ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

পানি কমলেও ভোগান্তি বাড়ছে

প্রকাশিত: ০৪:১৫, ৬ আগস্ট ২০১৬

পানি কমলেও ভোগান্তি বাড়ছে

জনকণ্ঠ ডেস্ক ॥ বন্যার পানি কমলেও ভোগান্তি বেড়েছে বানভাসিদের। কীর্তনখোলা নদীর পানি বেড়ে দুই হাজার মানুষ পানিবন্দী হয়েছে। অপরদিকে বিষখালী ও বলেশ্বর নদীর পানি বেড়ে ডুবে গেছে আট গ্রাম। স্টাফ রিপোর্টার ও নিজস্ব সংবাদদাতাদের পাঠানো খবর ঃ কুড়িগ্রাম ॥ বন্যার পানি কমতে থাকায় সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির আরও উন্নতি হয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় ধরলায় ২৫ ব্রহ্মপুত্রে ১৬ সেন্টিমিটার পানি কমেছে। এদিকে বন্যার পানি কমার পর নিজ বাড়ি-ঘরে ফিরতে গিয়ে বন্যার্তদের পোহাতে হচ্ছে নানা ভোগান্তি। মরা-হাঁস মুরগিসহ নানা প্রাণীর মৃতদেহ দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। স্বাস্থ্য বিভাগের দেয়া তথ্যমতে প্রতিদিন গড়ে ১০০ মানুষ আক্রান্ত হচ্ছে ডায়রিয়ায়। ক্ষতিগ্রস্ত বাড়ি-ঘর মেরামত করে বসবাস উপযোগী করতে এখন ব্যস্ত বানভাসিরা। কিন্তু বন্যায় ব্যাপক ক্ষতির পাশাপাশি একদিকে কাজের অভাব, অন্যদিকে অনেকেই মেরামত করতে পারছে না ক্ষতিগ্রস্ত বাড়ি-ঘর। লালমনিরহাট ॥ সমাজকল্যাণ প্রতিমন্ত্রী নুরুজ্জামান আহম্মেদ বলেন, সারাদেশে নদ-নদীর পানি বেড়ে বন্যার সৃষ্টি হয়েছে। প্রকৃতির ওপর মানুষের হাত নেই। তবে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ বন্যার্ত মানুষের একজনও যেন অনাহারে মৃত্যুবরণ না করে। তাই দেশে পর্যাপ্ত ত্রাণ সামগ্রী নিয়ে বন্যার্তদের পাশে সরকার দাঁড়িয়েছে। বরিশাল ॥ কীর্তনখোলাসহ আশপাশের সকল নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। এরই মধ্যে কীর্তনখোলা নদীর পানি বেড়ে বিপদসীমার ৮ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এতে বেশ কিছু এলাকাসহ আশপাশের নিম্নাঞ্চল পানিতে ডুবে গেছে। নগরীর জিয়ানগর, টিয়াখালি, রূপাতলী, পলাশপুর, চাঁদমারি, কাশিপুর, রায়পাশা-কড়াপুর, মোহম্মদপুর ও শায়েস্তাবাদসহ বিভিন্ন এলাকায় হাঁটু পরিমাণ পানি জমে মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। ডুবে গেছে রাস্তা-ঘাটসহ বাড়ির উঠান। নগরীর রসুলপুর কলোনির সহস্রাধিক মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। ঘর অর্ধেক পানিতে ডুবে গেছে। জেল খালের পানিতে নগরীর বাণিজ্যিক এলাকা ফড়িয়াপট্টি, পেয়াজপট্টি, পোর্টরোড বাজারসহ আশপাশের এলাকা তলিয়ে গেছে। এছাড়া কীর্তনখোলা নদীর তীরবর্তী গ্রামের মানুষরা পানিবন্দী হয়ে ভাঙ্গন আতঙ্কে রয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী রমজান আলী জানান, শুক্রবার সকালে কীর্তনখোলা নদীর পানি বিপদসীমা অতিক্রম করে ৮ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। বরগুনা ॥ পাথরঘাটা উপজেলার জিনতলা ও কাঁঠালতলী ইউনিয়নের ৪টি পয়েন্টে ভাঙ্গা বেড়িবাঁধ দিয়ে বিষখালী ও বলেশ্বর নদীর পানি ঢুকে প্লাবিত হয়েছে ৮টি গ্রাম। এতে পানিবন্দী হয়ে পড়েছে দুই ইউনিয়নের বাঁধ সংলগ্ন অন্তত দুই হাজার পরিবার। মানুষের পাশাপাশি পানিবন্দী রয়েছে ওই এলাকার হাজার হাজার গৃহপালিত পশু। ঘরবাড়ি ছেড়ে উঁচু স্থানে আশ্রয় নিয়েছে এলাকাবাসী। বিশুদ্ধ পানি ও খাবার সংকটে ভুগছে তারা। শুক্রবার সকালে দেখা যায়, গত ২ দিন বিষখালী ও বলেশ্বর নদীতে জোয়ারের চাপ ছিল তীব্র। আর এই তীব্র জোয়ারের চাপে জীনতলা এলাকার তিনশ’ মিটার বেড়িবাঁধ ভেঙ্গে চরলাঠিমারা, বাদুরতলা, হরিণঘাটাসহ আটটি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। জোয়ারের পানি বাড়ি-ঘরের ভেতর ঢুকে যায়, ওই এলাকার লোকজন রান্না বান্না করতে পারছে না, শিশু ও বৃদ্ধদের নিয়ে আছে চরম আতঙ্কে, আমনের বীচতলায় হয়েছে ব্যাপক ক্ষতি। ফেহারখালসহ বেশ কয়েকটি মাছের ঘেরের হয়েছে লাখ লাখ টাকার ক্ষতি। ওইসব এলাকার স্কুলগুলোতে পানি উঠে যাওয়ায় শিশুরা স্কুলে যেতে পারছে না। জনজীবন থমকে রয়েছে এ এলাকার মানুষের। বাউফল ॥ তেঁতুলিয়া ও লোহালীয়না নদীর তীরবর্তী চন্দ্রদ্বীপ, কালাইয়ার, কেশবপুর, ধুলিয়া, কাছিপাড়া ও বগা ইউনিয়ন জোয়ারের পানিতে প্লাবিত হয়েছে। স্বাভাবিক উচ্চতার চেয়ে ৩-৪ ফুট বেশি জোয়ারের পানি প্রবাহিত হচ্ছে। অর্ধ লাখ মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। অস্বাভাবিক জোয়ারের পানি ও ঢেউয়ের কারণে চন্দ্রদ্বীপ ইউনিয়নের ১৫ কিলোমিটার বেড়িবাঁধের মধ্যে প্রায় সাত কিলোমিটার বেড়িবাঁধ ও পাঁচ কিলোমিটার নতুন নির্মিত কাঁচা সড়ক বিলীন হয়ে গেছে। ভেসে গেছে সহস্রাধিক পুকুর ও ঘেরের মাছ। পানিতে তলিয়ে গেছে আমন বীজতলা। এসব ইউনিয়নের যেদিকে যতদূর দৃষ্টি যায় অথৈ পানি।
×