ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

সুপ্রীমকোর্টের আপীল বিভাগের দেয়া পূর্ণাঙ্গ রায় লেখা শেষ

ওয়ারেন্ট অব প্রিসিডেন্স নিয়ে অস্বস্তির অবসান শীঘ্রই

প্রকাশিত: ০৫:৪১, ৬ আগস্ট ২০১৬

ওয়ারেন্ট অব প্রিসিডেন্স নিয়ে অস্বস্তির অবসান শীঘ্রই

আরাফাত মুন্না ॥ এক দশক ধরে রাষ্ট্রীয় মর্যাদাক্রম (ওয়ারেন্ট অব প্রিসিডেন্স) নিয়ে নির্বাহী বিভাগ ও বিচার বিভাগের মধ্যে অস্বস্তির অবসান হতে যাচ্ছে শীঘ্রই। ওয়ারেন্ট অব প্রিসিডেন্স নিয়ে সুপ্রীমকোর্টের আপীল বিভাগের দেয়া পূর্ণাঙ্গ রায় লেখা শেষ হয়েছে। এই রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি প্রকাশ হলেই ওয়ারেন্ট অব প্রিসিডেন্স সংকটের অবসান হবে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা। সুপ্রীমকোর্ট সূত্রে জানা গেছে, ওয়ারেন্ট অব প্রিসিডেন্স সংক্রান্ত আপীল বিভাগের ৬০ পৃষ্ঠার মূল রায়টি লিখেছেন প্রধান বিচারপতি। তবে ওই রায়ের প্রথম দিকে সাবেক প্রধান বিচারপতি মোঃ মোজাম্মেল হোসেনের লেখা কিছু অংশও রাখা হয়েছে। পূর্ণাঙ্গ রায়টি তারই লেখার কথা ছিল। কিন্তু অবসরে যাওয়ার পর কোন বিচারপতি পূর্ণাঙ্গ রায়ে স্বাক্ষর করতে পারবেন না, বর্তমান প্রধান বিচারপতির এ ধরনের নির্দেশনা আসার পর গত মে মাসে ওই মামলার নথি ফেরত নেয়া হয়। বর্তমানে পূর্ণাঙ্গ রায়টিতে কিছু সংযোজন-বিয়োজন করা হয়েছে। এটি চূড়ান্ত হওয়ার পর বেঞ্চের অপর বিচারপতি মোঃ আবদুল ওয়াহহাব মিঞা ও বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীর কাছে স্বাক্ষরের জন্য পাঠানো হবে। তবে রায় প্রদানকারী বেঞ্চের অপর দুই বিচারপতি অবসরে যাওয়ায় তাদের কাছে এ রায় পাঠাতে হবে না। সূত্র জানায়, অবসরে যাওয়া প্রধান বিচারপতি মোঃ মোজাম্মেল হোসেন ও বিচারপতি এএইচএম শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিকের পক্ষে সুপ্রীমকোর্টের অন্য বিচারপতিদের স্বাক্ষর করার সম্ভাবনা রয়েছে। বর্তমানে পদমর্যাদাক্রম অনুসারে স্পীকারের অবস্থান তিন এবং প্রধান বিচারপতির অবস্থান রয়েছে চার নম্বরে। এ ছাড়া তিন বাহিনীর প্রধানরা মন্ত্রিপরিষদ ও মুখ্য সচিবদের সঙ্গে ১২ নম্বর অবস্থানে রয়েছেন। অন্যদিকে জেলা জজসহ এ মর্যাদার কর্মকর্তাদের স্থান রয়েছে ২৪ নম্বরে। জানা গেছে, পদমর্যাদাক্রম নিয়ে আপীল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ রায়ে প্রধান বিচারপতি, আপীল বিভাগের বিচারপতি, প্রতিমন্ত্রী, সচিব, সাংবিধানিক পদ অর্থাৎ এ্যাটর্নি জেনারেল, ন্যায়পাল, নির্বাচন কমিশনার ও সংসদ সদস্য এবং জেলা জজদের পদমর্যাদাক্রম নতুন করে নির্ধারণ করা হয়েছে। পূর্ণাঙ্গ রায়ে এ বিষয়গুলো বিস্তারিত উল্লেখ করে এর প্রেক্ষাপট ও যৌক্তিকতা তুলে ধরা হয়েছে। এ বিষয়ে সুপ্রীমকোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল কার্যালয়ের এক দায়িত্বশীল কর্মকর্তা জানান, পূর্ণাঙ্গ রায়ের কপিটি পাওয়ার পর তা সুপ্রীমকোর্টের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হবে। এছাড়া সংশ্লিষ্ট আইনজীবীদেরও সত্যায়িত অনুলিপি সরবরাহ করা হবে। তিনি বলেন, এই রায়টি প্রকাশ হলেই ওয়ারেন্ট অব প্রিসিডেন্স নিয়ে এতদিন ধরে যে সংকট চলে আসছিল, তার সমাধান হবে। ফিরে দেখা ॥ এক দশক ধরে নির্বাহী বিভাগ ও বিচার বিভাগের মধ্যে পদমর্যাদাক্রম নিয়ে আইনী লড়াই চলছে। ২০০৬ সালে বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিস এ্যাসোসিয়েশনের পক্ষে তৎকালীন মহাসচিব ও জেলা জজ আতাউর রহমান রাষ্ট্রীয় পদমর্যাদাক্রম ১৯৮৬ চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে একটি রিট পিটিশন দায়ের করেন। রিটে বলা হয়, সংবিধান অনুযায়ী রাষ্ট্রের শাসন বিভাগ, আইন বিভাগ ও বিচার বিভাগ নিয়ে তিনটি অঙ্গ রয়েছে। শাসন বিভাগে পদমর্যাদাক্রমে প্রধানমন্ত্রী ও তার মন্ত্রিপরিষদসহ সংশ্লিষ্টরা থাকবেন। এ ছাড়া আইন বিভাগে থাকবেন সংসদের স্পীকার ও সংসদ সদস্যরা। অন্যদিকে বিচার বিভাগকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছে। অর্থাৎ এক ভাগে থাকবেন উচ্চ আদালতের বিচারপতি এবং অপর ভাগে অধস্তন আদালতের বিচারকগণ। ১৯৮৬ সালে প্রণীত ওয়ারেন্ট অব প্রিসিডেন্সে সংবিধানে বর্ণিত এই বিধিমালা অনুসরণ করা হয়নি। তাই ১৯৮৬ সালে প্রণীত ওয়ারেন্ট অব প্রিসিডেন্স বাতিলের জন্যও রিটে নির্দেশনা চাওয়া হয়। ওই রিটে ২০০৬ সালের ১০ ডিসেম্বর সরকারের প্রতি রুল জারি করেন হাইকোর্ট। রুলে কেন ওয়ারেন্ট অব প্রিসিডেন্স ১৯৮৬ বাতিল করা হবে না, তা জানতে চাওয়া হয়। ২০১০ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি হাইকোর্ট ওই রুলের চূড়ান্ত শুনানি নিয়ে ওয়ারেন্ট অব প্রিসিডেন্স অবৈধ ও বেআইনী ঘোষণা করে রায় দেন। পরে ওই রায়ের বিরুদ্ধে একই বছরের ৭ ফেব্রুয়ারি আপীল করে রাষ্ট্রপক্ষ। পরদিন আপীল বিভাগ হাইকোর্টের রায়ের কার্যকারিতা স্থগিত করেন। দীর্ঘদিন পর শুনানি শেষে গত বছরের ৬ জানুয়ারি আপীল বিভাগ পর্যবেক্ষণসহ রাষ্ট্রপক্ষের আবেদন নিষ্পত্তি করে সংক্ষিপ্ত রায় দেন। আদালতে রিট আবেদনকারীর পক্ষে শুনানি করেন ব্যারিস্টার রোকনউদ্দিন মাহমুদ ও আইনজীবী আসাদুজ্জামান। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন এ্যাডভোকেট আব্দুর রব চৌধুরী।
×