ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

বিএনপি জামায়াতের সঙ্গ ছাড়ছে না যে কারণে-

প্রকাশিত: ০৪:১৯, ৬ আগস্ট ২০১৬

বিএনপি জামায়াতের সঙ্গ ছাড়ছে না যে কারণে-

হাসান নাসির ॥ দেশের রাজনীতিতে ভোটের সমীকরণ ও কৌশল, পাল্টা কৌশলের খেলায় সুবিধা পাচ্ছে স্বাধীনতাবিরোধী জামায়াতে ইসলামী। বিএনপি অভ্যন্তরে দলটির কর্মকা- ও অবস্থান নিয়ে বিভক্তি ও চাপ থাকলেও এখনও তাদের বন্ধন অটুট। এর পেছনে আন্তর্জাতিক শক্তির সমর্থনও কাজ করছে বলে অভিযোগ রয়েছে। যার ফলে জামায়াতের রাজনীতি নিষিদ্ধ করা না করা নিয়ে সরকারের নীতি নির্ধারক মহলে দ্বিধাদ্বন্দ্ব রয়েছে। মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষের সকল শক্তি ছাড়াও সচেতন মহল একযোগে চায় জামায়াতের রাজনীতি এদেশে চিরতরে বন্ধ করা হোক। ক্ষমতাসীনদের অনেকেই মুখ দিয়েও জামায়াত নিষিদ্ধের আহ্বান এসেছে। এমনকি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের রায়ে এ দলটিকে যুদ্ধাপরাধী হিসেবে চিহ্নিত করে অবিলম্বে নিষিদ্ধ করার দিক নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে। কিন্তু এর পরও জামায়াত এখনও টিকে আছে। দেশব্যাপী সন্ত্রাস-নাশকতার সঙ্গে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে তৎপর রয়েছে। ‘জঙ্গী ও জঙ্গীপনার’ গোপন অপতৎপরতা নিয়ে শুরু থেকে সবচেয়ে বেশি সোচ্চার ভূমিকা পালন করে দৈনিক জনকণ্ঠ। যে কারণে জঙ্গীসহ মৌলবাদী সকল গোষ্ঠীর টার্গেট হয়ে যায় জনকণ্ঠ। জনকণ্ঠ ভবনে ব্রিফকেস অভ্যন্তরে টাইমবোমা রেখে যাওয়াসহ বিভিন্ন সময়ে হুমকি ধমকি, বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার ও ১/১১ সরকার আমলে পত্রিকাটির ওপর নানাভাবে চাপ সৃষ্টি এমনকি সম্পাদককে গ্রেফতার করে নিয়ে যাওয়ার ঘটনাবলীর নেপথ্যে ছিল এ অপশক্তির বিরুদ্ধে অনড় অবস্থানে থাকা। মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তির এই দৈনিকে যখন জঙ্গীবাদ নিয়ে একের পর এক প্রতিবেদন হতে থাকে তখন সরকার, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীসহ সংশ্লিষ্টরা কল্পনাই করতে পারেননি যে, তলে তলে দেশে সংগঠিত হতে যাচ্ছে দেশবিরোধী এই অপশক্তি। বিএনপি-জামায়াত সরকারের তৎকালীন শিল্পমন্ত্রী জামায়াতে ইসলামীর আমির মতিউর রহমান নিজামী তখন বলেছিলেন, ‘জঙ্গী-বাংলাভাই’ এসব মিডিয়ার সৃষ্টি। এ যেন ‘ঠাকুর ঘরে কে রে, আমি কলা খাই না’ প্রবাদটির মতোই। এরপর ২০০৫ সালের ১৭ আগস্ট দেশব্যাপী সিরিজবোমা হামলার মধ্য দিয়ে প্রমাণ হয় যে, জঙ্গী মিডিয়াসৃষ্ট কোন ফ্রাঙ্কেনস্টাইন নয় বরং এই সমাজে তারা বেড়ে উঠেছে তৎকালীন সরকারের আশ্রয়-প্রশ্রয়ে। বিচারালয়ে গ্রেনেড হামলা, বিচারক হত্যা, দু’জন এমপি হত্যা এবং সর্বশেষ ধরা পড়ে শায়খ আবদুর রহমান ও বাংলাভাই ফাঁসির দড়িতে ঝুলে প্রমাণ করলেন, দেশে জঙ্গী ছিল এবং তাদের সহিংস তৎপরতাও ছিল। গ্রেফতার হওয়া জঙ্গীদের কাছ থেকে পাওয়া তথ্যে ঘুরেফিরে আসছে জামায়াতে ইসলামীর নাম। এ দলের শীর্ষ নেতারা ইতোমধ্যেই দ-িত হয়েছেন মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে। এখন ঝুলছে দলটির ভাগ্যও। বিএনপি এই জামায়াতকে সঙ্গে নিয়েই গড়তে চায় জাতীয় ঐক্য। অপরদিকে, সরকার চায়, জামায়াতের সঙ্গ ত্যাগ করুক বিএনপি । প্রকৃতপক্ষে দলটিকে নিষিদ্ধ কিংবা ২০ দলীয় জোট থেকে বাদ দেয়ার প্রশ্নে চলছে ভোটের সমীকরণ। কাদের সিদ্দিকী বেগম জিয়ার সঙ্গে দেখা করে বলে দিয়েছেন বিএনপি জামায়াতের সঙ্গ ত্যাগ করলে তাদের সঙ্গে তিনি ও তার দল নেই। দেশে প্রায় দেড় দশক আগের সেই শিশুজঙ্গী এখন অনেকটাই পরিণত। তারা আন্তর্জাতিক যোগসূত্র স্থাপনের চেষ্টায় রত। গুলশানের হলি আর্টিজানে ১৭ বিদেশীসহ ২২ জনকে হত্যা, শোলাকিয়ার ঈদ জামাতে হামলা এবং এরপর রাজধানীর কল্যাণপুরে এক বাড়িতে পুলিশী অপারেশনে ৯ জঙ্গী নিহত হওয়ার পর নাগরিকদের মনে এখন আর কোনই সন্দেহ নেই যে, এই গোষ্ঠীটি বড় ধরনের আপদ হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। তবে বোদ্ধা মহল মনে করছে, যত আস্ফালনই থাকুক না কেন এদেশে জঙ্গীবাদের কোনই ভবিষ্যত নেই। গ্রেফতার হওয়া জঙ্গীদের সাম্প্রতিক ঠিকুজি খুঁজতে গিয়ে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ সহযোগী এমনকি মাস্টারমাইন্ড হিসেবে উঠে আসে জামায়াতে ইসলামীর নাম। গোয়েন্দা সূত্রগুলো বলছে, ধরাপড়া অনেকেরই রয়েছে জামায়াতী যোগসূত্র। কেউবা সাবেক জামায়াত-শিবির, আবার কেউবা এখনও আদর্শিকভাবে ওই রাজনীতির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট। লক্ষণীয়, দেশজুড়ে সংঘটিত সাম্প্রতিক জঙ্গীবাদী নৃশংসতার নিন্দা বিএনপি এমনকি ধর্মীয় বিভিন্ন দলের পক্ষ থেকে করা হলেও চুপ জামায়াতে ইসলামী। অনেকেরই ধারণা, এতেও প্রমাণ হয় ধর্মের নামে হত্যযজ্ঞে তারা মোটেও অসন্তুষ্ট নয়। সেই জামায়াত এখনও বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের শরিক দল। বিএনপি জঙ্গীবাদবিরোধী জাতীয় ঐক্য গড়তে চায় জামায়াতকে সঙ্গে নিয়েই। জামায়াতে ইসলামীকে নিয়ে দেশের রাজনীতিতে চলছে এক ধরনের ইঁদুর-বিড়াল খেলা। সরকার চাইছে বিএনপি জামায়াতের সঙ্গ ত্যাগ করুক, দলটিকে জোট থেকে বের করে দিক। অপরদিকে, বিএনপি চাইছে সরকারই জামায়াতকে নিষিদ্ধ করুক। আর বড় দু’দলের এই খেলায় জামায়াতের রাজনীতি চলছে অনেকটাই নির্বিঘেœ। মূলত এর সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে ভোটের সমীকরণ।
×