ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

রাজনীতির মাঠে নিষ্ক্রিয় জামায়াত, সক্রিয় জঙ্গীপনায়

প্রকাশিত: ০৪:১৯, ৬ আগস্ট ২০১৬

রাজনীতির মাঠে নিষ্ক্রিয় জামায়াত, সক্রিয় জঙ্গীপনায়

মোয়াজ্জেমুল হক, চট্টগ্রাম অফিস ॥ রাজনীতির মাঠে সক্রিয় না থাকলেও জামায়াতসহ মৌলবাদী গোষ্ঠীর জঙ্গী তৎপরতা থেমে নেই। দেশে সাম্প্রতিক সময়ে জঙ্গীপনা ও সন্ত্রাসী তৎপরতায় স্বাধীনতাবিরোধী অপশক্তি জামায়াত যে ওতপ্রোতভাবে জড়িত তা ইতোমধ্যে গোয়েন্দা ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বিভিন্ন সংস্থার তদন্তে বেরিয়ে এসেছে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল শুক্রবার কক্সবাজারে নব নির্মিত আঞ্চলিক পাসপোর্ট ভবনের উদ্বোধনকালেও বিষয়টি পরিষ্কার করেছেন। সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, সরকার শুরু থেকে বলে আসছে দেশে কোন আইএস নেই। গোয়েন্দা ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীও কোন আইএস জঙ্গীর খোঁজ পায়নি। তবে আইএসের সঙ্গে যোগসূত্র রয়েছে এমন জঙ্গীদের গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়েছে। এসব জঙ্গীর নেপথ্য তথ্য অনুসন্ধানে গোয়েন্দারা আবিষ্কার করেছেন জামায়াতিদের বড় একটি অংশ জঙ্গীপনায় লিপ্ত। মহান মুক্তিযুদ্ধে স্বাধীনতার বিরোধিতাকারী এই জামায়াতের বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগের বিচার কার্যক্রম হাতে নেয়ার পর থেকেই জঙ্গীপনার উপদ্রব শুরু হয়ে যায়। তবে এর আগেই এ অপশক্তিটি নেপথ্যে বিভিন্ন নামে ও ব্যানারে সন্ত্রাসী তৎপরতা শুরু করে। সরকার ইতোমধ্যে বেশ কয়েকটি জঙ্গী সংগঠনকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে। নিষিদ্ধ ঘোষিত এসব সংগঠনের মধ্যে জেএমবি ও আনসার আল ইসলাম (সাবেক আনসারুল্লাহ বাংলা টিম) সক্রিয় রয়েছে বলে খোদ পুলিশ প্রধান প্রকাশ্যে ইঙ্গিত দিয়েছেন। সূত্রমতে, জামায়াত নিজেদের অস্তিত্ব রক্ষার্থে এখন কৌশলী ভূমিকায় রয়েছে। একদিকে, যুদ্ধাপরাধের দায়ে দলটি অভিযুক্ত হয়ে বিচারের কাঠগড়ায় রয়েছে। কারও কারও বিচার সম্পন্ন হয়ে রায় ঘোষিত হয়ে তা কার্যকরও হয়েছে। অপরদিকে, যে জোটে জামায়াত শরিক হিসেবে রয়েছে সে দলটির অবস্থাও তথৈবচ। এরপরও জোটের নেতৃত্বদানকারী দল বিএনপির অবস্থান অত্যন্ত নাজুক। সরকার জাতীয় ঐক্য গড়ার প্রশ্নে এক নম্বর শর্ত দিয়েছে বিএনপিকে জামায়াত ছাড়ার ঘোষণা দিতে হবে। কিন্তু জামায়াতের শক্তি ছাড়া বিএনপি রাজনীতির ময়দানে একেবারেই অচল। পাশাপাশি বিএনপি ছাড়া জামায়াতের অস্তিত্ব বিলুপ্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এ অবস্থায় একে অপরের পরিপূরক হয়ে নেপথ্যে তাদের নিবিড় যোগাযোগ এখনও বিদ্যমান। সূত্র জানায়, যুদ্ধাপরাধী জামায়াত ও তাদের সশস্ত্র ক্যাডার ভিত্তিক ছাত্র সংগঠন ইসলামী ছাত্র শিবির দীর্ঘ সময় জুড়ে দেশজুড়ে যে অবস্থান সৃষ্টি করে দোর্দ-প্রতাপে শক্তি প্রদর্শন করে আসছিল তাতে এখন বড় ধরনের ভাটা লেগেছে। যে ভাটা আর জোয়ারে পরিণত হতে পারছে না। এদের শক্তি যখন খর্ব হয়ে যাচ্ছে তখন জামায়াতের অবস্থানও রাজনীতির মাঠে নড়বড়ে। এ শক্তি নিয়েই বিএনপি দেশের রাজনীতিতে বলীয়ান হয়েছিল। মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের সরকার প্রতিষ্ঠা হওয়ার পর থেকে এরা দেশজুড়ে যে অরাজকতা সৃষ্টি করেছে হত্যা গুম ও আগুনের লেলিহান শিখায় দেশকে জ্বালিয়ে চারখার করেছে তাদের সে শক্তি এখন একেবারেই ক্ষীণ অবস্থানে চলে গেছে। এ অবস্থায় এ শক্তিতে এখন জঙ্গীপনায় যোগ দিচ্ছে। তবে নাম ব্যবহার করছে বিভিন্নভাবে। জেএমবি, হুজি, হিযবুত তাহ্রির, আনসার আল ইসলামসহ কত নামে এসব জঙ্গীদল গজিয়ে উঠেছে তার কোন ইয়ত্তা নেই। যে হিযবুত তাহ্রির কিছুদিন আগেও প্রকাশ্যে লিফলেট বিতরণ করত, মিছিল মিটিং করত তারা এখন কচ্ছপের মতো মাথা ঢুকিয়ে রেখেছে। মাদ্রাসা ছাত্র থেকে শুরু করে ইংরেজী মিডিয়ামে পড়ুয়া শিক্ষার্থীদের ক্ষুদ্র একটি অংশকে বিভিন্নভাবে এরা কাছে টেনে নিয়ে জঙ্গীপনায় উদ্বুদ্ধ করতে সক্ষম হয়েছে। দেশের গোয়েন্দা সংস্থাগুলো ইতোমধ্যে জেলায় জেলায় তদন্ত চালিয়ে নিখোঁজ ও জঙ্গীপনায় জড়িতদের তালিকা করতে সক্ষম হয়েছে। ফলে থলের বিড়াল বেরিয়ে আসতে শুরু করেছে। অধিকাংশ ক্ষেত্রে দেখা গেছে এসব জঙ্গীর বেশিরভাগ শুরুতে জামায়াত শিবিরের সঙ্গে জড়িত ছিল এবং রয়েছে। রাজনীতিতে বর্তমান সরকারী দলের সঙ্গে কোন কৌশলেই টিকতে না পেরে বিএনপি যে জ্বালাও পোড়াও মানুষ হত্যার পথ বেছে নিয়েছিল এ অপতৎপরতার প্রথম কাতারের শক্তি ছিল জামায়াত-শিবির। সরকার এক্ষেত্রেও কঠোর অবস্থানে গিয়ে তা মোকাবিলা করতে সক্ষম হওয়ার পর এখন এরা আন্ডারগ্রাউন্ডে গিয়ে আইএসের নামে ইসলামের সুড়সুড়ি দিয়ে টার্গেট কিলিং থেকে শুরু করে বহুমুখী সন্ত্রাসী তৎপরতায় লিপ্ত হয়েছে। যা ইতোমধ্যে দেশবাসী প্রত্যক্ষ করেছে। সূত্র জানায়, বাংলাদেশে আইএসের কোন তৎপরতা থাকার কথা নয়। কেননা, যে অর্থে আইএস প্রতিষ্ঠা হয়েছে তাদের কাজ চলছে সিরিয়া ভিত্তিক। অথচ, এ আইএসের নামে বাংলাদেশে টার্গেট কিলিং থেকে শুরু করে অরাজক পরিস্থিতি চলছে বলে এদের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়ে থাকে। তবে আইএসের পক্ষ থেকেও এসব বিষয় নিয়ে অস্বীকার করা হয় না। কারণ, এতে তাদেরই লাভ। কেননা, বড় ধরনের অঘটন করতে পারলে এবং এর দায় দায়িত্ব আইএসের কাঁধে বর্তানো গেলে তা তাদের প্রচারে বড় ধরনের সহায়তা করে। কিন্তু গোয়েন্দাদের তদন্তে এ পর্যন্ত এ ধরনের একটি ঘটনাও উদঘাটিত হয়নি যে, দেশে সংঘটিত ঘটনাগুলোর সঙ্গে আইএস জড়িত। সূত্র জানায়, রাজনীতির ময়দানে বিএনপি সরকারের সকল কাজের বিরুদ্ধাচারণ করতে গিয়ে জামায়াতকে সঙ্গে নিয়ে যে অরাজক পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে তা এখন দেশের সাধারণ মানুষের বিশ্বাসে চলে এসেছে। সরকার বিভিন্ন কৌশলে বিএনপি নেতৃত্বাধীন বিরোধী জোটের সন্ত্রাসী সব ধরনের তৎপরতা রুখে দিচ্ছে। এতে বিএনপির অবস্থা যখন একেবারে নড়বড়ে হয়ে গেছে, বাঘা বাঘা নামধারী নেতাদের অবস্থান খারাপ অবস্থায় চলে গেছে তখন তাদের সহযোগী হিসেবে জামায়াতের অবস্থা আরও বহুগুণে নড়বড়ে হয়ে গেছে। যুদ্ধাপরাধের বিচার শুরু হওয়ার পর থেকে জামায়াত এমনিই কোণঠাসা। তার ওপর বিএনপি রাজনীতির ময়দানে ঢাল তলোয়ার ছাড়া নিধিরাম সর্দারের পরিচিতিতে চলে যাওয়ায় জামায়াত-শিবির নারকীয়সহ টার্গেট কিলিংয়ের পথ বেছে নিয়েছে জঙ্গীপনা, আইএসের নামে।
×