ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

বন্যার পর নদী ভাঙ্গন সমস্যা প্রকট, জমি ঘরবাড়ি বিলীন হচ্ছে

প্রকাশিত: ০৫:৪৪, ৬ আগস্ট ২০১৬

বন্যার পর নদী ভাঙ্গন সমস্যা প্রকট, জমি ঘরবাড়ি বিলীন হচ্ছে

স্টাফ রিপোর্টার ॥ বন্যার পর এবার নদী ভাঙ্গন সমস্যা প্রকট আকার ধারণ করেছে। দেশে অধিকাংশ স্থানের পানি নেমে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বাড়ছে নদী ভাঙ্গন। ফলে ঘরবাড়ি ফসলি জমি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাচ্ছে। আশ্রয়হীন হয়ে পড়ছে সাধারণ মানুষ। পানি উন্নয়ন বোর্ড জানিয়েছে ঢাকার চার নদীসহ প্রায় সব নদীর পানি কমতে শুরু করছে। ব্রহ্মপুত্র ও যমুনা নদীর পানিও বিপদসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। তবে পানি নেমে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে শুরু হয়েছে নদী ভাঙ্গন। নদী ভাঙ্গন মানুষের দুর্ভোগ আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের সর্বশেষ জরিপ অনুযায়ী উত্তরাঞ্চল, মধ্যাঞ্চলসহ ঢাকার চারপাশের নদীর পানি কমছে। আগামীতে এটি অব্যাহত থাকবে। তবে নতুন করে এখন পর্যন্ত বন্যার কোন সম্ভাবনা নেই। তারা জানিয়েছে পদ্মার পানি দ্রুত নেমে যাচ্ছে। এ কারণে নতুন করে বন্যার সম্ভাবনাও নেই। তবে পানি কমতে শুরু করায় বন্যা পরিস্থিতির দ্রুত উন্নতি হলেও নদী ভাঙ্গনসহ নানা সমস্যায় রয়েছে পদ্মা অববাহিকার কয়েকটি জেলার মানুষের দুর্ভোগ আরও বাড়িয়েছে দিয়েছে। ফরিদপুর, মুন্সীগঞ্জ ও শরীয়তপুর জেলার বিভিন্ন স্থানে এখন চলছে নদী ভাঙ্গন। পদ্ম নদীর পানি কমার সঙ্গে সঙ্গে ফরিদপুরে অন্যতম প্রধান সমস্যা হয়ে দেখা দিয়েছে নদী ভাঙ্গন। তাড়াইল সড়কের একশ’ মিটার অংশ, ৮১ একর ফসলি জমি, বসতবাড়ি ও হাট বাজার, দোকানপাট আড়িয়াল খাঁ নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। পদ্মা ও মধুমতির বিস্তীর্ণ এলাকাও ভাঙনের মুখে পড়েছে শুক্রবার পদ্মার পানি ফরিদপুর অংশে কমলেও ভাঙ্গনের পরিমাণ বাড়ছে বলে পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা গেছে। মুন্সীগঞ্জের চরাঞ্চলে বন্যার পানি কমতে শুরু করলেও তীব্র স্রোতের কারণে জেলার বেশ কয়েকটি পয়েন্টে নদী ভাঙ্গনের পরিমাণ বেড়েছে। শুক্রবার মুন্সীগঞ্জের ভাগ্যকূল ও মাওয়ায় পদ্মার পানি কমলে এসব এলাকায় ভাঙ্গন সমস্যা দেখা দিয়েছে। একই কারণে রাজশাহীর পদ্মার চরাঞ্চলেও নদীর ভাঙ্গনের মতো প্রকট সমস্যা দেখা দিয়েছে। পদ্মার পানি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে এসব এলাকায় ভাঙ্গন শুরু হয়। এখন পর্যন্ত ভাঙ্গন অব্যাহত রয়েছে। নদী ভাঙ্গনের শিকার বহু মানুষ অন্যত্র আশ্রয় নিয়েছে। ভাঙ্গনের কবলে পড়ে নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে জেলার চকরাজাপুরে বিভিন্ন অবকাঠামো, হাটবাজার ঘরবাড়িসহ কয়েকহাজার আবাদী ও অনাবাদি জমি, ক্ষেত্রে ফসল ও গাছপালা। ফলে মানবেতর জীবনযাপন করছেন এলাকার কয়েক হাজার মানুষ। সংশ্লিষ্ট প্রতিনিধিরা জানিয়েছে বন্যা কমার কারণে অনেকে বাড়িঘরে ফিরলেও ভাঙ্গনের শিকার হওয়া মানুষের দুর্ভোগ অনেক বাড়িয়ে দিয়েছে। মাথা গোঁজার ঠাঁই হারিয়ে এখন তারা দিশেহারা হয়ে পড়েছে। টাঙ্গাইলের বাসাইল উপজেলার ঝিনাই নদীর তীরবর্তী এলাকায় বন্যা শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে নদী ভাঙ্গন সমস্যাও প্রকট হয়েছে। ভাঙ্গনের ফলে সংশ্লিষ্ট এলাকায় বাড়িঘরসহ বিভিন্ন অবকাঠামো হুমকির মুখে পড়েছে। ভাঙ্গনের কারণে মানুষ ভিটেমাটি হারিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছে। এছাড়া এলাকায় খেলার মাঠ, হাটবাজার নদী তীরবর্তী এলাকায় ফসলের জমিও ভাঙ্গনের কবলে পড়েছে। বন্যার পানি ও প্রবল জোয়ারের কারণে দক্ষিণের জেলাগুলোতেও শুরু হয়েছে নদী ভাঙ্গন। নদ-নদীর উপচে পড়া পানির প্রবল স্রোতে তলিয়ে গেছে সড়ক, ঘর-বাড়ি, ফসলি জমিসহ বিভিন্ন স্থাপনা। ফলে কীর্তনখোলা, আড়িয়াল খাঁ, মেঘনা, কালাবদর, কারখানা, সন্ধ্যা, সুগন্ধাসহ দক্ষিণের বেশকিছু নদীর তীরবর্তী গ্রামের মানুষজন ভাঙ্গন আতঙ্কে দিন পার করছেন বলে জানা গেছে। ভাঙ্গনকবলিত এলাকার বাসিন্দারা প্রতিনিয়ত সরিয়ে নিচ্ছেন একের পর এক বসতঘর, কেটে নিয়ে যাচ্ছেন গাছপালা। এভাবে নদী ভাঙ্গনের কারণে বিভিন্ন জেলার সড়ক অবকাঠামোও নষ্ট হয়ে যোগাযোগ ব্যবস্থা এখন হুমকির মুখে পড়েছে। জানা গেছে, নতুন এসব সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থার সংস্কার না করা হলে চলাচল ঝুঁকিপুর্ণ হয়ে দাঁড়াবে। আবার বন্যায় নদী ভাঙ্গনের পাশাপাশি অনেকস্থানেই ধানের বীজতলা নষ্ট হয়ে গেছে। শুক্রবার পানি উন্নয়ন বোর্ডের পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী যমুনা নদী সারিয়াকান্দিতে ৪ সেন্টিমিটার, আত্রাই নদী বাঘাবাড়িতে ৫১ সেন্টিমিটার, ধলেশ্বরী নদী এলাসিনে ৯১ সেন্টিমিটার, শীতলক্ষা নদী নারায়গঞ্জে ৩২ সেন্টিমিটার. পদ্মা নদী গোয়ালন্দে ৫০, ভাগ্যকুলে ৩২ সেন্টিমিটার, সুরেশ্বরে ৬০ সেন্টিমিটার, তিতাস নদী বি-বাড়িয়ায় ৩৭ সেন্টিমিটার, মেঘনা নদী চাঁদপুরে ৭ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এদিকে পানি উন্নয়ন বোর্ডের বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রে সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী চার নদীর পানি স্থিতিশীল অবস্থায় রয়েছে। তুরাগ ও বালু নদী এতদিনে বিপদ সীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হলেও শুক্রবার থেকে তা বিপদ সীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। পদ্মা নদী সংলগ্ন রাজবাড়ি, মানিকগঞ্জ, মুন্সিগঞ্জ ও শরীয়তপুর জেলাসমূহের নিম্নাঞ্চলে বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি শুরু হয়েছে। যা আগামী ৪৮ ঘণ্টা পর্যন্ত অব্যাহত থাকতে পারে। জামালপুর, সিরাজগঞ্জ ও বগুড়ায় বন্যা পরিস্থিতির আরও উন্নতি হচ্ছে বলে জানানো হয়েছে।
×