স্টাফ রিপোর্টার ॥ গুলশান-ট্র্যাজেডিতে নিহত নিরপরাধ দেশী-বিদেশীদের উৎসর্গ করে নাট্যসংগঠন স্বপ্নদল ও বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির যৌথ আয়োজনে আজ শনিবার এক্সপেরিমেন্টাল থিয়েটার হলে নানা আনুষ্ঠানিকতায় ‘হিরোশিমা দিবস-২০১৬’ পালন করা হবে। এ উপলক্ষে ‘আর নয় হিরোশিমা, আর নয় নাগাসাকি, নয় কোনো সন্ত্রাসবাদ’ স্লোগানে আলোচনার পাশাপাশি স্বপ্নদলের ‘ত্রিংশ শতাব্দী’ নাটকের বিশেষ মঞ্চায়ন হবে। বাদল সরকারের মূল রচনা অবলম্বনে হিরোশিমা-নাগাসাকির বিয়োগান্তক ঘটনানির্ভর স্বপ্নদলের যুদ্ধবিরোধী গবেষণাগার প্রযোজনা ‘ত্রিংশ শতাব্দী’ নাটকের রূপান্তরসহ নির্দেশনা দিয়েছেন জাহিদ রিপন। নাটকের অভিনয় শিল্পীরা হলেন জুয়েনা শবনম, ফজলে রাব্বি সুকর্ন, সামাদ ভূঞা, শিশির সিকদার, মোস্তাফিজুর রহমান, জেবুন নেসা, শাখাওয়াত শ্যামল, মেহেদী রানা, তানভীর শেখ ও জাহিদ রিপন। হিরোশিমা-নাগাসাকির বিষাদময় ঘটনার ’৭১ বছর পূর্তি উপলক্ষে আয়োজিত ‘হিরোশিমা দিবস-২০১৬’-এর অনুষ্ঠানমালায় অন্তর্ভুক্ত রয়েছেÑ বিকাল ৫টা থেকে এক্সপেরিমেন্টাল থিয়েটার হলের লবিতে হিরোশিমা-নাগাসাকি-গুলশানভিত্তিক যুদ্ধ-জঙ্গীবাদ-সন্ত্রাসবিরোধী পোস্টার-আলোকচিত্র-সংবাদপত্র-ভিডিও প্রদর্শনী। সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় মিলনায়তনে যুদ্ধযন্ত্রণার প্রতীক জাপানী শিশু সাদাকো সাসাকি স্মরণে কাগজের সারস বিতরণ এবং যুদ্ধ-জঙ্গীবাদ-সন্ত্রাসবিরোধী সংক্ষিপ্ত আলোচনা। এরপর সন্ধ্যা ৭টা থেকে থাকবে ‘ত্রিংশ শতাব্দী’ প্রযোজনার ৮৪তম মঞ্চায়ন। হিরোশিমা দিবস উপলক্ষে এদিন নাট্যপ্রদর্শনীসহ সকল আয়োজন সবার জন্য উন্মুক্ত। বাংলাদেশ গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশনের সভাপতি ও শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক নাট্যজন লিয়াকত আলী লাকীর সভাপতিত্বে এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন নাট্যজন মামুনুর রশীদ। বিশেষ অতিথি থাকবেন বাংলাদেশ চলচ্চিত্র ও টেলিভিশন ইনস্টিটিউটের প্রধান নির্বাহী ড. মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর হোসেন এবং জাপান-বাংলা পিস ফাউন্ডেশনের সভাপতি হুমায়ুন কবীর প্রমুখ। স্বাগত বক্তব্য রাখবেন স্বপ্নদলের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান সম্পাদক জাহিদ রিপন। স্বপ্নদল ১৫ বছর যাবত নিয়মিতভাবে শান্তির পক্ষে উদ্বুদ্ধকরণ ও যুদ্ধবিরোধী প্রচারণাসহ ‘হিরোশিমা দিবস’ পালন করে আসছে। ২০১১ থেকে এ আয়োজনের সঙ্গে যুক্ত রয়েছে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি। পাশাপাশি দিবসটি পালনে সহযোগিতা করছে জাপান-বাংলা পিস ফাউন্ডেশন ও জাপান দূতাবাস।
যুদ্ধোন্মাদনার বিরুদ্ধে শৈল্পিক প্রতিবাদ স্বপ্নদলের ‘ত্রিংশ শতাব্দী’ নাটকের মূলকাহিনী পৃথিবীর ইতিহাসের সবচেয়ে কলঙ্কজনক অধ্যায় দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধকালে জাপানের হিরোশিমা-নাগাসাকির আণবিক বোমা বিস্ফোরণের অনভিপ্রেত পরিণতি। এর সমান্তরালে গুরুত্বের সঙ্গে উপস্থাপিত হয়েছে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ, বসনিয়া-ফিলিস্তিন, আফগানিস্থান, পাকিস্তান-ভারত, ইরাকে আগ্রাসন, কুয়েত-তিউনিশিয়া-ইয়ামেন-সিরিয়া-তুরস্ক-ফ্রান্সসহ গুলশান-শোলাকিয়ার সাম্প্রতিক বর্বরতা প্রভৃতি প্রসঙ্গ। ‘ত্রিংশ শতাব্দী’ প্রযোজনায় নানাবিধ দৃষ্টিকোণ থেকে বিশ্লেষণের মাধ্যমে স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপটে যুদ্ধবাজ-যুদ্ধাপরাধী-অশান্তিকামীদের স্বরূপ এবং তাদের কর্মের তাৎক্ষণিক ও সুদূরপ্রসারী বীভৎসতার চিত্র উদ্ঘাটিত হয়েছে। সভ্যতা ধ্বংসকারী মানবসৃষ্ট যুদ্ধ-গণহত্যা-অনাচারের বিপরীতে মানুষ হিসেবে বর্তমান কর্তব্য অনুধাবন এবং এক্ষেত্রে দর্শককে সিদ্ধান্ত গ্রহণের মুখোমুখি স্থাপনই ‘ত্রিংশ শতাব্দী’ প্রযোজনার প্রত্যাশা। আর প্রযোজনাটির উপস্থাপনায় প্রয়োগ করা হয়েছে হাজার বছরের নাট্য-ঐতিহ্যের ধারায় আধুনিক ‘বাঙলা নাট্যরীতি’।