ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

মুহম্মদ শফিকুর রহমান

মূলধারা রুখবে জঙ্গীবাদ

প্রকাশিত: ০৪:০৩, ৬ আগস্ট ২০১৬

মূলধারা রুখবে জঙ্গীবাদ

যে মানুষটি বাঙালীর হাজার বছরের স্বপ্নসাধ আপন জাতিরাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করে দিলেন, যে মানুষটি জেল-জুলুম-হুলিয়া তোয়াক্কা করলেন না, ফাঁসির মঞ্চে দাঁড়িয়েও বুক চিতিয়ে উচ্চারণ করলেনÑ ‘আমি মানুষ/আমি বাঙালী/আমি মুসলমান/ একবার মরে দুইবার না।’ সেই মহামানবকেই হত্যা করল বাঙালী নামের কিছু কুসন্তান। পেছনে ছিল পরাজিত শক্তি পাকিস্তান, সাম্রাজ্যবাদ এবং হেনরি কিসিঞ্জাররা। মুশতাক-জিয়া-ফারুক-রশিদ ডালিমরা ভাড়াটে খুনী। এই মহাপ্রাণ হৃদয় মানুষটি নিজের মানুষদের বাঙালীদের এতই ভালবাসতেন যে, তার কোন শত্রু আছে বা তাকে কেউ হত্যা করতে পারে তা বিশ্বাস করতেন না। মৃত্যুর তিন-চার দিন আগেও এক ট্রাস্টেড ফ্রেন্ড তাকে সতর্ক করেছিলেন। ‘ঊীপবষষবহপু গৎ. চৎবংরফবহঃ, ংড়সবঃযরহম ঃবৎৎরনষব রং মড়রহম ঃড় যধঢ়ঢ়বহ রহ ুড়ঁৎ পড়ঁহঃৎু...’ উত্তরে তিনি বলেছিলেনÑ ‘হড় বীপবষষবহপু সধফধস চৎরসব গরহরংঃবৎ, ফড়হ’ঃ ড়িৎৎু, ঃযবু ধৎব ধষষ সু পযরষফৎবহ, ও ষড়াব ঃযবস াবৎু সঁপয, ঃযবু ধষংড় ষড়াব সব...’ রবীন্দ্রনাথ বলতেন, ‘মানুষকে অবিশ্বাস করা পাপ।’ সম্ভবত এই মানুষটিকে দেখেই রবীন্দ্রনাথ কথাটি বলেছিলেন। কিন্তু বিশ্বাসের প্রতিদান কি এই? সে মানুষ টুঙ্গিপাড়ার শেখ মুজিবুর রহমান ‘বাবা-মার খোকা/বাঙালীর বঙ্গবন্ধু/জাতির অবিসম্বাদী নেতা/বাঙালীর হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ সন্তান/স্বাধীন বাংলাদেশের বাঙালীর জাতির পিতা/বাঙালীর জাতিরাষ্ট্রের স্থপতি/ গ্রাম বাংলার মানুষের শেখের বেটা’। আগামী ১৫ আগস্ট সেই ভয়াল কালরাত্রি। রাত শেষের দিকে। কোথাও কোথাও দূর থেকে আজানের ধ্বনি ভেসে আসছিল। সেই সঙ্গে ধানম-ি লেকের পারে মহুয়ার ডালে বসে বুড়ো কাক ডেকে উঠেছিল কা-কা। আর তখন গর্জে উঠেছিল ঘাতকদের অটোমেটিক স্টেনগান। সঙ্গে সঙ্গে সব নীরব নিস্তব্ধতা। একে একে দূরে কোথাও চলে গেলেন বেগম শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব; তার জীবন ও রাজনীতির সবচেয়ে ট্রাস্টেড বন্ধু, জ্যেষ্ঠ পুত্র মুক্তিযোদ্ধা ও যুবনেতা শেখ কামাল, শিক্ষা-সংস্কৃতি, ক্রীড়াঙ্গন ও রাজনীতিতে যার ছিল অবাধ বিচরণ, মেজো ছেলে মুক্তিযোদ্ধা লেফটেন্যান্ট শেখ জামাল; কনিষ্ঠ পুত্র শেখ রাসেল, দুই পুত্রবধূ, ভাগ্নে মেধাবী যুবনেতা দক্ষ সম্পাদক শেখ ফজলুল হক মণি ও আরজু মণি; ভগ্নিপতি আবদুর রব সেরনিয়াবাত, ওই পরিবারের আরও কয়েকজন এবং নিরাপত্তা অফিসার কর্নেল জামিল। তারা জানতেন পাখির ডাকে ঘুম ভাঙবে। বেগম মুজিব নামাজ শেষে দ্রুত চা বানাবেন। একটু পরেই জার্মানিতে টেলিফোন করতে হবে হাসু (শেখ হাসিনা) টেলিফোন তুলবেন, কিছু বলার আগেই জয়-পুতুলের মধ্যে কাড়াকাড়ি, কে আগে নানীর সঙ্গে কথা বলবে। বেগম মুজিবের একক দৈনন্দিন রুটিন ছিল। এক রাতে সব শেষে হয়ে গেল। এখনও হয়ত শেখ হাসিনা, শেখ রেহানা ভাবেন এই বুঝি টেলিফোন এলো। হয়ত জয়-পুতুল এখনও টেলিফোনের শব্দ শুনলে দৌড়ে যান নানা-নানুর সঙ্গে কথা বলতে। কিন্তু ঘাতকরা সব কেড়ে নিল। শেষ কথাটি বলা হলো না। প্রতিবিপ্লবী শক্তি ভাড়াটিয়া খুনী দিয়ে বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করে। তারা স্বাধীন বাঙালী জাতির মূলধারাকে হত্যা করতে উদ্যত হয়েছিল। তারা হত্যা করতে উদ্যত হয়েছিল ৩০ লাখ শহীদ ও ৫ লক্ষাধিক মা-বোনের রক্তে লেখা সংবিধানকে। ভেবেছিল বঙ্গবন্ধুর সমান মাপের আর কেউ রইল না। আর কোন বাপের বেটা বাংলার গরিব-দুঃখী মানুষের পক্ষে দাঁড়াবার সাহস পাবেন না। শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের নামও আর নেবে না। কিন্তু না। বঙ্গবন্ধুর রক্ত অপ্রতিরোধ্য, কোন পরাভব মানে না। পিতার মতোই উচ্চারণ করলেনÑ ‘আমি আছি/আমি উঠিয়া আসিয়াছি টুঙ্গিপাড়ার/পলিমাটি থেকে/আমি আসিয়াছি মধুমতি বাঘিয়ার/ঢেউ থেকে পদ্মা-যমুনা-গৌরী-মেঘনা-ইছামতি-ডাকাতিয়ার পার ধরে হাঁটতে হাঁটতে আসিয়াছি এই মহামানবের তীরে। আমার গতিরোধ করে সাধ্য কার? বিশ্ব অবাক বিস্ময়ে তাকিয়ে দেখল এ কোন্ বাংলাদেশ? একজন রাষ্ট্রনেতা শেখ মুজিবের কন্যা শেখ হাসিনার পাশে এসে দাঁড়াল বাংলার কৃষক-শ্রমিক-ছাত্র-শিক্ষক-বুদ্ধিজীবী সংস্কৃতিকর্মী, মাঠের মানুষ, ঘাটের মানুষ সব এক কাতারে। একে একে বাস্তিল দুর্গগুলো পতন হতে থাকল; পিতার হাতে পতন হয়েছিল আইয়ুব-ইয়াহিয়া-রাও ফরমান আলী-টিক্কা-জাঞ্জুয়ারা আর কন্যার আন্দোলনে রাজপথ আর ক্ষমতার প্রাসাদ ছেড়ে ঘরে ঢুকল জিয়া-এরশাদ-খালেদারা। কিসিঞ্জারের নাতি-পুতিরা আবার ভাড়াটে খুনী লাগাল। ১৯ বার শেখ হাসিনাকে হত্যার ষড়যন্ত্র করল। রাখে আল্লাহ মারে কে? আল্লাহ যার সহায় তার কিসের ভয়। তারা বাংলাদেশকে অপমান করার জন্য বলল, পদ্মা সেতুতে দুর্নীতি হয়েছে, অতএব ঋণ দেয়া যাবে না। ঋণ বন্ধ করে দিল। বাপের বেটি শেখ হাসিনা প্রতিবাদে ফেটে পড়ে বললেন, এ সাম্রাজ্যবাদীদের চক্রান্ত। তারা বাঙালী জাতিকে অপমান করতে চাইছে। এ অপমান সহ্য করব না। নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু হবে। কাজ শুরু হয়ে গেল ২০১৮ সালের টার্গেট নিয়ে এবং এরই মধ্যে ৩৫% কাজ হয়ে গেছে। যে গতিতে কাজ এগুচ্ছে তাতে মনে হয় ২০১৮ সালের মধ্যেই ট্রেন-যান চলাচল করতে পারবে। এরই মধ্যে পদ্মা সেতুর কথিত দুর্নীতির অভিযোগে কানাডায় মামলা হলো। রায়ও হলো। রায়ে বলা হলো, দুর্নীতি হয়নি, তবে দুর্নীতির চিন্তা-ভাবনা হয়েছিল। এ যেন ইরাকে মানব বিধ্বংসী পরমাণু অস্ত্র রয়েছে বলে আমেরিকা এবং তাদের অর্ধাঙ্গিনী ব্রিটিশ, জার্মানি হুমড়ি খেয়ে পড়ল টাইগ্রিস ও ইউফ্রেটিস পারের হাজার বছরের সভ্যতাকে ধ্বংস করার জন্য। হাজারো কামানবাহী ট্যাঙ্ক, হেলিকপ্টার, যুদ্ধবিমান দেশটিকে বিরানভূমি বানিয়ে দিল। কেবল দুধ ও অন্যান্য শিশুখাদ্যের অভাবে কয়েক লাখ শিশু-কিশোর মারা গেল। হাজার বছরে সমৃদ্ধ পাঠাগার ও লাইব্রেরি লুট করে তারা নিয়ে গেল তাদের আদি অভ্যাসের কারণে। শেষ পর্যন্ত নির্মমভাবে ইরাকের সবচেয়ে জনপ্রিয় এবং জাতীয়তাবাদী নেতা সাদ্দামকে হত্যা করল বিচারের নামে প্রহসন করে। তারপর জানা গেল কি, অর্থাৎ ইরাকে কি ধরনের মানববিধ্বংসী পরমাণু বোমা রয়েছে তার ওপর গঠিত তদন্ত কমিটি বলল- না, ইরাকে কোন পরামাণু বোমা নেই, ছিল না। কিন্তু কে দায় নেবে এই ধ্বংসযজ্ঞের? জাতিসংঘ তো একটা নপুংসক এথিক্যাল সংস্থা। এর পক্ষে বেজন্মা হায়েনাদের বিচার করা সম্ভব নয়। আমাদের দেশেও দুর্নীতির ধুয়া তুলে একজন মন্ত্রীকে অপমানিত হয়ে বিদায় নিতে হয়েছিল। শেখ হাসিনা বিশ্বব্যাংকের ঋণকে তুচ্ছ জ্ঞান করে পদ্মা সেতুর নির্মাণ কাজ শেষ করে সেই অপমানের জবাব দেবেন। বিশেষজ্ঞদের মতে, পদ্মা সেতু হয়ে গেলে জিডিপি ৯% ছাড়িয়ে যাবে। এত কিছু করেও শেখ হাসিনার অগ্রযাত্রা থামানো যাচ্ছে না, দেশ এগিয়েই চলছে অপ্রতিরোধ্য গতিতে। বাংলাদেশ আজ চাল রফতানি করছে ৪ কোটি টন, খাদ্যশস্য উৎপাদিত হচ্ছে; মাছ বা প্রোটিন উৎপাদনে বাংলাদেশ বিশ্বে চতুর্থ, তৈরি পোশাক রফতানিতে বাংলাদেশ দ্বিতীয়; আমাদের শিক্ষার হার ৭০ ছাড়িয়েছে; একইভাবে গড় আয়ুও ৭০-এর ওপরে; ফরেন কারেন্সি রিজার্ভ ২৯ বিলিয়ন ইউএস ডলার ছাড়িয়েছে; আমাদের মাথাপিছু আয় ১৪৬৬ মার্কিন ডলার; জিডিপি ৭.০২%, মূল্যস্ফীতির হার ৬ এর মধ্যে। জাতির পিতার হত্যার বিচার করলেন, ’৭১-এর মানবতাবিরোধী যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করে বাংলাদেশ ও বাঙালী জাতিকে কলঙ্কমুক্ত করলেন; সর্বোপরি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিশ্বের ১০ প্রভাবশালী রাষ্ট্রনেতার অন্যতম এবং বাংলাদেশ উন্নয়নের রোল মডেল। আর খালেদা জিয়া ক্ষমতা হারিয়ে দিশেহারা। তাকে যে ক্ষমতায় যেতেই হবে নইলে সবার আগে যে কাজগুলো করতে হবেÑ ‘যে কোনভাবেই শেখ হাসিনার সরকারের পতন ঘটিয়ে নিজে মসনদে বসতে হবে। তাহলেই কেবল দুর্নীতির দায়ে সাজাপ্রাপ্ত পলাতক লন্ডন প্রবাসী পুত্র তারেককে দেশে ফিরিয়ে আনতে পারবে। দ্বিতীয়ত, যত অর্থ লুকিয়ে রেখেছে বলে কথা আছে সেগুলোকে বের করে এনে হয় মালয়েশিয়ায় নয়ত ইংল্যান্ড-নিউইয়র্ক পাচার করতে হবে। সেখানেও সমস্যা আছে। একবার পাচার করে দুই পুত্রই ধরা খেয়ে গেছে। অবশ্যÑ এসবে তাদের অপমান হয় না, গায়েও লাগে না। আর এ লক্ষ্যে এবার জামায়াত-শিবির ও তাদের ঠেঙ্গাড়ে বাহিনী হিযবুল মুজাহিদীন, হিযবুত তাহ্রীর, আনসারুল্লাহ বাংলা টিম, হামযা ব্রিগেড রাজপথে নামানো হলো। এবার পেট্রোলবোমা। ২০১৫ সালের প্রথম তিন মাস রাজধানী ঢাকাসহ দেশব্যাপী প্রতিদিন যখন তখন, যেখানে সেখানে যাত্রীবাহী বাস, প্রাইভেট কার-মাইক্রোবাস, ট্রাক, ট্রেন গণপরিবহন একটিও বাদ যায়নি। এমনকি নিরীহ গরুবাহী ট্রাকও খালেদার আগুন সন্তানদের হাত থেকে রেহাই পায়নি। পুড়ে গরুগুলো অঙ্গার হয়েছিল। মানুষ পুড়ে ছাই হয়েছিল। যারা পোড়া শরীর নিয়ে বেঁচে যায় তাদের কান্নায় আল্লাহর আরশ কেঁপেছে, খালেদার মন এতটুকু মলিন হয়নি। এ যেন তার উল্লাসের ব্যাপার ছিল। ২০১৩ সালে যখন যুদ্ধাপরাধী মানবতাবিরোধী অপরাধী আলবদর কাদের মোল্লার ফাঁসিকে কেন্দ্র করে শাহবাগের গণজাগরণ মঞ্চ প্রতিষ্ঠিত হলো তখনও খালেদা জিয়া একদিকে তাদের নষ্ট ছেলেমেয়ে বললেনÑ গভীর রাতে ওরা কি করে? খুবই নোংরা ইঙ্গিত করলেন এবং আমাদের ইউনিভার্সিটি-কলেজ-স্কুলের শিক্ষিত সন্তানদের চরিত্রে কালিমালেপন করতে চেয়েছিলেন। পাশাপাশি কাদের মোল্লার ফাঁসি ঠেকানোর জন্য পেট্রোলবোমার পাশাপাশি দেশব্যাপী রাস্তা কেটে, গাছ কেটে যান চলাচল বন্ধ করে দিয়েছিল। এবার বুঝি খালেদার মসনদে যাওয়ার সুযোগ হলো। বিধির ংধহপঃরড়হ ছিল না হয়ত; তাই সিংহাসনও আরও দূরে সরে গেল। এত কিছুর পরও তিনি দমলেন না, অনুশোচনার ছাপ দেখা গেল না তার মধ্যে। বুদ্ধি আছে বলেও মনে হয় না। অবশ্য না থাকারই কথা। ছিলেন মিলিটারির ঘরনী। বিভিন্ন পার্টিতে তিনি ছিলেন চেহারাসর্বস্ব রানী। কাঁচের ঘর থেকে বাইরে কিছু দেখা যায় না। তাই বাইরের জগত তার কাছে একেবারেই অচেনা। বুঝতেই পারেনি প্রতিপক্ষ শেখ হাসিনার শক্তি। এবার জামায়াত-শিবির থেকে লোক নিয়ে বানানো হলো হিযবুল, আনসারুল্লাহসহ কতক সুইসাইডাল স্কোয়াড। তারা প্রথমত গুপ্তহত্যা শুরু করল। কবি লেখক হুমায়ুন আজাদ থেকে অভিজিত, আর তার আগেও অধ্যক্ষ মুহুরী, তাতেও কিছু হলো না; তাই এবার শুরু হলো সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মন্দিরে হামলা, পুরোহিত হত্যার পর শুরু হলো গুলশান হলি আর্টিজান রেস্তরাঁয় হামলা চালিয়ে ৯ ইতালিয়ান, ৭ জাপানী ও ১ ভারতীয় নাগরিককে হত্যা। নিজেরাও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে নিহত হলো। জঙ্গীরা মৃত্যুর আগে ‘আল্লাহ আকবার’ ধ্বনি দিয়ে বলেছে ‘জান্নাতে তোমাদের সঙ্গে দেখা হবে।’ সর্বশেষ কল্যাণপুরের জাহাজ বাড়িতে অভিযান চালাতে গেলে জঙ্গীরা পাল্টা গুলি চালালে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পাল্টা গুলিতে ৯ জঙ্গী নিহত এবং একটি ধরা পড়েছে। এরাও ওখানে থেকে প্রস্তুতি নিচ্ছিল বড় কোন নাশকতা চালানোর। কিন্তু তার আগেই আমাদের চৌকস পুলিশ র‌্যাব ও অন্যান্য যৌথ বাহিনী তাদের সব পরিকল্পনা নস্যাত করে দেয়। এখানেও তারা ‘আল্লাহ আকবার’ বলে গুলি চালিয়েছিল, বোমা ফাটিয়েছিল। ইসলাম কি তা এলাউ করে? আল্লাহর মাইর দুনিয়ার বাইর। যে পাকিস্তান অর্থ, অস্ত্র, প্রশিক্ষণ দিয়ে জঙ্গী আস্তানা সৃষ্টি করেছে, তা এখন এক ব্যর্থ রাষ্ট্র। মার্কিন ড্রোন হামলায় প্রতিদিন ক্ষতবিক্ষত হচ্ছে। তারপরও এরা এত জঙ্গী যে বন্যপ্রাণীর মতো নিজের জীবন বাঁচে না, তবু প্রতিপক্ষকে আঘাত হানতেই হবে। খালেদাও তাই চাচ্ছে, বাংলাদেশেও বিদেশীরা আসুক, ড্রোন হামলা চালিয়ে মানুষ মারুক তাতে আর কিছু আসে যায় না, তার সোনার হরিণ চাই। ড্রোন হামলায় ওই সোনার হরিণটাও যে মারা যাবে পাকিস্তানের মতো এতটুকু বোঝার মতো জ্ঞান-শিক্ষা কোনটাই তার নেই যে। একটা কথা আমি বার বার বলি। আজ বাংলাদেশে জঙ্গীবাদের যে বিষবৃক্ষ-ডালপালা ছড়িয়ে গোটা দেশটাকে আচ্ছন্ন করতে চাইছে তার চারাগাছটি রোপণ করেছিলেন মিলিটারি জিয়াউর রহমান। মুক্তিযোদ্ধার তকমা নিয়ে ক্ষমতায় বসে তিনি যদি নাগরিকত্বহারা গোলাম আযমদের দেশে ফিরিয়ে না আনতেন, যদি নিষিদ্ধ ঘোষিত জামায়াত-শিবির, মুসলিম লীগ ও নেজামে ইসলামকে রাজনীতিতে ফিরিয়ে না আনতেন, তাহলে জাতিকে আজ এমন শঙ্কিত জীবন কাটাতে হতো না। খালেদা এখন ঐক্যের কথা বলেন। এটি তার ভাঁওতাবাজি, জাতে ওঠার চেষ্টা মাত্র। যে অপরাধ করেছেন তাতে করে তিনি যেমন ঘৃণিত-গণবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছেন তেমনি বঙ্গবন্ধুকন্যা দেশরতœ শেখ হাসিনা হয়ে উঠেছেন মূলধারার ঐক্যের প্রতীক। সে ঐক্য কি আজ হয়নি? সেই ঐক্য দিয়েই তো জঙ্গীবাদ মোকাবেলা করে চলেছেন। সফলও হয়েছেন। ভালই হলো এভাবে মেরুকরণ হয়ে। একদিকে খালেদা জিয়া জঙ্গী, পশ্চাদপদতা ও দেশবিরোধী প্রতিক্রিয়ার প্রতীক, অপরদিকে শেখ হাসিনা গণতন্ত্র, মানবতাবাদ, প্রগতিশীলতা ও অসাম্প্রদায়িক ধর্মনিরপেক্ষতার প্রতীকÑ ঐক্য এখানেই। বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন- ‘নেতার ঐক্য চাই না, জনতার ঐক্য চাই।’ শেখ হাসিনাও জনতার ঐক্য গড়ে এগিয়ে যাচ্ছেন। বঙ্গবন্ধুর রক্ত এখানেই অপ্রতিরোধ্য। আমেরিকার হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এসে সজীব ওয়াজেদ জয় মাকে (শেখ হাসিনা) যেমন ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার সাহায্য করছেন এবং অনেক এগিয়ে গেছেনও, তেমনি জাতিসংঘে বিশেষজ্ঞ অটিজম উপদেষ্টা হিসেবে নীতিনির্ধারণী বক্তৃতা দিয়ে বিশ্ববাসীকে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন, ঠিক তেমনি ব্রিটিশ পার্লামেন্ট হাউস অব কমন্সে লেবার পার্টির নির্বাচিত এমপি হিসেবে ঝড় তুলেছেন আরেক উত্তরাধিকার। এখানেই বঙ্গবন্ধুর রক্ত অপ্রতিরোধ্য। ঢাকা : ৫ আগস্ট ২০১৬ লেখক : সিনিয়র সাংবাদিক ও সভাপতি, জাতীয় প্রেসক্লাব
×