ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

ধর্মের নামে মানুষ হত্যা

প্রকাশিত: ০৩:৫৬, ৬ আগস্ট ২০১৬

ধর্মের নামে মানুষ হত্যা

সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির এই দেশে সাম্প্রদায়িকতার বিষবাষ্প ছড়ানোর সকল অপকৌশল নস্যাত করে দিয়েছে দেশবাসী বার বার। অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় বিজ্ঞান ও আধুনিকতার এই জয়যাত্রার কালে দেশকে উল্টো দিকে পরিচালিত করার ষড়যন্ত্র চলছে। শান্তির ধর্ম ইসলামের নামে মানবহত্যা শুরু হয়েছে। গত মাসের এক তারিখে রাজধানীর গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারিতে ধর্মের নামে মহাঅধর্মের নবপর্যায়ের সূচনা জাতি প্রত্যক্ষ করেছে। স্বধর্মী হোক বা বিধর্মী হোকÑ ইসলাম কখনও ধর্মের নামে কোন ধর্মের অনুসারীকে হত্যার কথা বলে না। অথচ ধর্মের নামে নির্বিচারে নারী-পুরুষ হত্যার পরিকল্পনা আঁটছে জঙ্গীরা। বুধবার আনুষ্ঠানিকভাবে হজক্যাম্প উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাঁর বক্তব্যে খোলাখুলি কিছু কথা বলেছেন যা গভীর অনুধাবনের দাবি রাখে। তিনি বলেছেন, ইসলাম ধর্মের নামে যারা মানুষ হত্যা করছে তারা ইসলামকেই হেয় করছে। তাদের বিরুদ্ধে সোচ্চার হতে হবে। প্রধানমন্ত্রীর এ আহ্বান গভীর অনুধাবনের দাবি রাখে। আমরা বার বার বলে আসছি দেশে পবিত্র ইসলাম ধর্মের অপব্যাখ্যা দিয়ে জঙ্গীবাদের সৃষ্টি করা হচ্ছে। আমরা ইতোপূর্বে লক্ষ্য করেছি মাদ্রাসার অল্পবয়সী ছাত্রদের এই মানবধ্বংসী পথে টেনে আনা হচ্ছে ধর্মকে পুঁজি করে। আর এটা করছে ধর্মব্যবসায়ীরা তথা ধর্মভিত্তিক রাজনীতির ধ্বজাধারীরা। বহু ধর্মভীরু মুসল্লিকেও তারা বিভ্রান্ত করছে। ফলে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের বহু ধর্মভীরু মানুষ ধর্মের দোহাই দিয়ে সন্ত্রাসী কার্যক্রমে জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে তেমনভাবে সোচ্চার হন না। অথচ ইসলাম শান্তির ধর্ম, এখানে জঙ্গীবাদের বিন্দুমাত্র স্থান নেই। দেশবাসী এরপর প্রত্যক্ষ করল বিশ্ববিদ্যালয়ে উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত তরুণদের মনোবিকার। আমরা দেখেছি এ দেশকে জঙ্গীবাদী রাষ্ট্র বানানোর প্রচেষ্টা বার বার ব্যর্থ হয়েছে অতীতে। জামা’আতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশ সে চেষ্টা চালিয়ে ব্যর্থ হয়েছে। তৎপর ছিল হিযবুত তাহ্রীরসহ নানা নামের ইসলামী দল। দেশে একযোগে ৬৩ জেলায় বোমার বিস্ফোরণ ঘটানো হয়েছিল। পহেলা বৈশাখে রমনার বটমূলে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে, উদীচীর অনুষ্ঠানে, নারায়ণগঞ্জ, ময়মনসিংহ, যশোরসহ বিভিন্ন স্থানে বোমা বিস্ফোরণ ঘটানো হয়েছিল। এমনকি হযরত শাহজালাল মাজার সংলগ্ন স্থানে, বিচারালয়ে ও শিক্ষাঙ্গনে বোমার বিস্ফোরণ ঘটানো হয়েছিল। বর্তমানে শুরু হয়েছে ধর্মের নামে মানুষ খুন। সন্ত্রাস ও জিহাদ যে এক জিনিস নয় এবং জঙ্গীরা ‘শহীদী মৃত্যু’ বলে যা প্রচার করছে সেটাও ঠিক নয়Ñ তা পবিত্র কোরান-হাদিসের আলোকে যুক্তি দিয়ে তুলে ধরা হয়েছে লক্ষাধিক আলেমের ফতোয়ায়। এই ফতোয়ার মূল বক্তব্য সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছানো হলে তারা সতর্ক ও প্রতিবাদী হবে বলে ধারণা করা যায়। ধর্মের দোহাই দিয়ে নিরীহ মানুষ হত্যার মধ্য দিয়ে যারা ধর্মকে কলুষিত করছে তাদের বিরুদ্ধে সরকার কঠোর অবস্থান গ্রহণ করেছে। ইতোমধ্যে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তৎপরতায় এক্ষেত্রে লক্ষ্যযোগ্য সাফল্য এসেছে। জঙ্গীদের রোখার জন্য যা যা করণীয় সরকার সবই করবে। তবে সমাজেরও কিছু দায়িত্ব রয়েছে। সমাজের কাজ সমাজকেই করতে হবে। জঙ্গী সৃষ্টি রোধের জন্য যেমন সমাজের শুভবুদ্ধিসম্পন্ন মানুষকে সতর্ক ও সচেতন হয়ে ইতিবাচক পদক্ষেপ নিতে হবে, তেমনি যেখানেই ধর্ম নিয়ে বাড়াবাড়ি পরিলক্ষিত হবে, সেখানেই প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। প্রধানমন্ত্রীর আহ্বানও সবার মনে রাখা প্রয়োজন। নীরবতা নয়, ইসলামের নামে যারা মানুষ হত্যা করছে তাদের বিরুদ্ধে আওয়াজ তুলতে হবে। এভাবেই জঙ্গীদের বিরুদ্ধে প্রবল জনমত গড়ে উঠবে। জঙ্গীদের ঠাঁইÑ বাংলাদেশে হবে না!
×