ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

আরচারি দিয়ে শুরু বাংলাদেশের মিশন

প্রকাশিত: ০৭:০৭, ৫ আগস্ট ২০১৬

আরচারি দিয়ে শুরু বাংলাদেশের মিশন

শুরু হয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশের অলিম্পিক মিশন। সেটি শুরু হচ্ছে আরচারি (তীরন্দাজ) দিয়েই। বাংলাদেশ সময় শনিবার ভোর ৫টায় উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে ৩১তম অলিম্পিক আসরের পর্দা উঠবে। একইদিনে রাত তিনটায় মহিলাদের আরচারি ইভেন্ট শুরু হবে। বাংলাদেশের তীরন্দাজ শ্যামলী রায় অংশ নেবেন। তার অংশ নেয়ার মধ্য দিয়েই বাংলাদেশের এবারের রিও অলিম্পিক মিশনও শুরু হয়ে যাবে। ৬৪ মহিলা এ্যাথলেট আরচারি অংশ নেবেন। শুরুতেই হবে র‌্যাঙ্কিং রাউন্ড। যেখানে সেরা ৩২ জনে থাকার লড়াই হবে। শ্যামলী রায় এ রাউন্ডে খেলবেন। ‘গ্রেটেস্ট শো অন আর্থ’ খ্যাত গ্রীষ্মকালীন অলিম্পিক গেমসে বাংলাদেশের সাত প্রতিযোগী অংশ নিচ্ছেন। এর মধ্যে সরাসরি অংশ নিচ্ছেন গলফ ইভেন্টে সিদ্দিকুর রহমান। বাকি ছয় সদস্য ওয়াইল্ড কার্ডের বিনিময়ে অংশ নেবেন এই গেমসে। সাঁতার, শূটিং, এ্যাথলেটিকস, গলফ, আরচারি এই পাঁচ ইভেন্টে লড়বে বাংলাদেশের প্রতিযোগীরা। আরচারি দিয়ে রিও মিশন শুরু করবে লাল সবুজের বাংলাদেশ। এ প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে মঙ্গলবার রাত সাড়ে ৯টায় রিও’র উদ্দেশে দেশ ত্যাগ করেন শ্যামলী। তার সঙ্গে কোচ নিশীথ দাসও আছেন। এরই মধ্যে রিওতে পৌঁছেও গেছেন তারা। আরচারির পর শূটিং ইভেন্টে মিশন শুরু করবে বাংলাদেশ। যেখানে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন বাংলাদেশের আশা-ভরসার প্রতীক আবদুল্লাহ হেল বাকী। তিনি লড়বেন ১০ মিটার এয়ার রাইফেলে। ৮ আগস্ট বাংলাদেশ সময় রাত ১১টায় বাকীর মিশন শুরু হবে। সবার আগে ব্রাজিলে আসেন বাকী। তার সঙ্গে ডেনমার্কের কোচ কাওস আছেন। এরপর গলফ ইভেন্ট। যে ইভেন্ট দেখতে মুখিয়ে আছে বাংলাদেশের সবাই। কেমন করবেন বাংলাদেশের সিদ্দিকুর রহমান। ১১ আগস্ট কোর্সে নামবেন তিনি। বাংলাদেশ সময় রাত ১০টায় শুরু হবে সিদ্দিকুরের মিশন। সিদ্দিকুরও এখন আছেন ব্রাজিলে। সাঁতার ইভেন্টে বাংলাদেশের দুইজন অংশ নিচ্ছেন। প্রথমে পুলে নামবেন মাহফিজুর রহমান সাগর। এরপর পুলে নামবেন অন্য সাঁতারু সোনিয়া আক্তার। দুজনই ৫০ মিটার ফ্রি স্টাইলে লড়বেন। সবার শেষে ট্র্যাক এ্যান্ড ফিল্ডের লড়াই। ১২ ও ১৩ তারিখে যথাক্রমে ট্র্যাকে নামবেন শিরিন আক্তার ও মেজবাহ আহমেদ। ১০০ মিটার স্প্রিন্টের হিটে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন তারা দুজন। রিও অলিম্পিকে বাংলাদেশে পাঁচ আমন্ত্রিত অতিথি, সাত প্রতিযোগী, তিন কোচ, পাঁচ কর্মকর্তা। ‘সেফ দ্য মিশন’ হিসেবে আছেন ফেন্সিং ফেডারেশনের সভাপতি আবু তায়েব মুহাম্মদ জহিরুল আলম। আরচারির মহিলা কিংবা পুরুষ যে ইভেন্টই হোক, দক্ষিণ কোরিয়া সবসময়ই ফেবারিট থাকে। ১৯০০ সালে দ্বিতীয় অলিম্পিকে আরচারি প্রথমবারের মতো যোগ হয়। এরপর ১৯০৪ ও ১৯০৮ সালেও অলিম্পিকে আরচারি ইভেন্ট থাকে। কিন্তু ১৯১২ সালে আরচারির কোন ইভেন্টই থাকেনি। আবার ১৯২০ সালে আরচারি যোগ হয়। কিন্তু এবারের পর যে আরচারি অলিম্পিক থেকে দূরে সরে যায় ৫২ বছর আর অলিম্পিকে অংশ নেয়নি। অবশেষে ১৯৭২ সালে আবার অলিম্পিকে আরচারি যোগ হয়। সেই থেকে প্রতিবারই আরচারি ইভেন্ট থাকছে। ১৯৭২ সাল থেকে সর্বোচ্চ ৩৪ পদক জিতেছে দক্ষিণ কোরিয়া। এর মধ্যে ১৯ সোনা, ৯ রুপা ও ৬ ব্রোঞ্চ জিতেছে দক্ষিণ কোরিয়া। তার পরেই আছে আমেরিকা। দেশটি ১৪ পদক (৮ সোনা, ৪ রুপা ও ২ ব্রোঞ্চ) জিতে। তবে একেবারে শুরু থেকে হিসেব করলে দক্ষিণ কোরিয়া ৩৪ পদক জিতে। আমেরিকা ১৪ সোনা, ১০ রুপা ও ৮ ব্রোঞ্জসহ ৩২ পদক জিতে। ২০১২ সালে যে লন্ডনে অলিম্পিক হয়, দক্ষিণ কোরিয়ারই জয়জয়কার দেখা যায়। ৩ সোনা জিতে দক্ষিণ কোরিয়া। ইভেন্টই হচ্ছে চারটি। পুরুষদের ব্যক্তিগত ও দলীয়, মহিলাদের ব্যক্তিগত ও দলীয় ইভেন্ট। পুরুষদের ব্যক্তিগত, মহিলাদের ব্যক্তিগত ও দলীয় ইভেন্টে সোনা জিতে দক্ষিণ কোরিয়া। শুধু পুরুষদের দলীয় ইভেন্টেই সোনা জিততে পারেনি। পুরুষদের ব্যক্তিগত ইভেন্টে ওহ জিং হেক, মহিলাদের ব্যক্তিগত ইভেন্টে কি বো বায় এবং মহিলাদের দলীয় ইভেন্টে সোনা জিতে দক্ষিণ কোরিয়া। এবারও দক্ষিণ কোরিয়াই ফেবারিট। তবে ২০১২ সালের অলিম্পিকে আমেরিকা তেমন আকর্ষণ কুড়াতে না পারলেও এবার তারা জোরশোরেই নিজেদের ঢাকঢোল পেটাচ্ছে। তাতে মনে হচ্ছে, কিছু একটা করবে। আর তাই প্রশ্নও উঠছে, দক্ষিণ কোরিয়াকে কী এবার মাত করবে আমেরিকা? পুরুষ ইভেন্টে দক্ষিণ কোরিয়ার বিশ্বসেরা তীরন্দাজ কিম উজিন ও মহিলা ইভেন্টে দক্ষিণ কোরিয়ার বিশ্বসেরা তীরন্দাজ চোই মিসুনের উপর নজর থাকলেও ২০১২ সালের অলিম্পিকে সোনা জেতা বর্তমান বিশ্বসেরা র‌্যাঙ্কিংয়ের ৩ নম্বরে থাকা কি বো বায়ের দিকেই মূল নজর থাকছে। আর আমেরিকার ভরসা পুরুষ ইভেন্টে জাচ গেরেট ও মহিলা ইভেন্টে ম্যাকেঞ্জি ব্রাউন। বাংলাদেশের অবশ্য আরচারি থেকে বিশেষ কিছু পাওয়ার নেই। পদক তো দূরের কথা। তবুও ভাল কিছু করে ফেলার আশা তো থাকেই। শ্যামলী রায় যেমন বলেছেন, ‘সেরা খেলাটাই খেলতে চাই।’ সঙ্গে যোগ করেন, ‘পদক না পেলেও আমার যে স্কোর এখন ইন্টারন্যাশনাল লেভেলে আছে সেই স্কোর থেকে বেশি করতে চাই।’ বাংলাদেশের রিও অলিম্পিক মিশন শুরু হচ্ছে তার হাত দিয়েই। এখন দেখা যাক, কতটা ভাল কিছু করতে পারেন শ্যামলী রায়।
×