ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

খালেদার সঙ্গে বৈঠক

জামায়াতকে নিয়ে ঐক্যে রাজি নন কাদের সিদ্দিকী

প্রকাশিত: ০৮:৪৪, ৫ আগস্ট ২০১৬

 জামায়াতকে নিয়ে ঐক্যে রাজি নন কাদের সিদ্দিকী

স্টাফ রিপোর্টার ॥ জঙ্গী বিরোধী ঐক্যে জামায়াত থাকলে কাদের সিদ্দিকী যাবেন না। বৃহস্পতিবার রাতে বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার সঙ্গে বৈঠকে তিনি এ কথা জানিয়ে দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, জামায়াতের সঙ্গে আমি রাজনীতি করব না। বঙ্গবন্ধুর রাজনীতি করেই আমি মরতে চাই। সরকারের কাছে প্রত্যাখ্যাত হওয়ার পর জঙ্গীবাদ মোকাবেলায় ‘জাতীয় ঐক্য’ গড়ে তোলার প্রয়াসে বৃহস্পতিবার রাতে কৃষক-শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি কাদের সিদ্দিকী সঙ্গে বৈঠক করেন খালেদা জিয়া। রাত ৮টা ৫ মিনিটে বৈঠক শুরু হয়ে ৯টা ৪৫ মিনিটে শেষ হয়। বিএনপির মিডিয়া উইংয়ের সদস্য শায়রুল কবীর ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে জানান, প্রায় ১ ঘণ্টা ৪০ মিনিট এই বৈঠক চলে। এর আগে সন্ধ্যা ৭টা ৫৫ মিনিটে কাদের সিদ্দিকীর গাড়ি বহর খালেদা জিয়ার গুলশানের বাড়ি ফিরোজায় পৌঁছে। বৈঠকে কাদের সিদ্দিকীর সঙ্গে তার স্ত্রী ও দলের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য নাসরিন সিদ্দিকী, সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রহমান, সাংগঠনিক সম্পাদক ইকবাল সিদ্দিকী ও শফিকুল ইসলাম উপস্থিত ছিলেন। বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের ব্রিফিংকালে কাদের সিদ্দিকী বলেন, খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেশের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিষয় নিয়ে ইতিবাচক আলোচনা হয়েছে। তবে খালেদা জিয়া যে ঐক্যের ডাক দিয়েছেন, তাতে জামায়াত থাকলে সেই ঐক্য হবে না। বঙ্গবন্ধুর ঘনিষ্ঠ সাহচর্য পাওয়া এই রাজনীতিক বলেন, আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে কোন ষড়যন্ত্রে তিনি জড়িত হবেন না। বরং আঁচ পেলে তা ঠেকাবেন তিনি। সরকারের কাছে প্রত্যাখ্যাত হওয়ার পর জঙ্গীবাদ মোকাবেলায় ‘জাতীয় ঐক্য’ গড়ে তোলার প্রয়াসে সরকারবিরোধী অন্য দলগুলোর সঙ্গে আলোচনার অংশ হিসেবে এদিন কাদের সিদ্দিকীকে আমন্ত্রণ জানান বিএনপি চেয়ারপার্সন। কাদের সিদ্দিকী সাংবাদিকদের বলেন, তার (খালেদা জিয়া) বহু কথায় আমি খুশি হয়েছি। মতের অমিল থাকলেও খুশি হয়েছি। জাতীয় প্রশ্নে, জাতির স্বার্থের প্রশ্নেও তার সঙ্গে আমার খুব একটা বেশি অমিল নেই। আমি জামায়াতের সঙ্গে রাজনীতি করব না। বঙ্গবন্ধুর রাজনীতি নিয়ে আমি মরতে চাই। জননেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র অথবা তাকে ধ্বংস করার ষড়যন্ত্রে আমি জড়িত হব না। যদি সে সমস্ত ষড়যন্ত্র সম্পর্কে জানতে পারি, তাহলে জীবন দিয়ে তা প্রতিরোধ করব। তাকে রক্ষা করার চেষ্টা করব। একইভাবে একজন মুক্তিযোদ্ধার স্ত্রী বিএনপি প্রধান বেগম খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে কোন ষড়যন্ত্র কিংবা তাকে কোন অপমান সহ্য করব না এবং তা প্রতিকারের চেষ্টা করব। সাবেক এই আওয়ামী লীগ নেতা বলেন, শুক্রবার বেলা সাড়ে ১১টায় মতিঝিলের নিজ কার্যালয়ে এ বৈঠকের বিস্তারিত তিনি জানাবেন। এ সময় বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, খালেদা জিয়া সকল রাজনৈতিক দল নিয়ে যে ঐক্যের ডাক দিয়েছেন। তারই অংশ হিসেবে কৃষক-শ্রমিক জনতা লীগের এক প্রতিনিধি দলের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। বৈঠকে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে। পরে বিস্তারিত জানানো হবে। বৈঠকে বিএনপির পক্ষ থেকে খালেদা জিয়া ছাড়াও দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য তরিকুল ইসলাম, ভাইস চেয়ারম্যান মেজর এম হাফিজ উদ্দিন আহমেদ ও আব্দুল্লাহ আল নোমান বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন। উল্লেখ্য, গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারিতে গত ১ জুলাই জঙ্গীদের হামলায় ১৭ বিদেশীসহ ২২ জন নিহত হওয়ার পর উগ্রবাদ মোকাবেলায় দলমত নির্বিশেষে জাতীয় ঐক্য গড়তে সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছিলেন খালেদা। তবে বিএনপি-জামায়াতকে জঙ্গী তৎপরতায় মদদ দেয়ার জন্য দায়ী করে আওয়ামী লীগ সেই আহ্বান প্রত্যাখ্যান করে। এরপর বিএনপি সরকারবিরোধী বিভিন্ন রাজনৈতিক দলকে এই উদ্যোগে আনতে সক্রিয় হয়েছে। এর অংশ হিসেবে কৃষক-শ্রমিক-জনতা লীগ, গণফোরাম, বিকল্পধারা বাংলাদেশ, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল জেএসডির সঙ্গে যোগাযোগ করেছে তারা। খালেদা জিয়া দলগুলোর নেতাদের ‘চা-চক্রে’ আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। তারই অংশ হিসেবে কাদের সিদ্দিকীর সঙ্গে এই বৈঠক হয়েছে।
×