাইনের কাজ চলছে এবং পর্যায়ক্রমে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের কাছে পৌঁছানো হবে। এ পর্যন্ত জাজিরা প্রান্তে ১৮টি এবং মাওয়া প্রান্তে ৬টি পাইলের বটম অংশ স্থাপন করা হয়েছে। গত ডিসেম্বরে এই পাইল স্থাপনের কার্যক্রমে প্রথম মাওয়ায় পাইল স্থাপন করা শুরু হয়। তবে বর্ষায় প্রবল স্রোতের বিষয়টি মাথায় রেখেই কম স্রোতের জাজিরা অংশে এই কাজ সরিয়ে আনা হয়। এখন একাধারে জাজিরা অংশে পাইল স্থাপন করা হচ্ছে। এই অংশের ৬টি পিলারে ১৮টি পাইলের বটম অংশ স্থাপন করা হয়েছে। সেখানেই এখন পাইল পরিপূর্ণ করার কাজ চলছে। এগুলো হচ্ছে জাজিরা প্রান্তের ৩৯, ৩৮, ৩৭, ৩৬, ৩৫ ও ৩৪ নম্বর পিলার। নদীতে এই পাইলের সঙ্গে এখন তীরের ভায়াডাক্ট পাইলও একযোগে শুরু হচ্ছে। ভায়াডাক্ট পাইলের গভীরতা হবে ৭৫ মিটার। এই বিশাল গভীরতায় এই পাইল স্থাপনের সব প্রক্রিয়া এখন চূড়ান্ত। এই মূল পাইল স্থাপনের জন্য হ্যামারের প্রয়োজন হচ্ছে না। এগুলো কংক্রিটের পাইল। সাধারণত দেশের অন্যান্য সেতুর ভায়াডাক্টের পাইল ৪০ মিটারের বেশি নয়। কিন্তু মাটির গভীরে বৈচিত্রের কারণে এখানে এত বেশি গভীর করা হয়েছে। সংশ্লিষ্ট প্রকৌশরীরা জানিয়েছেন, ডিজাইন অনুযায়ী পদ্মা সেতুর দু’তীরে ৩৬৫টি ভায়াডাক্টের পিলার স্থাপন করতে হবে। তবে আপাতত ২৮০টি পিলার স্থাপন করা হবে। অতিরিক্ত ৮৫টি পিলার স্থাপন হবে রেললাইন স্থাপনের সঙ্গে। এই ২৮০ পিলারের ১৮৭টিই জাজিরা প্রান্তে। ৯৩টি মাওয়া প্রান্তে। ইতোমধ্যে পরামর্শক প্রতিষ্ঠান জাজিরা প্রান্তে ২৪টি ভায়াডাক্ট পিলারের রিভিউ ডিজাইন চূড়ান্ত করে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের কাছে জমা দিয়েছে। ডিজাইনের পরই এই পাইল স্থাপনের কাজ শুরু হচ্ছে। পর্যায়ক্রমে বাকিগুলোরও রিভিউ ডিজাইন চূড়ান্ত করার প্রক্রিয়া চলছে। এদিকে পদ্মা সেতুর সুপার স্ট্রাকচারবাহী জাহাজটি চাঁদপুরের কাছাকাছি অবস্থান করছে। নদীতে প্রবল স্রোতের কারণে এটি সেখানে বিলম্বে নোঙ্গর করেছে। তবে স্রোতের গতি কিছুটা হ্রাস পেলে ৮ আগস্ট রওনা হওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে। এই জাহাজে চীনে তৈরি হওয়া এক স্প্যান পরিমাণ (১৫০ মিটার) সুপার স্ট্রাকচার রয়েছে। এর আগে চীনের পতাকাবাহী মাদারভেসেল সুমদ্রপথে কুতুবদিয়া চ্যানেলে আসে এই সুপার স্ট্রাকচার। পরে জাহাজে নদীপথে মাওয়ায় আনার প্রক্রিয়া শুরু হয়। বিশাল এই চালানটি কাস্টমস ক্লিয়ারেন্স হয় ৩১ জুলাই। কিন্তু বৈরী আবহাওয়া এবং প্রবল স্রোতের কারণে জাহাজ সুমদ্রেই অবস্থান করে। পরিস্থিতি কিছুটা উন্নতি হলে ১ আগস্ট এটি মাওয়ার পথে যাত্রা শুরু করে। চালনটি এখন চাঁদপুরের কাছাকাছি মেঘনায় রয়েছে। স্ট্রাকচার গ্রহণে এখন প্রস্তত মাওয়া। মাওয়ার কুমারভোগ কনস্ট্রাকশন ইয়ার্ডে তৈরি করে রাখা বিশাল ওয়ার্কশপে তোলা হবে এই চালান। এখানেই এটি ফিটিং করা হবে। সেতুর পিলারের ওপর ১৫০ মিটার দীর্ঘ এই সুপার স্ট্রাকচারে রয়েছে গার্ডারসহ দ্বিতল স্টিলের সেতু। যেটির নিচ দিয়ে চলবে ট্রেন এবং উপরে অন্য যানবাহন। পুরোটাই স্টিলের। এক পিলার থেকে অন্য পিলারের দূরত্ব ১৫০ মিটার। এই দুই পিলারের মাঝেই বসিয়ে দেয়া হবে সুপার স্ট্রাকচারটি। ওয়ার্কশপ থেকে ক্রেনে করে জাহাজে সরাসরি নেয়া হবে পিলারের কাছে। পদ্মা সেতুতে মোট ৪১ টি স্প্যান (অংশ) থাকছে, যার প্রতিটির দৈর্ঘ্য ১৫০ মিটার। ¯প্যান বড় হওয়ার কারণে রিএনফোর্সড কংক্রিট দিয়ে তৈরি না করে ওজন কমাতে সেতুটির মূল অবকাঠামো তৈরি করা হচ্ছে স্টিল দিয়ে। তীব্র বায়ুপ্রবাহ ও ভূমিক¤পজনিত ধাক্কা মোকাবেলায় বেছে নেয়া হয়েছে ওয়ারেন ট্রাস ফর্ম। পুরো সেতুটির ভার বহন করার জন্য থাকবে ৪২টি পিলার। যার প্রতিটির নিচে থাকবে ৬টি পাইল। তীব্র স্রোতের সঙ্গে পাল্লা দিয়েই দেশের সর্ববৃহৎ এবং বিশ্বের আলোচিত এই পদ্মা সেতুর কাজ এগিয়ে চলেছে।
×