ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

জীবনের মোড় ঘোরাতে চান শূটার বাকী

প্রকাশিত: ০৬:৩৪, ৫ আগস্ট ২০১৬

জীবনের মোড় ঘোরাতে চান শূটার বাকী

অলিম্পিক নামক মহাযজ্ঞের বিশাল সমুদ্রে সাঁতার কাটতে যে দুঃসাহস প্রযোজন সেটা ইতোমধ্যে পেয়ে গেছি। যদিও সেই পুরনো আক্ষেপ, আর কয়েকটা দিন আগে আসতে পারলে সুযোগ পেতাম নিজেকে আরও ঝাঁলিয়ে নেয়ার। তবু আমি প্রস্তুত, রিওতে ভাল করে ক্যারিয়ারটাকে আলোকিত করতে চাই। স্পর্শকাতর খেলার অন্যতম একটি হচ্ছে শূটিং। খেলতে গেলে অস্ত্র, গুলির দরকার পড়ে, নাড়াচাড়া করতে হয়। আর খেলার সময় থাকতে খুবই মনোযোগী। নিশানা বেধ ধীরস্থিরভাবে মনটাকে রাখতে ট্রিগারে। আর দৃষ্টিটা লক্ষ্যভেদে সামকে থাকা পয়েন্টে। হোক সেটা পিস্তল বা রাইফেল। বাইরে থেকে কোন আওয়াজ ঢুকতে পারবে না ভেন্যুতে। শুনশান নীরবতার মধ্যে চালাতে এই খেলা। সঙ্গত কারণে আটলান্টিক মহাসাগরের উত্তাল ঢেউয়ের গর্জন সমস্যার কারণ হয়ে দাঁড়ানোর কোন সুযোগ নেই। তবে বাংলাদেশের কৃতী শূটার আবদুল্লাহ হেল বাকীর কানে ঠিকই পৌঁছে গেছে মহাসাগরের ঢেউয়ের হুঙ্কার। তবে সেটা অনুশীলনের সময় নয়। অলিম্পিক উপলক্ষে সাজানো গোছানো বাগানের মতো যে গেমস ভিলেজ নির্মাণ করা হয়েছে সেগুলোর বাইরে বেরুলেই শোনা যায় আটলান্টিকের গর্জন। আর মনে পড়ে যায় ‘টাইটানিক’ এর কথা। বিশাল প্রমোদতরীর খ--বিখ- অংশগুলো প্রায় অর্ধশত বছর ধরে ঘুমিয়ে আছে উত্তাল আটলান্টিকের ৫৪ কিলোমিটার তলদেশে। যা হোক, ইতিহাস বাদ দিয়ে খেলায় ফেরা যাক। আটলান্টিকের বাতাসটাও গায়ে লেগেছে বাকীর। বাংলাদেশ সময় ৯ আগস্ট ক্যারিয়ারে প্রথম অলিম্পিক খেলতে আসা এই শূটারের ভাগ্য পরীক্ষা। ১০ মিটার এয়ার রাইফেলের কোয়ালিফিকেশন রাউন্ডে তাকে লড়তে হবে বন্দুক হাতে। মহাযজ্ঞতুল্য অলিম্পিক আসরের জন্য নবনির্মিত রিও ডি জেনিরোর শূটিং রেঞ্জ বাকীকে অভ্যর্থনা জানাতে প্রস্তুত। এখন অল্প কয়েনদিনের অনুশীলনে বাকী কতটুকু প্রস্তুত, স্থানীয় পরিবেশের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিজেকে মানসিকভাবে কতটুকু তৈরি করেছেন, চাঙ্গা হয়েছেন কতটা সেটাই দেখার। তবে কথাবার্তায় যা বুঝা গেল তাতে মহাসাগরে সাঁতার কাটার জন্য যে দুঃসাহসের প্রয়োজন সেটা তার মধ্যে রয়েছে। লক্ষ্য অর্জনে রাইফেলের ট্রিগারে হাত রাখার মনোবলটা বেশ জোরালোই মনে হলো। যদিও আলাপের শুরুটা করলেন এভাবে, আর কয়েকটাদিন আগে আসতে পারলে প্রস্তুতিটা ভাল হতো। মনটাকে আরও চাঙ্গা করে নেয়া যেত স্থানীয় কন্ডিশনের সঙ্গে খাপ খাইয়ে। অন্তত দু’সপ্তাহ সময় পেলে ভাল হতো। কিন্তু সেটা ভাগ্যে না জুটলেও এই সময়ের মধ্যেই আত্মবিশ্বাসটা যতটুকু সম্ভব জোরালো করে নিচ্ছি। বলতে পারেন, আমি প্রস্তুত। চেষ্টার কোন ত্রুটি থাকবে না। পরেরট ভাগ্য। কারণ সাফল্যের জন্য শুধু নিজের চেষ্টাই শেষ নয়। প্রয়োজন ভাগ্যের সহায়তাও। উল্লেখ্য, ব্রাজিল সময় ৮ আগস্ট সকাল ৯টায় শুরু হবে ১০ মিটার এয়ার রাইফেলের প্রথম পর্ব। এই কোয়ালিফিকেশন রাউন্ড শুরুর আগে আরও তিনদিন সময় হাতে পাচ্ছেন বাকী। বাংলাদেশ থেকেই সঙ্গে আসা তার বিদেশী কোচ অনুশীলন শুরুর আগে তাকে চেষ্টা করেছেন মানসিকভাবে চাঙ্গা করার। বর্তমানে প্রতিদিনই চলছে রেঞ্জে নিশানা ভেদের প্রশিক্ষণ। বাকীর কথায়, এখানে এখন আর নতুন করে কিছু শেখার নেই। মনোবল বাড়ানোটাই মুখ্য। জীবনের প্রথম অলিম্পিক গেমস, নতুন পরিবেশ, বিশাল আসর, সব মিলিয়ে ২ আগস্ট ব্রাজিলে আসার পর যে টেনশনটা মনের মধ্যে ভর করেছিল সেটা প্রায় দূর হয়ে গেছে। অবশিষ্ট কয়েকদিনে নিজেকে আরও মানিয়ে নিতে পারব। কাজেই চেষ্টার পাশাপাশি ভাগ্য পাশে থাকলে ধাপে ধাপে এগিয়ে যাওয়াই আমার লক্ষ্য। যদিও প্রথম পর্বটা আমার জন্য বেশ গুরুত্বপূর্ণ। অলিম্পিকের মতো এত বড় আসরে প্রথম রাইফেল হাতে নামছি। চারপাশে বিশ্বের সব বাঘাবাঘা শূটার। কাজেই মুখে যাই বলি না কেন। অন্তত প্রথম দিনটায় একটু নার্ভাস লাগতে পারে। আর এই পর্বটা উতরে যেতে পারলে আশা করি আর কোন সমস্যা হবে না। মনের জোরটা শতভাগ ফিরে পাব। আরও এগিয়ে যাওয়ার অনুপ্রেরণা খুঁজে পাব। প্রসঙ্গত, কোয়ালিফিকেশন রাউন্ডে বাকীসহ বিশ্বের ৬৫ শূটার অংশ নেবেন। তাদের সঙ্গে টক্কর দিয়ে পার করতে হবে প্রথম পর্ব। রিও আসার আগে ঢাকায় বাকী তার লক্ষ্যের কথা বলেছিলেন, শীর্ষ আটে থাকতে পারলেই তিনি খুশি। বর্তমানেও মনের মধ্যে পুষে রেখেছেন সেই স্বপ্ন। আর প্রত্যাশা পূরণে অবিচল বাংলার এই কৃতী সন্তান।
×